জাতীয় সাংবিধানিক পরিষদ প্রস্তাবনা

রাজনৈতিক দলের কোনো কোনো ব্যক্তি মনে করেন, এ ধরনের একটি কাঠামো প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য বিব্রতকর হতে পারে। তারা আরো মনে করেন, বিচার বিভাগ ও নির্বাচন কমিশন যথার্থ স্বাধীন হলে এ ধরনের সাংবিধানিক কমিটি অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়বে। অন্যরা মনে করেন, সংবিধানের বর্তমান বিধান বহাল থাকলে কর্তৃত্ববাদকে স্বাগত জানানো হবে। সুতরাং ভারসাম্য বিধান অনিবার্য। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বাধীন করার জন্য এই সাংবিধানিক কমিটি আবশ্যক

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখন রাষ্ট্র সংস্কারের প্রান্তিক সময় অতিক্রম করছে। ক্ষমতার ভারসাম্য বিধান ও জন-আকাঙ্ক্ষার অনুকূলে বিভিন্ন ধরনের সংস্কার প্রস্তাবনা আলোচিত-সমালোচিত হচ্ছে। বাংলাদেশের সংবিধান মাত্র ১৭ বার সংশোধিত হয়েছে। এর অধিকাংশই রাজনৈতিক দলের নৈতিক ও অনৈতিক খায়েশ মেটানোর জন্য সম্পন্ন হয়েছে। ১৯৭২ সালের সংবিধানে প্রধানমন্ত্রীকে রাষ্ট্রের সার্বিক ক্ষমতার মালিক করা হয়েছে। সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন একবার খোলামেলাই বলেছিলেন, তাদের নেতা তথাকথিত জাতির পিতাকে সামনে রেখেই তাদের কাজ করতে হয়েছে। সুতরাং তিনি যাতে বিব্রত না হন, বিরক্ত না হন এবং কোনো জবাবদিহিতার সম্মুখীন না হন- সেভাবেই বিধানাবলি সংযুক্ত হয়েছে। এতে করে নেতা তুষ্ট হয়েছেন, আর দুষ্ট হয়েছে সংবিধান।

বাংলাদেশ রাষ্ট্রব্যবস্থায় দীর্ঘকাল ধরে প্রধানমন্ত্রিত্বের একনায়কত্ব কায়েম হয়েছে। সংসদীয় রাজনীতিতে সংসদীয় একনায়কতন্ত্র (Parliamentary Dictatorship) বলে একটি প্রবাদ আছে। তা নেগেটিভ অর্থই বহন করে। সংসদীয় রাজনীতির সূতিকাগার (Cradle of Democracy) গ্রেট ব্রিটেনে কথাটি প্রচলিত থাকলেও, বাস্তবে তার প্রমাণ কঠিন। বাংলাদেশের মতো রাষ্ট্রব্যবস্থায় যেখানে ব্যবস্থা বিকৃত এবং ব্যক্তি স্বৈরতান্ত্রিক, সেখানে অকৃত্রিম গণতান্ত্রিক আচরণ অসম্ভব। বিগত ১৫ বছরে আরোপিত ‘বিকারগ্রস্ত ব্যক্তিতন্ত্র’ এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। তাই রাষ্ট্র সংস্কারের যে জন-আকাঙ্ক্ষা ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে সেখানে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা হ্রাস ও প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা বৃদ্ধি অথবা অন্যবিদ প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থার মাধ্যমে ক্ষমতার ভারসাম্য বিধানের চেষ্টা চলছে।

