মাহমুদ আব্বাসের পতন

ইসরাইল যেটিকে ঘৃণা করতে ভালোবাসে সে দিকে আঙুল তুললে মাঠের রাজনীতির পরিবর্তন হবে না। সুতরাং গাজা সম্পর্কে ইসরাইলি ও আন্তর্জাতিক বিবরণকে হাইপ করার পরিবর্তে, পিএ কী রূপান্তরিত ঔপনিবেশিক সহিংসতাকে মোকাবেলা করতে পারে, যা এখন গণহত্যার স্তরে রয়েছে, বিদেশী অ্যাজেন্ডার ফলস্বরূপ যা ‘কর্তৃপক্ষ’ নিজে নিজেকে জোটবদ্ধ করতে পছন্দ করে? বিদেশী অ্যাজেন্ডা প্রচারের কারণে তাদের কণ্ঠরোধ করা হয়, তাহলে কেন ফিলিস্তিনি জনগণকে নিজেদের পক্ষে কথা বলতে দেয়া হচ্ছে না?

মাহমুদ আব্বাস
মাহমুদ আব্বাস |সংগৃহীত

মাহমুদ আব্বাস, ডাকনাম আবু মাজেন। বহুদিন ধরে তিনি ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের নেতৃত্বের ওপর তীব্র আক্রমণ করে আসছেন। বিষয়টি সাধারণ ফিলিস্তিনি ও সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের মধ্যে ক্ষোভ এবং ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। ফিলিস্তিনি কেন্দ্রীয় পরিষদের ৩২তম অধিবেশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আটক ইসরাইলি বন্দীদের হস্তান্তরের দাবি করেছেন মাহমুদ আব্বাস! ইহুদিবাদী সত্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ না করে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও আক্রমণ বন্ধ করার দাবি জানানোর পরিবর্তে প্রতিরোধযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবমাননাকর ও আপত্তিকর ভাষা ব্যবহার করেছেন।

এক বিবৃতিতে ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসকে বিদেশী অ্যাজেন্ডা অনুযায়ী ফিলিস্তিনি জনগণের ভাগ্য নির্ধারণ করা বন্ধের আহ্বান জানায় আব্বাস-সমর্থিত ফাতাহ কেন্দ্রীয় কমিটি। কেন্দ্রীয় কমিটি ফিলিস্তিনি জাতীয় প্রক্রিয়ায় বাধা দিতে হামাসকে দায়ী করে, দাবি করেছে- এটি মাহমুদ আব্বাসের প্রচেষ্টা মেনে চলবে। এ ছাড়া ফিলিস্তিন লিবারেশন অর্গানাইজেশন অনুসৃত নীতিগুলো মেনে চলবে। আসলে বিদেশী অ্যাজেন্ডা আবু মাজেন বাস্তবায়নের চেষ্টা করছেন নাকি হামাস- তা নিয়ে জোর বিতর্ক চলছে দশক ধরে।

পর্যবেক্ষক ও বিশ্লেষকদের মতে, গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের নৃশংস হামলা বৃদ্ধি ও জাতীয় সঙ্কট নিয়ে আব্বাসের বিবৃতি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের রাজনৈতিক অগ্রাধিকারের পরিবর্তনকে প্রতিফলিত করে। ইসরাইলি দখলদারিত্বের সাথে নিরাপত্তা সমন্বয়, পশ্চিম তীরে প্রতিরোধযোদ্ধাদের ওপর নিপীড়ন এবং জাতীয় স্বার্থ ও আন্তর্জাতিক বৈধতার অজুহাতে সব ধরনের সশস্ত্র প্রতিরোধের ভাবমর্যাদা বিকৃত করে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ বছরের পর বছর ধরে যে পথ অনুসরণ করে আসছে; তা থেকে ফাতাহ কেন্দ্রীয় কমিটির বিবৃতিকে আলাদা করা যায়। যখন গাজা উপত্যকায় প্রতিদিন ফিলিস্তিনিদের হত্যা করা হচ্ছে। পশ্চিমতীরে ফিলিস্তিনিদের বাড়িঘর ধ্বংস করা হচ্ছে। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ, পিএ বর্তমান ঘটনাবলির জন্য দখলদারদের দায়ী না করে হামাসের বিরুদ্ধে সমালোচনার তরবারি পরিচালনা করাকে বেছে নিয়েছে।

