বুদ্ধিজীবী, পিলখানা ও হাদি হত্যাকাণ্ড

বুদ্ধিজীবী, পিলখানা এবং হাদি হত্যাকাণ্ড একই ধরনের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন বলে মনে করার যথেষ্ট যুক্তি এবং কারণ রয়েছে।

ড. এ কে এম মাকসুদুল হক
ড. এ কে এম মাকসুদুল হক |নয়া দিগন্ত

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের ঠিক দু’দিন আগে অর্থাৎ- ১২ ডিসেম্বর বাংলাদেশের তরুণ বুদ্ধিজীবী শরিফ ওসমান হাদিকে সন্ত্রাসীরা নির্মমভাবে শহীদ করে। তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য ছিলেন না। ছিলেন একজন সাংস্কৃতিক অঙ্গনের নেতা। প্রচলিত স্রোতের বিপরীতে এই দেশের গণমানুষের সাংস্কৃতিক রূপান্তরের কাজটি শুরু করেছিলেন তিনি। কিন্তু তাকে ঠাণ্ডামাথায় হত্যা করা হয়। দেশের বুদ্ধিজীবী হত্যার ঘটনা এই প্রথম নয়। এটি শুরু হয়েছিল একাত্তরে স্বাধীনতার ঊষালগ্নে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যার মাধ্যমে। পরে ২০০৯ সালে পিলখানায় তৎকালীন বিডিআর অফিসারদের নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিল। এসব হত্যাকাণ্ডের উদ্দেশ্য এবং হত্যাকারী গোষ্ঠীর মধ্যে যথেষ্ট মিল পাওয়া যায়। বাংলাদেশকে বিকলাঙ্গ করে রাখাই ছিল এসব হত্যাকাণ্ডের মিশন।

অপারেশন হাদি কিলিং : বর্ষা বিপ্লবের ধ্বংসস্তূপ থেকে বেরিয়ে আসা শরিফ ওসমান হাদি বাংলাদেশের ইতিহাসে স্মরণকালের সবচেয়ে কনিষ্ঠ বিপ্লবী ছিলেন। তার বিপ্লবী সময়কাল ছিল মাত্র দেড় বছর। এই সময়ের মধ্যে হাজার বছরের অবদান রেখে গেছেন। ৩৬ জুলাই বিপ্লব সফল করার পর তিনি সাংস্কৃতিক বিপ্লবের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তার সাংস্কৃতিক স্লোগান এ দেশের গণমানুষের হৃদয়ে অনুরণিত হচ্ছিল। যে স্লোগান বা দর্শন ‘এপার বাংলা ওপার বাংলার’ নামে চাপিয়ে দেয়া সংস্কৃতির মর্মমূলে কুঠারাঘাত করেছিল। দেশের মানুষ ভারতীয় সাংস্কৃতিক আগ্রাসনবিরোধী মিছিলে শরিক হচ্ছিলেন দলে দলে। এমনকি দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিকেও হাদি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিলেন। ফলে স্বাভাবিকভাবে আধিপত্যবাদী এবং তাদের এ দেশের দোসররা হাদিকে সহ্য করতে পারেনি। তাই হাদিকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে।

হাদি হত্যাকাণ্ডের পূর্বাপর বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়, অত্যন্ত ঠাণ্ডামাথায় এ মিশন সম্পন্ন করা হয়। অভিযুক্ত হত্যাকারী ফয়সাল কূটকৌশলে হাদির ছায়া হয়ে দাঁড়ায়। জুমার দিনে নামাজের পর কোলাহলহীন সময়ের সুযোগ কাজে লাগিয়ে মোটরসাইকেল থেকে তাকে গুলি করে ফয়সাল। ফয়সালকে পেছন থেকে একটি ‘সিএনজি’ ব্যাকআপ সাপোর্ট দেয়। ফয়সাল দুটো পিস্তল সাথে রাখে যেন হাদির মৃত্যু নিশ্চিত করা যায়। মাথায় গুলি করলে মৃত্যু নিশ্চিত হবে, সেই প্রশিক্ষণও ছিল তার। গুলির পর সেফ হাউজ বোনের বাসায় যাওয়া; সেখান থেকে সব আলামত নষ্টের চেষ্টা, পালিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া ও এলোমেলো পথ অনুসরণ- সবই ঠাণ্ডামাথার ষড়যন্ত্র। যে পাঁচ-ছয়বার গাড়ি বদল করেছে ফয়সাল, সবখানে গাড়ি আগেই প্রস্তুত ছিল এবং সবশেষে সীমান্তে পথপ্রদর্শকও তৈরি ছিল বলে পত্রপত্রিকায় প্রকাশ। সবশেষে ভারতে পলায়ন!