পৃথিবীর বিভিন্ন রাষ্ট্রে এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক পদগুলো বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় মনোনীত ও নির্বাচিত হয়। যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রধান বিচারপতি নিয়োগে রাষ্ট্রপতি মনোনয়ন দেন, সিনেট তা অনুমোদন করে। অ্যাটর্নি জেনারেল, চিফ অব আর্মি স্টাফ একই পন্থায় অনুমোদিত হয়। নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য রয়েছে স্বাধীন ফেডারেল নির্বাচন কমিশন। কমিশনের সদস্যরা প্রেসিডেন্ট দ্বারা মনোনীত ও সিনেট কর্তৃক অনুমোদিত। একবার মনোনীত হলে তাকে অপসারণের ক্ষমতা প্রেসিডেন্টের থাকে না। যুক্তরাজ্যে প্রধান বিচারপতি সংবিধিবদ্ধ কমিশনের সুপারিশক্রমে নিয়োগ লাভ করেন। নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ লাভ করেন পুরনো নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে স্বচ্ছপ্রক্রিয়ায়। অ্যাটর্নি জেনারেল অবশ্য প্রধানমন্ত্রী দ্বারা নিয়োগপ্রাপ্ত হন। সেনাপ্রধান প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশে রাজা বা রানী নিয়োগ দেন। ভারতে প্রধান বিচারপতি নিয়োগপ্রাপ্ত হন রাষ্ট্রপতির সদিচ্ছায়। অ্যাটর্নি জেনারেল রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দেন প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার পরামর্শে। সেনাপ্রধান নিযুক্তি পান রাষ্ট্রপতির দ্বারা কিন্তু প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সুপারিশে। এসব বিশ্লেষণের পরে সর্বত্রই দেখা যায়, একটি Check and Balance বা ভারসাম্য বিধানের মাধ্যমে সাংবিধানিক নির্বাচনব্যবস্থা কার্যকর। বাংলাদেশের অতীত অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। অতীতকে ভুলে ভবিষ্যৎ রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য সাংবিধানিক পদগুলোতে ভারসাম্য বিধানের জন্য জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এখন প্রান্তিক পর্যায়ে রয়েছে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন অনেক প্রস্তাবনা উত্থাপন করেছে। যেমন- সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের সংশোধনী, জাতীয় সংসদের স্থায়ী কমিটিগুলোর বিভাজন, জাতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠা এবং রাষ্ট্রপতির অধিকতর ক্ষমতায়ন। এর মধ্যে যে প্রস্তাবটি নাগরিক সমাজে বেশ গুরুত্ব অর্জন করেছে তা হলো- জাতীয় সাংবিধানিক পরিষদ। প্রাথমিকভাবে জাতীয় সাংবিধানিক পরিষদ-এনসিসি বলা হলেও এখন এটির নতুন নামকরণ হয়েছে। সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবিত ‘জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলের’ (এনসিসি) নাম পরিবর্তন করে নতুন নাম দেয়ার কথা বলেছেন ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ। গত বুধবার কমিশনের দ্বিতীয় দফা সংলাপের ষষ্ঠ দিনের আলোচনায় রাজনৈতিক দলগুলোর সামনে তিনি প্রস্তাবিত এই কমিশনের নাম ‘সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ কমিটি’ দেয়ার কথা বলেন। আমরা মনে করি, নামটি দীর্ঘ এবং শ্রুতিমধুর নয়। আরো সংক্ষিপ্ত ও একাডেমিক নাম খুঁজতে হবে। নামটি হতে পারে- ‘সংবিধিবদ্ধ নিয়োগ কমিটি’। যাই হোক, আলী রীয়াজ আরো বলেন, ‘এনসিসির নতুন নাম নিয়ে কারো কোনো দ্বিমত নেই। বিএনপি এনসিসি নিয়ে আগেও বিরোধিতা করেছে, এখন নতুন প্রস্তাবের প্রয়োজনীয়তা কী, সেটি তারা বলছে।’

রাষ্ট্রীয় কার্যাবলিতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আনা এবং রাষ্ট্রীয় অঙ্গ ও প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ভারসাম্য নিশ্চিত করতে ৯ সদস্যের একটি জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল বা এনসিসি গঠনের সুপারিশ রয়েছে সংবিধান সংস্কার কমিশনের। রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গের প্রতিনিধির সমন্বয়ে গঠিত জাতীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে ‘জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল বা এনসিসি’ গঠনের এ সুপারিশ করে কমিশন। সে সময় বলা হয়েছিল, এনসিসিতে থাকবেন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, নিম্নকক্ষের স্পিকার, উচ্চকক্ষের স্পিকার, বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি, বিরোধী দল মনোনীত নিম্নকক্ষের ডেপুটি স্পিকার, বিরোধী দল মনোনীত উচ্চকক্ষের ডেপুটি স্পিকার এবং প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতার রাজনৈতিক দলের বাইরে থেকে উভয় কক্ষের কোনো একজন সংসদ সদস্য। এর আগে এনসিসি গঠনে বিরোধিতা করে বিএনপি ও গণফোরাম। এটি গঠন হলে আরেকটি ‘স্বৈরতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান’ গড়ে উঠবে বলছিল গণফোরাম। আর বিএনপি বলেছিল এনসিসি হলে তার ‘জবাবদিহিতা থাকবে না’ বিধায় প্রয়োজন নেই।

