কমিউনিস্টদের ভিন্নদলে অনুপ্রবেশের রাজনীতি

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জেনারেল জিয়াউর রহমান সংবিধানে আল্লাহর ওপর আস্থা সংযোজনের মাধ্যমে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের সমর্থন আদায়ে সক্ষম হলেও বিএনপির কিছু নেতার মধ্যে ইসলামবিরোধী মনোভাব দেখা যায়। এর মূল কারণ তাদের এক সময়কার বামপন্থার রাজনীতি। কমিউনিজমের বিষয়ে হতাশ হলেও তারা সবসময় ইসলামবিরোধী মনোভাব লালন করে।

ওয়ালিউল হক

কমিউনিস্ট পার্টি উপমহাদেশের একটি অন্যতম প্রাচীন রাজনৈতিক দল। ১৯২০ সালে কমিউনিস্ট নেতা এম এন রায়ের নেতৃত্বে ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি গঠিত হয়। এম এন রায়ের আসল নাম নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য হলেও পরবর্তীতে তিনি মানবেন্দ্রনাথ রায়, সংক্ষেপে এম এন রায় নামে পরিচিতি লাভ করেন। এম এন রায়ের জন্ম পশ্চিমবঙ্গে হলেও তিনি ১৯২০ সালের ১৭ অক্টোবর বর্তমান উজবেকিস্তানের রাজধানী তাসখন্দ শহরে ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি গঠন করেন।

কমিউনিস্ট পার্টি ধর্মকে আফিম হিসেবে বিবেচনা করে। আর এ কারণে ব্রিটিশ ভারতে তৎকালীন দু’টি প্রধান রাজনৈতিক সংগঠন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের বিপরীতে তারা তেমন জনভিত্তি গড়ে তুলতে পারেনি। তারা ধর্মের ভিত্তিতে ভারত বিভাজনের তীব্র বিরোধিতা করলেও পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠা অত্যাসন্ন বুঝতে পেরে পার্টির মুসলমান নামধারী সদস্যদেরকে মুসলিম লীগে অনুপ্রবেশ করায়। নূহ-উল-আলম লেনিন রচিত ও সম্পাদিত ‘কমিউনিস্ট পার্টির ইতিহাস প্রসঙ্গ ও দলিলপত্র’ গ্রন্থে এর উল্লেখ আছে।

পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর কমিউনিস্ট পার্টি ভারতের প্রভাবশালী কমিউনিস্ট তাত্তি¡ক বি টি রনদিভের ‘ইয়ে আজাদি ঝুটা হায়, লাখো ইনসান ভুখা হয়’ স্লোগানের সাথে সাথে সশস্ত্র সংগ্রামের পথ বেছে নেয়। তেভাগা, টংক ও নানকার আন্দোলনের নামে পুলিশ হত্যা শুরু করে। ১৯৪৯ সালে তারা নেত্রকোনার লেঙ্গুরায় সাত পুলিশ এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে চার পুলিশকে হত্যা করে। যার ফলে সরকারও তাদেরকে কঠোর হাতে দমন করে।

পশ্চিমা ধাঁচের জীবনযাপনে অভ্যস্তÍ হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর অনুসারীরা ১৯৪৯ সালে আসাম মুসলিম লীগের সভাপতি মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠন করে। আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠিত হওয়ার পর কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যরা তাদের পরিচয় গোপন রেখে ওই দলে যোগ দেয়। নূহ-উল-আলম লেনিন লিখেন, ‘যেহেতু সরকারের তীব্র দমননীতির জন্য পার্টির নামে জনগণের মধ্যে কাজ করা সম্ভব ছিল না এবং যেহেতু সাধারণ জনগণের মধ্যে কমিউনিস্ট পার্টি সম্পর্কে তখনো নানা প্রশ্ন বিদ্যমান ছিল, সেহেতু সাময়িক কর্মকৌশল হিসেবে পার্টির প্রকাশ্য সদস্য ও কর্মীদের কমিউনিস্ট পরিচয় গোপন রেখে আওয়ামী মুসলিম লীগে যোগ দিয়ে তার মাধ্যমে জনগণের ভেতর কাজ করা ও সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ভেতর পার্টির যোগাযোগ গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

তবে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করার পথে দুই ধরনের অন্তরায় দেখা দেয়। প্রথমত, ‘আওয়ামী মুসলিম লীগে’ তখনো পর্যন্ত অমুসলিমদের সদস্যপদ গ্রহণের সুযোগ ছিল না। দ্বিতীয়ত, কমিউনিস্ট পার্টির একাংশের মধ্যে আওয়ামী লীগ সম্পর্কে বৈরী মনোভাব। ১৯৫১ সালের সম্মেলনে গৃহীত এই কর্মকৌশল বাস্তবায়ন যাদের ওপর নির্ভরশীল ছিল, সেই মোহাম্মদ তোয়াহা, অলি আহাদ ও সর্দার হালিম প্রমুখ ঢাকা শহরের নেতৃস্থানীয় কর্মীরা আওয়ামী লীগ সাম্প্রদায়িক দল এই অজুহাতে যোগদান করতে রাজি হননি।