ফয়সালের পলায়নের সংবাদ সত্য হলে বলতে হবে- ভারতের মাটি ব্যবহার করে এই ষড়যন্ত্র সফল করা হয়েছে। ফয়সালের অ্যাকাউন্টে প্রচুর অর্থের লেনদেন এবং তার ফেলে যাওয়া বিপুল অর্থের ব্যাংক চেকের সন্ধান পাওয়া যায়। কিছু দিন আগে মানিলন্ডারিংয়ের গডফাদার এস আলম হাজার কোটি টাকা পলাতক ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার কাছে হস্তান্তর করেছিল বলে জানা যায়। সেই টাকা হাদি হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। এ ছাড়া জুলাই বিপ্লবকে ভারত নিজেদের পরাজয় ভেবে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার সবধরনের চেষ্টায় লিপ্ত বলে স্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে। হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে তাকে বাংলাদেশবিরোধী বক্তব্য ও উসকানি প্রচার করতে দেয়া হচ্ছে। কলকাতায় আওয়ামী লীগের অফিস খোলা হয়েছে। বাংলাদেশকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নেয়া ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ও তার দোসর বেশির ভাগ আওয়ামী নেতাকর্মী ভারতের আশ্রয়ে রয়েছে। কাজেই সব আলামত দেখে এ কথা বলা অযৌক্তিক হবে না যে, হাদি হত্যাকাণ্ডে ভারতের হাত রয়েছে।

পিলখানা হত্যাকাণ্ড : ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পৃথিবীর সামরিক ইতিহাসের জঘন্যতম ও নৃশংস হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। সৈনিক থেকে শুরু করে মেজর জেনারেল পর্যন্ত সব পদবির সৈনিককে হত্যা করা হয়েছিল বিদ্রোহের নামে। যেখানে অফিসারই নিহত হয়েছিলেন পঞ্চাশের বেশি। এ হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত তদন্ত ধামাচাপা দিয়ে ‘আর্টিফিশিয়াল’ তদন্ত সম্পন্ন করা হয়েছিল। যেসব অফিসার প্রকৃত তথ্য জেনেছিলেন তাদের চাকরিচ্যুতি, গুম, হত্যা- ইত্যাদির মাধ্যমে নির্মূলের চেষ্টা হয়েছিল। যেসব অফিসার প্রতিবাদ করেছিলেন তাদের জঙ্গি তকমা দিয়ে হয় হত্যা অথবা দেশছাড়া করা হয়েছিল। ‘তাপস’ হত্যাচেষ্টার নাটক সাজিয়ে কয়েকজন সেনা অফিসারকে মিথ্যা আসামি বানিয়ে জেলে ভরা হয়েছিল।

সম্প্রতি মেজর জেনারেল ফজলুর রহমানের নেতৃত্বে পিলখানা হত্যাকাণ্ড স্বাধীন তদন্ত কমিশন প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এতে দেখা যায়, ভারতের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় তাদের বিশ্বস্ত চর শেখ হাসিনার সমর্থনে পিলখানার হত্যাকাণ্ড সম্পন্ন করা হয়। বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও আস্থার প্রতীক সেনাবাহিনীকে ধ্বংস করাই ছিল এর উদ্দেশ্য। সেনাবাহিনীকে দুর্বল করলে এক দিকে ভারতের আধিপত্যবাদ সফল হবে, অন্য দিকে হাসিনার ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার পথ সুগম হবে বলে তারা ভেবেছিল। এ কারণে হাসিনার টানা সাড়ে ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার সুযোগ হয়েছিল। অন্য দিকে ভারত তার শত বছরের লালিত স্বপ্নের বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশকে নিজেদের একটি অঙ্গরাজ্যের মতো করে ফেলেছিল।

পিলখানা হত্যাকাণ্ড ছিল অত্যন্ত ঠাণ্ডামাথার ঘটনা। ভারতীয় সংস্থা এবং এ দেশের ভারতীয় চর আওয়ামী নেতাদের মাধ্যমে এ হত্যাকাণ্ড বাস্তবায়ন করা হয়েছিল। এ হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্র, গোয়েন্দা সহায়তা, লজিস্টিক সাপোর্ট এমনকি হত্যাকাণ্ড বাস্তবায়নকারী সরবরাহ করেও সহায়তা দিয়েছে ভারত। হত্যাকাণ্ড চলাকালে হিন্দিভাষী লোকজনের অস্তিত্ব পিলখানায় ছিল বলে তদন্তে প্রকাশিত হয়েছে।

বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড : একাত্তরে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড সম্পর্কেও ভারতের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরে পাকিস্তানি বাহিনী এবং আলবদর-রাজাকারদের এ হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত করা হচ্ছিল। এর জন্য প্রয়োজনীয় বয়ান একাত্তরের ১৪ ডিসেম্বরের পর থেকে তৈরি করা হয়েছিল। ইতিহাস সবসময় বিজয়ীরা তৈরি করে থাকেন। পরাজিতদের ইতিহাস শুধু ভিলেনের ভূমিকায় ভরপুর থাকে। স্বাধীনতার পরপর ভারত এবং তাদের এদেশীয় তল্পিবাহকরা বুদ্ধিজীবী হত্যার ন্যারেটিভ জাতিকে গিলিয়েছে। গত দেড় দশকে জাতির সব বয়সী নাগরিককে সেই অপ্রমাণিত ন্যারেটিভ মননে-মগজে অঙ্কিত করে দেয়ার চেষ্টা হয়েছে একতরফাভাবে। এ ন্যারেটিভ শুধু অভিযোগ। এর কোনো প্রমাণ তারা হাজির করেনি বা করতে পারেনি।

শেখ মুজিবুর রহমান দেশে ফেরার পর নিহত বুদ্ধিজীবীদের আত্মীয়-স্বজনের চাপে একটি তদন্ত কমিটি করেছিলেন। সেই তদন্ত কমিটি তদন্ত সম্পন্ন করে প্রতিবেদন নিয়ে শেখ মুজিবের কাছে গেলে তিনি প্রতিবেদনটি এনএসআইয়ের তৎকালীন প্রধান নুরুল মোমেন খান মিহিরের কাছে জমা দিতে বলেছিলেন। কমিটি সেই মোতাবেক প্রতিবেদন জমা দেয়; কিন্তু আজ পর্যন্ত সেই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়নি। তখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল এবং এরপরও চার মেয়াদে প্রায় ২০ বছর ক্ষমতায় ছিল; কিন্তু ওই তদন্ত প্রতিবেদন মোতাবেক বুদ্ধিজীবী হত্যায় অভিযুক্তদের বিচার করেনি। জানা যায়, জহির রায়হান বুদ্ধিজীবী হত্যার ঘটনার অনুসন্ধান নিয়ে অনেক এগিয়েছিলেন। বেশ কিছু আলামতও সংগ্রহ করেছিলেন। জহির রায়হান ১৯৭২ সালে ২৫ জানুয়ারি প্রেস ক্লাবে হুমকি দিয়েছিলেন তিনি ৩০ জানুয়ারি এমন কিছু প্রকাশ করবেন যাতে অনেক মন্ত্রীর মুখোশ উন্মোচিত হয়ে পড়বে। কিন্তু তার আগেই ৩০ জানুয়ারি সকালে টেলিফোন পেয়ে নিখোঁজ ভাই শহিদুল্লাহ কায়সারের খোঁজে বের হয়ে জহির রায়হান নিরুদ্দেশ হন।

বুদ্ধিজীবী হত্যার জন্য ঢালাওভাবে যে ন্যারেটিভ প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছিল; এ ব্যাপারে সঠিক তদন্ত বা গবেষণা- কোনোটি করা হয়নি। জানা যায়, বুদ্ধিজীবী হত্যা শুরু হয়েছিল ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর থেকে। অথচ ৩ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান এবং ঢাকার অবস্থা কেমন ছিল, ঢাকা কাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল- তা চিন্তার খোরাক জোগায়।

