জুলাই চার্টারের কথকতা

সতর্ক বিএনপি, সাহসী জামায়াত ও আদর্শের সন্ধানে এনসিপি

বেশির ভাগ বিশ্লেষকের ধারণা, আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় আসবে। তবে দলটি ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সাংবিধানিক সংস্কার বাস্তবায়নের অনুমতি তারা দেবে না। বরং তারা নিজেই বর্তমান সংবিধানের কাঠামোর মধ্যে থেকে সেই কাজ সম্পন্ন করতে চায়।

এহসান এ সিদ্দিক
এহসান এ সিদ্দিক

জুলাই চার্টারে ঘোষিত সাংবিধানিক সংস্কার কীভাবে বাস্তবায়িত হবে সে প্রশ্ন ঘিরে চলমান যুক্তিতর্ক এখন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণে মুখ্য হয়ে উঠেছে। দেশের তিনটি প্রধান রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি (এনসিপি) জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে পৃথকভাবে নিজেদের সাংবিধানিক সংস্কারসংক্রান্ত প্রস্তাবনা জমা দিয়েছে। প্রস্তাবনাগুলো শুধু তাদের সংস্কারপন্থী দৃষ্টিভঙ্গিই প্রকাশ করে না; বরং চার্টারকে কাগজের লেখার বাইরে এনে স্থায়ী প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার ক্ষেত্রে তারা কতটা আন্তরিক বা অনাগ্রহী, তাও স্পষ্ট করে। আমরা তিনটি দলের সুপারিশ পর্যালোচনা করে দেখতে চাই এই প্রতিযোগিতামূলক দৃষ্টিভঙ্গিগুলো বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতার পথে কী প্রভাব ফেলতে পারে।

৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) জুলাই চার্টার বাস্তবায়ন বিষয়ে তাদের আনুষ্ঠানিক অবস্থান প্রকাশ করে। দলটি তিন ধাপের একটি স্পষ্ট রোডম্যাপ উপস্থাপন করে। প্রথমত, বিএনপি বলেছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যেন অবিলম্বে সেই সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন করে, যেগুলো সংবিধান সংশোধন ছাড়াই কার্যকর করা সম্ভব। এই পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়নে দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়ার প্রয়োজন নেই, একটি অধ্যাদেশ, কিছু প্রশাসনিক নির্দেশ কিংবা বিদ্যমান বিধিমালার সামান্য সংশোধনেই সেগুলো কার্যকর করা যায়। দ্বিতীয়ত, দলটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে অনুরোধ করেছে, অপেক্ষাকৃত কম জরুরি সংস্কারগুলোর কাজও যেন তারা শুরু করে, যাতে সামগ্রিক অগ্রগতি বিলম্বিত না হয়। সবশেষে বিএনপি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছে, জুলাই চার্টারের সাংবিধানিক পরিবর্তন যেন অন্তর্বর্তী সরকার নয়, বরং জনগণের ভোটে নির্বাচিত পরবর্তী সরকারই সম্পন্ন করে, আর সেই কাজ যেন প্রথম দুই বছরের মধ্যেই হয়, যাতে প্রতিশ্রুতি আর বাস্তবতার মধ্যে দীর্ঘ ব্যবধান তৈরি না হয়।

জুলাই চার্টার বাস্তবায়নের প্রশ্নে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) তাদের প্রস্তাবনার ভিত্তি হিসেবে ‘সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা’র দাবি তুলে ধরেছে, যা দলটির সংস্কারপন্থার মূল নীতিগত অবস্থান নির্দেশ করে। বিএনপির দৃঢ় অবস্থান হলো, ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লব এবং বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গঠন সংবিধান লঙ্ঘন করেনি। বিএনপির অবস্থান স্পষ্ট, চার্টার কোনো ‘সংবিধানের ঊর্ধ্বে’ থাকা দলিল নয়। তাদের মতে, সংস্কার হতে হবে সেই কাঠামোর মধ্যেই, যা বর্তমানে প্রচলিত। আর সংবিধান সংশোধনের মতো গুরুতর পদক্ষেপ নিতে হলে, তা যেন জনগণের ভোটে নির্বাচিত নতুন সংসদই করে। বিএনপির মতে, চার্টারকে সংবিধানের উপরে স্থান দেয়ার যেকোনো প্রচেষ্টা বিপ্লব নয়, বরং এক ধরনের অভ্যুত্থান হিসেবে গণ্য হবে। এ অবস্থান প্রথমে একটি সতর্ক ও সংযত কৌশল বলে মনে হয়, যার লক্ষ্য দেশের স্থিতিশীলতা রক্ষা করা। এই অবস্থান সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দেয়, কিন্তু বিদ্যমান আইন কাঠামো ভেঙে ফেলার মাধ্যমে নয়।

