রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ক্ষমতার স্বতন্ত্রীকরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রাষ্ট্রের সার্বিক ক্ষমতা যাতে এককভাবে কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা অংশে পূঞ্জীভূত না হয়, সেটিই এই তত্তে¡র মূল কথা। Absolute power corrupts absolutely ‘সার্বিক ক্ষমতা মানুষকে সার্বিকভাবেই দুর্নীতিগ্রস্ত করে।’ তাই ক্ষমতার বিভাজন প্রয়োজন। নাগরিক সাধারণ যাতে একনায়কত্ব বা স্বৈরাচার থেকে রক্ষা পেতে পারে সে জন্যই এই নীতিদর্শন। সভ্যতার অগ্রগতির সাথে সাথে ক্রমশ ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ঘটে। প্রাচীন রাজা-বাদশাহরা একক ক্ষমতার প্রয়োগ করতেন। প্রজা সাধারণের কোনোই ক্ষমতা ছিল না। মধ্যযুগে এসে ইউরোপে রাজতন্ত্র বনাম পোপতন্ত্রের দীর্ঘমেয়াদি বিরোধ ঘটে। রাজা সমস্ত ক্ষমতার মালিক হতে চান। গির্জা বা পাদ্রিরা রাজার উপরে রাজত্ব করতে চায়। অবশেষে মীমাংসা হয় এভাবে, রাজার যা প্রাপ্য রাজাকে দাও, ঈশ্বরের যা প্রাপ্য ঈশ্বরকে দাও। এটিকে অনেকে Two sword policy বা দু-ধারি তরবারি বলে অভিহিত করে থাকেন। এদিকেও কাটে-ওদিকেও কাটে। অবশ্য দীর্ঘকাল এই অবস্থা চলতে পারেনি। ক্রমশ রাজার ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে, প্রজার ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী জন লক প্রথমবারের মতো রাজ্যের বা রাষ্ট্রের আইন বিভাগ, নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগের পৃথকীকরণের কথা বলেন। অবশেষে মনীষী মন্টেস্কু ক্ষমতার স্বতন্ত্রীকরণের পূর্ণাঙ্গ তাত্তি¡ক ব্যাখ্যা দেন। মন্টেস্কুর এ ধারণা ব্রিটেন এবং সদ্য স্বাধীন আমেরিকায় প্রভাব ফেলে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শাসনতন্ত্রে যে শক্ত ও স্বচ্ছ বিভাজন নীতি অবলম্বন করা হয়, তা মন্টেস্কুর ধারণাপ্রসূত বলে মনে করা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা করা হয়। এভাবে বিচার বিভাগকে আইন ও নির্বাহী বিভাগের উপর ভারসাম্য বিধানের অধিকার দেয়া হয়। পৃথিবীর সব দেশ-জাতি-রাষ্ট্রে কমবেশি এই ভারসাম্যের নীতিটি অনুসরণের প্রয়াস লক্ষ করা যায়। সংসদীয় গণতন্ত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠের স্বৈরাচার বলে একটি অভিধা আছে। সে ক্ষেত্রে ক্ষমতার স্বতন্ত্রীকরণ তথা বিচার বিভাগের স্বাতন্ত্র্য বা স্বাধীনতা সব সময়ই নাগরিক সাধারণের অধিকার রক্ষার কবজ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
ঔপনিবেশিক সূত্রে আমরা ব্রিটিশের অধীন ছিলাম প্রায় ২০০ বছর। তারা আমাদেরকে যেভাবে শাসন করেছে সেভাবেই আমরা শাসিত হয়েছি। ব্রিটিশ সংসদীয় গণতন্ত্রের সূত্রে আমরা সংসদীয় সরকারব্যবস্থায় রাষ্ট্র পরিচালনা করছি। ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমল থেকে সে ধারা অব্যাহত আছে। স্বাধীন বাংলাদেশে যে সংবিধানটি রচিত হলো, তারাও ‘জীবনপদ্ধতি’ হিসেবে সংসদীয় ব্যবস্থাকেই অনুসরণ করেছে। এই সংবিধানের ১১৬(ক) ধারায় বলা হয়েছে- ‘এই সংবিধানের বিধানাবলি সাপেক্ষে বিচার-কর্মবিভাগে নিযুক্ত ব্যক্তিগণ এবং ম্যাজিস্ট্রেটগণ বিচারকার্য পালনের ক্ষেত্রে স্বাধীন থাকিবেন।’ (পরবর্তীকালে অনেক সংযোজন-বিয়োজন ঘটেছে) আমরা মজা করে বলি, ‘কাজীর গরু কেতাবে আছে।’ মূলত গণতন্ত্র একটি শাসনব্যবস্থা, একই সাথে একটি জীবনব্যবস্থাও বটে। সংবিধানে বিচার বিভাগ ‘স্বাধীন থাকিবেন’ বলা হলেও আসলে চিরকালই শাসককুলের অধীন থেকেছে। বিস্ময়ের ব্যাপার এই যে, আওয়ামী শাসককুল ওই সংবিধান রচনা করেছে। তারাই সংবিধান বরবাদ করে বাকশাল কায়েম করেছে। শেখ সাহেব আইন করে সার্বিক ক্ষমতা নিজ হাতে নিয়েছেন। তার কন্যা শেখ হাসিনা বেআইনিভাবে সংবিধান বহাল রেখে প্রতারণার মাধ্যমে দেশকে দেড় যুগ শাসন করেছেন। ২০২৪ সালের গণবিপ্লব তথা গণ-আন্দোলনের ফলে স্বৈরাচারের পতন হয়েছে। শেখ হাসিনা পলায়ন করেছেন। এভাবেই আবারো জাতির সামনে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ তথা বিচার বিভাগ স্বাধীন করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
