রাজনীতিবিদদের প্রতি

উভয়পক্ষ যদি রাস্তায় নামে তাহলে বিভেদ বিপদে পরিণত হবে। সংগ্রাম সঙ্ঘাতের রূপ নেবে। আন্দোলন ও আস্ফালন দেশকে বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যাবে। সুতরাং রাজনৈতিক নেতাদের কাছে সাধারণ মানুষের একান্তই অনুরোধ- সঙ্ঘাত নয়, সংলাপে আসুন।

সম্রাট বাবর তার আত্মজীবনী ‘তুজক-ই-বাবর’ এ বাঙ্গাল মুলককে বলেছেন, ‘বুলখগ নগর’ অর্থাৎ চিরবিদ্রোহের দেশ। শত শত বছর অতিক্রান্ত হলেও সেই অভিধা এখনো সত্য। অনৈক্য, অস্থিরতা ও অরাজকতা এ দেশের নিত্যসঙ্গী। জনগণ যে চিরবিদ্রোহী, তা দেখা যাবে প্রেস ক্লাবের সামনে অথবা রাজধানীর অন্যত্র আন্দোলন, সংগ্রাম, অবরোধের মাত্রা দেখলে। রাজনীতিবিদদের দ্ব›দ্ব, বিদ্বেষ ও বিতর্ক অনুভূত হবে রাজনৈতিক ময়দান পর্যবেক্ষণে। লোকেরা বলে এ দেশে সব রাজনীতিককে একত্র করা আর ‘সোনা ব্যাঙ’ এক পাল্লায় মাপা সমান কথা। বস্তুত জাতীয় ঐকমত্য অর্জন একটি অসম্ভব প্রত্যাশা। তার পরও ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবের পর অবশেষে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠিত হয়েছে সব দল, সব মত একত্র করার জন্য। এই অসম্ভব কাজে যতটা সম্ভব ঐক্য তৈরি হয়েছে। অবশেষে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে গোল বেঁধেছে। আরো গোল বেঁধেছে নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে। অবস্থাটা সেই ছোট গল্পের সংজ্ঞার মতো- ‘শেষ হইয়াও হইল না শেষ’। আবার নতুন করে উত্তপ্ত হয়েছে দেশের রাজনৈতিক ময়দান। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি এবং সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের বিষয় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো মাঠে নেমেছে। যথারীতি রাজনৈতিক দলগুলো বিষয় দুটো নিয়ে দ্ব›দ্ব-সঙ্ঘাতে জড়িয়ে পড়েছে।

অভিন্ন দাবিতে একযোগে বিক্ষোভে নেমেছে সাতটি দল। দলগুলো হচ্ছে- জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ও জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি- জাগপা। দলগুলোর এই কর্মসূচির লক্ষ্য- ক. জুলাই সনদের ভিত্তিতে নির্বাচন অনুষ্ঠান; খ. সমানুপাতিক নির্বাচন/পিআর পদ্ধতির নির্বাচন। জাতীয় নির্বাচনে সংসদের উভয় কক্ষে পিআর পদ্ধতি চালু করা; গ. নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড। অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করা; ঘ. বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সব জুলুম, গণহত্যা ও দুর্র্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা; ঙ. স্বৈরাচারের সহায়ক জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা। এসব দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে তারা ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায়, ১৯ সেপ্টেম্বর বিভাগীয় শহরে এবং ২৬ সেপ্টেম্বর সারা দেশে জেলা-উপজেলায় বিক্ষোভ কর্মসূচি দিয়েছে। অবশেষে তারা যুগপৎ শব্দটি ব্যবহার করছে না বটে, তবে সব দল একই সময়ে পৃথক পৃথকভাবে একই কর্মসূচি পালন করছে। কৌশলগত কারণে তারা ভিন্ন ভিন্নভাবে কর্মসূচি পালন করছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। অন্যদিকে এনসিপি, এবি পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ মধ্যবর্তী অবস্থান থেকে সাতদলীয় জোটের দাবিগুলোর কাছাকাছি অবস্থান করছে। এই তিনটি দল সংবিধান ও রাষ্ট্র কাঠামো সংস্কারের প্রশ্নে সাত দলের সাথে অভিন্ন ভাষায় কথা বলছে। তবে বিএনপি বা জামায়াত জোটে- কে কোথায় যাবে এই নিয়ে তারা দর কষাকষিতে আছে বলে রাজনৈতিক অভিজ্ঞ মহল মনে করে।

রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এখন দৃশ্যত বিভেদ নির্বাচন ঘিরে। প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি নির্বাচনকে অধিকতর গুরুত্ব দিচ্ছে। অপরদিকে, অন্যান্য রাজনৈতিক দল রাজনৈতিক সংস্কার নিশ্চিত হওয়ার পর নির্বাচন চাচ্ছে। নির্বাচন পদ্ধতি নিয়েও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভেদ সাগর সমান। উল্লিখিত সাতটি দল পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের ব্যাপারে শক্ত অবস্থানে রয়েছে। আন্দোলন সংগ্রাম করে তারা পিআর পদ্ধতি নিশ্চিত করতে চাইছে। অপর দিকে, বিএনপি পিআর প্রশ্নে অনড় অবস্থানে রয়েছে। দলগুলোর এই যুগপৎ আন্দোলন নির্বাচনকে বানচাল অথবা বিলম্বিত করার প্রক্রিয়া মনে করছে বিএনপিসহ আরো কয়েকটি দল। এই দুই জোটের মাঝখানে রয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি, আমার বাংলাদেশ-এবি পার্টি এবং গণঅধিকার পরিষদ। তাদের এসব বিষয়ে ভিন্নমত রয়েছে। সাতদলীয় জোটের নেতারা আন্দোলনের ব্যাপারে নানা কর্মসূচি দিয়ে সরকারকে বাধ্য করতে চায় তাদের দাবি-দাওয়ার সপক্ষে। এই পরিস্থিতিতে দেশে একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ ও রাজনৈতিক অচলাবস্থা তৈরি হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট মহল আশঙ্কা করে। এ অবস্থায় দেশের মানুষ উদ্বিগ্ন ও উৎকণ্ঠিত। যেসব রাজনৈতিক দল জামায়াত জোটের সাথে এখনো একাত্মতা প্রকাশ করেনি, তারাও অবশেষে এদিকে ভিড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে বিএনপি একা হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এটি সবার কাছেই বিশ্বাসযোগ্য যে, আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতিতে বিএনপি একটি অনংড়ষঁঃব বা সামগ্রিক অবস্থানে রয়েছে। এটি তাদের জন্য যেমন প্লাস পয়েন্ট তেমনি মাইনাস পয়েন্টও বটে। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ার কারণে বিএনপি এর শক্ত অবস্থান রয়েছে। অপর দিকে, অন্যান্য রাজনৈতিক দল অসহায়ত্ব বোধ করছে। একজন রাজনৈতিক নেতা সে দিন বললেন, দেশটি প্রায় একটি প্রতিদ্ব›িদ্বতাহীন নির্বাচনের দিকে এগুচ্ছে। অবশ্য এই অবস্থার বিপরীতে জামায়াতে ইসলামীর বিস্ময়কর উত্থান বিএনপিকে স্বাভাবিকভাবেই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করেছে। বিশেষ করে ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনের ফলাফলের পর তারা একটু নড়েচড়ে বসছে। রিজভী আহমেদ লিখেছেন, যারা ফাঁকা মাঠে গোল দেয়ার চেষ্টা করছেন তারা ওই ফলাফলের পর নিশ্চয়ই চিন্তাভাবনা করবেন। রাজনৈতিকভাবে একটি শক্তিশালী বিরোধী দল কাক্সিক্ষত হলেও, বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি এর অনুকূল নয়। কেউ কাউকে জায়গা ছেড়ে দিতে বা সমঝোতার পথে হাঁটতে রাজি নয়। সবাই মাঝে মধ্যে ভালো ভালো কথা বলেন। মন্দ মন্দ কাজ করেন। রাজনৈতিক দলের আচরণ, কথাবার্তা ও উচ্চারিত শব্দাবলি পরীক্ষা-নীরিক্ষা করলে অবশ্যই হতাশ হতে হয়।