১৯৪৮ সালের নাকবার পর থেকে ফিলিস্তিনিরা যে জটিল ও কঠিনভাবে ভুগেছে, বর্তমান সঙ্কটময় পর্যায়ে মাহমুদ আব্বাসের অনুপস্থিতির পর নতুন করে ১৮ মাসের বেশি সময় নীরব থেকে জনগণকে অপমান করতে, দখলদারিত্বের অপরাধকে ন্যায্যতা দিতে এবং নেতানিয়াহুকে রক্ষা করতে আবির্ভূত হয়েছেন; যে ব্যক্তির শিকার মূলত শিশু, অসহায় ও ফিলিস্তিনি নারীরা। রাজনৈতিক জীবনের শেষ মুহূর্তেও শহীদ এবং তাদের পরিবারের বিরোধী হওয়ার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন আবু মাজেন। শহীদ, আহত ও বন্দীদের পরিবারের বেতন স্থগিত করেছেন তিনি। গণহত্যা সত্তে¡ও দখলদারদের সাথে সুরক্ষা সমন্বয় জোরদার করেছেন। একটি ঐক্যবদ্ধ জাতীয় অবস্থানে যোগ দিতে অস্বীকার করেছেন। সব ধরনের প্রতিরোধ নস্যাৎ করার অপচেষ্টা করছেন। তার রাজনৈতিক দল এমন একটি বাগাড়ম্বর প্রচারণা করে চলেছে, যা বর্তমান অবনতির জন্য প্রতিরোধকে দায়ী করছে। পর্যবেক্ষকরা এটিকে গাজা ও অধিকৃত পশ্চিমতীরে প্রতিরোধ দলগুলোর ক্রমবর্ধমান ভূমিকার পরিপ্রেক্ষিতে ফিলিস্তিন অথরিটিরি পিএ সম্পূর্ণ অকার্যকারিতা, পক্ষাঘাত ও প্রাসঙ্গিকতা হারানোর ভয়কে ন্যায্যতা দেয়ার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছেন।

গাজার প্রতিরোধ ব্রিগেডগুলো ইসরাইলি কিলিং মেশিনের মুখোমুখি হওয়ার সময়, আব্বাসের ফিলিস্তিন অথরিটিরি সুরক্ষা পরিষেবাগুলো জেনিন, নাবলুস ও তুলকারমের কর্মীদের অনুসরণ করেছে, যে কেউ প্রতিরোধের সমর্থনে তাদের কণ্ঠস্বর তুলেছে বা সমালোচনা করেছে তাদের গ্রেফতার করা হযেছে। অসংখ্য প্রতিবেদনে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের এজেন্সিগুলোর দখলদার বাহিনীকে ওয়ান্টেড অ্যাক্টিভিস্টদের সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ ও প্রতিরোধ দলগুলোর পরিচালিত অভিযান সংঘটিত হওয়ার আগে বাধা দেয়ার জটিলতা প্রকাশিত হয়েছে। এ সমন্বয়কে অনেক বিশ্লেষক রাষ্ট্রদ্রোহ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