৩ ডিসেম্বর ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে পূর্ব পাকিস্তান ফ্রন্টে যুদ্ধ ঘোষণা করে। এর আগে মুক্তিযোদ্ধারা ৯ মাস ধরে পাকিস্তানি বাহিনীকে তছনছ করে দিয়েছিল। ৬ ডিসেম্বর যশোর অঞ্চলে পাকবাহিনী পরাজিত হয়ে পালিয়ে যায় এবং ভারতীয় বাহিনী দখল করে। ৭ ডিসেম্বর কুমিল্লা এবং পাবনার পতন ঘটে। ৮ ডিসেম্বর জামালপুর ও খুলনায় পাকবাহিনী পরাজিত হয়। ৯ ডিসেম্বর ময়মনসিংহ ও বগুড়ার পতন ঘটে। পাকবাহিনীর মেঘনা নদী বরাবর প্রতিরক্ষা লাইন ভেঙে যায়। ১০ ডিসেম্বর সিলেটে পরাজিত হয় এবং উত্তরাঞ্চল থেকে পাকবাহিনী পশ্চাদপসরণ করে ঢাকার দিকে পালাতে থাকে। ১১ ডিসেম্বর টাঙ্গাইলে ভারতীয় ছত্রীসেনা অবতরণ করে এবং টাঙ্গাইল ও জামালপুরে পাকবাহিনীকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়। ১২ ডিসেম্বর ভারতীয় বাহিনী হেলিকপ্টারে মেঘনা পাড়ি দেয় এবং পাকবাহিনীর ঢাকা প্রতিরক্ষা ব্যূহ ভেঙে পড়ে। ১৩ ডিসেম্বর সিলেট এবং খুলনায় পাক সেনারা বিচ্ছিন্ন হয়ে পুরোপুরি পর্যুদস্ত হয়। ১৪ ডিসেম্বর ঢাকায় গভর্নর হাউজে ভারতীয়রা বোমাবর্ষণ করে এবং পাকবাহিনী আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত নেয়। ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় ৯৩ হাজার সেনাসহ নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করে। আত্মসমর্পণের সময় ভারতীয় বাহিনীর সাথে এসেছিল ১০০ ভারতীয় ব্যবসায়ী, ১৫০ ভারতীয় সাংবাদিক ও ২০০ জন ভারতীয় আমলা।

অর্থাৎ- ভারতীয়রা বাংলাদেশ পরিচালনার জন্য যথেষ্ট পরিমাণ বুদ্ধিজীবী নিয়ে হাজির হয়েছিল। তারা মূলত নতুন বাংলাদেশ শাসনের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে এসেছিল। যুদ্ধের এমন পরিস্থিতি বলে দেয়- ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে পাকবাহিনী নিজেরা দৌড়ের ওপর ছিল এবং পলায়নপর ছিল। বেছে বেছে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করার মতো সময় ও পরিবেশ তাদের ছিল কি না তা চিন্তার দাবি রাখে। আর আলবদর-রাজাকারদের তৎপরতা তো দূরের কথা, তাদের প্রকাশ্যে থাকার মতো পরিবেশ-পরিস্থিতি ছিল কি না তা তদন্তসাপেক্ষে।

কাজেই দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের কারা হত্যা করেছে তার তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়া দরকার অথবা একটি নির্মোহ গবেষণা দরকার। তা ছাড়া দেশী-বিদেশী চাপে ভারতীয় বাহিনীর বাংলাদেশ ত্যাগ; যাওয়ার সময় হাজার কোটি টাকার সম্পদ লুটে নেয়া এবং পরবর্তী ৫৩ বছর ধরে বাংলাদেশকে আধিপত্যের বলয়ে রাখার সব কৌশলই বলে দেয়- বুদ্ধিজীবীদের কে বা কারা হত্যা করতে পারে! যাত্রার শুরুতে বাংলাদেশকে পঙ্গু করে দেয়ার চেষ্টা কারা করতে পারে! উল্লেখ্য, পাকবাহিনী ১৪ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণ করতে চেয়েছিল; কিন্তু ভারতীয়রা তা দু’দিন পিছিয়ে ১৬ তারিখে নিয়ে যায়। এর পেছনের রহস্য কী ছিল? তা ছাড়া নিহত বুদ্ধিজীবীদের অনেকে স্বাধীনতার পক্ষে থাকা সত্তে¡ও আওয়ামী লীগের আদর্শ ও ভারতীয় আধিপত্যের সমর্থক ছিলেন না। অনেকে বলেন, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ ঢাকায় ব্যাপকভাবে তৎপরতা চালাচ্ছিল।

কাজেই বুদ্ধিজীবী, পিলখানা এবং হাদি হত্যাকাণ্ড একই ধরনের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন বলে মনে করার যথেষ্ট যুক্তি এবং কারণ রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে অত্যন্ত জরুরি হলো সঠিক ইতিহাস জাতিকে জানাতে হবে। এ জন্য বুদ্ধিজীবী হত্যা তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হবে এবং এ হত্যাযজ্ঞ নিয়ে একটি গবেষণা পরিচালনা করতে হবে। সত্যতার নিরিখে ইতিহাস জানতে না পারলে একটি জাতি উন্নতি করতে পারে না।

লেখক : নিরাপত্তা বিশ্লেষক