ইসলামী আন্দোলনের প্রধান চরমোনাই পীর আন্দোলনের সপক্ষে যুক্তি তুলে ধরে বলেন, ‘সরকার পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের ঘোষণা না দিলে সমমনা দলগুলোকে নিয়ে আমরা আন্দোলনে নামব। কেবল নির্বাচন ও ক্ষমতার পালাবদলের জন্য জুলাই অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়নি। দেশকে স্থায়ীভাবে ফ্যাসিস্ট ও স্বৈরতন্ত্রের কবল থেকে রক্ষা করতে মৌলিক সংস্কার ছিল এ অভ্যুত্থানের উদ্দেশ্য। কিন্তু সংস্কার ও বিচারকে গুরুত্ব না দিয়ে নির্বাচনকে মুখ্য করে তোলা হয়েছে, যা দেশকে অশুভ বন্দোবস্তে নিপতিত করবে। রাজনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, জামায়াতসহ অন্য দলগুলোর নেতারা মনে করছেন, অন্তর্বর্তী সরকার বিএনপির দিকে হেলে গেছে। বিশেষ করে প্রধান উপদেষ্টার সাথে লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর থেকে সরকার বিএনপির চাওয়াকে প্রাধান্য দিয়ে চলছে বলে তাদের অভিযোগ। এ অবস্থায় জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি নিয়ে এর বাস্তবায়নের মাধ্যমে নির্বাচন আয়োজন না করলে নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে না। এই বাস্তবতা সামনে রেখে কয়েকটি দল প্রাথমিকভাবে ঐকমত্যে পৌঁছেছে।’ তাহলে দেখা যাচ্ছে, বিএনপিকে প্রধান শক্তি মনে করে নতুন সমীকরণের আন্দোলন করছে। বিএনপির প্রাধান্যকে খর্ব করার জন্য সব ইসলামপন্থীর ভোট এক বাক্সে আনার উদ্যোগ চলছে। এর প্রধান উদ্যোক্তা হচ্ছেন চরমোনাইর পীর সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করিম। সে উদ্যোগে শামিল থাকার কথা জানিয়েছেন জামায়াতের আমির ডা: শফিকুর রহমান। এর সাথে আহমেদ আবদুল কাদেরের খেলাফত মজলিস ও মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসও যুক্ত রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। সত্যিই যদি তাই হয় তাহলে বিএনপির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জের সৃষ্টি হতে পারে। এ ক্ষেত্রে ভিন্ন মতও রয়েছে। অনেকে মনে করেন, দু-একটি ইসলামী দল অবশ্যই বিএনপির সাথে থাকবে। আর ইলেকশন পলিটিকসে ইসলামপন্থীদের অভিজ্ঞতা খুবই কম। সুতরাং বিষয়টি সম্পর্কে মন্তব্য করতে আরো সময় লাগবে। নির্বাচনের পূর্ব মুহূর্তে অনেক কিছু ওলট-পালট হয়ে যায়। বিএনপি ইসলামী দলগুলোর সমর্থন লাভে সচেষ্ট রয়েছে। বেশ কিছু দিন আগে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ হেফাজতে ইসলামের মূল কেন্দ্রবিন্দু হাটহাজারী মাদরাসায় গিয়েছিলেন। আরো কয়েকটি দলের সাথে তাদের জোট হতে পারে।

অবশেষে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একমত হয়েছে, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতাবলে একটি সাংবিধানিক আদেশ জারি এবং পরবর্তীতে গণভোটের মাধ্যমে ‘জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫’ এর সাংবিধানিক বিধানগুলো কার্যকর হবে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এই প্রস্তাব এসেছে বিশেষজ্ঞ প্যানেলের পরামর্শে। গত বুধবার রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে এ প্রস্তাব তুলে ধরেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ। প্রস্তাবে বলা হয়- অবিলম্বে এই আদেশ কার্যকর করা হবে। এরপর আদেশটি নিয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনই গণভোট করা যেতে পারে। তবে প্রস্তাবটি গ্রহণ করেনি বিএনপি। জামায়াতে ইসলামী প্রস্তাবটি সমর্থন করেছে। আর জাতীয় নাগরিক পার্টি বলেছে, এ নিয়ে তাদের আলোচনা করতে হবে। এর বাইরে সংবিধানের সংশোধন বা সংবিধান আদেশ অন্তর্বর্তী সরকার বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ করতে পারবে কি না বা অন্য কোনো উপায়ে এটি করা যায় কি না, এ বিষয়ে সংবিধানের ১০৬ নং অনুচ্ছেদ অনুসারে সুপ্রিম কোর্টের মতামত চাওয়া প্রস্তাব দিয়েছে বিএনপি। আরো কয়েকটি দল ও সুপ্রিম কোর্টের মতামত চাওয়ার কথা বলেছে। তবে জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি সুপ্রিম কোর্টের মতামত চাওয়ার বিপক্ষে তাদের অবস্থান জানিয়েছে। স্মরণ করা যেতে পারে, এই আলোচনাটি ছিল জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সূচিত সংলাপের সর্বশেষ পর্ব। এ বিষয়ে আগামী অক্টোবর মাসের শুরুর দিকে আবার আনুষ্ঠানিক আলোচনা হতে পারে। ঐকমত্য কমিশন আলোচনার তারিখ পরে জানাবে বলে জানা গেছে। এর আগে গত ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সময়ে দুই পর্বে দলগুলোর সাথে সংস্কার প্রস্তাব আলোচিত হয়। এতে ৮৪টি প্রস্তাবে ঐকমত্য ও সিদ্ধান্ত হয়। সংবিধানসংক্রান্ত প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে একাধিকবার বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়েছে ঐকমত্য কমিশন।

