গত ১৭ নভেম্বর সোমবার বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-আইসিটি-১ এক ঐতিহাসিক রায় দিয়েছেন। এতে ক্ষমতাচ্যুত পলাতক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন। অপর আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন (রাজসাক্ষী) পাঁচ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে কয়েক মাস ধরে এই মামলার শুনানি চলছিল। শুনানির আগে এই মামলার বিষয়ে বিশদ অনুসন্ধান ও তদন্ত অনুষ্ঠিত হয়। তদন্তের পর মামলাটি ট্রাইব্যুনালে আনা হয়। আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের বিচারকরা মামলাটির যাবতীয় বিষয় পর্যবেক্ষণ, বিশ্লেষণ এবং প্রমাণাদি সাপেক্ষে তাদের দণ্ড দিয়েছেন। আসামিদের অনুপস্থিতির কারণে সরকার তাদের সপক্ষে আইনজীবী নিযুক্ত করেছে। উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শোনার পর বিচারকমণ্ডলী এ রায় দেন। রাষ্ট্রের পক্ষে নিযুক্ত প্রধান কৌঁসুলি তাজুল ইসলাম যথার্থই বলেছেন, একটি হত্যার জন্য যদি একটি ফাঁসির দণ্ড হয়, তাহলে এক হাজার ৪০০ হত্যার জন্য শেখ হাসিনার এক হাজার ৪০০ বার ফাঁসি হওয়া উচিত।
রায় ঘোষণার পর সারা দেশে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। দেশের বিভিন্ন স্থানে রাজনৈতিক দল ও অরাজনৈতিক ব্যক্তিরা আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণের মাধ্যমে তাদের সন্তোষ প্রকাশ করেন। ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে হাজার হাজার প্রতিবাদী মানুষ সমবেত হয়। তারা সেখানে বাড়ির যে অবশিষ্টাংশটুকু আছে তাও গুঁড়িয়ে দিতে চায়। এদিকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে শেখ হাসিনার রায়ের খবর পাওয়া মাত্র আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ফটকের সামনে উল্লাস শুরু করেন বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ। তাদের মধ্যে ছিলেন শহীদ পরিবারের সদস্য ও আহতরা। তারা হাসিনাবিরোধী স্লোগান দেন। বেলা ৩টার দিকে মিষ্টি বিতরণ করা হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন শহীদ ইসমাইল হোসেন রাব্বির বাবা। পেশায় ভ্যানচালক মিরাজ তালুকদার। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, শেখ হাসিনা যে অপরাধ করেছেন ১০০ বার ফাঁসি দিলেও তা কম হয়ে যাবে। এ রায় দ্রুত কার্যকর দেখতে চান তারা। ট্রাইব্যুনালের এই রায়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়ে সন্তোষ জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। দলটি বলেছে, এই বিচারে আন্তর্জাতিক মান রক্ষা করা হয়েছে। রায় বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদের কবর রচনা হবে বলে মনে করেন গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি ভিপি নুরুল হক নুর।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি সতর্ক বিবৃতি দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী হাসিনাকে নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ঘোষিত রায়টি ভারতের নজরে এসেছে। কোনোরকম দোষারোপ এড়িয়ে বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ভারতের নিকটতম প্রতিবেশী বাংলাদেশ এবং দেশটির জনগণের শান্তি, গণতন্ত্র, অংশগ্রহণমূলক রাজনীতি ও স্থিতিশীলতাকে ভারত সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়। এ অঞ্চলে দীর্ঘদিনের অভিন্ন ইতিহাস ও সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে ভারতীয় বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশের জনগণের সর্বোত্তম স্বার্থ নিশ্চিত করতে তারা সবসময় গঠনমূলক ভূমিকা পালন করতে ইচ্ছুক। ভারতের বিবৃতিতে জোর দিয়ে বলা হয়, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি যাই হোক ভারতের লক্ষ্য হবে বাংলাদেশের সব অংশীজনদের সাথে ইতিবাচক ও কার্যকর যোগাযোগ বজায় রাখা- যাতে দেশটির স্থিতিশীলতা ও শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা যায়। বিবৃতিটির ভাষা ও অভিব্যক্তি তাৎপর্যপূর্ণ।