মধ্যপ্রাচ্যের আলোচনায় আরব-চীন সম্পর্ক বিশেষ উল্লেখযোগ্য ও ইতিহাসের গভীরে প্রোথিত। আরবরা সবসময় চীনকে একটি সমৃদ্ধ ও প্রাচীন সভ্যতার জাতি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে এসেছে। প্রাচীন চীনারা আরব সভ্যতার সাথে পরিচিত ছিল, ঐতিহাসিক সিল্ক রোড এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। সিল্ক রোড কেবল একটি বাণিজ্য পথ ছিল না, এটি সভ্যতার মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং যোগাযোগের একটি সেতুও ছিল। আধুনিক সময়ে উভয়পক্ষ সংহতিতে রয়েছে এবং পারস্পরিক উদ্বেগের বিষয়ে একে অপরকে সমর্থন করছে। ১৯৪৯ সালে চীন ও আরব রাষ্ট্রগুলো প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সাথে সাথেই কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয় এবং আরব দেশগুলো ধারাবাহিকভাবে তাদের স্বাধীনতা অর্জন করতে থাকে। আরব রাষ্ট্রগুলো চীনকে জাতিসঙ্ঘে তার আসন সুরক্ষিত করতে সহায়তাও করে। একবিংশ শতাব্দীতে উভয়পক্ষের মধ্যে সহযোগিতা উল্লেখযোগ্যভাবে প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। চীনের সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধি সম্মিলিত আরব কূটনীতির কেন্দ্রীয় কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। প্রকৃতপক্ষে চীন-আরব রাষ্ট্র সহযোগিতা ফোরাম ২০-এর প্রতিষ্ঠা ছিল গত ৫০ বছরে আরব-চীন সম্পর্কের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।
চীন মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশগুলোর অন্যতম প্রধান বাণিজ্য অংশীদার হয়ে ওঠে, কারণ ফোরাম প্রতিষ্ঠার পর থেকে চীন ও আরব দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ দশ গুণেরও বেশি বৃদ্ধি পায়, ২০০৪ সালে ৩৬.৭ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ২০২৩ সালে ৪০০ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়ায়। আরব-চীন সহযোগিতার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সুযোগ এবং এই পথ অব্যাহত রাখার জন্য উভয়পক্ষের পারস্পরিক প্রতিশ্রুতির পরিপ্রেক্ষিতে ফোরামটি অবিচ্ছিন্নভাবে বিকশিত হয়। আরব-চীন সহযোগিতা জাতিসঙ্ঘ সনদ এবং লিগ অব আরব স্টেটসের সনদের নীতি ও উদ্দেশ্যের প্রতি তাদের শ্রদ্ধা এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের প্রতি তাদের অঙ্গীকারের ওপর প্রতিষ্ঠিত। চীন জাতিসঙ্ঘে আওয়াজ তোলে, বৈধ জাতীয় স্বার্থ কেনাবেচা করা যায় না। স্বাধীন রাষ্ট্রের দাবিতে ভেটো দেয়া যায় না। চীন দৃঢ়ভাবে ফিলিস্তিনের একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাকে সমর্থন করে, যেখানে পূর্ব জেরুসালেমে রাজধানী হবে এবং ১৯৬৭ সালের সীমান্তের ভিত্তিতে পূর্ণ সার্বভৌমত্ব উপভোগ করবে। চীন জাতিসঙ্ঘে ফিলিস্তিনকে পূর্ণ সদস্য মর্যাদা প্রদান সমর্থন করে।
গত এক দশক ধরে চীন মধ্যপ্রাচ্যে তার উপস্থিতি বাড়াচ্ছে। প্রাথমিকভাবে অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং আঞ্চলিক বিভক্ত দেশগুলোর সাথে কাজ করার ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে ভারসাম্যপূর্ণ হিসেবে, যা শুরু হয়েছিল তা আরো সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। বেইজিং এ অঞ্চলে তার রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক প্রভাব প্রসারিত করার চেষ্টা করে সামনে অগ্রসর হচ্ছে। স্মরণ করা যেতে পারে ২০১১ সালে আরব বসন্ত এবং ওবামা প্রশাসনের অধীনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এশিয়ার দিকে অগ্রসর হওয়ার পর চীন মধ্যপ্রাচ্যে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি শুরু করে। ২০১১ সালের দিকে পুরো অঞ্চলজুড়ে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হয়, ইরান ও সৌদি আরব এই উত্থানকে তাদের প্রভাব বিস্তারের জন্য ব্যবহার করতে থাকে। ইরান ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত একটি স্থল করিডোরের নিয়ন্ত্রণ অর্জন করতে চেষ্টা করে। উপসাগরীয় এলাকা বিরোধ ও ঘৃণায় উত্তপ্ত হয়ে পড়ে; কেননা ইরান প্রায় সব ক্ষেত্রেই বিজয় লাভ করতে থাকে।