তবে বিএনপির যুক্তিতে একটি মৌলিক অসঙ্গতি রয়েছে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারকে অপসারণের ঘটনাটি সংবিধান অনুযায়ী ব্যাখ্যা বা ন্যায্যতা দেয়া সম্ভব নয়। বাংলাদেশের সংবিধানে এমন কোনো বিধান নেই যা নাগরিকদের গণআন্দোলনের মাধ্যমে সরকার অপসারণের সুযোগ দেয়। বাংলাদেশের সংবিধানে অন্তর্বর্তীকালীন উপদেষ্টা সরকার গঠনের কোনো বিধান নেই, যেমনটি বর্তমানে রয়েছে। বাস্তবতা হলো, জুলাই বিপ্লব এবং তার পরবর্তী রাজনৈতিক রূপান্তরসমূহ সাংবিধানিক কাঠামোর বাইরে সংঘটিত হয়েছে, যা এই প্রক্রিয়ার বৈধতা ও ধারাবাহিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। এই অন্তর্বর্তী সরকারের আইনি বৈধতা সংবিধান থেকে নয়; বরং জনগণের ইচ্ছা থেকে উৎসারিত। এটি একটি জনআকাক্সক্ষার ভিত্তিতে গঠিত রাজনৈতিক বাস্তবতা, যা বিদ্যমান সংবিধানকে অতিক্রম করে জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতার প্রতিফলন হিসেবে দেখা যেতে পারে।

এই দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে, ‘সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা’র প্রতি বিএনপির অনুরাগ স্থিতিশীলতার চেয়ে বরং অস্বীকারের এক রূপ বলে মনে হয়। জুলাই বিপ্লব সংস্কারমূলক সংস্করণ ছিল না, এটি ছিল বিদ্যমান সংবিধান প্রত্যাখ্যান করার এক গণঘোষণা। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার, সংবিধানবহিভর্ূত বা অবৈধ নয়; বরং জনসার্বভৌমত্বের জীবন্ত প্রতিমর্যাদা। বিএনপি সংস্কার বিদ্যমান সংবিধানের গণ্ডিতে আবদ্ধ রাখতে চায়। কিন্তু বাস্তবতা হলো, বিপ্লব ইতোমধ্যেই সেই কাঠামো ভেঙে দিয়েছে। আজ বৈধতার ভিত্তি আর কোনো আইনি পাঠে নয়, বরং ২০২৪ সালের ৫ আগস্টে জনগণের প্রকাশিত ইচ্ছায় নিহিত।

জুলাই চার্টারে অন্তর্ভুক্ত বেশ কিছু সংস্কার প্রস্তাব বিদ্যমান সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক। এগুলোর মধ্যে রয়েছে সুপ্রিম কোর্টের বিকেন্দ্রীকরণ এবং দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব। বিএনপি যদিও নীতিগতভাবে এসব সাংবিধানিক সংস্কারের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে, তবু তারা এই সংস্কারগুলোর বাস্তবায়ন নিয়ে কোনো সুসংহত কৌশল উপস্থাপন করেনি। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, চার্টারে প্রস্তাবিত কিছু সংস্কার বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট স্বীকৃত ‘মৌলিক কাঠামো তত্তে¡’র পরিপন্থী। অথচ এ ধরনের সংস্কার কীভাবে সংবিধানসম্মতভাবে বাস্তবায়িত হবে, সে বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি। এই নীরবতা অনিবার্যভাবে প্রশ্ন উপস্থাপন করে, বিএনপি কি সত্যিই জুলাই চার্টারকে পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ? সাংবিধানিক সংস্কারের ক্ষেত্রে শুধু নীতিগত সমর্থন নয়, কার্যকর রূপরেখা ও আইনি যুক্তি প্রয়োজন, যা অনুপস্থিত থাকলে রাজনৈতিক অবস্থান বিশ্বাসযোগ্যতা হারায়।