অবশ্য বিচার বিভাগকে অধীনতা থেকে মুক্ত করার জন্য সিভিল সোসাইটি তথা আইনজীবীদের সংগ্রাম দীর্ঘকালের। যখনই তারা সুযোগ পেয়েছে, বিচার বিভাগের স্বাতন্ত্র্য ও স্বাধীনতাকে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছে। ওয়ান-ইলেভেনের অনেক অঘটনের মধ্যে মরহুম ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের চেষ্টায় বাংলাদেশে ২০০৭ সালে নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে পৃথক করা হয়। আসলে এটি ছিল কাগুজে পৃথকীকরণ। শাসককুল যে দলেরই হোক না কেন, তারা সব সময় চেয়েছে বিচার বিভাগকে কব্জা করে রাখতে। ২০০৯ সালে সেই আওয়ামী সরকারটি আবার ফিরে আসে শাসক হয়ে, যারা আসলেই মানুষের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। ১৯৭৫ সালে তারা যা করেছে তার চেয়ে অনেকগুণ করেছে ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসীন হয়ে। তারা ২০০৭ সালের পৃথকীকরণকে একত্রীকরণে পরিণত করেছে ব্যবহারিকভাবে। এর পর দেড় যুগ পার হলেও এ সংক্রান্ত কোনো অগ্রগতি হয়নি। বিচার বিভাগের যে নিকৃষ্ট নিয়ন্ত্রণ তারা করেছে, তার উদাহরণ পাওয়া যায় প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার দেশ থেকে বিতাড়নে। বিচার বিভাগীয় হত্যাকাণ্ডগুলো কার্যকর করার পর তার প্রয়োজন ফুরিয়ে যায়। সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল প্রশ্নে মতদ্বৈধতা দেখা দেয়। আওয়ামী লীগ জাতীয় সংসদে আইন পাস করে বিচারকদের বিচার করতে চায়। সুরেন্দ্র কুমার সিনহা এতে দ্বিমত পোষণ করেন। তিনি সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল বিধিটি অক্ষুণ্ণ রাখেন। ফলে প্রাপ্য পরিণতি ঘটে তার। এভাবে সুপ্রিম কোর্ট তো বটেই, নিম্ন আদালত থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত আওয়ামী লীগের বেপরোয়া কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়।
উচ্চপর্যায়ে যারাই সামান্য স্বাধীনতার মনোভাব দেখিয়েছেন তাদেরকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করা হয়। প্রজ্ঞা, অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান বিবেচনা না করে পাইকারিভাবে আওয়ামী লীগের নিকৃষ্ট দালালদের বিচার আসনে বসানো হয়। তারা নিজেদেরকে ‘শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ’ মনে করেন। মানুষের স্বাধীনতা ও জীবন রক্ষা করা ছিল তাদের কর্তব্য, আর তারা অধীনতা ও জীবন সংহারকে নিশ্চিত করেছে। যাচিত অথবা অযাচিত হয়ে উচ্চ আদালত নানা ধরনের নিকৃষ্ট রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত দিয়েছে। যেমন এক সময় তারা বলেছে, তারেক রহমানের বক্তৃতা বিবৃতি প্রকাশ করা যাবে না। যেখানে মানুষের বাক-স্বাধীনতা নিশ্চিত করা বিচারকদের দায়িত্ব সেখানে তারা বাক-স্বাধীনতা হরণের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারেক রহমানকে যে বিচারক সাহস করে বেকসুর খালাস দিয়েছেন, সেই বিচারককে বিদেশে পালিয়ে গিয়ে জীবন রক্ষা করতে হয়েছে। অন্যায়ভাবে, অকারণে দেশের এক মহীয়সী নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ফরমায়েশি রায় দিয়ে তার জীবন বিপন্ন করেছে এই বিচারকরা। ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থান তারা সহজে মেনে নেয়নি। নিশ্চয়ই আপনাদের মনে আছে, তাদের নিযুক্ত প্রধান বিচারক গণবিপ্লবের প্রথম দিকে ‘সাংবিধানিক ক্যু’ করে স্বৈরাচার ফেরত আনার রাস্তা খুলে দেয়ার প্রয়াস নিয়েছিল। তারা যে কত নিকৃষ্ট আচরণ করতে পারে সাত রাজার ধন মানিক নামের বিচারকটির নিকৃষ্ট আচরণ দেখলেই তা বোঝা যায়।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠার পর ক্ষমতার স্বতন্ত্রীকরণ তথা বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণের প্রয়াস লক্ষ করা যায়। ২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ হাইকোর্ট একটি ঐতিহাসিক রায় দেন। ওই রায়ে রাষ্ট্রপতির পরিবর্তে অধস্তন আদালতের নিয়ন্ত্রণ ও সুপ্রিম কোর্টের কাছে ন্যস্ত হবে। ১৯৭১ সালের মূল সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ পুনর্বহাল করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সাথে সুপ্রিম কোর্টের জন্য পৃথক সচিবালয় তিন মাসের মধ্যে প্রতিষ্ঠা করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ওই রায়ে হাইকোর্ট এই আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, বিচার বিভাগ শুধু কাগুজে স্বাধীন হবে না। সত্যিকার স্বাধীনতা এর কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রত্যেক নাগরিকের কাছে উপস্থিত হবে। বর্তমান সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদে অধস্তন আদালতগুলোর নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা বিষয়ে বলা হয়েছে, এতে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের কর্মস্থল নিয়ন্ত্রণ, পদোন্নতি, ছুটি মঞ্জুরিসহ শৃঙ্খলা বিধানের বিষয়টি রাষ্ট্রপতির উপর ন্যস্ত। সুপ্রিম কোর্টের সাথে পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি তা প্রয়োগ করবেন বলে উল্লেখ রয়েছে। হাইকোর্ট রায় দিয়েছেন, বিদ্যমান ১১৬ অনুচ্ছেদ সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের জন্য সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃপক্ষের প্রস্তাব অনুসারে রায়ের অনুলিপি গ্রহণের পর বিশেষত তিন মাসের মধ্যে সচিবালয় প্রতিষ্ঠা করতে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছেন উচ্চ আদালত। সিভিল সোসাইটির পক্ষ থেকে হাইকোর্টের এই রায়কে ঐতিহাসিক বলা হয়েছে। অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এম এ মতিনের মন্তব্য এরকম- ‘ভারতসহ প্রায় সব দেশই অধস্তন আদালতের তত্ত¡াবধান ও নিয়ন্ত্রণ সেসব দেশের উচ্চতর আদালতের অধীনে রয়েছে। আমাদেরও ছিল। এই নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির কাছে ন্যস্ত করাটা ছিল অনেক সমস্যার কারণ। আদি সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ পুনর্বহাল হওয়া খুবই ইতিবাচক। হাইকোর্টের রায় আপিল বিভাগে বহাল থাকলে অনেক সমস্যার সমাধান হতে পারে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে, রায়ের আলোকে বাহাত্তরের সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ বহাল হওয়া প্রয়োজন।’
উল্লেখ্য, ১৯৭২ সালের মূল সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে, বিচারকর্ম বিভাগে নিযুক্ত ব্যক্তিদের এবং বিচার বিভাগের দায়িত্বেরত সব জনশক্তির নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা বিধান সুপ্রিম কোর্টের উপর ন্যস্ত ছিল। ১৯৭৫ সালে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে এই দায়িত্ব রাষ্ট্রপতির উপর ন্যস্ত করা হয়। পরবর্তী সময়ে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের মাধ্যমে বলা হয়, রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের সাথে পরামর্শ করে তা প্রয়োগ করবেন। প্রদত্ত রায়ে হাইকোর্ট