চব্বিশের ছাত্র-জনতার সুদৃঢ় ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধে ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনা ও তার সাঙ্গোপাঙ্গরা সদলবলে দেশ থেকে পালাতে বাধ্য হয়। এর মধ্যে কিছু সংখ্যক আটক হয়েছে। জনগণের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের সাথে জড়িত তাদের অনেকে এখন বিচারের সম্মুখীন। কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে দাবি উঠেছে, আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের অপরাধের বিচার না হওয়া পর্যন্ত কোনো নির্বাচন যেন না করা হয়। আবার এরূপ অভিমতও রয়েছে, নির্বাচন ও বিচারপ্রক্রিয়া একই সাথে চলতে সমস্যা নেই। কারো আশঙ্কা যে, নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় এলে বিচারপ্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হতে পারে। লক্ষ করা যাচ্ছে যে, পতিত আওয়ামী লীগাররা বিচারপ্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে নানাবিধ ফন্দিফিকির করছে। কিন্তু এসব মীরজাফর তথা গাদ্দারদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করে দেশে ভবিষ্যতে আবার একটি ফাসিস্ট ও মাফিয়া চক্রের উত্থান রোধে অপরিহার্যভাবে বিচারকার্যক্রম চালিয়ে নিতে হবে। পাশাপাশি ওই মাফিয়া চক্র ও তার মদদদাতাদের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দিতে জাতীয় ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘আমরা একটি যুদ্ধাবস্থায় আছি। অশুভ চক্র আমাদের স্বপ্নকে, আমাদের ঐক্যকে ভেঙে দিতে সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করে যাচ্ছে।’ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি প্রফেসর ড. আলী রীয়াজ বলেছেন, ‘জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা ফ্যাসিবাদী সরকারকে পলায়নে বাধ্য করেছে। এই ঐক্যের মূল চেতনাকে ধারণ করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।’ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আলোচনা ও ঐক্যের মধ্য দিয়ে আমরা নতুন একটি বাংলাদেশ তৈরি করতে চাই। নিঃসন্দেহে আমাদের মধ্যে ঐক্য সম্ভব হবে এবং আমরা ফলপ্রসূ হবো।’
জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘গত জুলাইয়ের ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে দেশ আবার নতুন করে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। দীর্ঘ সাড়ে পনেরো বছরের জগদ্দল পাথরের ন্যায় চেপে বসা জালিমের হাত থেকে মুক্ত হয়ে দেশের মানুষ মুক্ত বাতাসে শ্বাস নিতে পারছে। দেশের মানুষ কথা বলার স্বাধীনতা ফিরে পেয়েছে এবং শান্তিতে স্বস্তিতে চলাফেরা করতে পারছে। পতিত সরকারের দোসররা এবং দেশের কিছু স্বার্থান্বেষী মহল বিদেশী আধিপত্যবাদী শক্তির সহায়তায় ছাত্র-জনতার এ গণ-আন্দোলন ব্যর্থ করে দিতে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। তারা দেশকে আবার অস্থিতিশীল করতে চাচ্ছে এবং পতিত স্বৈরাচারকে ফিরিয়ে আনার অপতৎপরতা শুরু করেছে। এমতাবস্থায় দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হতে এবং সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে। শান্তি ও স্বস্তির নতুন বাংলাদেশ গঠিত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে।’ বিএনপি মহাসচিব ও জামায়াতের আমির উভয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়তে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এখানে জামায়াতের আমিরের বক্তব্য বেশ স্বব্যাখ্যাত।