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায়ের কথা শুনে ক্ষিপ্ত হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী। তার ভাষায় রাজ্য তথা ভারতের সংস্কৃতি রক্ষা করতেন শেখ হাসিনা। তাকে যারা এমন সাজা দিয়েছে তাদের অবস্থা ভালো হবে না। অন্য একটি ইস্যুতে সংবাদ সম্মেলন করছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। সেখানে শেখ হাসিনা প্রসঙ্গ উঠতেই তিনি বলেন, আজকে যারা আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে এই রায় দিলেন তাদের অবস্থা খারাপ হবে। পাকিস্তানের নির্দেশে এসব হয়েছে। হাসিনাকে প্রশংসায় ভরিয়ে তিনি আরো বলেন, হাসিনা উদারচেতা বাঙালি সংস্কৃতিকে রক্ষা করতেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গাওয়া গানকে জাতীয় সঙ্গীতের মর্যাদা দিয়েছিলেন। অবিভক্ত বাংলার ঐতিহ্য রক্ষা করার কাজ করতেন তিনি। শুভেন্দু আরো জানান, রাজনীতির বাইরে গিয়ে একজন বাঙালি হিসেবে তিনি তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন। বিদেশ ইস্যুতে তিনি আর মন্তব্য করবেন না। বাংলাদেশী মুসলিমদের তাড়ানোর কথা বলে আসছিল বিজেপি। এই প্রশ্নের উত্তরে শুভেন্দুর স্পষ্ট জবাব- শেখ হাসিনা বৈধভাবে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে ভারতে রয়েছেন। এর আগে বঙ্গবন্ধু, দালাইলামা সবাইকেই এভাবে আশ্রয় দেয়া হয়েছিল। কিন্তু যারা ভিসা শেষ হওয়ার পরও এ দেশে রয়ে গেছে তারা মমতা বন্দোপাধ্যায়ের দৌলতে বাংলায় ঢুকে পড়েছে। তাদের সরানোর কথা বলা হয়েছে।
ঢাকায় শেখ হাসিনার বিচার ও দণ্ডদান আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ব্যাপক গুরুত্ব পেয়েছে। এই রায় নিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স, এএফপি, বিবিসি, সিএনএন ও আল জাজিরা বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। বিবিসির খবরের শিরোনাম করা হয়েছে- ‘নৃশংসভাবে বিক্ষোভ দমনের মামলায় বাংলাদেশের সাবেক নেতা শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড’। এতে আরো বলা হয়, শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে প্রত্যর্পণ করা নিয়ে এখন ভারতের ওপর চাপ বাড়বে। তা সত্তে¡ও তাকে ঢাকার কাছে প্রত্যর্পণের তেমন সম্ভাবনা নেই। রয়টার্সের খবরের শিরোনাম ছিল এরকম- ‘শিক্ষার্থীদের ওপর দমন-পীড়নের দায়ে বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী হাসিনার মৃত্যুদণ্ড’। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, দীর্ঘ কয়েক মাসের বিচারপ্রক্রিয়া শেষে বাংলাদেশের একটি যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। রয়টার্সের প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, এ রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করা যাবে। কিন্তু শেখ হাসিনার ছেলে এবং তার উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় রয়টার্সকে বলেন, আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতা গ্রহণ না করা পর্যন্ত তারা আপিল করবেন না। ভারতের গণমাধ্যম দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের শিরোনাম ছিল- ‘শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড, এখন কী হবে?’ তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজনৈতিক শত্রুদের তাড়া করতে ২০০৯ সালে তিনি নিজেই যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছিলেন সেটিই তার মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছে।
