পহেলগামে রক্তক্ষরণ : কে দায়ী কেন দায়ী

পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে চূড়ান্তভাবে কী হতে চলেছে এটি সম্পূর্ণভাবে এখন নির্ভর করছে সিন্ধু নদীর ওপর ভারত যে স্থগিতাদেশ দিয়েছে সেটির ওপর। ভারত যতদিন এটি বন্ধ রাখবে তত ঝুঁকি বাড়বে সর্বাত্মক যুদ্ধের। বিলওয়াল ভুট্টো বলেছেন, সিন্ধু দিয়ে হয় পানি বইবে নতুবা রক্ত।

নয়া দিগন্ত

কাশ্মিরিরা তাদের আতিথেয়তায়, অপরিচিতদের ‘কেহওয়া’ পরিবেশন করায়, আটকেপড়া যাত্রীদের রুম দেয়ায়, অতিথিদের পরিবারের মতো আচরণ করার জন্য বিশ্বজুড়ে পরিচিত। তথাপি বহুদিন ধরে তাদের সাথে বিদ্বেষপূর্ণ আচরণ করা হচ্ছে।

সেদিন, এপ্রিলের ২২ তারিখ। পহেলগামে যা ঘটেছে তা এ উপত্যকার স্মৃতিতে বহু বছর ধরে গেঁথে থাকবে। স্থানীয় লোকজন, সরকারের মতে- সশস্ত্র অনুপ্রবেশকারীরা কোনো সতর্কতা ছাড়া নির্বিচারে স্থানীয় এবং পর্যটকদের লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছিল। মুহূর্তের ব্যবধানে প্রাণ হারান ২৬ জন। পরিবারগুলো ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিল এবং যা অবশিষ্ট ছিল তা হলো- কয়েক দশকের যন্ত্রণায় ক্লান্ত একটি অঞ্চলের শান্ত উপলব্ধি। যদিও তদন্তকারীরা এখনো এই হামলাকারীরা কারা এবং তারা কোনো অ্যাজেন্ডা অনুসরণ করেছিল তা খোঁজার চেষ্টা করছে, সোশ্যাল মিডিয়া নিজস্ব স্টাইলে তথ্য প্রচার করতে থাকে। অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোতে ঘৃণার একটি নতুন ঝড় উঠে। অনেকে স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়কে অপরাধীদের সমর্থন বা আশ্রয় দেয়ার অভিযোগ করে। মব দু’টি কাশ্মিরি পরিবারের ঘর পুড়িয়ে দেয়। অল্প সময়ের মধ্যে ঢাকা পড়ে যায়, কাশ্মিরে মুসলিম নির্যাতন, ভারতজুড়ে শত শত মসজিদ ও মাদরাসা ধূলিসাৎ করা, ইসলামবিরোধী ওয়াক্ফ আইন ও মুসলিমদের অসন্তোষ ইত্যাদি। সম্রাট জাহাঙ্গীরের কবর থেকে দেহাবশেষ তুলে অন্যত্র নেয়ার বিজেপির ঘোষণা, মহিলাদের হিজাব ও বোরকা পরায় সারা ভারতে নারীদের নির্যাতন এসব সিরিজ কাজকর্ম।

ঘটনাস্থল থেকে প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ এমন একটি চিত্র যা কল্পনা করা শক্ত। উপত্যকায় প্রতিধ্বনিত হতে থাকে আর্তচিৎকার। মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগেও পর্যটকরা পাস নিয়ে বয়ে যাওয়া নদীর ছবি তুলছিল, ঘোড়ায় সওয়ার হয়ে বেড়াচ্ছিল, শিশুরা খেলাধুলা করছিল- সেই শান্ত স্থানটি রক্তের দাগে বিভৎস্ম হয়ে উঠে। এই হৃদয়বিদারক দৃশ্যের মধ্যে একজন অশ্রুসিক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলতে পারছিলেন না, বর্ণনা করেছিলেন যে- কিভাবে সন্ত্রাসীরা তার স্বামীর পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। কাশ্মিরে বেশির ভাগ মানুষ মুসলমান। ভারত সরকার সেখানে প্রায় ৮৫ হাজার হিন্দুকে বসত নির্মাণ করতে টাকা-পয়াসা ও জমিজমা বন্দোবস্ত দেয়ার কর্মসূচি নিয়েছে। অথচ কাশ্মিরের ছিল স্বায়ত্তশাসন, নিজেদের সংবিধান, পতাকা। মোদি সরকার সব বাতিল করে কেন্দ্রীয় শাসন জারি করে কয়েক বছর ধরে অমুসলিমদের বসতি দেয়ার এ পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করছে। এ আক্রমণ কি তার পরিণতি? তাহলে এটি শুধু হামলা ছিল না অনেকটাই রাজনৈতিক।