অন্যদিকে, ছাত্রদের নেতৃত্বে নবগঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি ১৭ বছরে সংঘটিত সব হত্যা, গুম, নির্যাতনের বিচার, আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত, নির্বাচনের আগে বিচার দৃশ্যমান হওয়া ইত্যাদি দাবি করে আসছে। এ ছাড়া, জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া ছাত্রদের আরেক অংশের নেতৃত্বে নবগঠিত ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ যাত্রার শুরুতে যে বক্তব্য দিয়েছে তা হচ্ছে, ‘জুলাইয়ের আকাক্সক্ষা বলতে আমরা সুনির্দিষ্টভাবে কিছু লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি, যেটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশের আপামর ছাত্র-জনতাকে সাথে নিয়ে প্ল্যাটফর্মটি এগিয়ে যাবে। পিলখানা, শাপলা ও জুলাই গণহত্যার মতো ভয়াবহ অপরাধের বিচার, ফ্যাসিবাদী দল আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণ এবং জুলাইয়ের আহত যোদ্ধা ও শহীদ পরিবারকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে তোলা এ প্ল্যাটফর্মের প্রাথমিক লক্ষ্য হিসেবে বিবেচিত হবে। বাংলাদেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন, সমাজের সর্বস্তরে যোগ্য ও নৈতিক নেতৃত্বের প্রতিষ্ঠা, সামাজিক সুবিচার ও মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠাকরণ, সামাজিক নিরাপত্তা বিধান এবং ধর্মীয় বিশ্বাস ও মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল সামাজিক চুক্তির ভিত্তিতে বাংলাদেশ পুনর্গঠন এ প্ল্যাটফর্মের দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য।’ সবার বক্তব্যে জাতীয় ঐক্যের বিষয়টি এবং একই সঙ্গে পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী নেতাকর্মীদের বিচারের বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে।
সবাই ঐক্যের কথা বললেও কেউ কেউ মনে করেন, ফ্যাসিবাদ হটানোর আন্দোলনে যে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি হয়েছিল তাতে কিছুটা ভাটা পড়েছে। বিশেষ করে বিদ্যমান প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ছোটখাটো বিষয় নিয়ে যেভাবে কাদা ছোড়াছুড়ি লক্ষ করা যায় তা বেশ অস্বস্তিকর। বাংলাদেশ এমন একটি দেশ যেখানকার বেশির ভাগ মানুষ একই ভাষায় কথা বলে, তাদের জীবনাচারও একইরকম। আবার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ একই ধর্মে বিশ্বাসী।
এতদসত্ত্বেও জন্মলগ্ন থেকে নিজেদের মধ্যে রাজনৈতিক বিবাদ-বিসংবাদ লেগে আছে। যেমন একাত্তরে জাতীয় ঐক্যের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জিত হয়েছে। কিন্তু বিজয়ের পরে সবাইকে সাথে নিয়ে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার চেষ্টা না করে বিভেদ ও হিংসার পথ বেছে নেয়া হয়। শেখ মুজিবুর রহমান পার্বত্য চট্টগ্রামে গিয়ে উপজাতি জনগোষ্ঠীকে বললেন, ‘তোমরা বাঙালি হয়ে যাও।’ একটি নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীকে আরেকটি জাতিতে রূপান্তরিত হওয়ার নসিহত দেয়া যে মূর্খতার পরিচায়ক তা সেদিন কেউ তাকে বলেনি। আবার ‘মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি’ বলে রাজনৈতিক বিরোধীদের প্রতিপক্ষ বানানোর অপরিণামদর্শী কাজটিও শেখ মুজিব ও তার সরকার করেছিল। তার কন্যা শেখ হাসিনা ও তার মাফিয়া সরকার আরো কয়েক ধাপ এগিয়ে প্রতিহিংসার রাজনীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছিলেন। শুরুতে শেখ মুজিব ইসলামী রাজনীতিকে নিষিদ্ধ করে গণতন্ত্রের মূল স্তম্ভে আঘাত হানেন এবং পরে বাকশাল করে গণতন্ত্রের কবর রচনা করেন। আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক ময়দানে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে কখনো সহ্য করতে পারে না; বরং সব সময় কোণঠাসা করে রাখে এবং এর ফলে জাতীয় ঐক্যের কোনো নীতি তারা ধারণ করে বলে প্রমাণ পাওয়া যায় না। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের উত্থান হয়েছিল জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে। তিনি নিজেও জাতীয় ঐক্যকে সমুন্নত করার চেষ্টা করেছেন এবং তিনি গণতান্ত্রিক সহনশীলতাকে পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব স্বাধীনতার সূচনা থেকে জাতীয় ঐক্যের পথে অন্তরায় সৃষ্টিকারী যে কাজটি করেছিল তা হচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধের বয়ান। তাদের মতে, বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে ধর্মনিরপেক্ষতার ভিত্তিতে। এ কথা বলে তারা মূলত ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দল ও সংস্থাগুলো অবদমন করে রাখে। তাদের ‘স্বাধীনতা বিরোধী’, ‘সাম্প্রদায়িক’, ‘মৌলবাদী’, ‘ধর্মব্যবসায়ী’ ইত্যাদি অভিধায় মন্দ নাম দিতে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের ‘ওয়ার অন টেরর’ নীতি কার্যকর হলে আওয়ামী লীগ পাশ্চাত্যের আনুকূল্য পাওয়ার আশায় ইসলামপন্থীদের ‘সন্ত্রাসী’ বা ‘জঙ্গি’ নাম দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযানের নাটক মঞ্চস্থ করে। প্রতিবেশী রাষ্ট্র ও পাশ্চাত্যের একটি মহল তাদের পূর্ণ সহযোগিতা করতে থাকে। শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের সাথে সাথে এসব নাটকের অবসান হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। সুতরাং এতে করে জাতীয় ঐক্যের একটি বাধা আপাতত নিষ্ক্রিয় হয়েছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। তবে পতিত স্বৈরাচার ও তাদের দেশীয় ও বহির্দেশীয় দোসররা যে পুনরায় জেগে ওঠার চেষ্টা করছে তা একটু হলেও উদ্বেগের বিষয়।
বাংলাদেশকে দুর্বল করে রাখার নীতি বাস্তবায়ন করতে ভারত সর্বদা চেষ্টা জারি রেখেছে। এ উদ্দেশ্যে দিল্লির প্রথম কৌশল হলো, বাংলাদেশের ভেতরে ভাতাভুক্ত একদল মীরজাফর তৈরি রাখা যারা তাদের লক্ষ্য হাসিলে সহায়তা করবে। এতদিন আওয়ামী লীগকে সহায়ক শক্তি মনে করা হতো; তবে তারা এখন ক্ষমতায় না থাকলেও সক্রিয়ভাবে ভারতের সাথে একযোগে বাংলাদেশবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত রয়েছে। অন্যদিকে, ভারত এখানে একটি বি-টিম নির্বাচিত করছে যারা আওয়ামী লীগের বিকল্প হিসেবে তাদের স্বার্থে কাজ করবে। এমন একটি ভ্রান্ত ধারণা কারো কারো মধ্যে রয়েছে যে, ভারতের আশীর্বাদ ছাড়া বাংলাদেশের ক্ষমতায় কেউ আসতে পারবে না। জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়া তো ভারতের আশীর্বাদ ছাড়া বহুদিন দেশ শাসন করেছেন। প্রফেসর ইউনূস সরকারও তাই। অপর দিকে, মালদ্বীপ, নেপাল ও শ্রীলঙ্কার মতো দেশও তো ভারতকে পাত্তা না দিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। সুতরাং আওয়ামী লীগের মতো ভারতের নতজানু কৌশল নিয়ে যারা এদেশে রাজনীতি করে এবং ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখে তাদের জন্য করুণা হয়। তারা কোনো দিন জাতীয় ঐক্য গড়ার নেতৃত্ব দিতে পারবে না। নেলসন ম্যান্ডেলার মতো উদার ও গণতান্ত্রিক মানসিকতাসম্পন্ন রাজনৈতিক নেতৃত্ব-ই পারবে বাংলাদেশে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে। প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস একজন যোগ্য নেতা, যিনি রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থন পেয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করে বিভিন্ন সংস্কার কার্যক্রমে একটি ঐকমত্য গড়ে তোলার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। দেশে একটি কথা আছে ‘ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়’। কিন্তু বাস্তবে কোনো কোনো সময়ে এর উল্টো হতে দেখা যায়। ব্যক্তি বা গোষ্ঠীস্বার্থ মানুষকে এমন অন্ধ করে দেয় যে, তারা জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় স্বার্থ জলাঞ্জলি দিতে কুণ্ঠাবোধ করে না। পতিত স্বৈরাচারী সরকারের ক্ষেত্রে এটি দারুণভাবে প্রযোজ্য। একইভাবে আবার আরেকটি গোষ্ঠী যাতে দেশের স্বার্থ তথা জনগণের অভিপ্রায় ও স্বার্থের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে না পারে সেজন্য সমগ্র জাতিকে সজাগ থাকতে হবে।
