জুলাই জাতীয় সনদ সাড়ম্বরে স্বাক্ষর করেছেন রাজনীতিকরা। সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে ছিলেন সামরিক-বেসামরিক আমলা, অভিজাত ব্যক্তিরা। জুলাই বিপ্লবে শহীদ পরিবারের একাংশও অতিথি তালিকায় ছিলেন। অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারীদের একটি অংশ বিক্ষোভ করেছে। পুলিশ তাদের লাঠিপেটা করে হটিয়ে দেয়। এতে বিক্ষোভকারীদের অনেকে আহত হন। তাদের মধ্যে জুলাই বিপ্লবে একটি হাত হারানো যুবক আতিকুল ইসলাম ছিলেন। পুলিশের লাঠিপেটায় তার জোড়া লাগানো কৃত্রিম হাতটি আবারো বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ ড. ইউনূস সরকারের কৃতিত্ব। এতে বাংলাদেশের রাষ্ট্র পরিচালনায় বিস্তৃত সংস্কারের রূপরেখা হাজির করা হয়েছে। এটি করতে গিয়ে সরকার বিশাল কর্মযজ্ঞ চালিয়েছে। সংবিধান, নির্বাচন ও পুলিশসহ ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করে। কমিশনগুলো সংশ্লিষ্টদের সাথে ব্যাপক আলাপ-আলোচনা করে। আলোচনার মূল বিষয়গুলোতে জনগণের বিভিন্ন পর্যায় থেকে মতামত আহ্বান করে। মতামত গ্রহণের পরিসর এতটা ব্যাপক ছিল যে, লাখ লাখ মতামত দেয়া হয়েছে। রাষ্ট্র সংস্কারে এতটা বিস্তৃত পরিসরে আলাপ-আলোচনা নজিরবিহীন।
সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বিবেচনা ও গ্রহণের লক্ষ্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়। ড. ইউনূসকে সভাপতি করে সংবিধান সংস্কার কমিশনের সভাপতি প্রফেসর আলী রীয়াজকে সহ-সভাপতি করা হয়। আলী রীয়াজের নেতৃত্বে দেশের প্রায় সব রাজনৈতিক দল ও জোটকে নিয়ে আবার শুরু হয় ম্যারাথন আলোচনা। তার আগে পাঁচটি কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ ১৬৬টি সুপারিশ রাজনৈতিক দলগুলোর সামনে আলোচনার জন্য রাখা হয়। তারা ৩৩টি রাজনৈতিক দলের সাথে মোট ৭২টি বৈঠকে মিলিত হয়। সবাই মিলে কিছু ক্ষেত্রে ভিন্নমতসহ ৮৪টি সুপারিশ-সম্বলিত ‘জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫’ প্রণয়ন করা হয়। ১৭ অক্টোবর সনদটি স্বাক্ষর হয়েছে।
সুপারিশগুলো দুই ভাগে সনদে পরিবেশিত হয়েছে। এর ‘ক’ অংশে রয়েছে সংবিধান সংশোধন বিষয়ক সংস্কারের বিষয়গুলো। এতে রয়েছে মোট ৪৭টি সুপারিশ। ‘খ’ অংশে আছে আইন/অধ্যাদেশ, বিধি ও নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে সংস্কারের বিষয়গুলো। যাতে রয়েছে বাকি ৩৭টি সুপারিশ।
প্রথম অংশে রাষ্ট্রপতি, সংসদ ও বিচার বিভাগের ক্ষমতার বিস্তৃত পরিসরে বণ্টনের আলোচনা করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা প্রয়োগে এ অনুযায়ী ভারসাম্য আনা গেলে রাষ্ট্রের স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাব বিলোপ হবে। সংসদে উচ্চকক্ষ গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে। সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে এর ১০০ সদস্য নির্বাচিত হবেন। উচ্চকক্ষ গঠন সংক্রান্ত অনুচ্ছেদের ‘গ’ ধারায় বলা হয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলো নি¤œকক্ষের সাধারণ নির্বাচনের চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের সময় একই সাথে উচ্চকক্ষের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করবে।’ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য এ তালিকা প্রণয়ন জনগণকে দলটির মনোভাব যাচাইয়ে সহযোগিতা করবে। এই তালিকা দেখে বোঝা যাবে, দলগুলো কী চায়। তারা যদি যোগ্য সৎ লোকদের বাছাই করে, ভোটাররা তাদের প্রতি আকৃষ্ট হবে। নারী কোটায় সংসদ সদস্য হওয়ার নিয়মটি মানুষ ভুলে যায়নি। হাসিনার জাতীয় সংসদে এমন মহিলারা ঢুকে পড়েছিলেন যারা ঠিকভাবে পড়তেও পারতেন না। চটুল গানের গায়িকা, অভিনেত্রী, চরিত্রহীনদের মেলা হয়ে উঠছিল সংসদ। নিম্নকক্ষের নির্বাচনের আগেই উচ্চকক্ষের তালিকা প্রণয়ন বাধ্যতামূলক থাকলে সব দলই সৎ যোগ্য অভিজ্ঞ লোকদের তালিকায় স্থান দেবে। আশা করা যায়, জাতির দেশপ্রেমিক শ্রেষ্ঠ সন্তানরা উচ্চকক্ষ সদস্য হওয়ার সুযোগ পাবেন।
নিম্নকক্ষের পাস হওয়া আইন উচ্চকক্ষে যাচাইয়ের মুখে পড়বে। সংবিধান সংশোধনের যেকোনো আইন উচ্চকক্ষে সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় পাস করতে হবে। জাতীয় স্বার্থ বা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা প্রভাবিত করে এমন আন্তর্জাতিক চুক্তি সম্পাদনে উভয় কক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটের মাধ্যমে অনুমোদন হবে। উচ্চকক্ষের অপশন বাস্তবায়ন হলে সংসদে একতরফা আইন পাস চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। সংখ্যাগরিষ্ঠের জোরে বিগত সংসদে যেমন খুশি সংবিধান কাটাছেঁড়া করেছেন হাসিনা। নিম্নকক্ষে ডেপুটি স্পিকারসহ গুরুত্বপূর্ণ কিছু কমিটিতে বিরোধীদলীয় সদস্যদের রাখার বাধ্যবাধকতা থাকবে। জাতীয় সংসদে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি পদে সংসদে আসন সংখ্যানুপাতে বিরোধী দলের মধ্য থেকে নির্বাচন করা হবে।
সংস্কার সম্পন্ন হলে আমূল বদলে যাবে বিচার বিভাগের। সুপ্রিম কোর্টকে বিকেন্দ্রীকরণ করে দেশের সব বিভাগে নিয়ে যাওয়া হবে। প্রধান বিচারপতি প্রতিটি বিভাগে এক বা একাধিক স্থায়ী বেঞ্চ প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন। সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের শক্তি ও এখতিয়ার বাড়ানো হবে। নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির নিয়ন্ত্রণ সম্পূর্ণভাবে সুপ্রিম কোর্টের হাতে থাকবে। এতে বিচার বিভাগে রাজনীতিক ও প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপ সীমিত হয়ে আসবে। জনগণের সুবিচার পাওয়ার পথ প্রশস্ত হবে।
নির্বাচন কমিশনার, সরকারি কর্মকমিশনের সদস্য, দুর্নীতি দমন কমিশন, মহাহিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক নিয়োগে বড় ধরনের সংস্কার প্রস্তাব করা হয়েছে। এসব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের গঠন ও সদস্য নিয়োগে সংস্কারের এই সুপারিশ কার্যকর হলে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠা হবে। হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম হয়েছিল সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশন ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে যাওয়ার কারণে। হাসিনা দেশে নির্বাচনকে সার্কাসে পরিণত করেছিলেন। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এমন প্রহসনের নির্বাচন পৃথিবীর কোনো দেশে হয়নি। এর পরও অবাধ, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ নির্বাচন হয়েছে দাবি করতেন হাসিনার নিযুক্ত কমিশনাররা। জনরোষের শিকার নুরুল হুদা দাবি করেছিলেন, আমেরিকার চেয়ে বাংলাদেশের নির্বাচনব্যবস্থা সুষ্ঠু-সুন্দর। হাসিনার তিনজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার জনগণের সাথে তামাশা করে গেছেন। জনগণের ভোটাধিকার তারা সম্পূর্ণ কেড়ে নিয়েছিলেন।