তার ভাষ্য মতে, কমিউনিস্ট পরিচয় গোপন রেখে অন্য কোনো আইনসম্মত দলে প্রকাশ্যে বৈধ কাজকর্ম করার কমিউনিস্ট পার্টির এই নীতিটি নতুন নয়। ভারতে কমিউনিস্ট পার্টি ১৯৪২ সালে বৈধ হওয়ার আগ পর্যন্ত কমিউনিস্টরা এভাবেই কাজ করেছে। ১৯৪৫-৪৬ সালে কমিউনিস্ট পার্টি দ্বিজাতিতত্তে¡র ভিত্তিতে পাকিস্তান হতে যাচ্ছে এই বাস্তবতা মেনে নেয়ার পর অনেক মুসলমান ছাত্র ও যুবকর্মীকে পরিকল্পিতভাবে মুসলিম লীগে কাজ করতে পাঠায়। দৃশ্যত মুসলিম লীগার এই তরুণদের সবাই যে কমিউনিস্ট পার্টির প্রতি তাদের আনুগত্য টিকিয়ে রাখতে পেরেছিলেন, তা নয়। যারা শেষ পর্যন্ত টিকে ছিলেন তাদের অনেকেই ১৯৪৯ সালে দৃশ্যত মুসলিম লীগার হিসেবেই আওয়ামী মুসলিম লীগে স্থান করে নেন। এই বামপন্থী মুসলিম লীগার বা আওয়ামী লীগারদের কেউ কেউ আওয়ামী লীগের নেতৃস্থানীয় পদে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন।

এরপর ১৯৫১ সালের মার্চে গঠিত হয় পূর্বপাকিস্তান যুবলীগ। যুবলীগ ছিল পাকিস্তানি শাসনামলের পঞ্চাশের দশকে প্রথম অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী প্রগতিশীল সংগঠন। যুবলীগ গড়ার মূল উদ্যোক্তা কমিউনিস্টরা হলেও এই সংগঠনের প্রতি আওয়ামী মুসলিম লীগেরও সহানুভূতি ছিল। যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে নির্বাচিত সদস্যদের মধ্যে কমিউনিস্টরা যেমন ছিল, তেমনি আওয়ামী লীগের সদস্যরাও ছিল।

যুবলীগের প্রথম নবনির্বাচিত কর্মকর্তারা ছিলেন- সভাপতি : মাহমুদ আলী, সহসভাপতি : মীর্জা গোলাম হাফিজ, খাজা আহমদ, মোহাম্মদ তোয়াহা, ইয়ার মোহাম্মদ খান, শামসুজ্জোহা, সাধারণ সম্পাদক : অলি আহাদ, যুগ্ম সম্পাদক : মো: সুলতান ও ইমাদুল্লাহ, কোষাধ্যক্ষ মাহবুব জামাল জাহেদি, কার্যকরী সংসদ-সদস্য : আবদুল হালিম, আবদুল মতিন, এ বি এম মূসা, মাহমুদ নূরুল হুদা, আনোয়ার হোসেন, এস এ বারী এটি, সালাহউদ্দিন, আবদুল ওয়াদুদ, শফি খান, আলী আশরাফ, আবদুর রহমান সিদ্দিকী, মোতাহার হোসেন, নূরুর রহমান, জিয়াউল হক, মতিউর রহমান, মফিজুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমদ, দেওয়ান মাহবুব আলী, আবদুল কাদের ও প্রাণেশ সমাদ্দার।

লক্ষণীয়, উপরে উল্লিখিত ব্যক্তিরা পরবর্তীপর্যায়ে আওয়ামী মুসলিম লীগ, ন্যাপ ও বিএনপিতে নেতৃস্থানীয় পদ অলঙ্কৃত করেন। আওয়ামী লীগ নেতাদের অসহযোগিতার কারণে যুবলীগ বেশি দিন টেকেনি।