কেন্দ্রীয় সরকার কাশ্মিরিদের সাথে বসে বিষয়টি সুরাহা করতে পারত। তা ছাড়া পহেলগামে হামলার দায় স্বীকার করেছে কাশ্মিরের রেসিস্টেন্ট ফ্রন্ট নামে একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী। প্রসঙ্গক্রমে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান আলোচনার মাধ্যমে কাশ্মির বিরোধ নিষ্পত্তিতে মোদিকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন। মোদি কোনো আলাপ করতে অসম্মতি জানিয়েছিলেন। চলতি সপ্তাহে এরদোগান পাকিস্তানের সাথে সামরিক চুক্তি করেছেন, এখন ভারত মহাসাগরে তুর্কি রণতরী ঘোরাফেরা করছে, যা আগে কখনো দেখা যায়নি। ভারতের জন্য এটিও একটি চাপ। তাই ধর্মকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে ভয় ঢুকিয়ে বিভেদ সৃষ্টির ইচ্ছাকৃত কাজ এটি হতে পারে। একই সাথে সম্ভবত সবচেয়ে বিপজ্জনকভাবে সম্প্রদায়গুলোকে একে অপরের বিরুদ্ধে পরিণত করা। বুলেট যখন মানুষের শরীরে ঢুকে পড়ে তখন সেটি হিন্দু বা মুসলমানের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে না, নিহতদের মধ্যে কয়েক জন কাশ্মিরি মুসলমান ছিলেন। কেউ কেউ ছিলেন হিন্দু পর্যটক। সবাই নিরপরাধ।

হামলার পর যা ঘটল তা ভিন্ন আঙ্গিকে বিধ্বংসী হয়ে উঠেছে। শোক এবং ন্যায়বিচারের আহ্বানের পরিবর্তে, নেট দুনিয়া ঘৃণায় ফেটে পড়ল। মুসলমানদের দোষারোপ করে হ্যাশটেগ, কাশ্মিরিদের ট্রোল করা এবং স্থানীয়রা সন্ত্রাসীদের সহায়তা করার বুনো তত্ত¡ ট্রেন্ডে আছড়ে পড়ে। এটি এমন একটি গল্প যা আমরা আগেও দেখেছি, দুঃখকে প্রচারের মাধ্যমে ছিনতাই করা হয় এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সন্দেহভাজন করা হয়। সাধারণ কাশ্মিরিরা কি জড়িত? তদন্ত না হওয়া পযর্ন্ত বা সঠিক প্রমাণ না পাওয়া পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্তে আসার সুযোগ আছে কী? সবাই নিন্দা জানিয়েছেন, দুঃখ প্রকাশ করেছেন। এমন কী ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু শোকবার্তা পাঠিয়েছেন যেখানে প্রতিদিন গড়ে ৫০ থেকে ১০০ জন নিরপরাধ ফিলিস্তিনিকে বোমা মেরে হত্যা করা হচ্ছে। তাদের বোমা বর্ষণে, জাতিসঙ্ঘের হিসাব অনুসারে, ছয় লাখ ফিলিস্তিনি শিশু চিকিৎসা, খাবারের অভাবে মরতে বসছে। ফিলিস্তিনিদের মুখে ও শরীরে যে পিলেট গান দিয়ে গুলি ছোড়া হয়, সে পিলেট গান সরবরাহ করা হয়েছে ভারতে কাশ্মিরিদের মুখে ও শরীরে মারতে। নেতানিয়াহুর শোকবার্তা দেখে মনে হয় শয়তানের অনুশোচনা।