সরকারি কর্মকমিশন হয়ে উঠেছিল উচ্চপদে হাসিনার পছন্দের লোকদের নিয়োগ দেয়ার প্রতিষ্ঠান। রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে হাজার হাজার চাকরিপ্রার্থীকে বঞ্চিত করে হাসিনার দেয়া তালিকা অনুযায়ী অযোগ্য অথর্ব লোকদের তারা সরকারি চাকরির বিভিন্ন পদে নিয়োগ দিয়ে দেয়। দুর্নীতি দমন কমিশন ছিল বিরোধীদের দমনের হাতিয়ার। এখানে সরকারি দলের লোকদের চারিত্রিক সনদ দেয়া হতো। কারো বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে তাকে এ সনদ দিয়ে পরিশুদ্ধ করা হতো। প্রতিষ্ঠানটির সৎ দক্ষ লোকদের হাসিনার আমলে পুরোপুরি কোণঠাসা করে রাখা হয়। কেউ কেউ দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে গিয়ে পদাবনতি ও হেনস্তার শিকার হন। অনেককে কোনো কারণ দর্শানো ছাড়াই চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়।
আশা করা যাচ্ছে, সংস্কার প্রস্তাব অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো গঠিত ও পরিচালিত হলে জবাবদিহি এবং স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠিত হবে। একজন ন্যায়পাল নিয়োগ করার প্রস্তাব কমিশন রেখেছে। অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের মতো সরকারি কর্মকমিশনের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বিরোধী দল ও বিচার বিভাগের সদস্যদের যুক্ত করা হয়েছে। স্থানীয় সরকার গঠন ও এর নির্বাচন এবং ব্যবস্থাপনায় বিস্তৃত পরিসরে সংস্কারের সুপারিশ করা হয়েছে। এতে স্থানীয় সরকারকে ক্ষমতায়িত করা হয়েছে। স্থানীয় সরকারে সরাসরি নিযুক্ত সরকারি কর্মকর্তারা জনপ্রতিনিধিদের অধীন হবেন।
এর বাইরে, জুলাই সনদের শেষে যুক্ত অঙ্গীকারনামার ৫ নম্বর ধারাটি সন্দেহজনক। তাতে উল্লেখ রয়েছে, ‘গণ-অভ্যুত্থানকালে সংঘটিত সব হত্যাকাণ্ডের বিচার... নিশ্চিত করা হবে।’ খেয়াল রাখতে হবে হাসিনা পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রকে জনগণের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছিলেন। দেশের প্রায় প্রত্যেকটি থানা পুলিশ প্রাণঘাতী অস্ত্র নিয়ে জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমে পড়েছিল। জনগণ সেই যাত্রায় পরাস্ত হলে দেশজুড়ে হাজার হাজার মানুষ হত্যার শিকার হতো। সেটি ছিল পুরোপুরি একটি যুদ্ধ। জনগণের সম্মিলিত প্রতিরোধে দেশজুড়ে সে সময় ৪৪ জন পুলিশ নিহত হয়। এর দায় হাসিনা ও তার আইনশৃঙ্খলার নেতৃত্বে থাকা কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে। অঙ্গীকারনামায় বাক্যটি কিভাবে ঢুকল তা যাচাই করতে হবে। এ অংশটিকে অবশ্যই স্পষ্ট করতে হবে।
কিছু কিছু প্রস্তাবে প্রায় সব দল একমত পোষণ করেছে। আবার কিছু দল মতামত দেয়ায় বিরত থেকেছে। সে ক্ষেত্রে ৩৩টি দলের সবাই একটি প্রস্তাবে শতভাগ একমত হয়েছে, এমন পাওয়া গেল না। অনেক ক্ষেত্রে একটি বা দু’টি দল দ্বিমত করেছে।
জুলাই সনদ এখনো একটি প্রস্তাব মাত্র। এর কার্যকারিতা নির্ভর করছে দলগুলোর মনোভাবের ওপর। ঐকমত্য কমিশনের ৮৪টি প্রস্তাবের এক-তৃতীয়াংশও যদি বাস্তবায়ন হয়, দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে। অন্তত এই সনদকে রাজনৈতিক দলগুলো যদি ন্যূনতম সম্মান দেখায় তাহলে আওয়ামী লীগের রাজনীতি এই দেশে আর কখনো প্রাসঙ্গিক হবে না। একই সাথে এই দেশ থেকে ভারতীয় আধিপত্যবাদও বিদায় নেবে। তবে সেই ক্ষেত্রে বাংলাদেশে মিডিয়া ও নিরাপত্তা ব্যবস্থায়ও সংস্কারের প্রয়োজন হবে।
মিডিয়া ও নিরাপত্তা কাঠমো সংস্কার
