ইতিহাসের রসিকতা নাকি প্রকৃতির প্রতিশোধ

ইতিহাসের নির্মম রসিকতা এবং প্রকৃতির মধুর প্রতিশোধ হয়ে বারবার ফিরে আসবে। যা আমরা দেখেছি ২০২২ এ শ্রীলঙ্কার গণ-আন্দোলন, ২৪-এ বাংলাদেশের গণ-অভ্যুত্থান এবং সর্বশেষ ২০২৫ এ নেপালের সরকার পতনে।

জনগণ সব ক্ষমতার উৎস। ‘দেশের মালিক জনগণ, অন্য কেউ নয়’। যার অর্থ হলো জনগণের ইচ্ছা আকাক্সক্ষা ও মতামতের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় কাঠামো গড়ে উঠবে। জনগণের মতামত প্রাধান্য দিয়ে সুনির্দিষ্ট আইনি কাঠামোর মধ্যে সরকার গঠন ও পরিচালনা, বিচার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, দেশ রক্ষা, পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ, শিক্ষা-সংস্কৃতি, নীতিনির্ধারণ যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালিত হবে। প্রশ্ন হচ্ছে, জনগণ এ ক্ষমতা কিভাবে প্রয়োগ করে থাকেন। কিংবা জনগণের এ মালিকানা কতটুকু নিরঙ্কুশ। এ ক্ষেত্রে জনগণের মালিকানা নির্ধারণে রাষ্ট্রের চরিত্র অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ কোন শ্রেণীর হাতে ন্যস্ত তার ওপর। শাসক ও শাসীতের এ দুইয়ের মধ্যে কী ধরনের ব্যবধান। শাসক শ্রেণীর ধরন কী একনায়কতন্ত্র, রাজতন্ত্র, প্রজাতন্ত্র নাকি গণতন্ত্র।

রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ কী দেশপ্রেমিক রাজনীতিকদের হাতে নাকি আমলা ও অভিজাত গোষ্ঠীর আধিপত্যে পরিচালিত হচ্ছে? রাষ্ট্র যদি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক বিধিব্যবস্থায় পরিচালিত হয় তবে সে ক্ষেত্রে জনগণের মালিকানা প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা তৈরি হয়। তাথ্যিক আলোচনায় না গিয়ে আমরা স্বাভাবিক চোখে যা দেখতে পাই তা হচ্ছে, জনগণের একটা অংশ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল গঠনের মাধ্যমে জনকল্যাণে ভূমিকা পালনে সভা সমাবেশ, সেমিনার, বক্তব্য-বিবৃতি, দলীয় কর্মসূচি, ইশতেহার ইত্যাদি নানাবিধ পন্থায় দেশবাসীর সামনে দেশগঠনে কর্মপরিকল্পনা, নীতি-আদর্শ তুলে ধরে নাগরিকদের আস্থা, বিশ্বাস অর্জনে সচেষ্ট থাকেন।

রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের হয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। ফলে জনগণের ক্ষমতা প্রয়োগের অন্যতম মাধ্যম নির্বাচন। যা দেশের প্রচলিত রীতি অনুযায়ী, জনগণ পাঁচ বছর পরপর এ সুযোগ পান। যদিও আমাদের মতো দেশগুলোতে জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সরকারও স্বৈরশাসক কিংবা একনায়কতান্ত্রিক ফ্যাসিস্ট সরকার হিসেবে আবির্ভূত হয়ে থাকে। যার সর্বশেষ দৃষ্টান্ত, বিগত আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন শেখ হাসিনার সরকার। এক এগারো জরুরি সরকারের অধীনে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় এসে নিজেকে দেশবাসীর সামনে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করেছিল। ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে প্রথমে মর্জিমাফিক প্রশাসন ঢেলে সাজিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে আজ্ঞাবহ লোভী লুটেরা দুর্নীতিবাজদের প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন শেখ হাসিনা। সৎ ও যোগ্য কর্মকর্তাদের পাশ কাটিয়ে দল এবং ব্যক্তি আনুগত্যের বিবেচনায় প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পদায়ন করা হয়।