এসব বিবেচনায় ফাতাহ কেন্দ্রীয় কমিটি একটি বিপজ্জনক সমীকরণ প্রতিষ্ঠা করেছে বলে মনে হয়। দখলদারিত্বের মুখোমুখি হওয়া অগ্রাধিকার নয়; বরং ফিলিস্তিনি রাস্তা নিয়ন্ত্রণ করা এবং এর অভ্যন্তরীণ ফ্রন্টকে ধ্বংস করা। যখন গাজার প্রতিরোধ দল অত্যন্ত জটিল মানবিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দখলদারিত্বের মুক্তি এবং মোকাবেলায় পরিকল্পনা প্রস্তাব করছে, তখন ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ দখলকৃত রাষ্ট্রের প্রকল্প ধরে রাখার ওপর জোর দিচ্ছে, এটি এমন একটি প্রকল্প, যা দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে তার ব্যর্থতা প্রমাণ করেছে। ফিলিস্তিন অথরিটির প্রতিষ্ঠার ৩০ বছরেরও বেশি সময় অতিবাহিত হওয়া সত্তে¡ও অসলো আলোচনা ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দিকে পরিচালিত করেনি। পরিবর্তে তারা আরো বসতি, আরো বাস্তুচ্যুতি, আরো বিভাজন এবং আরো দখলদারিত্বের অনুপ্রবেশের ওকালতি করেছে। প্যারাডক্সটি পরিষ্কার- যখন গাজায় প্রতিদিন ফিলিস্তিনিদের রক্ত ঝরানো হচ্ছে, পশ্চিমতীরের জমি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়া হচ্ছে এবং পবিত্র স্থানগুলো অপবিত্র করা হচ্ছে, তখন ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ প্রতিরোধের প্রতি তার অনমনীয় অবস্থানের ওপর জোর দিয়েছে, বিদেশী অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নের অভিযোগ করেছে। বাস্তবে এটি নিরাপত্তা সমন্বয়ের অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে এবং একটি মিথ্যা বৈধতা, যা এখন ফিলিস্তিনি জনগণের আকাক্সক্ষার চেয়ে দখলদারদের স্বার্থ বেশি সুবিধা দিয়েছে।

গাজায় গণহত্যা যুদ্ধ ও জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি এবং পশ্চিমতীরে দমন-পীড়নসহ ফিলিস্তিনি জনগণ যে গুরুতর চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে, তার মধ্যে ফাতাহ কেন্দ্রীয় কমিটির বিদেশী অ্যাজেন্ডা এবং ফিলিস্তিনিদের বৈধতা নিয়ে কথা বলা আর বিশ্বাসযোগ্য নয় যারা প্রত্যক্ষ করছেন, কে লড়াই করছেন, কে নীরব থাকবে, কে ষড়যন্ত্র করছে, কে শহীদ হয়েছেন এবং কে নিরাপত্তা সমন্বয় চুক্তিতে স্বাক্ষর করছে।

মাহমুদ আব্বাস দাবি জানিয়েছেন, হামাসকে নিরস্ত্র করা হোক এবং গাজার নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দেয়া হোক, তাহলে ফিলিস্তিনি অঞ্চল ও বৃহত্তর মধ্যপ্রাচ্যের জন্য উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক, নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক উন্নয়ন হবে। আব্বাসের এ আহ্বান হামাসের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের আনুষ্ঠানিক রূপ। এ আহ্বান ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ, পিএ ও হামাসের মধ্যে চলমান গভীর ফাটল আরো তীব্র করেছে। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে ক্ষমতাচ্যুত করার পরে ২০০৭ সাল থেকে হামাস গাজা শাসন করে আসছে। এ পদক্ষেপ ফিলিস্তিনি সমাজকে আরো মেরুকরণ করেছে, জাতীয় ঐক্যের সম্ভাবনাকে ক্ষুণ্ণ করেছে এবং ইসরাইল ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে আলোচনায় একটি সমন্বিত ফ্রন্ট উপস্থাপনের প্রচেষ্টাকে জটিলতর করে তুলেছে।

