ভারতের রাজনীতিতে রীতিমতো বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দিয়েছেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্টালিন। সম্প্রতি তিনি তামিলনাড়ুকে একটি স্বশাসিত রাজ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার বিষয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করেছেন। কমিটিতে আছেন সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি কুরিয়ান জোসেফ এবং দু’জন অভিজ্ঞ আইএস অফিসার অশোক শেঠ এবং এম ইউ নাগরাজন। কমিটি গঠনের মূল লক্ষ্য হলো- তামিলনাডুর স্বায়ত্তশাসন অর্জনের রূপরেখা তৈরি করা, তামিলনাড়ুকে অর্থনৈতিক, প্রশাসনিক ও সাংস্কৃতিক স্বায়ত্তশাসন এবং রাজ্যতালিকায় আরো বেশি ক্ষমতা দেয়ার প্রস্তাবনা তৈরি করা। অর্থাৎ এমন আর্থিক স্বায়ত্তশাসন, যেখান থেকে পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি উঠবে। এই ঘোষণাতে শুধু তামিলনাড়ু নয়; পুরো ভারতের রাজনৈতিক মহল হতচকিয়ে গেছে। তারা ভাবছেন, তামিলনাড়ু কি ভারত থেকে আলাদা হতে চাইছে? যেমন- জম্মু-কাশ্মিরে একসময় নিজস্ব সংবিধান, আলাদা পতাকা এমনকি স্বাধীন প্রশাসনিক কাঠামো ছিল। তামিলনাড়ু কি সেই পথেই হাঁটছে?
অসমতা ও অভিযোগের পাহাড়
মুখ্যমন্ত্রী স্টালিনের ভাষ্য অনুযায়ী, ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম জিডিপি-সম্পন্ন রাজ্য তামিলনাড়ু কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে সুবিচার পাচ্ছে না। তিনি অভিযোগ করে বলেন, তামিলনাড়ু এক টাকা আয় করে দিল্লিকে দেয়; কিন্তু দিল্লি ফেরত দেয় মাত্র ২৯ পয়সা। শুধু এই একটি নয়, অভিযোগের তালিকা দীর্ঘ। স্টালিন বলেন, তার রাজ্যে হিন্দি ভাষা চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা হচ্ছে, সবকিছুতে কেন্দ্রের চাপাচাপি। তার অভিযোগ, কেন্দ্রের নীতিনির্ধারণে রাজ্যের মতামত উপেক্ষা করা হচ্ছে। কেন্দ্র তার বাজেট বরাদ্দে তামিলনাড়ুকে বঞ্চিত করছে। স্টালিনের দাবি স্পষ্ট, তিনি তামিলনাড়ুর স্বায়ত্তশাসন চাইছেন। এই দাবি নিয়ে দেশজুড়ে শুরু হয়েছে চরম বিতর্ক। সত্যিই কি তামিলনাড়ু পৃথক হওয়ার রোডম্যাপ বানাচ্ছে নাকি বিধানসভায় জেতার জন্য নির্বাচনী কৌশল আঁটছে অথবা এর পেছনে কি রয়েছে গভীর কোনো আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র?
তামিলনাড়ু স্বায়ত্তশাসন চায়
তামিলনাড়ু দীর্ঘ দিন ধরে ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর মধ্যে বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে সোচ্চার। তামিলনাড়ুর রয়েছে স্বতন্ত্র ভাষা, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য ও অর্থনৈতিক অবকাঠামোর স্বাতন্ত্র্য। তামিলনাড়ু ঐতিহাসিকভাবে ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর মধ্যে রাষ্ট্রীয় অধিকারের জন্য লড়ছে, অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে, যার ফলে কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ককে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করার নতুন প্রচেষ্টা দেখা দিয়েছে। তামিলনাড়ুর স্বায়ত্তশাসনের আকাঙ্ক্ষা দ্রাবিড় আন্দোলন থেকে উৎপন্ন। ষাটের দশকের হিন্দিবিরোধী আন্দোলন ভাষাগত সমজাতীয়করণের বিরুদ্ধে রাজ্য আওয়াজ তুলেছিল, যা তামিলনাড়ুর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতিকে আরো শক্তিশালী করে। গোটা তামিলনাড়ুজুড়ে ১৯৩৭ সালের ব্রিটিশ ভারতে বিদ্যালয়ে হিন্দি ভাষা চালু করার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। মাতৃভাষা হিন্দি এবং ইংরেজি এই নীতির বিরোধিতা করে মুখ্যমন্ত্রী স্টালিন কিন্তু স্পষ্ট করে বলেছিলেন, তামিলনাড়ুতে হিন্দি বাধ্যতামূলক করা যাবে না। মুখ্যমন্ত্রী স্টালিন মনে করেন, ভাষাশিক্ষা পছন্দের বিষয়, চাপিয়ে দেয়ার নয়।