বলেছেন, ২০১১ সালে পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ৩৯ ধারা অনুসারে ১১৬ অনুচ্ছেদের সংশোধন সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক বলে বাতিল করা হলো। একইভাবে ১৯৭৫ সালে চতুর্থ সংশোধনী আইনের ১৯ ধারার মাধ্যমে ১১৬ অনুচ্ছেদের সংশোধনও সাংঘর্ষিক বলে বাতিল করা হলো। রায়ের সারমর্ম অনুযায়ী, এখন সংবিধানের অষ্টম সংশোধনী ও ষোড়ষ সংশোধনীর মামলার রায়ের সিদ্ধান্ত অনুসারে ১৯৭২ সালের সংবিধানে ১১৬ অনুচ্ছেদ যেভাবে ছিল, সেভাবে সংবিধানে পুনর্বহাল করা হলো।
রায়ে আরো বলা হয়, জাতীয় সংসদ সচিবালয় এবং নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আছে, যাদের স্বাধীন পরিচয় রয়েছে। অথচ বিচার বিভাগের জন্য কোনো সচিবালয় গঠিত হয়নি। সংবিধানের ২২, ১০৭ ও ১০৯ অনুচ্ছেদ এবং মাজদার হোসেন মামলার রায়ের নির্দেশনা উল্লেখ করে আদালত এই রায় দেন যে, ‘বিচার বিভাগ অবশ্যই নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক হবে’। অধস্তন আদালতের তত্ত¡াবধান, নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা বিধান সুপ্রিম কোর্টের উপর ন্যস্ত হবে। কার্যক্রম ও কাঠামোগতভাবে বিচার বিভাগ রাষ্ট্রের স্বাধীন অঙ্গ। স্বাধীনভাবে কাজ করতে এবং সত্যিকার অর্থে রাষ্ট্রের অন্য দুটো- আইন সভা ও নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথক। নির্বাহী বিভাগের ছাতার নিচে কিংবা মিলেমিশে বিচার বিভাগ কাজ করতে পারে না। পৃথক বিচার বিভাগ সাংবিধানিক অধিকার। স্মরণ করা যেতে পারে যে ১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর আপিল বিভাগ মাজদার হোসেন মামলায় ১২ দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দিয়েছিলেন। এটি নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথক সংক্রান্ত মামলা হিসেবে পরিচিত। ওই রায়ের পর অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ মাজদার হোসেন বলেন, আপিল বিভাগের রায়ের নির্দেশনা অনুসারে নির্বাহী এবং আইনসভা থেকে বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণমুক্ত রাখতে হবে। তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন, স্বাধীনতার ৫৪ বছর পর হলেও সংবিধানের ২২ অনুচ্ছেদে উল্লিখিত ‘রাষ্ট্রের নির্বাহী অঙ্গগুলো হতে বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ রাষ্ট্র নিশ্চিত করবে’। এই প্রতিশ্রুতি কার্যকর হতে যাচ্ছে।
এখন আশা করা যায়, প্রকৃত অর্থেই বিচার বিভাগ নির্বাহী বিভাগ থেকে স্বাধীন থাকতে পারবে। আর এটি সম্ভব হয়েছে স্বৈরাচার হাসিনার পতনের পর। পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ১১ আগস্ট প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব নেন সৈয়দ রেফাত আহমেদ। এরপর গত ২১ সেপ্টেম্বর প্রধান বিচারপতি তার অভিভাষণে বিচার বিভাগ সংস্কারের রূপরেখা তুলে ধরেন। তিনি বলেছিলেন, বিচারকদের প্রকৃত স্বাধীনতা ততদিন নিশ্চিত হবে না, যতদিন না এ বিভাগে দ্বৈত শাসনব্যবস্থা- সুপ্রিম কোর্ট ও আইন মন্ত্রণালয়ের যৌথ এখতিয়ার বিলোপ হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে সমস্ত সংস্কার সাধন করার চেষ্টা করেছে, এটি তার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার। অবশ্য এখানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়-দায়িত্বের চেয়ে বেশি অনুভূত হয়েছে পুরো বিচার বিভাগের আশা-আকাঙ্ক্ষা। সচেতন নাগরিকরা আশা করে, স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সবার প্রতি ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে।
লেখক : অধ্যাপক (অব:), সরকার ও রাজনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়