নির্মমতার পরিণতি নির্মমতাই হবে- এটিই স্বাভাবিক। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক টানাপড়েনে বা রাজনৈতিক অনৈক্যের কারণে দুর্ভাগ্যক্রমে বাংলাদেশের রাজনীতিতে যদি কোনোভাবে হাসিনা জায়গা করে নিতে পারে তা হবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তার জন্য বিরাট এক হুমকি। বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরাজয় মেনে না নেয়ার যে লক্ষণ প্রতিবেশী দেশটি দেখাচ্ছে, তাতে এ আশঙ্কা করার যথেষ্ট কারণ আছে। ১৯৭৫ সালে শেখ সাহেবের মৃত্যুর পর কাদের সিদ্দিকী গং এবারের আওয়ামী লীগারদের মতো ভারতে পালিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে ভারত সরকারের মদদে সীমান্তে হামলা ও দেশের অভ্যন্তরে নাশকতা অব্যাহত রাখে তারা।
সুতরাং সেই ধরনের হামলার আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না। তাছাড়া সেই সময়ে ভারতের সহযোগিতায় তথাকথিত শান্তিবাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামে অশান্তি সৃষ্টি করেছিল। উদ্দেশ্য একটাই- তৎকালীন জিয়াউর রহমান সরকারকে বিব্রত করা ও চাপে রাখা। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় এই, সেই তথাকথিত শান্তি বাহিনী শান্তিচুক্তি করেছে অনেক অনেক বছর পর, যখন ভারতপন্থী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
ভারত সরকার তাৎক্ষণিক বিবৃতিতে নমনীয়তা ও ক‚টনৈতিক শিষ্টাচার বজায় রাখলেও অবশেষে তারা কী করে, তা বোঝা মুশকিল। তবে হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের পরে ভারত সরকারের প্রতি স্বাভাবিকভাবেই নৈতিক চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। হাসিনাকে ফেরাতে ‘কনভিকশন ওয়ারেন্ট’ যাবে ইন্টারপোলে। সুতরাং আন্তর্জাতিক আইনকানুন অনুযায়ী ভারত সরকার আরো চাপে পড়বে। এতদিন ধরে শেখ হাসিনা ভারতের মাটি ব্যবহার করে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যে তৎপরতা চালাচ্ছেন, সেটি চালাতে দেয়াও ভারত সরকারের জন্য ক্রমশ বিব্রতকর হবে। সবচেয়ে বড় কথা, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ ভারতে শেখ হাসিনার আশ্রয় এবং প্রশ্রয়কে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করছে না। পররাষ্ট্রনীতির মূল কথা- জাতীয় স্বার্থ। কিন্তু জাতীয় স্বার্থের দিকে না তাকিয়ে ভারতের মতো পরিপক্ব ক‚টনীতিকরা কিভাবে ব্যক্তি বা দলীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন তা একটি বিস্ময়কর ব্যাপার বটে। ভারতের সরকার তাৎক্ষণিকভাবে রায়ের ব্যাপারে কোনো কথা না বললেও ইশারা-ইঙ্গিতে যা বলেছে তা ‘আকলমান্দকে লিয়ে কাফি’। এ ব্যাপারে ভারতীয় কংগ্রেসের এক সময়ের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শশি থারুরের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা চোখেপড়ার মতো। দেখা যাচ্ছে, হাসিনা বিষয়ে বিজেপি ও কংগ্রেস একই রকম দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে। অদূর ভবিষ্যতে ভারত সরকার আহা-উহু শুরু করলে শেখ হাসিনার অন্য কোনো দেশে আশ্রয় নেয়ার প্রয়োজন অনুভূত হতে পারে।