বস্তুতপক্ষে বাংলাদেশে প্রধানত চারটি ধারার রাজনৈতিক বিভাজন লক্ষ করা যাচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতিতে প্রধান শক্তি হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষ নীতির অনুসারী আওয়ামী লীগ ও তাদের সমমনা বেশ কিছু দল। রাজনৈতিক বলয় ছাড়াও তাদের যারা সহায়ক শক্তি জোগায় তারা হলো সেক্যুলার বুদ্ধিজীবী ও সাংস্কৃতিক কর্মী যারা ভারতের বাঙালি সংস্কৃতির অনুগত এবং বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীকে তাদের সাথে একীভূত দেখতে চায়। আরেকটি সহায়ক শক্তি হচ্ছে তারা যারা ভারত ও পাশ্চাত্যের ইহুদি লবির সাথে সংযোগ রাখে যাতে বাংলাদেশ তাদের মতাদর্শে পরিচালিত হয়। এ শক্তিই দেশকে বিপজ্জনক পথে টেনে নিয়ে যেতে চায়। এদের ষড়যন্ত্র রুখে দিতে জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিএনপি প্রধান। দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ও পরবর্তী নেতা বেগম খালেদা জিয়া দলটিকে যে আদর্শের ওপর পরিচালিত করেছেন তা ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর অভিপ্রায়ের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। কিন্তু সাম্প্রতিককালে দলটির দ্বিতীয় সারির নেতাদের কিছু বক্তব্য বিভ্রান্তির সৃষ্টি করছে এবং আশঙ্কা হচ্ছে যে, তারা দলটির ঘোষিত নীতি ও মূল্যবোধ থেকে বিচ্যুত হচ্ছেন কি না। আশা করা যায় যে, বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান দেশে ফিরলে হয়তো এ সমস্যা আর থাকবে না।
আরেকটি রাজনৈতিক ধারা হচ্ছে, ইসলামী রাজনীতি। অনেক দিন পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামী এ ধারার প্রধান শক্তি ছিল এবং এখনো আছে। তবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও খিলাফত মজলিসের মতো কওমি ধারার আলেমদের নেতৃত্বে রাজনৈতিক তৎপরতা বেশ বেড়েছে। অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে ইসলামী দলগুলোর মধ্যে সম্প্রীতি ও ঐক্যের একটি ইতিবাচক প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে, যা জাতীয় ঐক্যের সহায়ক বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
জুলাই বিপ্লবে নেতৃত্বদানকারী ছাত্রদের নেতৃত্বে নতুন দু’টি রাজনৈতিক দল গঠিত হয়েছে, তারা কতটুকু কী করতে পারবে তা বলার সময় এখনো আসেনি। তবে আশাবাদী হওয়ার মতো বিশেষ লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। শুরুতে তারা উদারনীতি অনুসরণ করে ঐক্যের পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে; ফলে ছাত্রদের দুটো দল স্বল্প সময়ের ব্যবধানে সৃষ্টি হয়েছে। তাদের রাজনৈতিক বক্তব্য কমবেশি একই রকমের। আশার কথা যে, এখনো জাতীয় ঐক্যের ক্ষেত্রে বিশেষ করে কোনো ধরনের রাজনৈতিক দুর্যোগ দেখা দিলে ছাত্ররা পারবে দেশকে অশুভ শক্তির হাত থেকে রক্ষা করতে। সুতরাং ছাত্রদের মধ্যে ঐক্য বেশ অপরিহার্য। সন্দেহ নেই যে, গণতান্ত্রিক সমাজে মতপার্থক্য থাকবে এবং সেটাই স্বাভাবিক; কিন্তু জাতীয় স্বার্থের ক্ষেত্রে ‘ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়’-এ নীতি সমুন্নত রাখতে হবে।
লেখক : গবেষক ও সাবেক সচিব