নিরাপত্তার ঘাটতিতে সরকারকে দোষারূপ করা হচ্ছে। কাশ্মিরে ইন্টারনেট, ই-মেইল পাঠানো, মোবাইল ফোন সব কিছুর ওপর সেন্সর ও ওয়াচডগ কাজ করছে। কেন? কাশ্মিরিদের মধ্যে স্বাধীনতাকামী কয়েকটি গোষ্ঠী রয়েছে। এসব সংগঠনের সদস্যদের ধরতে নিরাপত্তাবাহিনী হন্যে হয়ে ঘুরে। এ রকম টাইট নিরাপত্তার মধ্যে এত সময় ধরে হত্যাকাণ্ড চালানোতে অনেকে এর জবাব খুঁজছে।

পাকিস্তান বলেছে, এটি মোদির বিরুদ্ধে ফুলে উঠা জনরোষ থামাতে গেম প্লান। পহেলগাম কাশ্মিরের অন্যতম জনপ্রিয় ট্যুরিস্ট স্পট আর এটি সীমান্তের কাছে অবস্থিত। ভারী জনসমাগম এবং আন্তঃসীমান্ত অনুপ্রবেশের একটি ঝুঁকি রয়ে গেছে। মোদি সরকার এ হিসাব মিলিয়ে পাকিস্তানকে দোষারূপ করছে। এ ছাড়া কোনো সময় ব্যয় না করে বেশ কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে; পাকিস্তানও পাল্টা ব্যবস্থা নেয়া শুরু করেছে। আরো দেখা গেছে, পহেলগামের সেনাবাহিনীর বাঙ্কারগুলোতে অপর্যাপ্ত কর্মী ছিল। যেখানে হামলা হয়েছে, সেখানে কোনো সক্রিয় টহল ছিল না বলে জানা গেছে। পর্যটকদের আনাগোনা বেড়ে গেলেও কেন সেনা মোতায়েন করা হয়নি; জনগণ এর জবাব চাইছে। এ পরিস্থিতিতে প্রতিরক্ষাবাহিনীর ভূমিকা উপেক্ষা করার মতো নয়, এটি দোষারোপ করার বিষয় নয়, জবাবদিহির বিষয়। বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষা করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। এ ফাঁক কেন হলো তা অবশ্যই পরীক্ষা করা উচিত, খোদ ভারতীয়রা এসব বলছেন। তারা উত্তর চাইছেন, পরিবর্তন চাইছেন। স্বাভাবিকভাবে ভারতে মুসলিমবিরোধী দাঙ্গা হচ্ছে, মুসলমানরা নির্যাতিত হচ্ছেন।

ভারতে মুসলিমবিরোধী দাঙ্গার পুনরাবৃত্তি এবং হতাহতের ঘটনা বেশুমার। ঐতিহাসিক তথ্য বিশ্লেষণ দেখায় যে, এ ধরনের ঘটনাগুলো বিক্ষিপ্তভাবে ঘটছে, এর পেছনে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠদের সংখ্যালঘুদের প্রতি ঘৃণা ও ধর্মীয় বিষয়গুলো জড়িত। এমনিতে ভারতে জাত প্রথায় নিম্ন জাতের লোকজন ও দলিতরা দিশেহারা। উদাহরণস্বরূপ, ২০২০ সালের দিল্লিø দাঙ্গায় ৫৩ জন মারা গিয়েছিলেন, যার বেশির ভাগ মুসলমান। একইভাবে, ২০১৩ সালের মুজাফফরনগর দাঙ্গায় ৬০ জনেরও বেশি মারা যান এবং ৫০ সহস্রাধিক লোক বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন।

২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গা ছিল ভারতে আন্তঃসাম্প্রদায়িক সহিংসতার একটি দুঃখজনক পর্ব, গোধরায় একটি ট্রেনে আগুন ধরিয়ে দেয়ায় ৫৮ হিন্দু তীর্থযাত্রী নিহত হন। পরবর্তীকালে ভয়াবহ সহিংসতা দেখা যায়। এতে সহস্রাধিক লোক মারা যান। যার বেশির ভাগ ছিলেন মুসলমান। সহিংসতা ঠেকাতে ব্যর্থ হওয়ায় তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ নিষিদ্ধ করা হয়। জাতিসঙ্ঘে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোদিকে গুজরাটের কষাই বলে অভিযুক্ত করেন। এতসব হত্যাকাণ্ডও বিশ্ব বিবেককে নাড়া দিতে পারেনি।

ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যে বড় পাঁচটি পদক্ষেপ নিয়েছে, এরমধ্যে সিন্ধু পানিচুক্তি গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৬০ সালে বিশ্বব্যাংকের সাথে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে স্বাক্ষরিত এ চুক্তিতে সিন্ধু অববাহিকার ছয়টি নদীর নিয়ন্ত্রণ বরাদ্দ করা হয়- ভারত পূর্বের নদীগুলো (বিপাশা, রবি ও শতদ্রু) নিয়ন্ত্রণ করে, পাকিস্তান পশ্চিমের নদীগুলো (সিন্ধু, ঝিলম ও চেনাব) নিয়ন্ত্রণ করে। চুক্তিটিতে দুই দেশের মধ্যে একাধিক দ্ব›দ্ব থেকে গেছে। জলবিদ্যুৎ প্রকল্প এবং পানি ব্যবহার বিরোধ নিয়ে উত্তেজনা দেখা দেয়। সম্প্রতি জম্মু ও কাশ্মিরে হামলার পর ভারত চুক্তিটি স্থগিত করেছে, এমন ঘটনা ইতঃপূর্বে ঘটেনি।

ভারত সরকার জানিয়েছে, পাকিস্তান বিশ্বাসযোগ্যভাবে এবং অপরিবর্তনীয়ভাবে সীমান্ত সন্ত্রাসবাদের প্রতি সমর্থন বন্ধ না করা পর্যন্ত এ চুক্তি স্থগিত থাকবে। এই স্থগিতাদেশের ফলে পাকিস্তান কিছু সমস্যার সম্মুখীন হবে। পাকিস্তান চাষযোগ্য জমির ৮০ শতাংশ সিন্ধু নদী ব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল এবং যেকোনো ব্যাঘাত খাদ্য নিরাপত্তা এবং ফসলের ফলনকে হুমকিতে ফেলবে। করাচি, লাহোর ও মুলতানের মতো শহরগুলো পানীয় ও পৌরসভার ব্যবহারে সিন্ধুর জল সরবরাহ করা হয়। পানির ঘাটতি এসব শহরে জন-উদ্বেগ বাড়াবে। তারবেলা ও মঙ্গলার মতো মূল জলবিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো এই নদীগুলোর ওপর নির্ভরশীল, জলের প্রবাহ হ্রাস পেলে বিদ্যুৎ উৎপাদন দুর্বল হতে পারে। সিন্ধু পানিচুক্তি স্থগিতে শহরে পানি সরবরাহ ছাড়াও পাকিস্তানের কৃষি এবং শক্তি উৎপাদনে মারাত্মক অর্থনৈতিক পরিণতি নেমে আসবে। গম, চাল ও তুলার মতো প্রধান রফতানি থেকে, ২০২২ সালে ৪ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে দেশটি। এখন সেখানে বড় আঘাত আসবে। কৃষি পাকিস্তানের জিডিপিতে ২২ দশমিক ৭ শতাংশ অবদান রাখে। সেই সাথে ৩৭ দশমিক ৪ শতাংশ কর্মশক্তি নিয়োগ করে। এখন বেকারত্ব, গ্রামীণ অভিবাসন এবং ঋণ খেলাপির মতো বিষয়গুলো উঠে এসে অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করবে। সিন্ধু চুক্তির স্থগিতাদেশ উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলতে পারে, যা পাকিস্তানে বাণিজ্য সম্পর্ক এবং বিদেশী বিনিয়োগকে প্রভাবিত করবে। পাকিস্তান এ সিদ্ধান্তকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা বলে অভিহিত করেছে। পাকিস্তান চুক্তি ভঙ্গের জন্য যেকোনো সময় যুদ্ধ ঘোষণা করতে পারে বলে প্রেসিডেন্ট দফতর জানিয়েছে।

কিছুদিন আগে পাকিস্তানের ভেতর বেলুচিস্তানে ট্রেনে যে হামলা হয়েছে সেখানে ভারত জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা। পাকিস্তান এ প্রমাণ তুলে ধরে সময়মতো জবাব দেয়া হবে মর্মে জানিয়েছে। পাল্টা প্রতিশোধ হিসেবে পাকিস্তান এমনটি করতে পারে সেটি সামরিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন।

