আমজনতা ফের পথে নামবে!

বাংলাদেশকে কখনো ভারতের করদরাজ্য হতে দেবে না। ভারতের করদরাজ্য বানাতে অতীতে কত অপচেষ্টা হয়েছে; বয়ান তৈরি করা হয়েছে; কিন্তু কোনো কাজে আসেনি। আল্লাহ যদি চান তো ভবিষ্যতেও কোনো কাজে আসবে না।

মানুষ বিস্ময়ে বিমূঢ় স্তম্ভিত হবে, নাকি ভয়ে কুঁকড়ে যাবে! ভয়ঙ্কর এক দুঃসংবাদ সম্প্রতি জাতির সামনে এনে উপস্থিত করেছে জাতীয় একটি দৈনিক। যখন ওই পত্রিকার শীর্ষ খবর হিসেবে প্রকাশিত হয়েছে তার পরের দিন ছিল এ জনপদের তাৎপর্যপূর্ণ একটি দিন অর্থাৎ ৫ আগস্ট। ওই খবরের শিরোনাম ছিল, “বিমানবাহিনীর অভ্যন্তরের ‘র’ নেটওয়ার্ক ফাঁস’’। এ খবরের বিস্তারিত জানতে (যারা খবরটি পড়েননি) তারা আমার দেশের ওই দিনের ই-পেপারের সাহায্য নিতে পারেন।

যাই হোক, ওই খবর নিয়ে এখন চুলচেরা অনুসন্ধান-বিশ্লেষণে সময় ক্ষেপণের কোনো অবকাশ-অজুহাত নেই। জাতির জন্য দুঃখের সব সীমা অতিক্রম করে যাবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। স্পর্শকাতরতারও একটি সীমা আছে। এমনও হতে পারে দেশের সার্বভৌমত্বের বিষয় নিয়েও ‘শাক দিয়ে মাছ ঢাকার’ কোনো বিষয়-আসয় আছে কি নেই, সেটি কারো জানা নেই। তবে নিকট অতীতে ফ্যাসিবাদী জমানায় কী হয়েছে, কী ঘটেছে, এসব কোনো প্রশ্ন ছিল না; বরং প্রশ্ন ছিল সেই অন্ধযুগে বদ্ধ ঘরে কী হয়নি সেটি বোঝার। ওই বদ্ধ ঘরে ‘বসবাসে’ যাদের ‘সুযোগ’ ছিল! যারা সেখান থেকে ভাগ্যক্রমে মুক্ত হয়ে ‘আদ্যোপান্ত’ তা ইতিহাসে যুক্ত করেছেন। স্বাধীন দেশে এমন পরাধীন ব্যবস্থা, গোটা বিশ্বকে অবাক করেছে। তবে এ কেন আজ ‘ক্রুদ্ধ’ স্বদেশ ভূমি।

‘বক্ষ্যমাণ’ এ নিবন্ধ যে খবরের সূত্র ধরে রচিত তার তথ্যের সত্যতা নিয়ে ইতোমধ্যে প্রশ্ন তুলেছে (আইএসপিআর) আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর। সোজাসাপটা বলেছে, ‘খবরটা ভিত্তিহীন’। একই সাথে পত্রিকার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘আমার দেশ’-এর প্রতিবেদন বস্তুনিষ্ঠ, খবরের সূত্রটিও বিশ্বস্ত।

এমন বিতর্ক নিয়ে কারো কিছু বলার থাকলে, মনে মনে ভাবুন। তবে ব্যক্ষমাণ নিবন্ধের ওই রিপোর্টের শিরোনামটি উপলক্ষ মাত্র। যে যা-ই বলুন, এমনটি কি কেউ অস্বীকার করতে পারেন, না তার কোনো জো আছে। নিকট অতীতে স্বৈরযুগে এ জনপদ ছিল, ‘র’-এর ‘অভয়ারণ্য’। ওই সংস্থার কতশত শাখা-প্রশাখা ছিল। এখন সেগুলো নেই, সে কথা জোর গলায় বলবেন কে? পতিতদের পুনঃপ্রতিষ্ঠার নানা প্রয়াস প্রতিদিন প্রতিক্ষণ চলছে। সেটিও দিবালোকের মতো স্পষ্ট। মাত্র কিছু দিন আগে সাবেক বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল আলতাফ হোসেন চৌধুরীর একটি বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এর প্রতিবাদ কেউ করেছেন বলে শুনিনি। এই তো সে দিন গোপালগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পতিতদের প্রত্যাবর্তনের কত অনুশীলন চলেছে। তার ইন্ধনদাতা সাহায্যদাতা পরিকল্পনা প্রণয়নকারী কারা? এসব তথ্য নিয়ে কবি কেন নীরব? খোদ রাজনীতিতে তাদের এক্সারসাইজের খবর পত্রিকায় পাঠ করেছি। এখনো কোনো বাপের বেটাকে কথা বলতে শুনিনি। ‘র’-এর কার্যকলাপ নিয়ে আমেরিকা ও কানাডার ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠার কারণ সবার জানা। তা নিয়ে কেন সবাই মূক। তবে তাদের কেউ বধির নন। এ ভূমিকে একসময় যারা মনে করতেন অভয়ারণ্য।

এসব তো কোনো উর্বর মস্তিষ্কের কল্পকাহিনী নয়। বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার চলমান যে প্রক্রিয়া সেটি প্রতিহত করবেন কারা, তাতে প্রতিবন্ধকতার বাঁধ তৈরি করছেন কারা। এমন সব প্রশ্নের জবাব দেবেন কারা। প্রতিদিন ভারতীয় মিডিয়া যে অপতথ্য ছড়াচ্ছে তার পৃষ্ঠপোষক কারা। পালিয়ে গিয়ে দিল্লিতে বসে বাংলাদেশকে আবারো একটি ‘করদরাজ্যে’ পরিণত করার ফন্দিফিকির তথা দুঃস্বপ্ন দেখতে শেখ হাসিনাকে মদদ দিচ্ছে কারা। এসব তো দিবালোকের তো স্পষ্ট। এ কথাও কখনো কখনো মনে দোল খায়, প্রশ্ন তোলে এত বড় এক অসম্ভবকে সম্ভব করে তাকে সবার কাছে ‘আমানত’ রেখে ঘরে ফিরে গেছেন যারা, আমানতদারির অভাবে সেটি কেন এখন ক্ষয়ের পথে। এ জন্য কে কাকে দায়ী করবেন। কোটি মানুষ এক দাবিতে এগিয়ে এলেন, হাজারো মানুষ জীবন দিলেন। এ থেকেও কি কেউ কোনো শিক্ষা নিলেন? এ মুহূর্তে মশহুর একটা গানের একটি কলি মনে পড়ছে। ‘হায়রে কপাল মন্দ/চোখ থাকিতে অন্ধ।’

আজ শুধু কেবল চোখের পাতা বন্ধ নয়, মন, মস্তিষ্ক, চিন্তা-চেতনা, বোধ-বিবেচনার ঘরেও কপাট লেগে গেছে। অনেকে ঘরের দুয়ার এঁটে একাকী কেবল নিজেকে নিয়ে ভাবছেন। সেখানে পাড়াপড়শি কেউ নেই, লোকসমাজ তো দূরের কথা। এখানে অদ্ভুত একটি মিল কেউ যেন খুঁজে পাচ্ছেন। পতিত যুগের যেমন শৈলী ছিল; লোকসমাজ দূরে রেখে একাকী স্বেচ্ছাধীনে চলা। কুছ পরোয়া নেহি, ভবিষ্যৎ তো আমার হাতের মুঠোয় বন্দী। কখনো যে মুঠ ফসকে যেতে পারে, তা কখনো ভাবেননি। কারো ভবিষ্যৎ জানা নেই- অতীতেও তা কারো হাতে ছিল না, বর্তমানেও সেটি কারো হাতে নেই।