পরে ১৯৫৩ সালের জানুয়ারি মাসে গঠিত হয় গণতন্ত্রী দল। এই পার্টি গঠনে কমিউনিস্ট পার্টি খুব উৎসাহিত ছিল না। আওয়ামী লীগ করতে সম্মত নন, এমন বামপন্থী ও পার্টি সদস্যদের চাপে আওয়ামী লীগের বিকল্প নয়, পরিপূরক হিসেবে গণতন্ত্রী পার্টি গড়ে তোলায় সম্মতি দেয় কমিউনিস্ট পার্টি। গণতন্ত্রী দলের সভাপতি ছিলেন হাজী মোহাম্মদ দানেশ এবং সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ আলী। সহসভাপতি মির্জা গোলাম হাফিজ, অ্যাডভোকেট আবদুল জব্বার (খুলনা), আলতাফ আলী (ময়মনসিংহ); সদস্যদের মধ্যে ছিলেন মহিউদ্দিন আহমেদ, আবদুর রব সেরনিয়াবাত (বরিশাল), দেবেন দাশ (খুলনা), আতাউর রহমান (রাজশাহী), অ্যাডভোকেট আবদুল্লাহ (সিলেট), গোলাম কাদের চৌধুরী (ঢাকা), বিজয় চ্যাটার্জি (ঢাকা), মওলানা সাইফুদ্দিন খালেদ (নোয়াখালী), খাজা আহমেদ (ফেনী), ফেরদৌস আহমদ (খুলনা), আবদুল গফুর (সাতক্ষীরা), দেওয়ান মাহবুব আলী (কুমিল্লা), আজিজুল হক (রংপুর), গোলাম রহমান (দিনাজপুর) এবং আশু ভরদ্বাজ (ফরিদপুর)।

গণতন্ত্রী দল তেমন কোনো গণভিত্তি নিয়ে দাঁড়াতে পারেনি। তবুও ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের শরিক দল হিসেবে তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে এবং ১৩টি আসন লাভ করে। গণতন্ত্রী দল ১৯৫৭ সালে ন্যাপে যোগদান করে।

১৯৫৬ সালের জুলাই-আগস্টে অনুষ্ঠিত কমিউনিস্ট পার্টির তৃতীয় প্রাদেশিক সম্মেলনে কমিউনিস্ট পরিচয় গোপন রেখে আওয়ামী লীগে কাজ করার ব্যাপারে সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত হয়। ১৯৫১ সালেও অনুরূপ সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সাম্প্রদায়িক দল, এই অজুহাতে তখন সে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা যায়নি। ১৯৫৬ সালে আর সাম্প্রদায়িকতার অজুহাত ছিল না। কেননা, ১৯৫৫ সালেই আওয়ামী লীগ ‘মুসলিম’ অভিধাটি বাদ দিয়ে অসাম্প্রদায়িক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। কিন্তু এবারো কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বের একাংশ ‘আওয়ামী লীগ বুর্জোয়া দল’ এই অভিযোগ উত্থাপন করে এবং আওয়ামী লীগে কাজ করার কর্মকৌশলের বিরোধিতা করে। তবে শেষ পর্যন্ত প্রাদেশিক সম্মেলনে ওই সিদ্ধান্তই গৃহীত হয়। মনি সিংহ, খোকা রায় ও বারীন দত্ত প্রমুখ নেতার সবাই লিখেছেন, আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে প্রকাশ্যে কাজ করার ওই নীতি ফলপ্রসূ প্রমাণিত হয়েছে।

১৯৫৬ সালে আওয়ামী লীগ নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে কেন্দ্রে কোয়ালিশন সরকার গঠিত হওয়ার পর পররাষ্ট্রনীতিকে কেন্দ্র করে আওয়ামী মুসলিম লীগের ভেতরে সোহরাওয়ার্দী সমর্থক ও কমিউনিস্ট পার্টির অনুসারীদের মধ্যে দ্ব›েদ্বর সৃষ্টি হয়। ১৯৫৭ সালে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক অলি আহাদকে দল থেকে বহিষ্কারের ঘটনায় আওয়ামী লীগে ডানপন্থী ও বামপন্থীদের মধ্যকার বিরোধ তুঙ্গে উঠে। সোহরাওয়ার্দীর অনুগত সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান দলের সাংগঠনিক সম্পাদক অলি আহাদকে দল থেকে বহিষ্কার করেন। অলি আহাদ ছিলেন আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারী একজন কমিউনিস্ট নেতা।

