মূলধন ঘাটতিতে ২৩ ব্যাংক, সমাধানের উপায়

বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত এখন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। ৬১ ব্যাংকের মধ্যে ২৩টির মূলধন ঘাটতি পুরো অর্থনীতি জন্য হুঁশিয়ারি। রাজনৈতিক বিবেচনায় ব্যাংক অনুমোদনের দায় আজ দেশের অর্থনীতিকে বহন করতে হচ্ছে। এখনই সময় সাহসী ও কঠোর পদক্ষেপ নিয়ে অকার্যকর ব্যাংকগুলো মার্জার বা বন্ধকরণ, খেলাপি ঋণ আদায়, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের সংস্কার এবং প্রযুক্তিভিত্তিক নতুন ব্যাংকিং সংস্কৃতি গড়ে তোলা; অন্যথায় ব্যাংক খাতের অস্থিরতা শুধু বিনিয়োগ ও প্রবৃদ্ধিকেই ক্ষতিগ্রস্ত করবে না; বরং সাধারণ আমানতকারীর আস্থাও ভেঙে দেবে- যা হলে পুরো অর্থনীতি এক ভয়াবহ ঝুঁকির মুখে পড়বে। আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা শিক্ষা দেয়, অতিরিক্ত ব্যাংক টিকিয়ে রাখা যায় না, দুর্বল ব্যাংককে বাঁচানো যায় না। যে দেশই সফল হয়েছে, তারা স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও সাহসী সংস্কারের মাধ্যমে সঙ্কট কাটিয়েছে। বাংলাদেশকেও একই পথে হাঁটতে হবে

ড. মো: মিজানুর রহমান
ড. মো: মিজানুর রহমান |নয়া দিগন্ত গ্রাফিক্স

দেশের ব্যাংকিং খাত এক জটিল বাস্তবতার মুখে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত দেশের ২৩টি ব্যাংকের সম্মিলিত মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ১০ লাখ কোটি টাকায়। সংখ্যা যাই হোক, সার্বিক চিত্র স্পষ্ট; বাংলাদেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা মূলধনের চরম ঘাটতি, খেলাপি ঋণের বিস্ফোরণ এবং আস্থার সঙ্কটের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে। এত মূলধন ঘাটতির কারণ খুঁজতে গিয়ে প্রশ্ন উঠছে, বাংলাদেশের মতো একটি ছোট অর্থনীতির দেশে এতগুলো ব্যাংক কেন? এগুলোর মধ্যে এতগুলো কেন মূলধন ঘাটতিতে ভুগছে? ব্যাংক অনুমোদনের পেছনে কি রাজনৈতিক স্বার্থ কাজ করেছে? সরকারের বর্তমান পদক্ষেপ কতটা কার্যকর এবং ভবিষ্যতে কী করণীয়? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই এ নিবন্ধ।

একাত্তরের স্বাধীনতার পর পাকিস্তান আমলের ব্যাংকগুলো জাতীয়করণ করা হয়। ১২টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক নিয়ে যাত্রা শুরু হয় বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টরের। আশির দশকে বেসরকারি ব্যাংকের অনুমোদন দেয়ায় কিছু প্রাইভেট ব্যাংক বাজারে আসে। নব্বই দশকে গণতান্ত্রিক রাজনীতির পরিসরে আরো ব্যাংক অনুমোদন পেতে থাকে। ২০০০ সালের পর থেকে ব্যাংকের সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকে। ২০১৩ সালে একসাথে ৯টি নতুন ব্যাংক অনুমোদন দেয়া হয়। এরপর ২০১৮-২০ সালের মধ্যে আরেক দফা ‘নতুন ব্যাংক’ আসে; যার ফলে ব্যাংকের দাঁড়ায় ৬১টি। এতে ব্যাংকিং জনমুখী হয়েছে সত্য কিন্তু একই সাথে ঋণ শৃঙ্খলায় ভাঙন, সংশ্লিষ্ট-পক্ষের ঝুঁকি, মন্দ ঋণের পাহাড় এবং মূলধন-প্রভিশন ঘাটতি ইত্যাদি এ খাতের স্থিতিশীলতার জন্য বড় হুমকিতে পরিণত হয়েছে। সবশেষ ২০২৩-২৪ এ দু’টি ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্সিং প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার অভাব ও রাজনৈতিক পক্ষপাতের অভিযোগ উঠেছে বিশ্বব্যাংকের এক ডায়াগনস্টিক রিপোর্টে। প্রযুক্তিনির্ভর ক্ষেত্রেও গভর্ন্যান্স-ফ্রেমওয়ার্ক দুর্বল থাকায় সিস্টেমিক ঝুঁকি থেকে যায়। আইনগতভাবে, ২০১১ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিআরপিডি গাইডলাইন অনুযায়ী স্পন্সর বা ডিরেক্টরের ফিট-অ্যান্ড-প্রপার টেস্ট, ট্যাক্স-কমপ্লায়েন্স, মূলধন ইত্যাদির শর্ত ছিল; কাগজে-কলমে ভালো কাঠামো থাকা সত্ত্বেও বাস্তব নিরীক্ষা ও প্রয়োগের শক্তি সবসময় সমান ছিল না, ফলে ৬১টি ব্যাংক সৃষ্টি হয়।