সমাজকে এখন আরো অবাক হতে হচ্ছে, নানাজনের নানা ডিগবাজি দেখে শুধু ঘরে নয়- ঘরের বাইরে সবখানে। এতকাল যাকে গালমন্দ করা হয়েছে শরীরের দুর্গন্ধ নিয়ে। এখন দেখছি তাকে আবার গঙ্গাজল দিয়ে ‘স্নান’ করিয়ে পূত-পবিত্র করে তোলা হচ্ছে। এতকাল ভেবেছিলাম, যা মাঝে মধ্যে কানে আসত। সেটি নিছক ভুয়া ভেজাল বলে মাথার ওপর দিয়ে হাওয়া দিতাম। সেসব কথার যে গভীরতা তাকে নিয়ে ভাবা হয়নি। তখন ভুল করে তো পড়ন্ত বিকেলেও সুবোধ বালক হয়েছিলাম। আসলে কোনো তত্ত¡ কথা নয়, দুর্বোধ্য কিছু নয়, নিছক একটু ঘুরিয়ে বলে সবাইকে গভীরভাবে ভাবতে অনুরোধ করা। কারো কারো উসকানিতে কিছু ভুলও হয়ে গেছে। তার জন্য অনুতাপ না করে ভবিষ্যতে তার জন্য সতর্ক হতে হবে। বিজ্ঞজনদের কাছে কোনো পরামর্শ চাইলে, তারা বলেন- বিষয় নিয়ে একটু ভাবতে দাও। সময় এসেছে সবকিছুর অগ্র-পশ্চাৎ নিয়ে একটু ভাবার।

লেখা শেষ করব পতিত লীগের নতুন এক বয়ান নিয়ে। লীগ সরকারের পতন ঘটানো নিয়ে এ বয়ানে রয়েছে ‘চক্রান্ত করে লীগ সরকারের পতন ঘটানো হয়েছে’। তবে এই বয়ানে কোথায় কখন কিভাবে চক্রান্তজাল বোনা হয়েছে; তার কোনো বিবরণ নেই। ঢালাওভাবে এ মন্তব্যে সরাসরি দেশের কোটি মানুষকে বস্তুত চক্রান্তকারী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। সাধারণ প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন আইনশৃঙ্খলায় কাজে নিয়োজিত অন্যান্য প্রশাসন শেষ দিন পর্যন্ত আওয়ামী দুঃশাসন টিকিয়ে রাখতে জনতার বিরুদ্ধে মরণপণ যুদ্ধ করেছে। সেই জনতা আওয়ামীবিরোধী চক্রান্তকারী হয় কিভাবে। আওয়ামী যুগের বিরুদ্ধে শুধু তাদের অস্তিত্ব রক্ষার্থে রাজপথে নেমেছিল। এটি কোনো চক্রান্ত ছিল না। অথচ এ বয়ানের বিরুদ্ধে তেমন কোনো প্রতিউত্তর-প্রতিবাদ কেউ শুনেননি। এ লেখার শুরুতে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের আওয়ামী পোষণ নীতির কথা বলা হয়েছে। তার আরো প্রমাণ পেশ করেছে বিবিসি। কেউ কি ভাবছেন, ঘরের দুয়ারে পৌঁছে গেছে দুঃশাসকদের অবস্থান। বিবিসি বলেছে, কলকাতায় অফিস খুলে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম চলছে। মনে রাখতে হবে- নেতারা আওয়ামী লীগারদের ছাড়পত্র দিলেও জনতা কিন্তু আবারো পথে নামবে। বাংলাদেশকে কখনো ভারতের করদরাজ্য হতে দেবে না। ভারতের করদরাজ্য বানাতে অতীতে কত অপচেষ্টা হয়েছে; বয়ান তৈরি করা হয়েছে; কিন্তু কোনো কাজে আসেনি। আল্লাহ যদি চান তো ভবিষ্যতেও কোনো কাজে আসবে না।