তারুণ্যের অভিপ্রায় ও রাজনৈতিক বাস্তবতা

তরুণদের আচরণ ও প্রত্যাশা কোনোভাবে গুরুত্বহীন মনে করা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। আজকের ডিজিটাল জগতে তরুণরা বহু দেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। উদ্ভাবন ও সৃজনশীলতায় তারা জ্যেষ্ঠ ও প্রবীণদের অতিক্রম করে যাবেন এটাই স্বাভাবিক হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। ইন্টারনেট তথা ডিজিটাল সেবা সহজলভ্য হওয়ায় মানুষ আগের চেয়ে বহুগুণ এগিয়ে গেছে। বিশেষ করে তরুণরা অনেক বেশি অগ্রসর। প্রবীণরা ক্রমান্বয়ে পিছিয়ে পড়ছেন। পুরনো চিন্তাভাবনা লালন করে তরুণদের উপেক্ষা করা যুক্তিসঙ্গত নয়। তারা এখন অনেক বেশি মানবাধিকার সচেতন, গণতন্ত্রমুখী, দুর্নীতিবিরোধেী, সামাজিক সুবিচার প্রত্যাশী ও গতিশীল। সুতরাং তাদের সামনে রেখে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে

জুলাই বিপ্লবের মূল স্লোগান ছিল বৈষম্যমুক্ত একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। শেখ হাসিনা ও তার ফ্যাসিবাদী সরকার সব রাষ্ট্রীয় কাঠামো এমনভাবে দূষিত করেছিল যেখানে ন্যায়বিচার, আইনের শাসন, মানবিক মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত হয়েছিল। গণতন্ত্রের নামে নির্বাচনী প্রহসন ও বিশ্বাসঘাতকতা ছিল তাদের স্থায়ী নীতি ও আচরণ।

শুধু বিগত সাড়ে ১৫ বছরের শাসন নয়, বস্তুতপক্ষে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর বিগত ৫৩ বছরে জনআকাক্সক্ষা সত্যিকার অর্থে অর্জন করা যায়নি। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ছিল স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম আকাক্সক্ষা। কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমান ক্ষমতা গ্রহণের মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় বাকশাল প্রতিষ্ঠা করে গণতন্ত্রকে সমূলে নির্বাসনে পাঠান। এ সময়ে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের তরুণদের নেতৃত্বের মাধ্যমে বাকশালবিরোধী সংগ্রাম দানা বেঁধে ওঠে। পরে একটি রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সামরিক বাহিনীর সদস্যরা দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার ব্যবস্থা করেন। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে দেশে একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরে আসে। কিন্তু তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ক্ষমতালোভী জেনারেল এরশাদ বন্দুকের নলে নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে উৎখাত করেন। স্বৈরাচারী এরশাদের ৯ বছরের শাসনের অবসানে ছাত্র-তরুণসমাজ কার্যকর ভূমিকা পালন করে। লক্ষণীয় যে, দেশের ক্রান্তিকালে বিশেষ করে যখন বাকস্বাধীনতা ও গণতন্ত্র হুমকিতে পড়েছে, তখন ছাত্র-তরুণসমাজ সাহসিতার সাথে জাতিকে উদ্ধারে এগিয়ে এসেছে। ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবেও তারা সম্মুখ সারিতে ছিলেন।

