আওয়ামী লীগের ভোট

সামাজিকভাবে, রাজনৈতিকভাবে ও সাংস্কৃতিকভাবে আওয়ামী লীগ একেবারেই জনগণের মন থেকে উঠে গেছে। বাস্তবে এই সমাজে আওয়ামী লীগের কোনো অস্তিত্ব নেই। আইনগতভাবে, যুক্তির বিচারে ও মানবিকভাবে আওয়ামী লীগের অস্তিত্ব খুব দৃঢ়ভাবেই রাজনীতিকদের অস্বীকার করতে হবে। আওয়ামী লীগ নামক বস্তুটি একটি নিষিদ্ধ বিষয়। সুতরাং তারা ভাগাভাগি বা ভোটাধিকার প্রয়োগ-অপপ্রয়োগের প্রশ্নই থাকতে পারে না। আওয়ামী লীগকে যারাই পুনর্বাসন করতে চাইবে তারাই জনগণের রুদ্ররোষের শিকার হতে পারে। রাজনৈতিক বিভেদ আছে কিন্তু আওয়ামী লীগ তথা পতিত স্বৈরাচার ফিরিয়ে আনার যেকোনো উদ্যোগের বিরুদ্ধে জনগণের সুদৃঢ় ঐক্য রয়েছে

আওয়ামী লীগ আছে-আওয়ামী লীগ নেই। দুটোই সত্য কথা। এখনো বাংলাদেশের দুই, চার, ১০ জন লোক অনুচ্চস্বরে অথবা ফিসফিস করে আওয়ামী লীগের কথা বলে। এদের আকার প্রকার দুই ধরনের। একদল হলো পরিত্যক্ত আওয়ামী লীগার। যারা এখন পলায়নপর। মেরুদণ্ড সোজা করে সমাজের আর দুই, ১০টি মানুষের মতো উঁচুগলায় কথা বলার অধিকার আর তাদের নেই। এরা আক্ষেপ, আলাপ, প্রলাপ বলে সময় কাটায়। আরেক দল লোক আছে আওয়ামী লীগ না থাকলেও তারা আওয়ামী লীগ আবিষ্কার করতে চায়। এদের মধ্যে আবার দুই ভাগ। একাংশ আওয়ামী জুজুর ভয় দেখিয়ে কিছু সুবিধা নিতে চায়। অপর অংশ আওয়ামী ভূতের ওপর সওয়ার হতে চায়। এর সরল অর্থ হচ্ছে আওয়ামী ভোট নিয়ে নানান কিসিমের জল্পনা-কল্পনা। একটি গণবিরোধী দল গণ-আন্দোলনে নিঃশেষ হয়ে গেছে। তাদের নিয়ে কথাই থাকার কথা নয়। অথচ রাজনীতিতে যাদের নীতি-নৈতিকতার বা লজ্জা শরমের বালাই নেই, তারা আওয়ামী রাজনীতি নিয়ে রাজনীতি করছে। শেখ হাসিনা পলায়নের পর দিল্লি থেকে যে মিথ্যাচার করছেন, তার ভাগীদার হতে চান এসব পরিত্যক্ত আওয়ামী লীগ ও সুবিধাভোগীরা। সমাগত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ কত ভোট পাবে, আওয়ামী ভোটের ভাগীদার কারা হবে না হবে তা নিয়ে এক শ্রেণীর রাজনৈতিক চাটুকারদের ঘুম নেই। আসলে প্রকারান্তরে তারা আওয়ামী জিগির বহাল রাখতে চান। এখন তো সোজাসুজি আওয়ামী লীগের পক্ষে কথা বলার সুযোগ নেই, তাই ইনিয়ে-বিনিয়ে নানারকম কথার মারপ্যাঁচে আওয়ামী বয়ান বহাল রাখতে চান এসব মতলববাজ।

