ডাকসু-জাকসুর ফল ও আগামীর রাজনীতি

ডাকসু-জাকসুর ফলাফল তাই শুধু ছাত্র সংসদের ক্ষমতার সমীকরণ নয়; এটি জাতীয় রাজনীতির ভবিষ্যৎ রূপরেখা আঁকার আয়না হয়ে উঠেছে। ডাকসু ও জাকসুর নির্বাচন কেবল বিশ্ববিদ্যালয় রাজনীতির নয়; বরং জাতীয় রাজনীতিরও সূচক।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্র সংসদ নির্বাচন সবসময়ই বিশেষ গুরুত্ববহ। মুক্তিযুদ্ধ, গণতান্ত্রিক আন্দোলন কিংবা স্বৈরাচারবিরোধী লড়াই- প্রতিটি ঐতিহাসিক বাঁকে ছাত্রসমাজ ছিল নেতৃত্বের সামনের কাতারে। সেই ধারাবাহিকতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচন শুধু ক্যাম্পাস রাজনীতি নয়, জাতীয় রাজনীতির ভবিষ্যৎ গতিপথ নির্ধারণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

দীর্ঘ সময় পর এ দুই সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় ছাত্রসমাজে নতুন প্রাণের সঞ্চার ঘটেছে। ফলাফলে যে রাজনৈতিক শক্তি ও প্রবণতা প্রতিফলিত হয়েছে, তা নিছক ছাত্ররাজনীতির সীমায় আটকে নেই; বরং দেশের আগামী রাজনীতি ও ক্ষমতার সমীকরণে নতুন আভাস দিচ্ছে।

ছাত্ররাজনীতির বর্তমান চিত্র

বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গত কয়েক দশক ধরে ছাত্র সংসদ কার্যত নিষ্ক্রিয় ছিল। প্রশাসনিক অনীহা, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও দমননীতি ছাত্রদের গণতান্ত্রিক চর্চার পথ রুদ্ধ করে রেখেছিল। কিন্তু ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতেও গণতন্ত্রের সুবাতাস বইতে শুরু করেছে।

আজকের তরুণ প্রজন্ম, বিশেষত জেনারেশন-জেড, রাজনীতিকে ভিন্ন চোখে দেখে। তাদের কাছে রাজনীতি মানে অন্ধ দলীয় আনুগত্য নয়; বরং স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, অর্থনৈতিক সুযোগ ও সামাজিক ন্যায়বিচারের দাবি। তাই ছাত্র সংসদ নির্বাচনে এবার কেবল ঐতিহ্যবাহী প্রভাবশালী সংগঠন নয়, স্বতন্ত্র ও বিকল্প শক্তিও সক্রিয় হয়েছে।

প্রধান ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে ইসলামী ছাত্রশিবির ডাকসু ও জাকসুতে চমকপ্রদ সাফল্য অর্জন করেছে। অন্য দিকে বাম ও মধ্যপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলোর সামনে বিভক্তি ও দুর্বল সংগঠনশক্তি বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জাতীয় রাজনীতিতে প্রতিফলন

ছাত্র সংসদ নির্বাচনকে দীর্ঘ দিন ধরেই জাতীয় রাজনীতির পূর্বাভাস হিসেবে দেখা হয়। বাংলাদেশে অতীতের বিভিন্ন আন্দোলনে প্রতিবারই জাতীয় রাজনীতির মোড় ঘোরাতে ছাত্ররাজনীতি ছিল চালিকাশক্তি। বর্তমান প্রেক্ষাপটে ডাকসু-জাকসুর ফলাফল জাতীয় রাজনীতিতে তিনটি আভাস দিচ্ছে-

১. ইসলামী রাজনৈতিক শক্তির পুনরুত্থান : শিবিরের সাফল্য জাতীয়পর্যায়ে জামায়াতসহ ইসলামপন্থী দলগুলোর জন্য নতুন অনুপ্রেরণা হতে পারে। আগামী জাতীয় নির্বাচনে তারা জোট রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হয়ে উঠতে পারে।

২. তৃতীয় শক্তির সম্ভাবনা : ঐতিহ্যগত ছাত্র সংগঠনের বাইরের কিছু সংগঠন ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সাফল্য এটাই দেখাচ্ছে যে, শিক্ষার্থীরা প্রচলিত দলীয় রাজনীতির বাইরে নতুন বিকল্প খুঁজছে। জাতীয় রাজনীতিতে বিকল্প অথবা তরুণ-নেতৃত্বাধীন কোনো নতুন প্ল্যাটফর্ম তৈরি হলে জনসমর্থন পাওয়া অসম্ভব নয়।