ছাত্র-তরুণদের এরূপ ভূমিকা শুধু বাংলাদেশে নয়, পৃথিবীর বহু দেশে ঐতিহাসিক পরিবর্তনগুলো তাদের নেতৃত্বে হয়েছে। পতিত স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পলায়নের পরে বিপ্লবী শিক্ষার্থীরা নোবেলজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সরকার প্রধান হিসেবে ক্ষমতায় বসান। তিনি তা নির্দ্বিধায় প্রকাশও করেছেন। ধন্যবাদ, ছাত্র-তরুণদের যে একটি সঙ্কটময় মুহূর্তে তারা সঠিক ব্যক্তিকে বেছে নিয়েছিলেন। বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় ড. ইউনূসকে দায়িত্ব প্রদানের পেছনে ছাত্র-তরুণদের একটি নির্ভেজাল অভিপ্রায় ছিল। আর সেটি হচ্ছে স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদের স্থলে এমন রাষ্ট্রকাঠামো প্রতিস্থাপন করা যেখানে গণতন্ত্র, সাম্য, সামাজিক সুবিচার ও মানবিক মর্যাদাসম্পন্ন নীতির প্রতিফলন ঘটবে। এখানে প্রথমে আসে মানবিক মর্যাদা ক্ষুণ্ন করে মানবাধিকার লঙ্ঘনের মাধ্যমে যারা হাজার হাজার নিরীহ মানুষকে হতাহত করেছে; সেসব অপরাধীর বিচার করা। আমরা লক্ষ করছি যে, সরকার এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারের জন্য একটি আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছে। সম্প্রতি আরো একটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে। সন্দেহ নেই যে, ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনা সরকারের যারা মানবতাবিরোধী অপরাধের সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন সরকার তাদের বিচারের পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে মনে রাখা দরকার, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে বিচারের কতগুলো প্রক্রিয়াগত ধাপ রয়েছে; যা অনুসরণ করা বাধ্যতামূলক। চাইলে এক বা একাধিক আইনিপ্রক্রিয়া এড়িয়ে যাওয়া যায় না। ঔপনিবেশিক আইনি কার্যক্রমে দীর্ঘসূত্রতা আমাদের বিচার-ব্যবস্থায় প্রচলিত রয়েছে, যা সহসা দূর করা যাবে না। আমাদের ধারণা, সংশ্লিষ্ট সবাই বিষয়টি উপলব্ধি করেন। তবে কোনো পর্যায়ে উদ্দেশ্যমূলকভাবে কেউ বিলম্ব করার চেষ্টা করলে তা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা আশা করব, সংশ্লিষ্ট আদালত ও বিচারপ্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করবেন। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হলো, চব্বিশের জুলাই বিপ্লবকালে ও বিগত ১৬ বছরে যারা বিভিন্ন ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধের সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন তাদের আটক করার ব্যাপারে নানাবিধ শৈথিল্যের অভিযোগ বারবার উত্থাপিত হয়েছে। অনেককে পালিয়ে যেতে ছাড় দেয়া হয়েছে বা সহযোগিতা করা হয়েছে। সাম্প্রতিককালে ছাত্র-তরুণরা এ বিষয়ে তাদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছেন। তাদের সংক্ষুব্ধ হওয়ার যথেষ্ট কারণ ও যৌক্তিকতা রয়েছে। পতিত সরকারের কোনো একটি লোকের মুখেও কোনো প্রকার অনুশোচনা বা লজ্জার প্রকাশ দেখা যাচ্ছে না। বরং তারা প্রতিবেশী দেশের সহায়তায় নানাবিধ অপকৌশলে বর্তমান সরকার তথা দেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকার যদি ষড়যন্ত্রকারীদের প্রতিহত করতে না পারে, তাহলে বিপ্লব ব্যর্থ হতে পারে। সেই সাথে দেশে আবার একটি বিপর্যয় আসতে পারে বলে বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সতর্কবাণী উচ্চারণ করছেন। সুতরাং এ ক্ষেত্রে জাতীয় ঐক্য হচ্ছে একটি মৌলিক হাতিয়ার। দ্বিতীয়ত, সরকারের পক্ষ থেকে আরো শক্তভাবে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার কৌশল গ্রহণ করা। তৃতীয় হচ্ছে, ছাত্র-তরুণদের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলা।

দুঃখজনক হলেও সত্য যে, জুলাই বিপ্লবের সময়কালে ছাত্রদের মধ্যে যে ঐক্য গড়ে উঠেছিল তা সাম্প্রতিক সময়ের কিছু ঘটনা থেকে এটা মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে যে, আগের মতো সেই ঐক্য আর নেই। রাজনৈতিক দল গঠনের অনেক ভালো দিক থাকলেও তা যে জাতির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির একটি কারণ তা অস্বীকার করা যায় না। ছাত্ররা একটি দল করার সাথে সাথে বিভিন্ন মত ও পথের সূচনা হয়েছে। তবে আমরা আশা করব , জাতির যে কোনো ক্রান্তিকালে দলমতের ঊর্ধ্বে ওঠে ছাত্র-তরুণরা আবার ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসবেন।