আওয়ামী লীগ জন্ম থেকেই জ¦লছে। ফ্যাসিবাদ নাজিবাদের আলখাল্লায় লালিত-পালিত আওয়ামী লীগের ভাবখানা এই ছিল যে, সব ভোটই তাদের। ১৯৭০ সালের যে সময়ে আওয়ামী লীগের জয়জয়কার, তখনো তারা জয়কে একাকার করেছেন তাদের নিজস্ব নাজিবাদী ও ফ্যাসিবাদী চরিত্র দ্বারা। জনসমাজে তাদের প্রভাব ছিল ধরুন ৩৩ শতাংশ। এই ৩৩ শতাংশকে তারা ৯৯ শতাংশ বানিয়েছে গায়ের জোরে। অন্যান্য রাজনৈতিক দল যারা ছিল ১০ শতাংশ বা ১৫ শতাংশের মালিক, তারা আওয়ামী ফ্যাসিবাদের ভয়ে কথা বলেনি। ১৯৭১ সালের দখলদারির আমলে পাকিস্তানি সেনাপতিরা একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছিল। তাতে দেখানো হয় কোথাও ১০০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে, কোথাও ব্যালট বাক্সে পাইকারি সিল মারা হয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি। ১৯৭৩ সালে দেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী চেহারার নোঙরা রূপটা জনগণ দেখতে পায়। ৭৩.২ শতাংশ ভোট পেয়ে ৩০০টির মধ্যে ২৯৩টি আসন পায় আওয়ামী লীগ। ১৪টি রাজনৈতিক দল এ নির্বাচনে অংশ নেয়। বিরোধীদের মধ্যে জাতীয় লীগ ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) একজন করে এবং স্বতন্ত্র পাঁচজন প্রার্থী বিজয়ী হন। এ নির্বাচনে ভোট পড়ে ৫৫.৬১ শতাংশ। তারা ৩০০ আসনের একটিতেও বিরোধী দলকে দেখতে চায়নি। সে নির্বাচনে মেজর জলিল বরিশাল বাবুগঞ্জ এলাকা থেকে জয়লাভ করেন। কিন্তু বিজয়ী ঘোষণা করা হয় হরনাথ বাইনকে। খন্দকার মোশতাক আহমদ পরাজিত হন। হেলিকপ্টারে ভোটের বাক্স ঢাকায় এনে তাকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ভোলায় মেজর হাফিজের স্বনামধন্য পিতা ডাক্তার আজহারের জনপ্রিয়তা এতটাই নিরঙ্কুশ ছিল যে, সেখানে অবশেষে শেখ সাহেবকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়। সবাই ডাক্তার আজহারকে আওয়ামী লীগের লোকেরা হাইজ্যাক করে, যাতে তিনি তথাকথিত জাতির পিতার বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে না পারেন। ১৯৭৩ সালের এই নিরঙ্কুশ অবস্থা সত্ত্বেও দেশ পরিচালনায় ব্যর্থ হয় দলটি।

১৯৭৩ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ কাস্টিং ভোটের ৭৩.২ শতাংশ লাভ করে। কিন্তু এই জনসমর্থন যে আরোপিত বা কৃত্রিম তা প্রমাণিত হয় তাদের পরবর্তী কার্যক্রমে। এ সময়ে জাসদের ৪০ হাজার কর্মীকে গুম তথা বিচারবহিভর্‚তভাবে হত্যা করা হয়। নিজেদের রচিত সংবিধান লঙ্ঘন করে Special Power Act-1974 ঘোষণা করা হয়। এই আইন দ্বারা যেকোনো ব্যক্তিকে যেকোনো সময় অনির্দিষ্টকালের জন্য আটক রাখার বিধান করা হয়। সংবাদপত্র রোধের জন্য Press and Publication Act জারি করা হয়। অবশেষে ১৯৭৫ সালের ১০ জানুয়ারি বাকশাল ঘোষিত হয়। সব রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধি ঘোষিত হয়। ‘এক নেতা এক দেশ বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’ শুধু উচ্চারিত স্লোগানই ছিল না বস্তুত এর বাইরে গাছের পাতাটিও নড়ার সুযোগ ছিল না। মানুষ বলে যাহাতে উৎপত্তি তাহাতে ক্ষয়। আওয়ামী লীগ যে ফ্যাসিবাদ দিয়ে শুরু করেছিল অবশেষে ২০২৪ সালে ফ্যাসিবাদেই তাদের নিপাত হলো। এই জাতির ঊষালগ্নে তারা যে কদর্য চেহারা প্রদর্শন করেছে অবশেষে শেখ হাসিনাও সেই একই চিত্রে অভিনয় করলেন। ১৯৭৫ সালে আওয়ামী লীগের বাকশালটি ছিল ঘোষিত। আইনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত। আমার মনে আছে, প্রবীণ নেতা আতাউর রহমান খান বাকশালে যোগদান করার সময় একটি বিবৃতি দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, যেহেতু আমি রাজনীতি করতে চাই আর যেহেতু বাকশাল ব্যতীত অন্য কোনো রাজনৈতিক দল বৈধ নয়, সে কারণে আমি একমাত্র রাজনৈতিক দল বাকশালে যোগদান করছি। এই সময়ের অঘোষিত বাকশাল ছিল সেই সময়ের বাকশালের চেয়ে নিকৃষ্টতর।