নতুন এই কাঠামো থেকে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতির নাম বাদ দেয়া হয়েছে। সংশোধিত প্রস্তাবে সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ কমিটির সদস্য হিসেবে প্রধানমন্ত্রী, নিম্ন ও উচ্চকক্ষের স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেতা, প্রধান বিরোধী দল ব্যতীত অন্যান্য দলের একজন প্রতিনিধি, রাষ্ট্রপতির প্রতিনিধি (আইনের মাধ্যমে নির্ধারিত যোগ্যতাসম্পন্ন), প্রধান বিচারপতি কর্তৃক মনোনীত আপিল বিভাগের একজন কর্মকর্তা। এ কমিটির সভার সভাপতিত্ব করবেন নিম্নকক্ষের স্পিকার। প্রস্তাবটি উপস্থাপন করে কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ জানিয়েছেন, অ্যাটর্নি জেনারেল ও প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধান নিয়োগ, নতুন কমিটির হাতে থাকবে না। একই সাথে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় এ কমিটির কার্যকারিতা থাকবে না।

বিষয়টি জাতীয় ঐকমত্যের দিকেই যাচ্ছে বলে বিশ্বাস করা যায়। মূলত সংবিধান অনুমোদিত সব রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ পদ বণ্টনের একমাত্র মালিক প্রধানমন্ত্রী। ফলে যে দল ক্ষমতায় যায় তারা তাদের অনুগত লোককে নিয়োগ দেয়া হয়। তখন যোগ্যতা, সততা ও স্বচ্ছতার কোনো প্রশ্নই থাকে না; বরং দলের প্রতি তার আনুগত্যই একমাত্র বিবেচিত বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। প্রকারান্তরে ওই সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো দলীয়করণের আবর্তে পড়ে হয়। প্রস্তাবিত কমিটি সব সাংবিধানিক পদে নিয়োগ দেবে। বিগত বছরগুলোতে বিশেষত নিকট অতীতের আওয়ামী আমলে এরা অযোগ্যতা, অদক্ষতা, দুর্নীতি, দলীয়করণ, গোষ্ঠীস্বার্থ সাধন এবং স্বজনপ্রীতিতে রেকর্ড স্থাপন করেছে। এ সাংবিধানিক পদগুলোর মধ্যে রয়েছে- নির্বাচন কমিশন, সরকারি কর্মকমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, তথ্য কমিশন, মানবাধিকার কমিশন ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের মতো প্রতিষ্ঠান।

এখন সংস্কার প্রস্তাব গৃহীত হলে প্রতিষ্ঠিত ‘সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ কমিটি’ সব কিছু বিবেচনা করবে। তাদের সুপারিশে সব পদের নিয়োগ ও মনোনয়ন সম্পন্ন হবে। বাংলাদেশের রাষ্ট্রব্যবস্থায় এটি হবে একটি নতুন সংযোজিত বিষয়। শাসক দলের একক প্রাধান্য না থাকার ফলে উপযুক্ত ব্যক্তিরা নিয়োগ পাবেন, এমন আশা করা যায়। তবে আশঙ্কার বিষয়ও রয়েছে। বাংলাদেশের জন চরিত্রে যে অনৈক্য রয়েছে তা যদি প্রস্তাবিত কমিটিকে প্রভাবিত করে তবে সিদ্ধান্ত নেয়া কঠিন হবে। কমিটি গঠনের যে কাঠামো আমাদের সামনে সর্বশেষ গত বুধবারে উপস্থাপিত হয়েছে তা নিয়েও কথা থাকতে পারে। প্রথম দিকে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতিকে এই কমিটির অন্তর্ভুক্ত করায় বাদ সেধেছে বিএনপি। এখন ইতিবাচক কথা হলো, বিএনপি তাদের মতো করে এই কাঠামো অনুমোদন করতে চায়। আইন বিভাগ, বিচার বিভাগ ও শাসন বিভাগের যেসব প্রতিনিধি এই কমিটিতে থাকছেন, তা যৌক্তিক বলেই মনে হয়। তবে এই কমিটিতে পেশাদারত্বের প্রতিনিধিত্ব থাকলে ভালো হয়। সিভিল সোসাইটির অংশগ্রহণ প্রস্তাবিত কমিটিতে নেই বললেই চলে। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফেডারেশনের নির্বাচিত সভাপতি এবং সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচিত সভাপতির স্থান হতে পারে।