জুলাই বিপ্লবের সময়কালে নেতৃত্বদানকারী ছাত্রনেতাদের সততা, অঙ্গীকার ও দেশপ্রেম নিয়ে ইতোমধ্যে কিছু প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে। জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী বক্তৃতা-বিবৃতিও তাদের দিক থেকে আসছে; যা ঐক্য ধরে রাখার ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি করছে।

জুলাই বিপ্লবের আরেকটি আকাক্সক্ষা ছিল, সাম্য ও সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠা করা। কাজটি মোটেই সহজ নয়। এর কোনো সংক্ষিপ্ত পথও নেই। এজন্য প্রয়োজন সামগ্রিক রাষ্ট্রকাঠামো ও প্রতিষ্ঠানের আমূল সংস্কার ও গতিশীল সিস্টেম প্রবর্তন করা। বিগত পতিত সরকার তাদের ক্ষমতা ও শোষণের পথ সুদৃঢ় করতে রাষ্ট্রের মূলনীতি, শাসনকাঠামো, বিচার প্রশাসন সব কিছু দলীয়করণ তথা ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। একে সঠিক জায়গায় প্রতিস্থাপনে দরকার আমূল সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা। অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কারের লক্ষ্যে সংবিধান, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, নির্বাচনব্যবস্থা, দুর্নীতি দূরীকরণ ও পুলিশ সংস্কারে প্রথম ধাপে মোট ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করে। এসব কমিশন ইতোমধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করেছে। এ ছাড়াও আরো কয়েকটি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছিল; এগুলোও প্রতিবেদন দাখিল করেছে। সরকার প্রথম ধাপের ছয়টি সংস্কার কমিশনের প্রধান/প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করেছে। এ কমিশন ইতোমধ্যে বহু রাজনৈতিক দলের সাথে মতবিনিময় করেছে। এর মধ্যে প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দল ছাড়াও ছোটখাটো দলও রয়েছে। দেশের রাজনৈতিক দলগুলো জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সাথে আন্তরিকতার সাথে আলোচনা করছে জানতে পেরে সরকারের প্রধান উপদেষ্টা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। আশা করা যায়, রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে এক ধরনের ঐকমত্যে উপনীত হতে পারবে। ফলে জুলাই বিপ্লবের একটি সম্মিলিত ঘোষণাপত্র তৈরি করা সম্ভব হবে।

ছাত্রসমাজ নিজ উদ্যোগে দ্রুত বিপ্লবের একটি ঘোষণাপত্র প্রকাশ করার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছিল। কিন্তু সরকার বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে ঘোষণাপত্র প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়। এটি যথার্থ সিদ্ধান্ত ছিল। কারণ ঐকমত্যের ভিত্তিতে ঘোষণাপত্র তৈরি না হলে এ নিয়ে বিতর্ক অবিরাম চলতে থাকত, যা মোটেই কাম্য হবে না। সম্মিলিত ঘোষণাপত্রে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট সঠিকভাবে তুলে ধরা, দেশের জন্য সবার মতামতের ভিত্তিতে একটি টেকসই সংবিধান রচনা, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে বিভিন্ন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান বিশেষত নির্বাচনব্যবস্থা ঢেলে সাজানো, প্রশাসন জনমুখী করা, স্বাধীন বিচার বিভাগ নিশ্চিত করা এবং নাগরিকদের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার তুলে ধরা হবে। এসব কাজ সহজ নয়। কেউ কেউ বিষয়টি হালকাভাবে দেখছেন। সংস্কার কমিশনগুলো বেশ দ্রুততর সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করেছে। এরা একটি ঐতিহাসিক দায়িত্ব সম্পাদন করেছেন। তবে সেগুলো পর্যালোচনা ও সব অংশীজনের সাথে আলোচনা করে বাস্তবায়নের কাজটি হাতে নেয়া এতটা সহজ নয়। সাধারণভাবে দেশের নাগরিকসমাজ এবং বিশেষভাবে রাজনৈতিক দলগুলো বিষয়টি গভীরভাবে পর্যালোচনা করবেন বলে আশা করা যায়। কেউ কেউ বলে থাকেন, মৌলিক সংস্কারগুলো দ্রুত সম্পন্ন করে নির্বাচন দেয়া প্রয়োজন। কিন্তু মৌলিক সংস্কারগুলো চিহ্নিত করা এবং তা স্বল্পমেয়াদে বাস্তবায়ন করার কাজটি কত সময়ের মধ্যে করা যাবে তার একটি রোডম্যাপ তৈরি করা প্রয়োজন। সরকার এ ব্যাপারে দ্রুত কাজ করবে বলে জনগণ আশা করে।

