কায়সার আহমেদ খান
অশিক্ষিত নিরক্ষররা শুধু প্রতারিত হন এমন নয়; বরং অনেক সময় উচ্চশিক্ষিত, অভিজ্ঞ ও নামী-দামি মানুষও সচেতনতার অভাবে প্রতারণার ফাঁদে পড়েন। সমাজে ক্রমবর্ধমান হারে প্রযুক্তিগত প্রতারণা নিরাপত্তা হুমকি তৈরি করছে। অসাধু প্রতারক চক্রের কাছে প্রতিনিয়ত পরাজিত হচ্ছেন সমাজের ছোট-বড় এমনকি উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তিরা। আশা করি লেখাটি কিছুটা হলেও আমাদের সচেতন করবে।
সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং হচ্ছে এমন একটি মনস্তাত্তি¡ক কৌশল যার মাধ্যমে মানুষকে প্রভাবিত বা প্রতারিত করে গোপন তথ্য, সিস্টেমে প্রবেশাধিকার কিংবা আর্থিক ফায়দা অর্জন করা হয়। এতে জটিল প্রযুক্তি নয় ব্যবহার করা হয় মানুষের বিশ্বাস, আবেগ ও সরলতা।
যেমন- জনাব মতিন সরকার, আমার প্রতিবেশী, একজন উচ্চশিক্ষিত ভদ্রলোক। তারিখ ১৩ মে ২০২৫, ওনার নম্বরটি একটি অজানা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত করা হয়। একই দিন বিকেলে ‘পুলিশ হেডকোয়ার্টার’-এর একজন অফিসার পরিচয়ে এক ব্যক্তি তাকে ফোন দেন। তিনি বলেন, ‘আপনি আমাদের অফিসিয়াল গ্রুপে ঢুকে পড়েছেন এবং আমাদের কথোপকথন জেনে যাচ্ছেন; দ্রুত বের হন, নইলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ হঠাৎ পুলিশ পরিচয়ের ফোন পেয়ে মতিন সাহেব ভড়কে যান। কিভাবে গ্রুপ থেকে বের হতে হবে জানতে চাইলে অপর প্রান্তের ব্যক্তি নির্দেশনা দেন, মূলত ডিভাইস ক্লোন বা লিংক করার জন্য ‘যেভাবে ওটিপি জেনারেট করতে হয়’!
তারপর মতিন সাহেবের অজান্তেই তার মেয়ে ওটিপি শেয়ার করে নিজের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর ক্লোন করার সুযোগ করে দেন। পরবর্তীতে প্রতারকরা তার পরিচয়ে বিভিন্ন কন্টাক্টে বার্তা পাঠিয়ে বিপদের কথা বলে টাকা চাইতে থাকে।
এছাড়া আরো অনেকেই প্রতারিত হচ্ছেন যেমন- ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ভিপি পদে থাকা একজন কর্মকর্তা সোশ্যাল মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন দেখে ইলিশ মাছ কিনতে চেয়েছিলেন। প্রতারকরা একটি ভুয়া লিংক বা অজানা বিক্রেতার পরিচয় ব্যবহার করেছেন। বিকাশে টাকা পাঠানোর পর, ব্যক্তি প্রতারণার শিকার হয়েছেন।
হোয়াটসঅ্যাপ ক্লোনের এমন ঘটনা ঘটলে করণীয় হচ্ছে : ১. আপনার অ্যাকাউন্টের সাথে অন্য কোনো ডিভাইস লিংক করা থাকলে অতিসত্বর সেটি রিমুভ করুন। এটি করতে পারবেন উপরের ডান কোণের তিনটি ডট (...) এ ক্লিক করে লিংকড ডিভাইস অপশন থেকে।
২. সিম অপারেটরের সাথে যোগাযোগ করুন। সন্দেহ হলে অপারেটরের হটলাইনে কল করে সিম বøক বা পুনরুদ্ধারের ব্যবস্থা করুন।
৩. হোয়াটসঅ্যাপ সাপোর্টে রিপোর্ট করুন। তাদেরকে ইমেইল করুন ংঁঢ়ঢ়ড়ৎঃ@যিধঃংধঢ়ঢ়.পড়স অথবা সেটিংস থেকে কন্টাক্ট অপশনে গিয়ে রিপোর্ট করতে পারেন।
৪. সব অনলাইন অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুন (ইমেইল, ব্যাংকিং, সোশ্যাল মিডিয়া ইত্যাদি)।
৫. অন্যদের সতর্ক করুন : আপনার নম্বর থেকে ভুয়া মেসেজ গেলে কন্টাক্টে থাকা অন্যদের জানিয়ে দিন, ‘আমার নাম্বার ক্লোন হয়েছে, কেউ টাকা চাইলে তা উপেক্ষা করুন।’
৬. ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জানান : সন্দেহজনক কোনো লেনদেন হলে সাথে সাথে ব্যাংকে যোগাযোগ করুন।
৭. প্রমাণ সংরক্ষণ করুন : কল লগ, স্ক্রিনশট, মেসেজ, গ্রুপের নাম ইত্যাদি রাখুন- অভিযোগে সহায়ক হবে।
৮. সাইবার ক্রাইম ইউনিটে অভিযোগ করুন : স্থানীয় থানায় এউ/ঋওজ করুন এবং প্রমাণ সংযুক্ত করুন।
৯. সব ডিভাইস বা অ্যাকাউন্ট সেশন পর্যালোচনা করুন :
এড়ড়মষব, ঋধপবনড়ড়শ, ডযধঃংঅঢ়ঢ়-অচেনা সেশন থেকে লগআউট করুন।
সবসময় মনে রাখুন : কখনো ওটিপি বা ভেরিফিকেশন কোড কাউকে দেবেন না। ফোন বা সিম হারালে সাথে সাথে সিম বøক করুন। প্রোফাইল তথ্য (জন্মতারিখ, ব্যক্তিগত বিবরণ) সীমিত রাখুন। নিয়মিত ব্যাকআপ ও নিরাপত্তা সেটিংস আপডেট করুন। সব সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে মাল্টিফ্যাক্টর অথেনটিকেশন (২ঋঅ) চালু রাখুন।
লেখক : ইঞ্জিনিয়ার, আইটি সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞ।