মাধ্যমিক শিক্ষার মানোন্নয়ন

তাদের শিক্ষাব্যবস্থা তো আমাদের চেয়ে অনেক উন্নত। তারা এর প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পারছেন, তাহলে আমরা পিছিয়ে আছি কেন?

সম্প্রতি সরকার মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতর নামে একটি আলাদা অধিদফতরের ঘোষণা করেছে। সরকারের এ উদ্যোগ মাধ্যমিক শিক্ষায় একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবে, যদি মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরের জনবলকাঠামো মাধ্যমিক শিক্ষায় নিবেদিত ও এর সাথে সংশ্লিষ্ট জনবল দিয়ে ঢেলে সাজানো সম্ভব হয়। বাস্তবতা হলো- এটিই হওয়া উচিত। কিন্তু আমাদের দেশে যা হওয়া উচিত তা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে হয় না। অথচ মাধ্যমিক শিক্ষায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ দিয়ে প্রস্তাবিত মাধ্যমিক অধিদফতরের জনবল সাজানো হয়, তাতে এক দিকে যেমন শিক্ষকদের দুঃখ-দুর্দশার কিছুটা নিরসন হবে, অন্য দিকে পেশাসংশ্লিষ্ট মানুষের অভিজ্ঞতার আলোকে মাধ্যমিক শিক্ষায় গুণগত পরিবর্তন আসবে বলে আমাদের কাছে মনে হয়েছে। বাস্তবতা হলো- মাধ্যমিকের সমস্যাগুলো যারা মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত আছেন, মাধ্যমিক প্রশাসন নিয়ে কাজ করছেন, সেসব মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা ভালো জানবেন। সুতরাং মাধ্যমিকের সংস্কারে মাধ্যমিকের শিক্ষক ও সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ মাধ্যমিককে আরো বেশি গতিশীল করতে পারে।

মাধ্যমিক পর্যায় পিছিয়ে থাকার বেশ কিছু অন্তরায় এ স্তরে বিদ্যমান রয়েছে। যথাসম্ভব সেগুলো দূর করতে হবে। কোচিং বাণিজ্যের বড়সড় একটি অভিযোগ সবসময় মাধ্যমিক নিয়ে করা হয়। আসলে পেশার প্রতি আন্তরিক হওয়ার যে সাবলীল ধারা চাকরির ক্ষেত্রে বিদ্যমান থাকা দরকার, সেটি এখানে নেই। পদোন্নতি নিয়ে এতটা অবহেলা ও জটিলতা, যা শিক্ষকদের শিক্ষকতা পেশার প্রতি অমনোযোগী করে তুলেছে। সহকারী শিক্ষক হিসেবে ১৫ থেকে ১৬ বছর চাকরি করেও সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে পদন্নোতি নেই। সিনিয়র শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষকদের প্রমোশন নিয়েও জটিলতার শেষ নেই। এটি মাধ্যমিক নিয়ে সরকারের চরম ব্যর্থতা। যা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে।

এ অবস্থা থেকে শিক্ষকদের মধ্যে এক ধরনের হতাশার জন্ম নিয়েছে। বিশেষ করে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ধরেই নিয়েছেন, এ পেশায় উচ্চতর পদ ও পদবি বলে তেমন কিছু নেই। থাকলেও গুটিকয় ছাড়া বেশির ভাগের ভাগ্যে তা জুটবে না। তাই অনেকে হতাশা নিয়ে টাকার দিকে ছুটছেন। আবার এক শ্রেণীর শিক্ষক এতসব বঞ্চনা সয়েও নীতির সাথে সংগ্রাম করে টিকে আছেন। অপেক্ষায় আছেন একদিন মাধ্যমিক এখান থেকে অবশ্যই বেরিয়ে আসবে।

এমন আসার আলো দেখা দিয়েছে, তাই মাধ্যমিকে নতুন কোনো জটিলতার দিকে ঠেলে দেয়া যাবে না। শিক্ষকদের পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণাকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। আমাদের সবার জানা, শিক্ষকতা একটি ব্যতিক্রমী পেশা, বিশেষ করে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষকতা। যদিও গবেষণা থেকে বহু দূরে তাদের অবস্থান। হাতেগোনা কয়েকজন পিএইচডি ডিগ্রিধারী আছেন এখানে। এমফিল ডিগ্রি তা-ও একেবারে কম।

শিক্ষাক্ষেত্রে মাধ্যমিক স্তর কেন উপেক্ষিত থাকবে। থাকছে এ কারণে যে, এই পেশায় উচ্চতর শিক্ষার তেমন কোনো গুরুত্ব নেই। সরকারি কলেজে একজন পিএইচডি ডিগ্রিধারী প্রভাষক থেকে সরাসরি সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে থাকেন। আর মাধ্যমিকে মাত্র তিনটি ইনক্রিমেন্ট। কত হাস্যকর একটি নিয়ম। কর্তৃপক্ষ কী কারণে মাধ্যমিক শিক্ষাক্ষেত্রে গবেষণায় গুরুত্ব উপলব্ধি করছে না, এটি আমাদের কাছে বোধগম্য নয়। যেখানে ওয়ার্ল্ডে প্রাথমিক স্তরেও অনেক পিএইচডি ডিগ্রিধারী শিক্ষক শিক্ষকতা করছেন। তাদের শিক্ষাব্যবস্থা তো আমাদের চেয়ে অনেক উন্নত। তারা এর প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পারছেন, তাহলে আমরা পিছিয়ে আছি কেন?

লেখক : পিএইচডি গবেষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়