৪৬৫ বিলিয়ন ডলারের জিডিপি পরিমাণ মাত্র এবং ১৭ কোটি জনসংখ্যার বাংলাদেশে ৬১টি শিডিউল্ড ব্যাংক কাজ করছে। অথচ ভারতের মতো বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ অর্থনীতি (প্রায় ৩.৭ ট্রিলিয়ন ডলারের জিডিপি) এবং ১৩০ কোটি জনসংখ্যার দেশে ব্যাংকের সংখ্যা মাত্র ৮৫টি; সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ১০টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংককে একীভূত করে চারটি করা হয়েছে। বাংলাদেশের দ্বিগুণ অর্থনীতির মালয়েশিয়ায় বাণিজ্যিক ব্যাংক মাত্র ২৬টি। সিঙ্গাপুরে বৈশ্বিক আর্থিক কেন্দ্র হলেও ব্যাংকের সংখ্যা ১০টি। শ্রীলঙ্কা বা নেপালের মতো দেশেও ব্যাংকের সংখ্যা বাংলাদেশ থেকে অনেক কম। অথচ অর্থনীতির আকারে তারা খুব বেশি পেছনে নেই।

বাংলাদেশে এত বেশি ব্যাংক প্রতিষ্ঠার অন্যতম কারণ ছিল মূলত রাজনৈতিক। অর্থনীতিবিদরা বারবার বলেছেন, দেশে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়ানোর জন্য নতুন ব্যাংক না খুলে বরং বিদ্যমান ব্যাংকগুলোর নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করা, ডিজিটাল ব্যাংকিং ও মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস শক্তিশালী করা অনেক বেশি ফলপ্রসূ। বাস্তবে নতুন ব্যাংক যোগ হলেও গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর ঋণপ্রাপ্তি বা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সহায়তায় মৌলিক পরিবর্তন আসেনি। ২০১৩ সালে একসাথে ৯টি বেসরকারি ব্যাংক অনুমোদন দেয়া হয়েছিল অর্থনৈতিক প্রয়োজনে নয়; বরং রাজনৈতিক ও দলীয় স্বার্থে। উদ্যোক্তাদের বেশির ভাগই ক্ষমতাসীন দলের সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন। পরে আরো কিছু নতুন ব্যাংকের অনুমোদন দেয়া হয় মূলত প্রভাবশালী ব্যবসায়ী গোষ্ঠী, রাজনৈতিক ঘনিষ্ঠতার বিবেচনা এবং ক্ষমতার কাছাকাছি অবস্থানের বিবেচনায়। এসব ব্যাংকের পরিচালনা বোর্ডে যোগ্যতার বদলে রাজনৈতিক ঘনিষ্ঠতা প্রাধান্য পায়, ঋণ বণ্টন নীতিতে স্বচ্ছতা থাকেনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ (জুন-২০২৫) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের ২৩টি ব্যাংকের সম্মিলিত মূলধন ঘাটতি প্রায় ১ দশমিক ১০ লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক সোনালী, জনতা, রূপালী ও অগ্রণী বিশাল ঘাটতিতে পড়েছে। ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৪ দশমিক ২০ লাখ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ২৪ শতাংশের বেশি। আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের মানদণ্ডে হিসাব করলে প্রকৃত ডিফল্ট ঋণ অনুপাত তারও বেশি। অন্য দিকে ব্যাংকগুলোর মূলধন পর্যাপ্ততার হার (ঈঅজ) ইধংবষ ওওও মানদণ্ড অনুযায়ী ন্যূনতম সাড়ে ১২ শতাংশ হওয়া উচিত। কিন্তু বাংলাদেশে বেশ কিছু ব্যাংকের মূলধন পর্যাপ্ততার হার ৪ থেকে ৫ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। এর মানে সামান্য ধাক্কা এলেই এই ব্যাংকগুলো দেউলিয়া হওয়ার ঝুঁকিতে পড়বে।

সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি কিছু ইসলামী ব্যাংকে। প্রস্তাবিত একীভূতকরণযোগ্য পাঁচ ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৭৭ শতাংশেরও বেশি। আর মূলধন ঘাটতি প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকা, যা দেশের ব্যাংকিং খাতের জন্য গুরুতর ঝুঁকিপূর্ণ বোঝা। এই খেলাপি ঋণের বেশির ভাগই অল্প কিছু গোষ্ঠীর কাছে। স্থানীয় বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যেও কিছু শক্তিশালী ও স্থিতিশীল ব্যাংক রয়েছে, যারা মূলধন ঘাটতির তালিকার বাইরে আছে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত একধরনের দ্বিমুখী বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে আছে; এক দিকে কিছু শক্তিশালী ও ভালোভাবে পরিচালিত ব্যাংক, অন্য দিকে বহু দুর্বল, রাজনৈতিক প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাংক। এই বৈপরীত্যই মূলধন ঘাটতি ও আস্থার সঙ্কটকে আরো তীব্র করেছে। ইতোমধ্যে পাঁচটি ইসলামী ব্যাংক মার্জারের কার্যক্রম অনেকটা এগিয়েছে। তবে মার্জার সফল করতে হলে একীভূত হওয়া ব্যাংকগুলোর সম্পদ, দায় ও খেলাপি ঋণের প্রকৃতি সম্পর্কে স্বচ্ছ চিত্র থাকা প্রয়োজন। না হলে একটি দুর্বল ব্যাংক আরেকটি তুলনামূলক স্থিতিশীল ব্যাংককে টেনে নামিয়ে দিতে পারে। খেলাপি ঋণ পুনরুদ্ধারে আইনিপ্রক্রিয়া শক্তিশালী করার কথা বলা হলেও বাস্তবে খুব সামান্য অগ্রগতি হয়েছে। আদালতে দীর্ঘসূত্রতা, রাজনৈতিক প্রভাব এবং বড় ঋণগ্রহীতাদের অদম্য ক্ষমতা খেলাপি ঋণ আদায় প্রায় অকার্যকর করে তুলেছে।

প্রশ্ন উঠছে, দুর্বল ও মূলধন ঘাটতির ব্যাংকগুলোর সমস্যা থেকে উত্তরণের উপায় কি মার্জার? অভিজ্ঞতা বলছে, মার্জার একটি অন্যতম সমাধান যদিও একমাত্র নয়। ২০০৮ সালের আর্থিক সঙ্কটে যুক্তরাষ্ট্রে শত শত ছোট ও মাঝারি ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে পড়ে। সরকার ‘Troubled Asset Relief Program (TARP)’ চালু করে, যার আওতায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাংকগুলোতে সরাসরি মূলধন ঢালা হয়। একই সাথে বেশ কিছু ব্যাংক একীভূত হয়, যেমন- ওয়াশিংটন মিউচুয়ালকে জেপি মরগান চেজ অধিগ্রহণ করে। সরকারি এই সহায়তা ও নিয়ন্ত্রিত মার্জারের সমন্বয়ে বড় সঙ্কট সামাল দেয়া সম্ভব। জাপান ‘লস্ট ডেকেড’-এ পড়েছিল মূলত ব্যাংক খাতে অতি ঝুঁকিপূর্ণ ঋণ বিতরণের কারণে। ১৯৯৮ সালে সরকার ‘Financial Reconstruction Commission’ গঠন করে। এই কমিশনের অধীনে দুর্বল ব্যাংকগুলো হয় একীভূত হয়, নয়তো সরাসরি বন্ধ করে দেয়া হয়। একই সাথে ব্যাংকগুলোর নন-পারফর্মিং ঋণ কাটছাঁটের বাধ্যবাধকতা দেয়া হয়। এর ফলে এক দশকের মধ্যে ব্যাংকিং খাত কিছুটা সুস্থ হয়ে ওঠে। গ্রিসের ব্যাংকগুলো অতিরিক্ত সরকারি বন্ডে বিনিয়োগ করে বিপদে পড়ে। তাদের অভিজ্ঞতা দেখিয়েছে, আন্তর্জাতিক ঋণদাতাদের চাপও কখনো কখনো সংস্কারকে ত্বরান্বিত করে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আইএমএফের সহায়তায় ব্যাংকগুলোর পুনর্গঠন করতে হয়। দুর্বল ব্যাংকগুলো একীভূত করা হয়, আবার কিছু ব্যাংক বন্ধও করা হয়। ভারত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে দুর্বলতর ব্যাংকগুলোকে শক্তিশালীদের সাথে একীভূত করে ১০টি ব্যাংক থেকে চারটি তৈরি করে। এই নীতি বাস্তবায়নের ফলে মূলধন কাঠামো শক্তিশালী হয় এবং প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার সক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এসব অভিজ্ঞতা থেকে বোঝা যায়, দুর্বল ব্যাংককে অন্ধভাবে বাঁচিয়ে রাখা সমাধান নয়। কখনো মার্জার, কখনো বন্ধ করে দেয়া, কখনো বিদেশী বিনিয়োগকারীর হাতে ছেড়ে দেয়ার মাধ্যমে সমাধান হয়।