প্রশাসনের দলকানা কর্মকর্তাদের দিয়ে প্রতিবাদী কণ্ঠ স্তব্ধ করতে বেছে নেয়া হয় গুম-খুন, ক্রসফায়ার, গায়েবি মামলা, নির্যাতনের পথ। সৃষ্টি করা হয়েছিল বীভৎস অমানবিক আয়নার খ্যাত টর্চার সেল। বাকস্বাধীনতা ও সভাসমাবেশ বন্ধ করতে তৈরি করা হয়েছিল কালো আইন। বন্ধ করা হয়েছিল একাধিক মিডিয়া, নিষিদ্ধ করা হয়েছিল রাজনৈতিক দল। উপরন্তু প্রতিবেশী একটি রাষ্ট্রের অনুকম্পা ও আনুকূল্যে আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক চরিত্র হারিয়ে ফ্যাসিবাদী আদর্শ ধারণ করে। এ ক্ষেত্রে সাফল্য পেতে শুরুতে শেখ হাসিনা দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার বাসনা চরিতার্থ করতে আদালতকে ব্যবহার করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের উদ্যোগ নেন। এর ধারাবাহিকতায় ২০১১ সালের ১০ মে বিচারপতি খায়রুল হকের নেতৃত্বে আদালত এক রায়ে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে দেন। ৩০ জুন সংসদে বাংলাদেশের সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাস করা হয়। বিলটি পাসের পর, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে বলেছিলেন, স্বাধীনভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগে জনগণের আকাক্সক্ষা পূরণে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ব্যর্থ হওয়ায় তা বহাল রাখার কোনো যুক্তি নেই।

পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের পর শেখ হাসিনাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। টানা সাড়ে ১৫ বছর দাপটের সাথে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরেছিলেন। যদিও শেষ রক্ষা হয়নি। তিনি ভোটাধিকার প্রয়োগে জনগণের আকাক্সক্ষার কথা বলে নিজেই নির্বাচনী ব্যবস্থা নির্বাসনে পাঠিয়ে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে বিনা ভোট, রাতের ভোট ও ডামি নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে গণতন্ত্রের কবর রচনা করেছিলেন। এতে ছিনতাই হয়ে যায় রাষ্ট্রে জনগণের মালিকানা। তখন নির্বাচনের প্রসঙ্গ আসলেই ফ্যাসিবাদের দোসররা প্রশ্ন তুলতেন, শেখ হাসিনার বিকল্প কে। মানে, দেশে তার সমকক্ষ আর কোনো বিকল্প নেতা ছিলেন না! ফলে তিনি ধরে নিয়েছেন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ফ্যাসিবাদী কায়দায় রাষ্ট্রক্ষমতায় টিকে থাকবেন। কিন্তু তার কপাল মন্দ, ২০২৪ সালের ৩৬ জুলাই ছাত্র-জনতার রক্তাক্ত গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে তাকে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিতে হয়েছে।

শুরুতে যদি উল্লেখ করি যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা কলমের এক খোঁচায় শেখ হাসিনা পরপারে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন সেই দল-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরে পেতে ভারত থেকে তিনি এখন আহাজারি করছেন। বলছেন, প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। তাই তাকে পদত্যাগ করতে হবে। গঠন করতে হবে দল-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার। এ যেন নিয়তির এক নির্মম পরিহাস। ক্ষমতার দাম্ভিকতায় শেখ হাসিনা ২০১০ সালের ১৩ নভেম্বর আদালতে দায়ের করা মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার আগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মধ্যরাতে নাটকীয় ঘটনার মধ্য দিয়ে ঢাকা সেনানিবাসের বাসা থেকে উচ্ছেদ প্রক্রিয়া শুরু করেন। সাদা পোশাকের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন বেগম জিয়ার সেনানিবাসের বাড়ির চারদিকে অবস্থান নেয়। সকাল হওয়ার সাথে সাথে তাদের সাথে যোগ দেয় পুলিশ, র‌্যাব ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন। ন্যক্কারজনকভাবে উচ্ছেদপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। খালেদা জিয়াকে এক কাপড়ে ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়। সেই শেখ হাসিনাকে পালিয়ে দেশ ছাড়তে হয়।

শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকাকালে প্রায়শই বলতেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফিরিয়ে এনে আদালতের মুখোমুখি করা হবে। দরকার হলে ওটাকে ওখান থেকে ধরে এনে শাস্তি দেয়া হবে, ধরে এনে শাস্তি দেব। এখন শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি উঠেছে। ইতিহাসের কী নির্মম রসিকতা! ভারতে আশ্রিত শেখ হাসিনাকে বিচারের মুখোমুখি করার লক্ষ্যে কাজ করছে বর্তমান সরকার। ২০১৫ সালের দিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্য-বিবৃতি সব ধরনের গণমাধ্যমে প্রচার ও প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হয়। এমনকি তার অডিও ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও ইউটিউব থেকে সরাতে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বিটিআরসিকে নির্দেশ দেয়া হয়। যদিও ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পর এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়। এ ঘটনার ৯ বছর পর শেখ হাসিনার বক্তব্য বিবৃতির ওপর একই ধরনের নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে। স্মরণযোগ্য যে, গত ডিসেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনার সব ধরনের বিদ্বেষমূলক বক্তব্য গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। একই সাথে শেখ হাসিনা আগে যত বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দিয়েছেন, তা সব মাধ্যম থেকে সরাতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