প্রথমে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন তারপর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দু’জনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে টেলিফোন করেছেন। দু’জনে সবুজ সঙ্কেত দিয়েছেন যে, ভারতের আত্মরক্ষার অধিকার আছে। যদি ভারত এটি প্রমাণ করতে পারে- পহেলগামে যে হামলা হয়েছে এর সাথে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা জড়িত বা পাকিস্তান জড়িত তাহলে ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে যেকোনো ধরনের সামরিক পদক্ষেপ সমর্থন করে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র। তবে এর আগে অবশ্যই ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাকে কিছু প্রমাণ দেখাতে হবে, ভারতের বিরুদ্ধে এ হামলায় পাকিস্তান জড়িত। রাশিয়ার ও যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন ভারতকে এ সঙ্কটের সময় আত্মবিশ্বাস জোগাচ্ছে। তাদের সাথে যোগাযোগ ভারতের জন্য সামরিক পদক্ষেপে সহায়ক প্রমাণ হতে পারে।

পহেলগামে যে হামলা; এরপর ভারত হামলা করতে পারে এটি সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। শুধু প্রমাণ পাওয়া গেলেই হলো যে, পাকিস্তান জড়িত। অতীতের ঘটনাও কিন্তু এমনটি বলে। ২০১৬ সালে যখন উড়িতে হামলা হয় এরপর সার্জিক্যাল স্ট্রাইক হয়েছিল। ২০১৯ সালে ভারতনিয়ন্ত্রিত পুলামায়ে যখন হামলা হয়েছিল তখন ভারতীয় বিমানবাহিনী বালাকোটে হামলা করেছিল। ভারতীয় একজন বিমানবাহিনীর সদস্য ওই সময় আটক হয়েছিলেন ও বিমান পাকিস্তানের অভ্যন্তরে বিধ্বস্ত হয়েছিল। এবারো সে ধারায় কাজ শুরু করেছে ভারত।

পাকিস্তান সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে গণহারে নিজের নাগরিকদের সরিয়ে নিচ্ছে ভারত। ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদি সম্প্রতি পশ্চিম সীমান্তের অগ্রবর্তী এলাকা পরিদর্শন করেছেন। প্যান্থার ডিভিশনের সাথে যুদ্ধ কৌশল ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি আলোচনা করেছেন। সেখানে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন হচ্ছে। ভারতীয় বিমানবাহিনীর শ্রীনগর, পাঠানকোট এবং আম্বালার বিমানঘাঁটিতে আধুনিক সুখুই ও স্টিলথ যুদ্ধবিমানে ব্রাহ্মস মিসাইলে সুসজ্জিত করা হচ্ছে।

পাকিস্তান বলেছে- এ ধরনের মিসাইল শবেবরাত ও ঈদ রজনীতে পাকিস্তান ফুটায়। ভারত রাফায়েল যুদ্ধবিমানকেও এখানে সংযুক্ত করা শুরু করেছে।

পহেলগাম শোকে কাতর। শোকাহত কাশ্মির। কিন্তু শোকের মধ্যে জ্বলছে বিভাজনের ভয়ঙ্কর আগুন। সন্ত্রাসবাদ আমাদের সবার শত্রু এবং শান্তি আমাদের যৌথ অধিকার। এখন অবশ্যই একে অপরকে দোষারোপ করে নয়; বরং একসাথে দাঁড়িয়ে এ ট্র্যাজেডির বোঝা ভাগ করে নিলে ভালো হয়। উপত্যকাজুড়ে কাশ্মিরি মুসলিম নেতা, সামাজিককর্মী এবং নাগরিকরা প্রকাশ্যে এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন।

মোমবাতি মিছিল শুধু জনগণই করেননি, রাজনৈতিক নেতারাও করেছেন, এ ঐক্যই কাশ্মিরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কাশ্মিরের অধিবাসীরা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সবসময় সরব ছিল। পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে চূড়ান্তভাবে কী হতে চলেছে এটি সম্পূর্ণভাবে এখন নির্ভর করছে সিন্ধু নদীর ওপর ভারত যে স্থগিতাদেশ দিয়েছে সেটির ওপর। ভারত যতদিন এটি বন্ধ রাখবে তত ঝুঁকি বাড়বে সর্বাত্মক যুদ্ধের। বিলওয়াল ভুট্টো বলেছেন, সিন্ধু দিয়ে হয় পানি বইবে নতুবা রক্ত।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত যুগ্মসচিব ও গ্রন্থকার