তরুণ ও আবেগপ্রবণ ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের উত্থানে বিরোধের কড়াইতে ঘি ঢালার অবস্থা হয়। আঞ্চলিক উত্তেজনা আরো বাড়তে থাকে। ইয়েমেনের হুতিদের সামরিক সহায়তা দেয় ইরান। প্রিন্স তাদের দমন ও নিশ্চিহ্ন করার জন্য ব্যাপক সামরিক অভিযান চালায়; কিন্তু অদ্যাবধি অনেক বছর অতিবাহিত হলেও সেটি একটি ব্যয়বহুল ও অর্থহীন ‘ওয়ার গেমে’ পরিণত হয়।
লেবাননে ইরানের মিত্র শিয়া মিলিশিয়া হিজবুল্লাহ রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী একটি বøকের নেতৃত্ব দেয়। আঞ্চলিক সঙ্ঘাতে হিজবুল্লাহর সম্পৃক্ততা ও ২০১৭ সালের সাদ হারিরি সিনড্রোম মাথা উঁচু করে দাঁড়ায়। ইরানবিরোধী বিভিন্ন ইস্যুতে ট্রাম্প, বাইডেন, পম্পেও, নেতানিয়াহু সৌদি আরবকে সমর্থন দিতে থাকে।
ওয়াশিংটনের ইন্দো-প্যাসিফিকের দিকে এবং মধ্যপ্রাচ্য থেকে দূরে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত উভয়ই আঞ্চলিক শক্তির (যেমন মিসর, ইসরাইল ও সৌদি আরব) পাশাপাশি একটি শূন্যতা তৈরি করতে সক্ষম হয় চীন। উপরন্তু মার্কিন মিত্রসহ আঞ্চলিক খেলোয়াড়রা ওয়াশিংটনের নীতি নিয়ে ক্রমবর্ধমানভাবে অনেকটা হতাশ হয়ে পড়ে, যেমন ইরাকে মার্কিন আগ্রাসন, ইরানের সাথে পারমাণবিক চুক্তি থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এককভাবে প্রত্যাহার, আবার ইরানের সাথে পরমাণু চুক্তি করার জন্য চাপ, আফগানিস্তান থেকে বাইডেন প্রশাসনের তড়িঘড়ি প্রস্থান এবং সৌদি আরবের সাথে সম্পর্কের টানাপড়েন। ২০ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখের মধ্যে ইউক্রেন ও গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করার কথা থাকলেও দু’টি সেক্টরে পরিস্থিতির অবনতি- এসব বিরাট এক তালিকা বৈকি। মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অসফল কূটনৈতিক চালে আঞ্চলিক কুশীলবরা নির্ভরযোগ্য অংশীদার খোঁজার আকাক্সক্ষা দেখা দেয়। এ পরিস্থিতিতে চীন একটি কার্যকর বিকল্প হিসেবে আবিভর্ূত হয়েছে। চলমান ইসরাইল-হামাস সঙ্ঘাতসহ সাম্প্রতিক ঘটনাবলি মধ্যপ্রাচ্যে চীনের উপস্থিতির ক্রমবর্ধমান প্রকৃতিকে আরো জরুরি করে তুলে ধরেছে। পরাশক্তির প্রতিযোগিতার প্রভাব এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্র যখন ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের ওপর চাপ প্রয়োগের চেষ্টা করছে, তখন বেইজিং মধ্যপ্রাচ্যে ক্রমবর্ধমানভাবে পাল্টা জবাব দেয়ার দিকে ঝুঁকছে।
এ অঞ্চলে চীনের অর্থনৈতিক প্রভাব বাড়ার সাথে সাথে এবং মার্কিন প্রভাব হ্রাসের চলমান লক্ষণগুলোর পরে, বেইজিং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নিজেকে মধ্যস্থতাকারী এবং ওয়াশিংটনের বিকল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে থাকে।