আওয়ামী লীগের বাকশাল করা এবং ২০০৯ সালে ক্ষমতাসীন হওয়ার পরে নির্বাচনকে নির্বাসন দেয়ার বড় কারণ ছিল, তারা উপলব্ধি করতে পেরেছে যে জনগণের ভোটে কখনোই কোনো ক্রমেই তাদের ক্ষমতাসীন হওয়া সম্ভব নয়। ১৯৯৬ সালে ইসলামী শক্তি ও জাতীয়তাবাদী শক্তিকে বিভাজন করে সুকৌশলে তারা ক্ষমতায় এসেছিল। এ দেশে যে নির্বাচনটিকে সবসময় সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মনে করা হয় সেটি ছিল ১৯৯১ সালে বিচারপতি সাহাবুদ্দীনের অধীনে গৃহীত নির্বাচন। সে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভোটের পরিসংখ্যান ছিল ৩০ শতাংশ এবং প্রাপ্ত আসন সংখ্যা ৮৮টি। ১৯৯৬ সালে তারা পেয়েছিল শতকরা ৩৭.৪ এবং আসন সংখ্যা ১৪৬টি। ২০০১ সালে তারা পেয়েছিল ৪০ শতাংশ ভোট এবং ৬২টি আসন। ২০০৮ সালের বিতর্কিত নির্বাচনে তারা পায় ৪৮.৪ শতাংশ ভোট এবং আসন সংখ্যা ২৩০টি। এরপর যে তিনটি নির্বাচন ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত হয়, সেগুলোর পরিসংখ্যান গ্রহণযোগ্য নয়। সেগুলো ছিল ভোটারবিহীন নির্বাচন, নিশীথ রাতের নির্বাচন এবং আমি-ডামির নির্বাচন। একতরফা ভোটে তাদের অবস্থান ছিল নিরঙ্কুশ। সব পরিসংখ্যান মিলে তাদের ভোটের পরিমাণ ছিল ৩০-৪০ শতাংশ।