সামগ্রিক বিষয়ে পর্যালোচনা করার পর দেখা যাচ্ছে, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে চূড়ান্ত ঐকমত্য সৃষ্টি হয়নি। জুলাই সনদ সাংবিধানিক আদেশ ও গণভোটের মাধ্যমে বাস্তবায়নের যে সুপারিশ জাতীয় ঐকমত্য কমিশন করেছে তাতে বিএনপির সমর্থন নেই। সাতদলীয় জোটের অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি পিআর সিস্টেম নিয়ে কোনোরকম আলোচনাই হয়নি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পিআর সিস্টেমের ব্যাপারে কোনো কথা বলছে না। এর আগে অবশ্য তারা সংসদের উচ্চকক্ষে পিআর সিস্টেমের কথা বলছিল। বিএনপি তাতেও রাজি হয়নি। স্পষ্টত একটি রাজনৈতিক অচলাবস্থার তৈরি হয়েছে। বিএনপি বিরোধী জোটের পাল্লা দিন দিন ভারী হচ্ছে। বিএনপিও বসে নেই। তারাও নির্বাচনমুখী কর্মসূচি দিয়ে রাস্তায় থাকবে। বিএনপি বলছে, সংস্কার প্রশ্নে বাড়াবাড়িতে না গিয়ে নির্বাচনমুখী কর্মসূচি দেবে তারা। সংবাদ সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা মনে করেন, জুলাই জাতীয় সনদ বা গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক সংস্কার প্রশ্নে বিএনপির দিক থেকে যে অবস্থান প্রকাশ করা হয়েছে এর বাইরে আর তেমন কিছু করার নেই। দৃশ্যত ঐকমত্য কমিশনের সাথে আলোচনা অমীমাংসিত রেখেই রাজনৈতিক দলগুলো যার যার মতো করে কর্মসূচি ঘোষণা করছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, জুলাই সনদ নিয়ে আলোচনা অব্যাহত থাকা অবস্থায় কর্মসূচি ঘোষণা স্ববিরোধিতা। তিনি প্রশ্ন তোলেন, এই আন্দোলন কাদের বিরুদ্ধে, সেটি দেখতে হবে। এটি কি অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে নাকি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বিরুদ্ধে, নাকি বিএনপির বিরুদ্ধে? এটি নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার কোনো কৌশল কি না সেটিও দেখতে হবে। এর আগে সালাহউদ্দিন আহমেদ সবাইকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, বিরোধীদের আন্দোলন দেশের জন্য ভয়ঙ্কর বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে। বিএনপির স্থায়ী কমিটি বিরোধী পক্ষের রাজনৈতিক কৌশলের বিপরীতে মাঠের কর্মসূচি দিয়ে রাজনৈতিক বক্তব্যের জবাব দেয়ার বিষয়ে একমত হয়েছে। তারা মনে করেন, মাঠপর্যায়ে নির্বাচনী হাওয়া উঠে গেলে বিরোধীদের সব চক্রান্ত ও অযৌক্তিক দাবি হারিয়ে যাবে।

আলোচনা-পর্যালোচনা অবশেষে দেখা যাচ্ছে, নির্বাচনের পূর্বক্ষণে যেখানে দেশ নির্বাচনমুখী হয়ে ওঠার কথা- সেখানে আন্দোলনমুখী হয়ে উঠেছে। সাত দলের কর্মসূচির বিপরীতে রাজনৈতিক কর্মসূচি দেয়ার কথা বলেছে বিএনপি।

উভয়পক্ষ যদি রাস্তায় নামে তাহলে বিভেদ বিপদে পরিণত হবে। সংগ্রাম সঙ্ঘাতের রূপ নেবে। আন্দোলন ও আস্ফালন দেশকে বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যাবে। সুতরাং রাজনৈতিক নেতাদের কাছে সাধারণ মানুষের একান্তই অনুরোধ- সঙ্ঘাত নয়, সংলাপে আসুন। এমন কোনো সমস্যা নেই যার সমাধান সংলাপে হবে না। রাজনৈতিক নেতৃত্ব সমঝোতা, সহনশীলতা ও পারস্পরিক সুন্দর সম্পর্কের মাধ্যমে উত্থিত রাজনৈতিক বিরোধের মোকাবেলা করবে- এটিই জনগণের প্রত্যাশা।

লেখক : অধ্যাপক (অব:), সরকার ও রাজনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়