বিশ্বের অভিজ্ঞতা বলছে, দুর্বল ব্যাংকগুলোর মার্জারই সব সময় যথেষ্ট নয়। যুক্তরাষ্ট্রে ২০০৮ সালের আর্থিক সঙ্কটে সরকার ব্যাংকগুলোতে মূলধন ঢালার পাশাপাশি বড় ব্যাংক দিয়ে ছোট ব্যাংকগুলোকে অধিগ্রহণ করেছিল। জাপান নব্বই দশকে দুর্বল ব্যাংক বন্ধ করে, কিছু ব্যাংক একীভূতও করে। গ্রিসে অনেক ব্যাংক বন্ধ এবং কিছু বিদেশী বিনিয়োগকারীর কাছে বিক্রি করা হয়।

তবে রাজনৈতিক বিবেচনায় অনুমোদিত দুর্বল ব্যাংকগুলো হয় একীভূত করতে হবে, নয়তো বাজার থেকে বের করে দিতে হবে। বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত বর্তমানে যে পরিস্থিতিতে রয়েছে, সেখানে কিছু কৌশলগত পদক্ষেপ অপরিহার্য। যেমন- দুর্বল ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ ও শীর্ষ ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন এনে নতুনভাবে সাজানো। দুর্বল ব্যাংকে বিদেশী কৌশলগত বিনিয়োগকারী আনা, যেমন- মালয়েশিয়া বা ফিলিপাইনে হয়েছে। দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি করে খেলাপি ঋণ আদায় করতে হবে। কিন্তু বড় ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল কার্যকর করার বিকল্প নেই। রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালীসহ বড় ব্যাংকগুলোতে বারবার সরকারি অর্থ ঢালা হচ্ছে, কিন্তু পরিচালন কাঠামোতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ থাকায় প্রকৃত সংস্কার হচ্ছে না। এখানকার বোর্ড ও শীর্ষ ব্যবস্থাপনায় পেশাদারিত্ব আনতে হবে। বাংলাদেশে ডিজিটাল ব্যাংকিং এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে। অথচ ভারত, মালয়েশিয়া বা চীন এই খাতে দ্রুত এগিয়ে গেছে। ডিজিটাল ব্যাংকিং সম্প্রসারণ করলে খরচ কমবে, স্বচ্ছতা বাড়বে এবং গ্রাহকের আস্থা ফিরবে। দুর্বল ব্যাংকে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করা গেলে শুধু মূলধনই নয়, ব্যবস্থাপনা দক্ষতাও বাড়বে। তবে এ জন্য নীতিনির্ধারকদের স্বচ্ছতা ও প্রণোদনা নিশ্চিত করতে হবে। ক্ষুদ্রঋণ, কৃষিঋণ ও এসএমই ঋণে বিশেষায়িত হওয়া বাজারে টিকে থাকার কৌশল। এভাবে দেখা যায়, মার্জার একটি গুরুত্বপূর্ণ পথ হলেও বিকল্প পদক্ষেপ ছাড়া সমাধান দীর্ঘস্থায়ী হবে না।

পরিশেষে বলতে হয়, বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত এখন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। ৬১ ব্যাংকের মধ্যে ২৩টির মূলধন ঘাটতি পুরো অর্থনীতি জন্য হুঁশিয়ারি। রাজনৈতিক বিবেচনায় ব্যাংক অনুমোদনের দায় আজ দেশের অর্থনীতিকে বহন করতে হচ্ছে। এখনই সময় সাহসী ও কঠোর পদক্ষেপ নিয়ে অকার্যকর ব্যাংকগুলো মার্জার বা বন্ধকরণ, খেলাপি ঋণ আদায়, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের সংস্কার এবং প্রযুক্তিভিত্তিক নতুন ব্যাংকিং সংস্কৃতি গড়ে তোলা। অন্যথায় ব্যাংক খাতের অস্থিরতা শুধু বিনিয়োগ ও প্রবৃদ্ধিকেই ক্ষতিগ্রস্ত করবে না; বরং সাধারণ আমানতকারীর আস্থাও ভেঙে দেবেÑ যা হলে পুরো অর্থনীতি এক ভয়াবহ ঝুঁকির মুখে পড়বে।

আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা শিক্ষা দেয়, অতিরিক্ত ব্যাংক টিকিয়ে রাখা যায় না, দুর্বল ব্যাংককে বাঁচানো যায় না। যে দেশই সফল হয়েছে, তারা স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও সাহসী সংস্কারের মাধ্যমে সঙ্কট কাটিয়েছে। বাংলাদেশকেও একই পথে হাঁটতে হবে।

লেখক : অর্থনীতিবিদ, গবেষক ও কলামিস্ট
[email protected]