জাতীয় সংসদ নির্বাচন একটি মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ কাজ। পতিত সরকার বিগত তিনটি নির্বাচন যেভাবে কলুষিত করেছে তা এককথায় রাজনৈতিক প্রতারণা ও নৈতিক স্খলনের প্রকৃষ্ট নমুনা। তারা তাদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য দলীয় জনবল নিয়োগ ও পদায়ন, আইনকানুন ও বিধিবিধানের সংশোধন করেছিল। ইভিএম মেশিন ক্রয়ে হাজার হাজার কোটি টাকার অপচয় করেছিল। নির্বাচনের নামে যে অরাজকতা ও অনিয়ম তৈরি হয়েছিল তা থেকে মুক্ত হয়ে একটি স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক নির্বাচন কমিশন এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা জাতির জন্য অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু কাজটি করতে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার প্রয়োজন। সেগুলো না করে আগের আইনি কাঠামো ও সাংগঠনিক ব্যবস্থার আওতায় নির্বাচন করা হলে তা কাঙ্ক্ষিত সুফল নাও দিতে পারে। তাই তাড়াহুড়ো নয়, রাষ্ট্রকাঠামোর মৌলিক ক্ষেত্রগুলো সংস্কার করতে যৌক্তিক সময় নেয়া সবার জন্য ভালো হবে বলে আমাদের কাছে মনে হয়েছে। সমাজে এরূপ লোকের অভাব নেই যারা জাতীয় স্বার্থের চেয়ে সঙ্কীর্ণ ব্যক্তিস্বার্থ প্রাধান্য দেন। আবার বহিঃশক্তির স্বার্থে দালাল হিসেবে কাজ করার লোকেরও কমতি নেই। সুতরাং দেশপ্রেমিক সব মহলের জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করা প্রয়োজন।

তরুণদের আচরণ ও প্রত্যাশা কোনোভাবে গুরুত্বহীন মনে করা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। আজকের ডিজিটাল জগতে তরুণরা বহু দেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। উদ্ভাবন ও সৃজনশীলতায় তারা জ্যেষ্ঠ ও প্রবীণদের অতিক্রম করে যাবেন এটাই স্বাভাবিক হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। ইন্টারনেট তথা ডিজিটাল সেবা সহজলভ্য হওয়ায় মানুষ আগের চেয়ে বহুগুণ এগিয়ে গেছে। বিশেষ করে তরুণরা অনেক বেশি অগ্রসর। প্রবীণরা ক্রমান্বয়ে পিছিয়ে পড়ছেন। পুরনো চিন্তাভাবনা লালন করে তরুণদের উপেক্ষা করা যুক্তিসঙ্গত নয়। তারা এখন অনেক বেশি মানবাধিকার সচেতন, গণতন্ত্রমুখী, দুর্নীতিবিরোধেী, সামাজিক সুবিচার প্রত্যাশী ও গতিশীল। সুতরাং তাদের সামনে রেখে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।

তবে তরুণদেরও যে সীমাবদ্ধতা রয়েছে তা তাদের উপলব্ধি করতে হবে। সব ক্ষেত্রে আবেগ-উচ্ছ্বাস ভালো ফল বয়ে আনে না। কখনো কখনো যুক্তিবোধ্য ও বাস্তবতা মেনে নিতে হয়। প্রবীণদের অভিজ্ঞতার বিকল্প নেই। সুতরাং প্রবীণদের উপেক্ষা করার মানসিকতা কল্যাণ বয়ে আনবে না। আবার এটাও মনে রাখা দরকার, মানবিক দুর্বলতা সবার মধ্যে রয়েছে। অর্থ ও ক্ষমতার লোভ বড় মারাত্মক। ক্ষমতার অহঙ্কার আরো বেশি খারাপ। বিশেষ করে শত্রুর মেকাবেলায় সুদৃঢ় জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা এবং তা ধরে রাখতে অহংবোধ ও লোভ পরিহার করতে হবে।

লেখক : গবেষক ও সাবেক সচিব
[email protected]