আওয়ামী লীগের সভাপতি মওলানা ভাসানী ওই সময় আওয়ামী লীগ থেকে পদত্যাগ করে বামপন্থীদেরকে নিয়ে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) গঠন করেন। কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি ন্যাপে কাজ করার পক্ষে মত দেয়। পরবর্তীতে কমিউনিস্ট পার্টির পর্যালোচনায় বলা হয়, ন্যাপ গঠন ও কমিউনিস্টদের ন্যাপে যোগদানের বিষয়ে তাড়াহুড়া করার সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল না। ধৈর্য ধরে আরো কিছুদিন আওয়ামী লীগে কাজ করা উচিত ছিল। কমিউনিস্টদের একটি গ্রুপ ন্যাপে যোগ দিলেও আরেকটি গ্রুপ আওয়ামী লীগে থেকে যায়।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর আওয়ামী লীগের ভেতরে কমিউনিস্টদের প্রভাব বৃদ্ধি পায়, একপর্যায়ে তারা সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে শেখ মুজিবকে একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় উৎসাহিত করে। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির নেতারা সে সময় দলেবলে বাকশালে যোগ দেন। মনিসিং, কমরেড ফরহাদরা বাকশালের নেতৃস্থানীয় পদে আসীন হন।

১৯৭৫ সালের আগস্টে শেখ মুজিব নিহত হওয়ার পর একদলীয় শাসনের অবসান ঘটে। এরপর কমিউনিস্ট পার্টি জেনারেল জিয়াউর রহমানের সাথে হাত মেলায়। তারা জিয়ার খাল খনন কর্মসূচিতে সমর্থন দেয়।

অবশ্য জিয়াউর রহমানের আমলে আওয়ামী লীগে কমিউনিস্টদের আরেক দফা অনুপ্রবেশ ঘটে। ওই সময় ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মতিয়া চৌধুরীর নেতৃত্বে একদল কমিউনিস্ট আওয়ামী লীগে যোগ দেন। নব্বই দশকের শুরুতে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গেলে মস্কোপন্থী কমিউনিস্টরা এতিম হয়ে পড়ে। তখন দলের শীর্ষ নেতাদের একাংশ পার্টির বিলুপ্তি ঘোষণা করে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। তাদের মধ্যে নুরুল ইসলাম নাহিদ, নুহ-উল-আলম লেনিন, আব্দুল মান্নান খান, ইয়াফেস ওসমান অন্যতম।

জেনারেল জিয়া যখন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করেন তখন মশিউর রহমান যাদুমিয়ার নেতৃত্বে ভাসানী ন্যাপ জেনারেল জিয়ার সহযোগী হিসেবে আবির্ভূত হয়। একপর্যায়ে ভাসানী ন্যাপ তাদের সংগঠন বিলুপ্ত করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলে যোগ দেয়। যদিও প্রথম দিকে বিএনপিতে মুসলিম লীগারদের প্রভাব বেশী ছিল; কিন্তু পরে বামপন্থীরা অনেক শক্তিশালী হয়ে ওঠে। জেনারেল এরশাদ বিচারপতি আব্দুস সাত্তারের নেতৃত্বাধীন বিএনপি সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর প্রাক্তন মুসলিম লীগারদের একটি অংশ জাতীয় পার্টিতে যোগ দেয়। যার ফলে বিএনপিতে বামপন্থীরা এত বেশি শক্তিশালী হয়ে ওঠে যে, আশির দশকের শেষভাগ থেকে বিএনপিতে যতজন মহাসচিব নিযুক্ত হয়েছেন তাদের সবাই বাম ঘরানার রাজনীতিবিদ, যেমন- আবদুস সালাম তালুকদার, আবদুল মান্নান ভূঁইয়া, খন্দকার দেলাওয়ার হোসেন, ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এদের সবাই ছাত্রজীবনে হয় ছাত্র ইউনিয়নের সাথে জড়িত ছিলেন অথবা রাজনৈতিক জীবনের শুরুতে ভাসানী ন্যাপ করতেন।

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জেনারেল জিয়াউর রহমান সংবিধানে আল্লাহর ওপর আস্থা সংযোজনের মাধ্যমে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের সমর্থন আদায়ে সক্ষম হলেও বিএনপির কিছু নেতার মধ্যে ইসলামবিরোধী মনোভাব দেখা যায়। এর মূল কারণ তাদের এক সময়কার বামপন্থার রাজনীতি। কমিউনিজমের বিষয়ে হতাশ হলেও তারা সবসময় ইসলামবিরোধী মনোভাব লালন করে। এদের একটি গ্রুপ খালেদা জিয়ার আমলে ঘাদানিক গঠনে উদ্যোগী ভূমিকা গ্রহণ করে এবং তাদেরকে বিভিন্নভাবে সাহায্য সহযোগিতা করে। তাদের চক্রান্তের কারণে খালেদা জিয়া সরকার জামায়াতের আমির অধ্যাপক গোলাম আযমকে জেলে ঢোকায়। ফলে বিএনপি ও জামায়াতের সম্পর্কে ফাটল ধরে। অথচ জামায়াতের নিঃশর্ত সমর্থনে বিএনপি সরকার গঠন করেছিল। দল দু’টির দ্ব›েদ্বর জেরে আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালের সাধারণ নির্বাচনে জয়লাভ করে।