শেষত, বিএনপি চার্টারকে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন নয়; বরং একটি রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি হিসেবে উপস্থাপন করেছে। এই দৃষ্টিভঙ্গি চার্টারের রাজনৈতিক ও আইনগত গুরুত্বকে দুর্বল করে, যা তার বাস্তবায়নযোগ্যতা ও গণতান্ত্রিক ভিত্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। বিএনপির মতে, চার্টার বাস্তবায়নের একমাত্র নিরাপদ ব্যবস্থা হলো রাজনৈতিক দলগুলোর স্বাক্ষর, নির্বাচনী ইশতেহারে অন্তর্ভুক্তি এবং ভোটারদের বিচারে তাদের জবাবদিহি। তবে এই ব্যবস্থা অত্যন্ত দুর্বল। কারণ রাজনৈতিক দলগুলো প্রায়ই তাদের প্রতিশ্রুতি পালন করে না এবং তা না করলে তাদের বাধ্য করার কোনো আইনগত উপায় নেই। ফলে, চার্টারকে শুধু রাজনৈতিক সদিচ্ছার ওপর নির্ভরশীল করে তোলা মানে জনগণের বিপ্লবী আকাক্সক্ষাকে অনিশ্চয়তার হাতে সঁপে দেয়া।

২০২৫ সালের ৫ সেপ্টেম্বর, ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি (এনসিপি) জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে জুলাই চার্টার বাস্তবায়নসংক্রান্ত প্রস্তাবনা জমা দেয়। তিনটি দলের মধ্যে এনসিপির সুপারিশ ছিল সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত। দলটির মূল প্রস্তাব ছিল, চার্টারকে একটি গণপরিষদের মাধ্যমে গৃহীত ও বাস্তবায়িত করা উচিত। এনসিপির মতে, এটি সবচেয়ে গণতান্ত্রিক ও কার্যকর পন্থা। তাদের বিশ্বাস, চার্টার যেহেতু জনগণের সার্বভৌম ইচ্ছার প্রতিফলন, তাই এর বাস্তবায়ন হতে হবে এমন একটি পর্ষদের মাধ্যমে, যা বিস্তৃত প্রতিনিধিত্বশীল এবং গণতান্ত্রিকভাবে জবাবদিহিমূলক।

যদিও ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি (এনসিপি) তাদের চিঠিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে বিষয়টি স্পষ্টভাবে বলেনি, তবু তাদের অবস্থান অনুধাবন করা সহজ। এনসিপির বিশ্বাস, বিদ্যমান সংবিধানের বিরাট অংশ আর কার্যকর নয় এবং সেগুলো জুলাই চার্টার দ্বারা প্রতিস্থাপিত হওয়া উচিত। তারা সরাসরি এই ঘোষণা না দিলেও, তাদের প্রস্তাবনার অন্তর্নিহিত যুক্তি সে দিকেই ইঙ্গিত করে। চার্টারকে গণপরিষদের মাধ্যমে অনুমোদনের দাবি জানিয়ে এনসিপি কার্যত একে একটি বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। অথবা অন্তত এমন একটি দলিল হিসেবে, যা বর্তমান সংবিধানের ঊর্ধ্বে অবস্থান করে। এ অবস্থান চার্টারের সাংবিধানিক অবস্থান ও বৈধতা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের অবতারণা করে।

তবে এনসিপির প্রস্তাবনার মূল জটিলতা নিহিত রয়েছে এর বাস্তবায়নযোগ্যতায়। এই পরিকল্পনা কার্যকর করতে হলে প্রথমেই একটি নতুন গণপরিষদ নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। এই গণপরিষদ জুলাই চার্টারকে গৃহীত ঘোষণা করবে। কিন্তু যেহেতু চার্টার নিজে কোনো সংবিধান নয়, তাই পরবর্তী ধাপে হয় নতুন সংবিধান রচনার জন্য একটি দ্বিতীয় গণপরিষদ গঠন করতে হবে, অথবা একটি নবনির্বাচিত সংসদের মাধ্যমে বর্তমান সংবিধানে সংশোধন আনতে হবে। এই প্রক্রিয়া নীতিগতভাবে দৃঢ় হলেও বাস্তবিকভাবে দীর্ঘ ও জটিল।

২০২৫ সালের ৭ সেপ্টেম্বর জামায়াতে ইসলামী জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে তাদের প্রস্তাবনা জমা দেয়। দলটি সুপারিশ করে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যেন একটি ‘অস্থায়ী সাংবিধানিক আদেশ’ জারি করে, যার মাধ্যমে জুলাই চার্টার কার্যকর হবে। জামায়াতের মতে, এই আদেশের বৈধতা সরাসরি ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের গণজাগরণ থেকে উৎসারিত। জামায়াতের প্রস্তাব অনুযায়ী, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জারি করা ‘অস্থায়ী সাংবিধানিক আদেশ’-এর মাধ্যমে জুলাই চার্টারকে সব প্রচলিত আইন ও বর্তমান সংবিধানের ঊর্ধ্বে স্থান দেয়া হবে। দলটির মতে, এই আদেশকে খর্ব করার চেষ্টা কিংবা অন্য কোনো আইনকে তার ওপর স্থান দেয়ার প্রয়াস রাষ্ট্রদ্রোহ হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত।