২০২৩ সালের ৬-১০ মার্চ চীনের রাজধানীতে সৌদি আরব ও ইরানের শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তারা দুই দেশের মধ্যে অপ্রকাশিত আলোচনা করে ১০ মার্চ চীন-সৌদি আরব-ইরান ত্রিপক্ষীয় ঘোষণার পর মিসর, তুরস্ক, পাকিস্তান, ইরাক, আলজেরিয়া, ওমান, কুয়েত, লেবানন, জর্দান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ অনেক দেশ তাদের স্বাগত জানিয়েছে এবং বলেছে যে এ অঞ্চলে উত্তেজনা প্রশমনে এটি একটি দুর্দান্ত বিজয়। জাতিসঙ্ঘ, আরব লিগ ও ওআইসি নেতারা এই কূটনৈতিক কার্যক্রমে চীনের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বাইডেনও ‘ওয়েলকাম’ করেন।
২০২৩ সালে সৌদি-ইরান সম্পর্কের ক্ষেত্রে এর সফল ভূমিকা, গাজা সঙ্ঘাত মোকাবেলায় বাইডেন প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে আঞ্চলিক শক্তিগুলোর ক্রমবর্ধমান হতাশার পাশাপাশি বেইজিংকে মূলত উপকৃত করেছে এবং এটি এ অঞ্চলের সুরক্ষা স্থাপত্যে মধ্যস্থতা করতে সক্ষম করেছে। ২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বিপরীতে নিজের পথ প্রশস্ত করার জন্য বেইজিংয়ের প্রচেষ্টা বিশেষভাবে স্পষ্ট হয়েছে। ৭ অক্টোবরের গণহত্যার বিষয়ে বেইজিংয়ের প্রতিক্রিয়া উল্লেখযোগ্যভাবে নিষ্ক্রিয় থেকে- হামাসের কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানাতে ব্যর্থ হওয়া এবং উভয়পক্ষকে সঙ্ঘাত আরো বাড়ানো থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো- ধীরে ধীরে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে একতরফা হয়ে ওঠে। এটি ক্রমবর্ধমান আমেরিকা ও ইসরাইলবিরোধী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। পুরো যুদ্ধজুড়ে, ফিলিস্তিনিদের প্রতি চীনের ঐতিহ্যগত সমর্থন এবং দাবি যে এটি ‘সর্বদা আরব ও মুসলিম দেশগুলোর পক্ষে দাঁড়িয়েছে’।
ইসরাইল-হামাস সঙ্ঘাতে ফিলিস্তিনপন্থী আরো দৃঢ় অবস্থানের দিকে চীনের পরিকল্পিত পরিবর্তন মধ্যপ্রাচ্যে তার বিকশিত অগ্রাধিকারকে ফুটিয়ে তুলেছে। এটি ইঙ্গিত দেয় যে বেইজিংয়ের কৌশলগত চালে ইসরাইল কোনো উচ্চ স্থান অর্জন করতে পারেনি। বেইজিং ঐতিহ্যগতভাবে মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতাবস্থার খেলোয়াড়, আঞ্চলিক বিভাজনের ঊর্ধ্বে উঠে তার সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রেখেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার পাশাপাশি পরাশক্তির প্রতিদ্ব›িদ্বতার রঙ্গমঞ্চ হিসেবে এ অঞ্চলের ক্রমবর্ধমান ভূমিকা কৌশলগত সমীকরণ বদলে দিয়েছে। যদিও চীন আঞ্চলিক যুদ্ধ দেখতে চায় না, তবে কিছু অস্থিতিশীলতা সহ্য করতে ইচ্ছুক বলে মনে হচ্ছে। ইসরাইল সম্পর্কে পরিবর্তিত ধারণার দ্বারা চালিত হওয়ার পরিবর্তে, সঙ্ঘাতের প্রতি চীনের দৃষ্টিভঙ্গিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তার প্রতিযোগিতা এবং কেবল গেøাবাল সাউথের কণ্ঠস্বর নয়, ‘নিপীড়িতদের জোট’-এর নেতা হওয়ার উচ্চাকাক্সক্ষার লেন্সের মাধ্যমে দেখা উচিত। এই কৌশলগত অবস্থান শি জিং পিংয়ের রাজনৈতিক দূরদর্শিতার পরিচায়ক।
আমরা দেখেছি যে, ২০২৩ সালে সৌদি-ইরান সম্পর্ক মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর জন্য এক ইতিবাচক অগ্রগতি এবং চীনের জন্য একটি কূটনৈতিক বিজয়। দুই দেশের বড় বাণিজ্য অংশীদার চীন তার অর্থনৈতিক উপস্থিতিকে ক্রমবর্ধমানভাবে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক শক্তিতে স্থানান্তর করার অবারিত সুযোগের দ্বার উন্মোচিত করতে পেরেছে। মধ্যস্থতার চুক্তিটি ইসরাইলের জন্য নেতিবাচক হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। যারা ইরানকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য সৌদি আরবকে ব্যবহার করেছে তাদের ময়দান ফাঁকা হয়ে গেছে। রিয়াদ ও তেহরানের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ ইরানের প্রতি অন্যান্য উপসাগরীয় দেশগুলোর আচরণে যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছে, অন্যান্য আরব দেশ এই সাধারণীকরণ থেকে উপকৃত হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