বাংলাদেশের রাজনীতি যেহেতু উত্তরাধিকারভিত্তিক, হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের মধ্য দিয়ে শেখ বংশীয় উত্তরাধিকারের রাজনীতি চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। ৫ আগস্ট যখন তিনি সবাইকে ফেলে পলায়ন করেন তখনই আসলে জনতা এবং নেতাকর্মী থেকে তিনি নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন। শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় ৫ আগস্টের পরপর বলেছিলেন, শেখ বংশ আর রাজনীতিতে ফিরবে না। এখন শেখ হাসিনা ওই একই কথা বলছেন। এটি আসল কথা নয়। শেখ বংশ নিন্দিত হওয়ার কারণে এখন তারা নন্দিত ব্যক্তিত্ব খুঁজছেন। একবার শুদ্ধাচার আওয়ামী লীগের নামে সাবের হোসেন চৌধুরীর নাম শোনা গিয়েছিল। অন্যতম গ্রহণযোগ্য নেতা তাজউদ্দীনের সু-পুত্র সোহেল তাজকে নিয়েও কথাবার্তা শোনা যায়। আসলে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগ চার ভাগ হয়েছিল। এক ভাগের নেতৃত্বে ছিলেন মালেক উকিল। আরেক ভাগ ছিল মিজানুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বে। সিলেটের দেওয়ান ফরিদ গাজী আরেকটি আওয়ামী লীগ খুলে বসেছিলেন। বাকশাল আবদুর রাজ্জাক নামে খ্যাত আবদুর রাজ্জাক বাকশালের নামেই আওয়ামী লীগ পুনঃউত্থান কামনা করেছিলেন। এবারের অবস্থা তথৈবচ।
নির্বাচন সামনে রেখে নানা ধরনের রাজনৈতিক খেলাধুলা হতে পারে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বারবার বলছেন, আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। সেটিই সত্য। কিন্তু নেপথ্যে তারা যে ভূমিকা রাখবে না, তা কে বলতে পারে? এখন এরশাদের পরিত্যক্ত জাতীয় পার্টি উঁকিঝুঁকি মারছে। জাতীয় পার্টি আগে যেমন আওয়ামী লীগের বি-টিম ছিল, এখন আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টির বি-টিম হবে। আওয়ামী লীগের লুটপাটের টাকা এবং লোকজনদের দলে শামিল করার জন্য যে চেষ্টা চলছে, তা ইতোমধ্যে প্রকাশ হয়েছে। গণ অধিকার পরিষদের নেতা ভিপি নুরকে নির্মমভাবে পেটানোর পেছনে এরকম মদদ ছিল। তাছাড়া আওয়ামী লীগের দু’আনা-চার আনার ভাড়া করা চৌদ্দদল তো আছেই। কোনো না কোনো পার্টির ওপর সওয়ার হতে পারলে আওয়ামী লীগ চেষ্টার ত্রুটি করবে না। সেখানে আওয়ামী লীগকে বেআইনি ঘোষণার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করা। আর রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে হলে অবশ্যই ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী শক্তির অটুট ঐক্য প্রয়োজন। দলীয় স্বার্থ, সুবিধা অতিক্রম করে উভয় শক্তি অন্তত ফ্যাসিবাদ মোকাবেলায় তাদের ঐক্য প্রদর্শনে সক্ষম হবে বলেই নাগরিক সাধারণ বিশ্বাস করতে চায়।
মৃত্যুদণ্ডের সাথে সাথে শেখ হাসিনা তথা আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক মৃত্যু ঘটেছে বলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের পর্যবেক্ষক এবং দেশজ রাজনৈতিক নেতারা মন্তব্য করেছেন। এই রায়ের ফলে আশায় আশায় থাকা আওয়ামী লীগারদের মনে নিরাশার সৃষ্টি হয়েছে। ভারত থেকে টুপ করে ঢুকে পড়ার মতো কথা বলে এতদিন যেসব আওয়ামী লীগারকে তিনি ঘোরে রেখেছিলেন, এখন হয়তো তাদের ঘোর কেটে যাবে। ১৯৭৫ সালে আওয়ামী লীগ পতনের ২১ বছর পর জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী শক্তির বিভাজনের সুযোগে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে। তা না হলে আওয়ামী লীগ এতদিনে মুসলিম লীগে পরিণত হতো। রাজনৈতিক নেতৃত্ব যখন জনগণের সমর্থন, সহানুভূতি ও বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে তা পুনরুদ্ধার করা একরকম অসম্ভব। তাই রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করে, দৈবদুর্ঘটনাক্রমে যদি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরে আসতে চায়, তাহলে তাদের (২১x২)=৪২ বছর সময় লাগবে। বিশেষ করে জেন-জি বা নবপ্রজন্ম যত দিন বেঁচে থাকবে তত দিন আওয়ামী লীগারদের স্বপ্ন দুঃস্বপ্নেই পরিণত হবে। ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের চেতনা প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম প্রবাহিত হবে, আওয়ামী প্রত্যাবর্তন অসম্ভবই প্রমাণিত হবে।
লেখক : অধ্যাপক (অব:), সরকার ও রাজনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়