আব্বাস জোর দিয়ে বলেন, পিএর অধীনে ঐক্যবদ্ধ ফিলিস্তিনি শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে হামাসকে অবশ্যই তার অস্ত্র ও গাজার পুরো শাসন কর্তৃত্ব পিএর কাছে হস্তান্তর করতে হবে। তিনি প্রস্তাব করেছেন, জাতিসঙ্ঘের সুরক্ষা কাউন্সিলের ম্যান্ডেটের অধীনে আরব ও আন্তর্জাতিক বাহিনীকে একটি অন্তর্বর্তী সময়ে গাজাকে স্থিতিশীল করতে মোতায়েন করা হবে। এ পদ্ধতির উদ্দেশ্য যুদ্ধোত্তর গাজায় নিরাপত্তা ও শাসন সম্পর্কে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ মোকাবেলা করা, তবে এটি হামাস এবং অনেক ফিলিস্তিনির কাছে বড় এক সন্দেহ হিসেবে দেখা দিয়েছে, যারা পিএর কার্যকারিতা ও বৈধতাকে অবিশ্বাস করে, আর ইতোমধ্যে পরিষ্কার হয়েছে যে, গাজাবাসীকে সেখান থেকে উৎখাত করে ভিন্ন কোনো দেশে বসবাসের ব্যবস্থা করা হবে। আরো জানা যাচ্ছে, এটি বহু পুরনো একটি গোপন লক্ষ্য, যা এখন সামনে এসেছে।

আব্বাস দাবি করেন, তার প্রস্তাব ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ও যুদ্ধোত্তর পুনর্গঠনের সমর্থনে ফ্রান্স ও সৌদি আরবের মতো গুরুত্বপূর্ণ শক্তি আন্তর্জাতিক পক্ষগুলোর বেঁধে দেয়া শর্তের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতিকে হামাসের নিরস্ত্রীকরণ ও ফিলিস্তিনের অভ্যন্তরীণ সংস্কারের সাথে যুক্ত করেছেন। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সংস্কার এবং আন্তর্জাতিক তদারকি মেনে নেয়ার ইচ্ছার ইঙ্গিত দিয়ে আব্বাস পশ্চিমা ও আরব সমর্থকদের আশ্বস্ত করতে চান এবং গাজায় হামাসের কার্যকর বিকল্প হিসেবে পিএকে অবস্থান নিতে হবে।

দেখা যাচ্ছে, শান্তি ও অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ পিএকে একটি বিশ্বাসযোগ্য, অসামরিকীকৃত কর্তৃপক্ষ হিসেবে উপস্থাপন করে দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের গতি পুনরুদ্ধারে আব্বাসের অবস্থানকে ডিজাইন করে খেলার মাঠে বলটি গড়িয়ে দেয়া হয়েছে। তবে ইসরাইল বারবার গাজায় পিএর ভূমিকা প্রত্যাখ্যান করেছে এবং পশ্চিমতীর, যা পিএ-নিয়ন্ত্রিত এবং গাজা, যা হামাস-নিয়ন্ত্রিত, এর মধ্যে ক্রমাগত বিভাজন অর্থবহ আলোচনার ক্ষেত্রে একটি বড় বাধা হিসেবে রয়ে গেছে। সমালোচকরা বলছেন, আবু মাজেনের সাথে ইসরাইলের গোপন আঁতাত রয়েছে।

হামাসের দাবির পাশাপাশি আব্বাস বিতর্কিত আর্থিক নীতি বাতিল এবং এক বছরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ পিএর মধ্যে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত সংস্কার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ প্রতিশ্রুতিগুলো পিএর শাসন ও বৈধতা সম্পর্কে দীর্ঘকালীন সমালোচনা মোকাবেলা করতে বোঝানো হয়েছে, তবে নির্বাচন ছাড়া আব্বাসের বর্ধিত মেয়াদ ও সংস্কারের বাস্তব অগ্রগতির অভাবের কারণে সংশয় রয়ে গেছে। এ ধরনের আবু মাজেনি কার্যক্রম দশকের পর দশক ধরে ঘুরপাক খেয়ে চলছে।

হামাসের অস্ত্র সমর্পণে আব্বাসের আহ্বান একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, যার সুদূরপ্রসারী প্রভাব রয়েছে। যদিও এটি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে গাজার বৈধ শাসক কর্তৃপক্ষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে এবং ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের জন্য আন্তর্জাতিক সমর্থন অর্জনের চেষ্টা করছে, এটি ফিলিস্তিনের অভ্যন্তরীণ বিভাজনকে আরো গভীরতর করছে। তিনি এক বছর সময় চেয়েছেন বর্তমান যে পরিস্থিতি তাতে গাজার হায়াত কি এক বছর থাকবে কি না সন্দেহ।