চব্বিশের ছাত্র-জনতার তীব্র গণ-আন্দোলনে পালিয়ে যাওয়ার পূর্বে ১ আগস্ট জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করেছিল শেখ হাসিনার সরকার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ প্রজ্ঞাপন জারি করে সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯ এর ধারা ১৮ (১) এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ এর সব অঙ্গ-সংগঠনকে রাজনৈতিক দল ও সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটলে ২৮ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের অপর এক প্রজ্ঞাপনে জামায়াতে ইসলামী ও এর সহযোগী সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞার আদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। অন্যদিকে ২৩ অক্টোবর ২০২৪ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এর ছয় মাস পর গত ১২ মে ২০২৫ অন্তর্বর্তী সরকার এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারকাজ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত এসব সংগঠনের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছেন। একই দিনে রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে দায়ের করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা এবং জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা নিয়ে শেখ হাসিনা ও তার দোসররা জনসম্মুখে অসংখ্যবার ‘এতিমের টাকা চুরি করেছেন বলে’ ব্যঙ্গাত্মক বক্তব্য বিবৃতি দিয়েছে। অথচ সব টাকা ব্যাংকে গচ্ছিত আছে। শেখ হাসিনার পতনের পর আদালতের মাধ্যমে তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন। সময়ের ব্যবধানে জুলাই গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ মাথায় নিয়ে ভারতে আশ্রিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানা ও ঢাকার নিম্ন আদালতে প্রায় ৫৭৬টি মামলা হয়েছে। এছাড়া ঢাকার বাইরে আরও কয়েক শ’ মামলা হয়েছে। এসব মামলার মধ্যে তিন শতাধিক অভিযোগ সুনির্দিষ্টভাবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জমা পড়েছে।

ইতোমধ্যে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে একটি মামলায় আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়েছে। চলছে সাক্ষ্য গ্রহণ। অপরদিকে আদালত অবমাননার এক মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এরকম অসংখ্য উদাহরণ দেয়া যাবে যা লেখার কলেবর বৃদ্ধি করবে। বাস্তবতা হচ্ছে, আমাদের দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি, রাষ্ট্রব্যবস্থা ও শ্রেণীগত পার্থক্য, আমলাতান্ত্রিক আধিপত্য, কতিপয় রাজনৈতিক নেতৃত্বের মনস্তত্তে¡র সঙ্কট দেশের গণতান্ত্রিক যাত্রার সঙ্কট তৈরি করছে। যদিও দেশের স্বাধীনচেতা গণতন্ত্রমনস্ক দেশপ্রেমিক নাগরিকরা বায়ান্নের ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, একাত্তরের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থান ও চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে বীরত্বের সাথে লড়াই করে গণতন্ত্রের অভিযাত্রা প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন। এসব ঐতিহাসিক ঘটনার পর যারা ক্ষমতায় এসেছেন তাদের আচরণে মনে হয়েছে শেয়ালের কাছে মুরগি বর্গা দেয়া হয়েছে অথবা শুঁটকির বাজারে বিড়ালকে চৌকিদারের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ফলে এ দেশের মানুষকে একের পর এক আন্দোলন করতে হয়েছে।

আমাদের রাজনীতিকরা ইতিহাস থেকে খুব একটা শিক্ষা নেন বলে মনে হয় না। যদি ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতেন তাহলে দেশ থেকে পালাতে হতো না। সর্বশেষ যা বলতে চাই, তা হলো ৩৬ জুলাই কিংবা ৫ আগস্ট আমাদের গণতন্ত্র ফিরে পেতে, সমতা ও ন্যায়নিষ্ঠার সাথে রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলার চমৎকার একটি সুযোগ এনে দিয়েছে। যা ন্যায়বিচার, জবাবদিহি ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সম্পন্ন রাজনৈতিক শিষ্টাচার গঠনে ভূমিকা পালনে সহায়ক হবে। অন্যথায় জনগণের ম্যান্ডেট ও ভালোবাসা নিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা ফিরে পেলেও ইতিহাস থেকে শিক্ষা না নিয়ে যদি ক্ষমতায় গিয়ে দাম্ভিকতা, পেশিশক্তি, লুটপাট এবং ক্ষমতা আঁকড়ে ধরার মানসিকতা নিয়ে কূটকৌশলের আশ্রয় নেন; তাহলে বিদ্রোহের অনল আবারো জ্বলে উঠবে। ইতিহাসের নির্মম রসিকতা এবং প্রকৃতির মধুর প্রতিশোধ হয়ে বারবার ফিরে আসবে। যা আমরা দেখেছি ২০২২ এ শ্রীলঙ্কার গণ-আন্দোলন, ২৪-এ বাংলাদেশের গণ-অভ্যুত্থান এবং সর্বশেষ ২০২৫ এ নেপালের সরকার পতনে।

লেখক : আইনজীবী ও কলামিস্ট