দেখা যাচ্ছে, ওই কমিটির আওতা থেকে অ্যাটর্নি জেনারেল এবং সেনাপ্রধান নিয়োগের বিষয়টি বাদ দেয়া হয়েছে। কেন বাদ দেয়া হয়েছে, বিষয়টি স্পষ্ট নয়। পেশাদারত্বই প্রস্তাবিত কমিটির মূল বিষয় বলে বিবেচিত হতে পারে। সেখানে অ্যাটর্নি জেনারেল ও সেনাপ্রধানও অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারেন। প্রস্তাব করা হচ্ছেÑ সংসদ ভেঙে গেলেও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা না নেয়া পর্যন্ত প্রস্তাবিত কমিটির সদস্যরা পদে বহাল থাকবেন। আইনসভা না থাকলে কমিটির সদস্য হবেন রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টা মনোনীত উপদেষ্টা পরিষদের দু’জন সদস্য। অতীতে পেশাদারত্ব, সততা, যোগ্যতা ও স্বচ্ছতা নির্ণয় না করে বড় বড় পদে নিয়োগ দিয়ে পস্তানোর অভিজ্ঞতা আমাদের রয়েছে। আমাদের বিশ্বাস, প্রস্তাবিত কমিটির ৯ জন একত্রিত হয়ে যে সিদ্ধান্তটি নেবেন সেটি সঠিক হওয়ার সম্ভাবনা সমধিক। মনীষী প্লেটো বলেন, Collective wisdom is much more better than that of a philosopher king। একজন দার্শনিক রাজার চেয়ে সম্মিলিত মতামত অধিক শ্রেয়। সুতরাং সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত।

বাংলাদেশ জাতি-রাষ্ট্রের অর্ধশতাব্দী অতিক্রান্ত হলেও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো স্থিতিশীলতা অর্জন করেনি। যখন যারা ক্ষমতায় এসেছে তাদের ইচ্ছামতো কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। নীতি ও আদর্শের কোনো বালাই সেখানে ছিল না। এখন যে দলই ক্ষমতায় আসুক একটি সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা সরকারকে বাধ্য করবে সাংবিধানিক নিয়োগ নিশ্চিত করতে। তবে যেকোনো দল বা সরকারের সদিচ্ছাই বড় কথা। একটি সরকার যখন ক্ষমতায় থাকে, অন্যায় ও অপকৌশলে অনেক কিছুই জায়েজ করে নিতে পারে। আমরা মনে করি, এ ধরনের কাঠামোগত নির্দেশনাই সব কিছু নয়।

রাজনৈতিক দলের কোনো কোনো ব্যক্তি মনে করেন, এ ধরনের একটি কাঠামো প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য বিব্রতকর হতে পারে। তারা আরো মনে করেন, বিচার বিভাগ ও নির্বাচন কমিশন যথার্থ স্বাধীন হলে এ ধরনের সাংবিধানিক কমিটি অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়বে। অন্যরা মনে করেন, সংবিধানের বর্তমান বিধান বহাল থাকলে কর্তৃত্ববাদকে স্বাগত জানানো হবে। সুতরাং ভারসাম্য বিধান অনিবার্য। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বাধীন করার জন্য এই সাংবিধানিক কমিটি আবশ্যক। ‘সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ কমিটি’ বর্তমান বাস্তবতায় একটি মৌলিক সংস্কার। ভবিষ্যৎ সরকার কাঠামো পরিচালনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এখনই যদি সংস্কারের মাধ্যমে এভাবে ক্ষমতার ভারসাম্য নির্ণয় করা সম্ভব না হয়, তাহলে তা গণ-অভ্যুত্থানের জন-আকাক্সক্ষার বিপরীত কার্যক্রম বলে বিবেচিত হবে। জনগণ বিশ্বাস করে জনস্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলো সাংবিধানিক পদগুলোর স্বচ্ছতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করবে।

লেখক : অধ্যাপক (অব:), সরকার ও রাজনীতি বিভাগ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
[email protected]