৩. বাম শক্তির দুর্বলতা : বাম ও ‘প্রগতিশীল’ সংগঠনগুলো যে ঐক্যবদ্ধ কৌশল খুঁজে পায়নি, তা জাতীয় রাজনীতিতেও প্রতিফলিত হতে পারে। ফলে তারা আগামী নির্বাচনে প্রান্তিক অবস্থায় থেকে যাবে, যদি না দ্রুত নিজেদের সংগঠিত করতে পারে।

তরুণ প্রজন্মের প্রত্যাশা ও আগামীর দিকনির্দেশনা

ডাকসু ও জাকসুর ফলাফলে তরুণদের যে প্রবণতা স্পষ্ট হয়েছে তা হলো তারা চায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি। তারা প্রত্যাশা করে কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা। তারা প্রত্যাখ্যান করে দীর্ঘমেয়াদি একদলীয় আধিপত্য। তারা খোঁজে পররাষ্ট্রনীতিতে ভারসাম্য এবং দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার নিশ্চয়তা।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনের কেন্দ্রবিন্দুতে দাঁড়িয়ে আছে এই তরুণ প্রজন্ম। ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লব থেকে ডাকসু-জাকসু নির্বাচনের ফলাফল পর্যন্ত- সব ক্ষেত্রেই তরুণদের সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রমাণ করেছে, তাদের চাহিদা ও প্রত্যাশা এখন আর উপেক্ষার সুযোগ নেই। তারা শুধু দর্শক নয়; বরং পরিবর্তনের প্রধান চালিকাশক্তি। নিচে তরুণদের চারটি মৌলিক প্রত্যাশা নিয়ে আলোচনা করা হলো।

১. স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি : বাংলাদেশের তরুণসমাজ দীর্ঘ দিন ধরে রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি, দলীয়করণ ও ক্ষমতার অপব্যবহার প্রত্যক্ষ করেছে। আমলাতন্ত্র ও রাজনীতির অস্বচ্ছ চক্রে তারা বারবার হতাশ হয়েছে। ফলে তাদের প্রথম ও প্রধান দাবি- স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা।

প্রশাসনিক স্বচ্ছতার জন্য সরকারি পদোন্নতি, নিয়োগ, প্রকল্প ব্যয় কিংবা নীতিনির্ধারণ- সবখানেই তরুণরা ওপেন ডেটা, ই-গভর্নেন্স ও ডিজিটাল মনিটরিংয়ের মতো উদ্যোগ আশা করছে। রাজনৈতিক জবাবদিহির প্রশ্নে তরুণদের মতে, নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়মিত পারফরম্যান্স অডিট এবং ভোটারদের প্রতি দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা অপরিহার্য। দুর্নীতি প্রতিরোধে তরুণরা চায় ঘুষ, টেন্ডারবাজি ও সিন্ডিকেট ভেঙে আধুনিক এন্টি-করাপশন মেকানিজম প্রবর্তন।

তরুণরা এখন আর মুখের বুলি শুনতে চায় না; তারা চায় সিস্টেমেটিক পরিবর্তন, যেখানে জবাবদিহি হবে একটি স্বাভাবিক রাষ্ট্রীয় চর্চা।

২. কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা : বাংলাদেশে বেকারত্বের হার সরকারি পরিসংখ্যানের চেয়ে বহুগুণ বেশি বলে তরুণরা মনে করে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হয়ে দক্ষতার অভাবে চাকরি না পাওয়া, কিংবা অস্থায়ী ও নিম্নবেতনের চাকরির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা- এখন এক গুরুতর সঙ্কট।

এ জন্য স্টার্টআপ ও উদ্যোক্তা উন্নয়নের জন্য তরুণরা চায় সৃজনশীলতার সুযোগ, ভেঞ্চার ক্যাপিটাল, কম সুদের ঋণ এবং কর-সুবিধা। প্রযুক্তি ও নতুন খাতের উন্নয়নে আইটি, এআই, সবুজ জ্বালানি, গেমিং, ই-কমার্স- এসব খাতে সরকারি সহায়তা ও প্রশিক্ষণ তারা জরুরি মনে করছে। অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শুধু চাকরি নয়; বরং সামাজিক নিরাপত্তা (হেলথ ইন্স্যুরেন্স, বেকারভাতা) তরুণদের কাছে এক নতুন প্রত্যাশা হিসেবে উত্থিত হয়েছে। তরুণরা চায়- শুধু অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নয়; বরং ন্যায্য ও অংশগ্রহণমূলক সমৃদ্ধি।