এই প্রস্তাবনার সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ দিক হলো নির্বাচনসংক্রান্ত বিধান। জামায়াতের প্রস্তাব অনুযায়ী, অস্থায়ী সাংবিধানিক আদেশ রাষ্ট্রপতিকে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের জন্য অধ্যাদেশ জারির ক্ষমতা দেবে। তবে এই ক্ষমতা হবে কঠোর শর্তসাপেক্ষ, নির্বাচনগুলো পরিচালিত হতে হবে জুলাই চার্টারের নীতিমালা এবং ২০২৪ সালের গণআন্দোলনের চেতনার ভিত্তিতে। এই প্রস্তাবের মাধ্যমে জামায়াত নিশ্চিত করতে চায়, কোনো রাজনৈতিক দল বা প্রার্থী এমন কোনো নির্বাচনী প্ল্যাটফর্মে অংশ নিতে পারবে না, যা ২০২৪ সালের বিপ্লবের মূল্যবোধের পরিপন্থী। দলটি সুপারিশ করেছে- অস্থায়ী সাংবিধানিক আদেশ বলবৎ থাকবে ততদিন, যতদিন না একটি নতুন সংবিধান সংসদে তিন-চতুর্থাংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় পাস হয় এবং জাতীয় গণভোটে জনগণের অনুমোদন লাভ করে।

জামায়াতের প্রস্তাবটি শুনতে বিপ্লবী মনে হলেও আইনি দৃষ্টিকোণ থেকে তা যথেষ্ট সুসংহত। বাস্তবিক অর্থে, জুলাই চার্টার পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়নের জন্য এটি সম্ভবত সবচেয়ে কার্যকর পথ। আদর্শিকভাবে, ‘অস্থায়ী সাংবিধানিক আদেশ’-এর ধারণা ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের গণআন্দোলনের পরপরই উত্থাপিত হওয়া উচিত ছিল। তখন রাজনৈতিক উদ্দীপনা ছিল চরমে এবং জনগণ ছিল পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত। কিন্তু এখন, এক বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেছে এবং সেই তাৎক্ষণিক তাড়না ও জনমত অনেকটাই স্তিমিত হয়ে এসেছে। বর্তমানে জনগণ এবং প্রশাসনের মধ্যে সাংবিধানিক কাঠামোয় বড় ধরনের পরিবর্তনের প্রতি আগ্রহ কমে গেছে। এই প্রেক্ষাপটে জামায়াতের প্রস্তাবনা উত্থাপনে বিলম্ব তাদের রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাবকে স্পষ্ট করে তোলে। সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণে ব্যর্থতা রাজনৈতিক কৌশলের দুর্বলতা নির্দেশ করে।

এই বাস্তবতায় স্পষ্ট, জুলাই চার্টার বাস্তবায়ন নিয়ে কোনো জাতীয় ঐকমত্য গড়ে ওঠেনি। বেশির ভাগ বিশ্লেষকের ধারণা, আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় আসবে। তবে দলটি ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সাংবিধানিক সংস্কার বাস্তবায়নের অনুমতি তারা দেবে না। বরং তারা নিজেই বর্তমান সংবিধানের কাঠামোর মধ্যে থেকে সেই কাজ সম্পন্ন করতে চায়। তবে চার্টারের যেসব অংশ সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর সাথে সাংঘর্ষিক, সেগুলো নিয়ে বিএনপি কোনো সুস্পষ্ট পরিকল্পনা উপস্থাপন করেনি। এই অস্পষ্টতা তাদের রাজনৈতিক অবস্থান ও আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। চার্টার বাস্তবায়নের জন্য বিএনপি ও অন্যান্য প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটি কার্যকর ও গ্রহণযোগ্য রূপরেখা নির্ধারণ জরুরি। অন্যথায়, জুলাই বিপ্লবের অর্জনগুলো বিফলে যেতে পারে এবং চার্টার বাস্তবায়নের সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে পড়বে।

লেখক : বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী এবং হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের নিবন্ধিত কৌঁসুলি