২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের পর তাদের জনপ্রিয়তায় ধস নেমেছে। এখন এর পরিসংখ্যান পাওয়া কঠিন। তবে অনুমান করা যায় যে, সাধারণ ভোটাররা তাদের সাথে নেই। তবে তাদের ভোটের বাক্সে ভাগ বসানোর জন্য রাজনৈতিক দলগুলো নানা ধরনের ফন্দিফিকির আঁটছে। যে জাতীয় পার্টি এতদিন আওয়ামী লীগের বি-টিম ছিল, এখন তারা বরং এ-টিম হতে চাচ্ছে। আগে জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের ওপর ভর করেছে। এখন আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টির ওপর ভর করতে চায়। জাতীয় পার্টির লোভী নেতৃত্ব আওয়ামী লীগের অর্থ দ্বারা অনর্থ ঘটাতে চায়। আওয়ামী লীগের যে ভোটার গোষ্ঠী এখনো ঘোরের মধ্যে আছে তাদের নিয়ে জনশক্তি বাড়াতে চায় জাতীয় পার্টি। এমনিতেই জাতীয় পার্টির জনপ্রিয়তা শূন্যের কোটায় নেমেছে। এই কিছু দিন আগে জাতীয় পার্টির নেতারা ইঙ্গিত দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের লোকদের তাদের অফিসের সামনে জড়ো হওয়ার জন্য। এমনি ধরনের এক ঘটনায় ভিপি নুর মারাত্মকভাবে আহত হন। আসলে জাতীয় পার্টি অলীক আত্মীয়ের পেছনে ছুটছে। যদি ধরে নেয়া যায় যে, সত্যিই আওয়ামী লীগের ২০ শতাংশ ভোট আছে, তাহলে এর একটি বড় অংশ ধরুন ১০ শতাংশ নিষ্ক্রিয় হয়ে আছে বা ভীতির মধ্যে আছে। সাংবাদিক মাসুদ কামাল বলেছেন, আওয়ামী লীগের ৫০ শতাংশ ভোট পাবে বিএনপি। যে আওয়ামী লীগের সাথে বিএনপির আসল শত্রুতা, তারা কী করে বিএনপিকে ভোট দিবে? আসলে আওয়ামী লীগের বড় অংশ ভোট দিতে যাবে না। যারা একটু পাখা মেলতে চাইবে বা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চাইবে, রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের ধারণা জনগণ তাদের রুখে দেবে। পত্রপত্রিকার প্রতিবেদনে মনে হয় যেন আওয়ামী ভোটের কাড়াকাড়ি চলছে। কিছু লোক আওয়ামী সব ভোট বিএনপিকে দিয়ে দিচ্ছে। কারণ তাদের ভাষায় বিএনপি জামায়াতের মোকাবেলায় আওয়ামী ভোট চাইছে। তা ছাড়া তারা যে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে চায় না, জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করতে চায় না, রাষ্ট্রপতিকে সরাতে চায় না ইত্যাদি ইত্যাদি অভিযোগ। রাজনৈতিক মহল মনে করেন যে, এসব অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। বিএনপির যে স্ট্যান্ড তা হচ্ছে একটি দায়িত্বশীল সরকার গঠন উন্মুখ রাজনৈতিক দলের সিদ্ধান্ত। বিএনপিকে পাশ্চাত্যের মনোভাব বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাপ সইতে হচ্ছে। যেহেতু তারা এখনই ‘গভর্নমেন্ট ইন ওয়েটিং’ বলে বিবেচিত হচ্ছে, তাদের কথাবার্তা বলায় সতর্ক থাকতে হচ্ছে। অনেকে আবার নিচুস্বরে বলতে চান প্রতিবেশীর সাথে তাদের মিলতাল হয়ে গেছে।

আসলে এটি কখনোই সম্ভব নয়। বিএনপি কোনো দিনই ভারতের আশ্রয়-প্রশ্রয় চায়নি, আর চাইতেও পারে না। সুতরাং এই জল্পনা-কল্পনা অর্থহীন। তবে আওয়ামী লীগের লোকেরা বড় বড় মাথা আত্মসমর্পণ করছে বিএনপির কাছে- এ রকম কথার সত্যতা থাকলেও থাকতে পারে। এ সম্পর্কিত কিছু সংবাদ সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে। তাতে দেখা যায়, বিএনপির কমিটিতে আওয়ামী ফ্যাসিস্টরা জায়গা করে নিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে জামায়াতে ইসলামীও অভিযোগমুক্ত নয়। জামায়াতে ইসলামীর মানবিক আমির ডা: শফিকুর রহমান প্রথম দিকে যে ক্ষমার মনোভাব দেখিয়েছেন তাতে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে যে, তিনি ওদের ক্ষমা করে দিচ্ছেন। কথাটি এরকম ছিল না। এরপর বহুবার আমিরে জামায়াত কথাটির ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আওয়ামী অপরাধীদের ক্ষমা করার প্রশ্নই আসে না। যা হোক এই ক্ষমার মনোভাবের কারণে আওয়ামী লীগের একাংশ যদি জামায়াতবান্ধব হয়ে ওঠে তাহলে অবাস্তব কিছু হবে না। মনে রাখতে হবে যে, জামায়াত এবং আওয়ামী লীগ একে অপরের বিপরীত। গত ১৭ বছরে সবচেয়ে নির্যাতিত দল হচ্ছে জামায়াতে ইসলামী। আপসের মনোভাব দেখালে কখনোই নেতাদের ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলতে হতো না। যারা আওয়ামী জামায়াতের শখ্যতার স্বপ্ন দেখেন তারা নিশ্চিতভাবেই আদর্শিক রাজনীতির ব্যাকরণ বোঝেন না।