ঐকমত্য কমিশন গঠনে সব সংস্কার কমিশন থেকে একজন করে সদস্য নেয়া হলেও মিডিয়া সংস্কার কমিশনকে বাদ রাখা হয়। জাতীয় ঐকমত্য সনদে একবারের জন্যও সংবাদমাধ্যমের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়নি। তথ্য অধিকার আইন সংশোধন ৬২ ধারা ও অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট সংশোধন ৬৩ ধারায় উল্লেখ রয়েছে। খেয়াল রাখতে হবে, ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠার অন্যতম সহযোগী ছিল বাংলাদেশের মিডিয়া। এর আগে মিডিয়া কমিশন বিস্তৃত রিপোর্ট প্রকাশ করলেও সেখানে দেশের অসুস্থ মিডিয়াকে কিভাবে সারিয়ে তোলা হবে সে দাওয়াই নেই। মূলত মিডিয়ার অভিযুক্ত সাংবাদিক ও দায়ী মিডিয়াগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুনির্দিষ্ট সুপারিশ ছিল না।
ইতোমধ্যে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের উদ্যোগ বাস্তবায়ন হচ্ছে না বলে আপত্তি জানানো হয়েছে সাংবাদিকদের সংশ্লিষ্ট একটি কর্মশালা থেকে। তারা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বিগ্ন। বাস্তবে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের প্রধান সমস্যা হচ্ছে তথ্যসন্ত্রাস ও সাংবাদিকতার অপব্যবহার। হাসিনার ফ্যাসিবাদ ২০২৪ সাল পর্যন্ত কোনোভাবে টিকে থাকত না যদি না মিডিয়া তার পক্ষে ক্রমাগত বয়ান নির্মাণ করত। একেবারে পতনের আগের দিন পর্যন্ত সাংবাদিক নামের কিছু লোক এবং মূল ধারার প্রায় সব মিডিয়া হাসিনাকে সমর্থন করে গেছে। হাসিনার সময়ে সংবাদমাধ্যমের মালিকানা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ভূমিখেকোসহ নানা ব্যবসায়ী মাফিয়া চক্রের কব্জায় চলে যায়। অন্যদিকে মিডিয়ার মূল নিয়ন্ত্রক কথিত সাংবাদিকরা দেশের থেকে বেশি আনুগত্য দেখায় দিল্লির প্রতি। কামাল আহমদের নেতৃত্বে গঠিত গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে আলোচনায় আনেনি। ঐকমত্য কমিশনও এ ব্যাপারে কোনো আলোকপাত করেনি।
হাসিনা বাংলাদেশের পুরো নিরাপত্তা কাঠামো ধ্বংস করে দিয়েছেন। তিনি শুধু খুনে বাহিনী তৈরি করে ক্ষান্ত হননি, দেশ রক্ষার অন্যতম হাতিয়ার গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে পঙ্গু করে দিয়েছেন। এনএসআই গোয়েন্দা কার্যক্রমের চরিত্র হারিয়ে একটি উদ্দেশ্যহীন লক্ষ্যহীন প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। অন্যদিকে, সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইকে দেশের শত্রুদের বিরুদ্ধে কার্যক্রম চালানোর বদলে দাঁড় করিয়ে দেয়া হয় দেশপ্রেমিকদের গুম-খুনের কাজে। সেখানে তারা আয়নাঘর নামের জল্লাদখানা তৈরি করে। সংস্থাটির সদর দফতরে একটি ফ্লোর বরাদ্দ দিয়ে দেয় শত্রু দেশের গোয়েন্দা সংস্থাকে। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন দেশবিরোধী কর্মকাণ্ডের নজির দ্বিতীয়টি নেই। হাসিনা পালানোর পর দেশের গোয়েন্দা কাঠামোর দুর্বলতা প্রকট হয়ে উঠেছে। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা এখন সবচেয়ে বিপদের মুখে। প্রতিনিয়ত বড় নাশকতার ঘটনা ঘটলেও গোয়েন্দা তথ্যের অভাবে সেগুলো আগেভাগে রোধ করা যাচ্ছে না। পুলিশ সংস্কারে বিস্তারিত রূপরেখা পেশ করা হলেও জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জুলাই সনদে সযত্নে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দেশের নিরাপত্তা কাঠামো সংস্কারের প্রসঙ্গটি এড়িয়ে গেছে।
লেখক : সহকারী সম্পাদক, দৈনিক নয়া দিগন্ত