চীন কখন গোপন মধ্যস্থতা শুরু করেছিল তা মূলত এখনো অজানা। অতীতে চীন বড় ধরনের শান্তিচুক্তি করেনি। তাই এবারের ত্রিপক্ষীয় বিবৃতি যুক্তরাষ্ট্র ও সমগ্র পাশ্চাত্যের জন্য বিস্ময়কর। সংশ্লিষ্ট কাজটি গোপনে করা হয়েছিল এবং পশ্চিমা গণমাধ্যমে কোনো নিবন্ধ প্রকাশ হয়নি। মধ্যপ্রাচ্য দীর্ঘ দিন ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যের একটি অঞ্চল। ১৯৭৮ সালের ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি এবং ১৯৯৩ সালের অসলো চুক্তির সাথে তুলনীয় এমন একটি বড় কূটনৈতিক অগ্রগতি চীনের মধ্যস্থতায় অর্জিত হয়। যেহেতু সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে এখনো অনেক সমস্যার সমাধান বাকি রয়েছে, তাই এর প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত মনোভাব কী হবে এবং তারা কোনো বাধা সৃষ্টির পদক্ষেপ নেবে কি না তা খুব তাড়াতাড়ি মিডিয়ায় চলে আসছে। মধ্যপ্রাচ্য ও আরব বিশ্ব নিয়ে যে হিসাব-নিকাশ চলছিল তা আমূল পরিবর্তিত হয়ে গেছে।
চীনের লক্ষ্য তাইওয়ান ও জিনজিয়াংয়ে তার নীতির জন্য আরব ও মুসলিম সমর্থন নিশ্চিত করা এবং পশ্চিমা (বিশেষত মার্কিন) তার মানবাধিকার নীতির সমালোচনাকে ভণ্ডামি বলে অভিযুক্ত করা। ইসরাইলের প্রতি ওয়াশিংটনের দৃঢ় সামরিক সমর্থনের বিপরীতে চীন প্রথমে নিরপেক্ষ শান্তিকামী সত্তা হলেও পরে সংলাপের মাধ্যমে আঞ্চলিক দ্ব›দ্ব নিরসনের লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ শক্তি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে, এর মাধ্যমে চীন বর্তমান যুদ্ধকে তার বৃহত্তর ও দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য অর্জনে ব্যবহার করছে, নিজেকে গেøাবাল সাউথের কণ্ঠস্বর এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা ভারসাম্য হিসেবে উপস্থাপন করছে ফলে এ অঞ্চলে ওয়াশিংটনের প্রভাব হ্রাস করছে। এমনকি মধ্যপ্রাচ্যে জনসংযোগের ক্ষেত্রে চীনের আপাত সাফল্য সত্তে¡ও এটি নিজেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক খেলোয়াড় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে কার্যকর হয়েছে। ওয়াশিংটনের যুদ্ধ পরিচালনার সমালোচনা সত্তে¡ও আঞ্চলিক নেতারা এখনো বিশ্বাস করেন যে কেবল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই একা গাজা সঙ্ঘাতের সমাধান করতে পারে। চীন মনে করে, এই যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের, ইসরাইল একটি প্রক্সি।
২০২৪ সালের জুলাইয়ে বেইজিং ঘোষণায় স্বাক্ষরের মাধ্যমে চীন ২০২৩ সালের সৌদি-ইরান চুক্তির পরে অর্জিত সাফল্য ও মর্যাদার পুনরাবৃত্তি করতে চেয়েছিল। ফিলিস্তিনের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির জটিলতার পরিপ্রেক্ষিতে মাঠের রাজনৈতিক বাস্তবতায় বেইজিং ঘোষণার প্রভাব অনিশ্চিত রয়ে গেছে। ২০২৪ সালের বেইজিং ঘোষণার আলোচনা এবং বিবরণ জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়নি, যা পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে বেইজিংয়ের কিছুটা অনিশ্চয়তার ইঙ্গিত দেয়। বেইজিং মার্কিন উপস্থিতি সম্পর্কে তীব্রভাবে সচেতন, স্বল্পমেয়াদি লাভ এবং দীর্ঘমেয়াদি উভয় লক্ষ্যের দিকে মনোনিবেশ করে সাবধানতার সাথে তার আঞ্চলিক কৌশল পরিচালনা করে যাচ্ছে।
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত যুগ্মসচিব ও গ্রন্থকার