আওয়ামী লীগ প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দুই ধরনের প্রতিক্রিয়া আছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার মনেপ্রাণে চায় যে, আওয়ামী লীগ চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাক। তাদের অস্তিত্বের প্রশ্নে সে চাওয়াটা ন্যায়সঙ্গত। তারা প্রফেসর ইউনূসকে স্বৈরাচার বলে এবং এনসিপি নেতৃত্বের ওপর তাদের সরাসরি শত্রæতার সম্পর্ক। তারা চায় আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হোক কিন্তু দেখা গেল নিষিদ্ধ করতে গিয়েও তারা নিষিদ্ধ করতে পারল না। শুধু আওয়ামী লীগের কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। এক সময় উপদেষ্টা আসিফ নজরুল আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না হওয়ার কথা বলেছিলেন। আরেকজন উপদেষ্টা শাখাওয়াত সাহেব আওয়ামী লীগের প্রশংসা করতে গিয়ে গদি পরিবর্তিত হলো। সুতরাং সরকারের মধ্যে তাদের সমর্থক আছে বলে বিশ্বাস করা হয়। অপর দিকে বিএনপির মতো প্রধান দল আওয়ামী লীগ বা জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধ করতে চায় না। বিশ্বাস করা হয় যে, তারা পাশ্চাত্য ও প্রতিবেশীর চাপে আছে। আর অন্য দলগুলো আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের পক্ষে।

সামাজিকভাবে, রাজনৈতিকভাবে ও সাংস্কৃতিকভাবে আওয়ামী লীগ একেবারেই জনগণের মন থেকে উঠে গেছে। বাস্তবে এই সমাজে আওয়ামী লীগের কোনো অস্তিত্ব নেই। আইনগতভাবে, যুক্তির বিচারে ও মানবিকভাবে আওয়ামী লীগের অস্তিত্ব খুব দৃঢ়ভাবেই রাজনীতিকদের অস্বীকার করতে হবে। আওয়ামী লীগ নামক বস্তুটি একটি নিষিদ্ধ বিষয়। সুতরাং তারা ভাগাভাগি বা ভোটাধিকার প্রয়োগ-অপপ্রয়োগের প্রশ্নই থাকতে পারে না। আওয়ামী লীগকে যারাই পুনর্বাসন করতে চাইবে তারাই জনগণের রুদ্ররোষের শিকার হতে পারে। রাজনৈতিক বিভেদ আছে কিন্তু আওয়ামী লীগ তথা পতিত স্বৈরাচার ফিরিয়ে আনার যেকোনো উদ্যোগের বিরুদ্ধে জনগণের সুদৃঢ় ঐক্য রয়েছে। সুতরাং আওয়ামী লীগের ভোট কে পাবে তা হিসাব করার আগে, আওয়ামী লীগের অস্তিত্ব নিয়েই হিসাব করতে হবে। আওয়ামী লীগ যে জনগণের রক্তক্ষরণ করেছে, সেই জনগণের সামনে আওয়ামী লীগ আর কখনোই ফিরে আসবে না। ১৯৭৫ সালের পরে তারা ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসে। তাও ২১ বছর পর। যতদিন এই প্রজন্ম বেঁচে আছে ততদিন রক্ত দিয়ে হলেও আওয়ামী লীগের ফিরে আসা রুদ্ধ হবে।

লেখক : অধ্যাপক (অব:), সরকার ও রাজনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

[email protected]