৩. বহুদলীয় গণতন্ত্রের নিশ্চয়তা : দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশের রাজনীতি দু’টি শক্তির দ্ব›েদ্বর মধ্যে বন্দী ছিল। এর ফলে বহুদলীয় গণতন্ত্র কাগজে-কলমে থাকলেও বাস্তবে ভেঙে পড়েছে। ডাকসু-জাকসু নির্বাচনে তরুণদের অবস্থান স্পষ্টভাবে দেখিয়েছে, তারা একচেটিয়া রাজনীতির বিপক্ষে।

নির্বাচনী স্বচ্ছতা প্রশ্নে তারা চায় অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন, যেখানে ভোটাধিকার নিরাপদ থাকবে। বহুমাত্রিক কণ্ঠস্বর তাদের প্রধান আকাঙ্ক্ষা। শুধু বড় দল নয়; বরং তরুণ নেতৃত্ব, নতুন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম ও ভিন্ন মতাবলম্বীদের অংশগ্রহণের সুযোগ চায় তারা। দলীয় সংস্কৃতির বদল চায় তারা। তরুণরা দলীয় ক্যাডারতন্ত্র বা সহিংস রাজনীতি ঘৃণা করে; তারা আলোচনাভিত্তিক ও নীতিনির্ভর রাজনীতির প্রত্যাশা করে। তাদের কাছে বহুদলীয় গণতন্ত্র মানে শুধু দল বাড়ানো নয়; বরং গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি পুনর্গঠন।

৪. ভারসাম্যপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি ও সার্বভৌমত্ব : তরুণ প্রজন্ম এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গ্লোবালি কানেক্টেড। তারা জানে, বৈদেশিক নির্ভরশীলতা ও একপক্ষীয় কূটনীতি দেশের স্বাধীন সিদ্ধান্তকে খর্ব করে।

ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক প্রশ্নে তাদের আকাঙ্ক্ষা হলো- ভারত, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ‘সব পক্ষের সাথে পারস্পরিক স্বার্থে সম্পর্ক চাই; কিন্তু কারো কাছে আত্মসমর্পণ নয়’। আঞ্চলিক সহযোগিতা প্রশ্নে তরুণরা চায় বিমসটেক, সার্ক, বিবিআইএন ইত্যাদিকে কার্যকর করে আঞ্চলিক বাজার ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হোক। সার্বভৌমত্ব রক্ষা প্রশ্নে পানি, জ্বালানি, নিরাপত্তা ও বাণিজ্যে জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেয়ার জন্য স্বাধীন কূটনীতি তরুণরা জরুরি মনে করছে। কারণ তাদের কাছে পররাষ্ট্রনীতি প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তা ও মর্যাদার সাথে জড়িত।

বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম এখন দেশের সর্ববৃহৎ জনসংখ্যাগত শক্তি। তাদের প্রত্যাশা বাস্তবায়ন না হলে, তারা আবারো রাজপথে নামবে, যেমনটি ইতিহাসে বহুবার ঘটেছে।

আগামীর বাংলাদেশ : সম্ভাব্য দৃশ্যপট

ডাকসু ও জাকসুর নির্বাচনের ফলাফল ইঙ্গিত দিচ্ছে, বাংলাদেশ আজ এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। আগামী জাতীয় রাজনীতি কয়েকটি ভিন্নধর্মী পথে অগ্রসর হতে পারে। এর মধ্যে তিনটি সম্ভাব্য দৃশ্যপট বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ-

দৃশ্যপট-১ : ইসলামপন্থীদের শক্তিশালী অবস্থান : ডাকসু-জাকসুতে ইসলামী ছাত্রশিবিরের বিজয় তাদের দীর্ঘ দিনের সংগঠিত ভিত্তি ও সাংগঠনিক শৃঙ্খলার প্রতিফলন। জাতীয়পর্যায়ে এ সাফল্য ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলোর (বিশেষত জামায়াত) পুনরুত্থানের পথ তৈরি করতে পারে।

এর ফলে ইসলামী দলগুলো জাতীয় নির্বাচনে শক্ত অবস্থান নিতে পারে, এমনকি ‘কিংমেকার’ হিসেবে আবিভর্ূত হওয়ার সুযোগও উড়িয়ে দেয়া যায় না। জাতীয় সংসদে ইসলামপন্থী দলের উপস্থিতি বাড়লে নীতিনির্ধারণে ধর্মভিত্তিক ইস্যু গুরুত্ব পেতে পারে।

