দেশে প্রতিরক্ষা অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এখানে প্রধানত ড্রোন, সাইবার-টেকনোলজি, সামরিক ও আধা-সামরিক বাহিনীর ব্যবহারযোগ্য সামরিক সরঞ্জাম ও গোলাবারুদ উৎপাদন করা হবে। দেশী-বিদেশী বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এখানে কারখানা স্থাপন করতে পারবে এবং উৎপাদিত পণ্য দেশ-বিদেশে বিপণন করতে পারবে। এতে ব্যয় হবে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা, যা সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব (পিপিপি), যৌথ উদ্যোগ এবং সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) থেকে আসতে পারে।
পরিকল্পনার রূপরেখা নিয়ে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) উচ্চপর্যায়ের সভায় আলোচনা হয়েছে। প্রকল্পের স্থান নির্বাচন, বিনিয়োগ কাঠামো ও সম্ভাব্য আন্তর্জাতিক অংশীদার নির্ধারণের জন্য কাজ শুরু হয়েছে।
নয়া দিগন্তে প্রকাশিত রিপোর্টে এসব তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, দেশের প্রতিরক্ষা শিল্পে স্বনির্ভরতা অর্জন ও রফতানির মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিতে সমৃদ্ধি আনা এর লক্ষ্য।
বিভিন্ন সরঞ্জাম ও গোলাবারুদের স্থানীয় উৎপাদন চালুর মাধ্যমে প্রথমত দেশের চাহিদা পূরণ করা হবে। পরে সামরিক সরঞ্জাম রফতানির পথও উন্মুক্ত হবে।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) সভায় উচ্চপর্যায়ের সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন এবং বিভিন্ন দেশের সরকার ও বেসরকারি সংস্থা বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা উৎপাদনক্ষেত্রে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে, এমন তথ্য সভায় উপস্থাপন করা হয়েছে।
এই প্রকল্পে বাইরে থেকে বড় বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে নির্দিষ্ট আইনি নিশ্চয়তা, গ্যারান্টি ও বিনিয়োগ রক্ষণাবেক্ষণের বিধি প্রণয়ন করা জরুরি বলে বিবেচনা করা হচ্ছে।
দেশের অভ্যন্তরীণ প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের চাহিদা প্রায় আট হাজার কোটি টাকার। এর বাইরে বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনী ও অন্যান্য আধা-সামরিক সংস্থার চাহিদাও যথেষ্ট। এক্ষেত্রে স্বনির্ভর হতে পারলে আমদানির অর্থ সাশ্রয় হবে।
প্রতিরক্ষা অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত সময়োপযোগী। ভূ-রাজনীতিতে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান গুরুত্বের পাশাপাশি দেশের নিজস্ব প্রতিরক্ষার প্রয়োজনীয়তাও বাড়ছে। কিছু প্রতিবেশীর বৈরিতা বিবেচনায় রাখা জরুরি।
পাকিস্তানের অর্থনীতি আমাদের চেয়ে ভালো নয়; কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে তাদের প্রতিরক্ষা শিল্পের সক্ষমতা বিশ্বের সমীহ অর্জন করেছে। বিশ্বের অস্ত্র রফতানিকারক দেশগুলোতে সামরিক শিল্পে বেসরকারি খাতের বড় অবদান আছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে। তুরস্কও অনেক দূর এগিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের ধ্বংসাত্মক অবরোধের মধ্যেও ইরান সামরিক প্রযুক্তিতে এখন বিশ্বে সেরা। বিশ্ববাজারে ড্রোন সরবরাহ করে তারা বিপুল অর্থ আয় করছে।
সভায় দু’টি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে, একটি ‘প্রতিরক্ষা শিল্প উন্নয়ন সম্পর্কিত জাতীয় নীতিমালা’ প্রণয়নের জন্য; আরেকটি ‘বাংলাদেশ জাতীয় প্রতিরক্ষা শিল্প-উন্নয়ন সমন্বয় পরিষদ’ নামে সামগ্রিক অগ্রগতি তদারকির জন্য। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নীতিগত অনুমোদনের পর থেকে বিষয়টি নীতিমালা ও সাংগঠনিক কাঠামো নির্ধারণের পর্যায়ে রয়েছে। আশা করা যায়, অচিরেই প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম তৈরির এ উদ্যোগ সফলভাবে শুরু হবে।
সামরিক সরঞ্জাম বানাতে উচ্চমানের প্রযুক্তি, বড় বিনিয়োগ, প্রশিক্ষিত লোকবল দরকার হবে। তৈরি করতে হবে এ সংক্রান্ত আইনি কাঠামোও। যথাযথভাবে সম্পন্ন করা গেলে এটি হতে পারে গার্মেন্ট শিল্পের মতো অর্থনীতির জন্য আরেকটি মাইলফলক।