আমরা দেখলাম, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস চলমান গাজা যুদ্ধের সময় হামাসের বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনামূলক অবস্থান নিয়েছেন। ২০২৫ সালের এপ্রিল থেকে বেশ কয়েকটি প্রকাশ্য বিবৃতিতে আব্বাস গাজায় সামরিক হামলা অব্যাহত রাখার যৌক্তিকতা দিতে হামাসের নিন্দা জানিয়েছে তাদের দোষারোপ করেছেন। হামাসের কাছে বন্দী সব ইসরাইলি জিম্মিকে মুক্তি দিতে বলেছেন। হামাসের কর্মকাণ্ড, বিশেষ করে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলের ওপর হামলাকে ‘অগ্রহণযোগ্য ও নিন্দনীয়’ বলে উল্লেখ করেছেন।

আব্বাসের বাগাড়ম্বর ও কর্মকাণ্ডকে অনেক ফিলিস্তিনি এবং প্রতিদ্ব›দ্বী দল ফিলিস্তিনি ঐক্য বা প্রতিরোধকে সমর্থন করার পরিবর্তে ইসরাইল ও পশ্চিমা দাবির সাথে একাত্মতা প্রকাশ মনে করেন। তার এসব মন্তব্য ফিলিস্তিনি বিভিন্ন দল তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। ফিলিস্তিন রেজিস্ট্যান্স অ্যালায়েন্স ও অন্যান্য গোষ্ঠী আব্বাসের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধকে দুর্বল করার চেষ্টা এবং ‘ইসরাইলি গণহত্যার রাজনৈতিক পুঁজি’ তৈরির অভিযোগ এনেছেন। হামাস ও ইসলামিক জিহাদ আব্বাসের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনি স্বার্থের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা, ঐক্যের প্রচেষ্টায় অন্তর্ঘাত এবং গাজায় ইসরাইলের অব্যাহত অবরোধ ও হামলা আড়াল করার অভিযোগ এনে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

ফিলিস্তিন অধ্যয়নে আমাদের মনে রাখতে হবে, হামাস না থাকলে ইসরাইল ফিলিস্তিনে উপনিবেশ স্থাপন করে ফিলিস্তিনিদের হত্যা করত। পিএ যদি গাজা দখল করে নেয়, যেমনটি তারা করার স্বপ্ন দেখে, গাজার ফিলিস্তিনিরা তখনো নিরাপদ থাকবেন না। ঔপনিবেশিকতা নিরাপত্তা দেয় না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় নিরাপত্তা তৈরি করে দেবে না, তাই বিদেশী অ্যাজেন্ডা নিরাপত্তা তৈরি করে না। পিএ নিজে জানে, এটি একটি নিরাপদ সত্তা নয় বা এটি সুরক্ষা তৈরি করে না।

ইসরাইল যেটিকে ঘৃণা করতে ভালোবাসে সে দিকে আঙুল তুললে মাঠের রাজনীতির পরিবর্তন হবে না। সুতরাং গাজা সম্পর্কে ইসরাইলি ও আন্তর্জাতিক বিবরণকে হাইপ করার পরিবর্তে, পিএ কী রূপান্তরিত ঔপনিবেশিক সহিংসতাকে মোকাবেলা করতে পারে, যা এখন গণহত্যার স্তরে রয়েছে, বিদেশী অ্যাজেন্ডার ফলস্বরূপ যা ‘কর্তৃপক্ষ’ নিজে নিজেকে জোটবদ্ধ করতে পছন্দ করে? বিদেশী অ্যাজেন্ডা প্রচারের কারণে তাদের কণ্ঠরোধ করা হয়, তাহলে কেন ফিলিস্তিনি জনগণকে নিজেদের পক্ষে কথা বলতে দেয়া হচ্ছে না?

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত যুগ্মসচিব ও গ্রন্থকার