তবে এর সাথে নতুন দ্ব›দ্বও দেখা দিতে পারে- প্রগতিশীল, ধর্মনিরপেক্ষ ও সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর মধ্যে অস্থিরতা বৃদ্ধি পাওয়ার ঝুঁকি থাকবে। বিভিন্ন পক্ষ থেকে এ জন্য উসকানিও আসতে পারে। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও বাংলাদেশ নতুন চাপে পড়তে পারে, বিশেষত পশ্চিমা দাতাগোষ্ঠী ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো থেকে।

দৃশ্যপট-২ : বিকল্প শক্তির উত্থান : ডাকসু ও জাকসুর নির্বাচনে বিকল্প শক্তি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সাফল্য ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, নতুন প্রজন্ম প্রচলিত দলীয় রাজনীতির বাইরে বিকল্প খুঁজছে। তরুণ নেতৃত্বের প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান হয়েছে।

এর ফলে নতুন প্রজন্মের নেতা ও প্ল্যাটফর্ম জাতীয় রাজনীতিতে প্রবেশ করতে পারে, যাদের প্রধান এজেন্ডা হবে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, সুশাসন ও কর্মসংস্থান। এ ধরনের নেতৃত্ব জাতীয় নির্বাচনে মধ্যবিত্ত ও তরুণ ভোটারদের সমর্থন পেতে পারে, যারা দলীয় সঙ্ঘাতমুক্ত রাজনীতি প্রত্যাশা করে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে এই বিকল্প শক্তি দ্রুত জনসমর্থন সংগঠিত করতে সক্ষম হতে পারে। তবে তাদের জন্য চ্যালেঞ্জ হবে শক্তিশালী সাংগঠনিক কাঠামো তৈরি এবং অভিজ্ঞ রাজনৈতিক শক্তির প্রতিদ্ব›িদ্বতা সামলানো। যদি এই দৃশ্যপট বাস্তবে রূপ নেয়, তবে বাংলাদেশে নতুন ধরনের রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে উঠতে পারে, যেখানে তরুণরা নেতৃত্বের মূল আসনে থাকবে।

দৃশ্যপট-৩ : পুরনো শক্তির পুনর্গঠন : যদিও ছাত্র সংসদ নির্বাচনে পরিবর্তনের আভাস দেখা গেছে, তবুও জাতীয় রাজনীতিতে পুরনো রাজনৈতিক শক্তিগুলো এখনো প্রভাবশালী। তারা সংগঠন, অর্থ, প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগের দিক থেকে অনেক এগিয়ে।

এর ফলে পুরনো দলগুলো নিজেদের ভেতর সংস্কার আনার মাধ্যমে নতুন প্রজন্মকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করতে পারে। দীর্ঘ দিন ক্ষমতাসীন বা বিরোধী রাজনীতিতে সক্রিয় দলগুলো প্রশাসনিক ও সাংগঠনিক নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে সক্ষম হতে পারে। এতে রাজনৈতিক পরিবর্তনের গতি বিলম্বিত হবে, আর তরুণদের প্রত্যাশিত সংস্কার কার্যত ধীর হবে। তবে যদি পুরনো দলগুলো সত্যিই সংস্কারমুখী হয়, তাহলে ধীরে হলেও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে।

এই দৃশ্যপটের ঝুঁকি হলো- পরিবর্তনের দাবি ক্রমে হতাশায় রূপ নিতে পারে, যা তরুণদের রাজনৈতিক উদাসীনতা বা অরাজনৈতিক আন্দোলনের দিকে ঠেলে দেবে। যেটি নেপালে বিশেষভাবে দেখা গেছে।

সমাপনী মূল্যায়ন

বাংলাদেশের রাজনীতি কোন পথে যাবে তা নির্ভর করছে- তরুণ নেতৃত্ব কত দ্রুত সংগঠিত হতে পারে, ইসলামী শক্তি কতটা প্রভাব বিস্তার করতে পারে, পুরনো শক্তি কতটা সংস্কারমুখী হবে- এসব প্রশ্নের ওপর।

ডাকসু ও জাকসুর ফলাফল আমাদের সামনে যে আয়না তুলে ধরেছে, তা স্পষ্ট করে- আগামীর বাংলাদেশ যাবে পরিবর্তনের পথে, যেখানে তরুণ প্রজন্মের ভূমিকা হবে মুখ্য নির্ণায়ক।

ডাকসু-জাকসুর ফলাফল তাই শুধু ছাত্র সংসদের ক্ষমতার সমীকরণ নয়; এটি জাতীয় রাজনীতির ভবিষ্যৎ রূপরেখা আঁকার আয়না হয়ে উঠেছে। ডাকসু ও জাকসুর নির্বাচন কেবল বিশ্ববিদ্যালয় রাজনীতির নয়; বরং জাতীয় রাজনীতিরও সূচক।