তামিলরা যেসব বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে
তামিলনাড়ুর মূল স্বায়ত্তশাসনের দাবি কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রকে ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে। যেমন- ১. শিক্ষানীতি : রাজ্য ধারাবাহিকভাবে কেন্দ্রীভূত শিক্ষানীতির বিরোধিতা করেছে, বিশেষত National Eligibility cum Entrance Test (NEET), জাতীয় যোগ্যতা তথা প্রবেশিকা পরীক্ষা; বলা হচ্ছে- শিক্ষা একটি রাজ্যের বিষয় হওয়া উচিত। ২. আর্থিক স্বাধীনতা : তামিলনাড়ু আর্থিক-কেন্দ্রীকরণ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে, বিশেষত পণ্য ও পরিষেবা কর আরোপের পরে। রুপির যে চিহ্ন ব্যবহার করা হয় সেই চিহ্নের পরিবর্তে তামিল ভাষায় রুপির চিহ্ন ব্যবহারের সিদ্ধান্ত পর্যন্ত গ্রহণ করে ফেলেছেন স্টালিন। এতে তামিল জাতীয়তাবাদী আবেগ জাগিয়ে তোলা হলেও ভারতের সার্বভৌম ইমেজে আঘাত করা হয়েছে। ৩. রাজনৈতিক স্বায়ত্তশাসন : রাজ্য আইন অনুমোদনে রাজ্যপালের বিলম্ব নিয়ে তামিলনাড়ু সরকার প্রায়ই কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে দ্বন্দ্বে জড়ায়। সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক রায়, যাতে ১০টি বিলে সম্মতি বিলম্বিত করায় তামিলনাড়ুর রাজ্যপালের সমালোচনা করা হয়, রাজ্য ও কেন্দ্রের ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার প্রতিফলন।
তামিলনাড়ু এই সাহসী পদক্ষেপ নেয়ার সাথে সাথে তেলেঙ্গানার মতো শক্তিশালী আঞ্চলিক অন্যান্য রাজ্যও বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসনের কথা বলছে। তামিলনাড়ুর ধাক্কা ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা। আগামী দিনগুলো নির্ধারণ করবে যে, তামিলনাড়ুর চেষ্টা অর্থবহ যুক্তরাষ্ট্রীয় সংস্কারের দিকে এগোবে নাকি রাজনৈতিক সঙ্ঘাতের দিকে বা স্বাধীন তামিলনাড়ুর দিকে ঠেলে দেবে।
কেন্দ্রের ওপর স্টালিন নাখোশ
স্টালিনের দাবি ছিল তামিলনাড়ুর মেডিক্যাল কলেজগুলোতে শুধু বোর্ড পরীক্ষার পার্সেন্টেজের ভিত্তিতেই ভর্তি নেয়া। এই দাবিতে তিনি সব বিধায়কদের দিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে চিঠি পাঠান। যদিও রাষ্ট্রপতি সেটি গ্রহণ করেননি। এভাবেই তামিল প্রাদেশিকতাকে উসকে দিয়ে স্টালিন তামিল ভোটের বড় অংশ নিজের দিকে টেনেছেন। তিনি আরো একটি ইস্যুতে কেন্দ্রকে নিশানা করছেন সেটি হলো- রাজ্যপালের ভূমিকা। সম্প্রতি তামিলনাড়ুর রাজ্যপাল আরএন রবি স্থানীয় বিধানসভায় পাস হওয়া মোট ১২টি বিলের মধ্যে ১০টি বিলই ফিরিয়ে দিয়েছেন, কেবল দু’টি বিল রাষ্ট্রপতির কাছে সইয়ের জন্য পাঠিয়েছেন। সংবিধানের ২০০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাজ্যপালকে রাজ্য বিধানসভা এবং মন্ত্রিসভার পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করতে হয়। যদি কোনো বিল ফেরত পাঠানো হয় এবং তা আবারো বিধানসভা থেকে পাস হয়ে আসে তখন রাজ্যপালের নৈতিক কর্তব্য সেই বিলকে আইনে পরিণত করে দেয়া। কিন্তু তামিলনাড়ুর রাজ্যপাল আরএন রবি বিলগুলো দীর্ঘ দিন নিজের কাছে রেখে দেন, এই নিয়ে মামলা সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়ায়। আদালত স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, রাজ্যপালের এমন কোনো ক্ষমতা নেই। অবশেষে আদালতের নির্দেশে তিনি এই বিলগুলোয় সই করতে বাধ্য হন। এই ঘটনার সুযোগে স্টালিন কেন্দ্রীয় প্রতিনিধির ভূমিকা নিয়ে জনমনে সন্দেহের বাতাবরণ তৈরি করতে পেরেছেন। তিনি বলছেন, কেন্দ্র রাজ্যে কাজ করতে দিচ্ছে না। তাই নিজেদের অধিকারের জন্য আলাদা পথে হাঁটতে হবে।
স্বায়ত্তশাসনের চাপ দিচ্ছে অন্যরাও
বেশ কয়েকটি ভারতীয় রাজ্য বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসনের জন্য বিভিন্ন মাত্রায় আগ্রহ প্রকাশ করেছে, প্রায়ই ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক কারণে এরা স্বায়ত্তশাসনের দাবি তুলছে। এর মধ্যে সামনের কাতারে রয়েছে- ১. পাঞ্জাব : পাঞ্জাবের স্বায়ত্তশাসন আন্দোলনের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে, বিশেষত আনন্দপুর সাহিব রেজুলিউশনের (১৯৭৩) মাধ্যমে, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক নীতিসহ রাষ্ট্রীয় বিষয়গুলোর ওপর আরো বেশি নিয়ন্ত্রণ চেয়েছিল। যদিও পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের দাবি হ্রাস পেয়েছে, আঞ্চলিক দলগুলো এখনো আরো বিকেন্দ্রীভূত শাসন সমর্থন করছে। ২. পশ্চিমবঙ্গ : পশ্চিমবঙ্গ পর্যায়ক্রমে বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসনের জন্য চাপ দিচ্ছে, বিশেষত আর্থিক বিষয়ে। রাজ্যটি গভর্নরের হস্তক্ষেপ এবং তার প্রশাসনকে প্রভাবিত করে এমন কেন্দ্রীয় নীতি নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ৩. তেলেঙ্গানা : ২০১৪ সালে অন্ধ্রপ্রদেশ ভেঙে তৈরি হওয়া তেলেঙ্গানা আরো আর্থিক স্বাধীনতা চেয়েছে, বিশেষ করে রাজস্ব ভাগাভাগি পদ্ধতির ক্ষেত্রে। রাজ্য সরকার মাঝে মধ্যে তার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে প্রভাবিত করে এমন কেন্দ্রীয় নীতি সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ৪. উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো (নাগাল্যান্ড, মিজোরাম, মনিপুর, আসাম, মেঘালয়, অরুনাচল প্রদেশ) : উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় এসব রাজ্য দীর্ঘ দিন ধরে স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন করে আসছে, যা প্রায়ই জাতিগত ও উপজাতি পরিচয়কে ব্যবহার করে সংগ্রাম করছে। ৫. জম্মু ও কাশ্মির : ২০১৯ সালে জম্মু ও কাশ্মিরকে বিশেষ মর্যাদা প্রদানকারী ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করার পরে কিছু স্বায়ত্তশাসিত বিধান পুনরুদ্ধার নিয়ে আলোচনা চলছে। কিছু রাজনৈতিক গোষ্ঠী বৃহত্তর স্বশাসনের পক্ষে সমর্থন অব্যাহত রেখেছে। এই আন্দোলনগুলো ভারতের বৈচিত্র্যময় যুক্তরাষ্ট্রীয় ভূদৃশ্যকে প্রতিফলিত করে, যেখানে রাজ্যগুলো তাদের অনন্য ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন মাত্রার স্বায়ত্তশাসন চায়।
কাশ্মিরে ৯৫ শতাংশ মুসলমান। ভারত সরকার সেখানে প্রায় ৮৫ হাজার হিন্দুকে বসতি নির্মাণ করতে টাকাপয়াসা ও জমিজমা বন্দোবস্ত দেয়ার কর্মসূচি নিয়েছে। অথচ কাশ্মিরে ছিল স্বায়ত্তশাসন, নিজেদের সংবিধান, পতাকা। মোদি সরকার সব বাতিল করে কেন্দ্রীয় শাসন জারি করে কয়েক বছর ধরে অমুসলিমদের বসতি দেয়ার এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করছে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, পহেলগামের ঘটনা তারই প্রতিফলন।
তামিলনাড়ুর বর্তমান জটিল অবস্থা
এই মুহূর্তে তামিলনাড়ুর রাজনৈতিক অবস্থাটা জটিল। ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী, রাজ্যের মোট জনসংখ্যা প্রায় সাত কোটি ২১ লাখ। যেখানে পুরুষ এবং মহিলা মোটামুটি সমানসংখ্যক এবং সাক্ষরতার হার ৮০ শতাংশ। তামিলনাড়ুর ৮৭ শতাংশ মানুষ হিন্দু হলেও এখানে জাতিগত এবং সাংস্কৃতিক পরিচয়ের ক্ষেত্রে দ্রাবিড় পরিচয় রাজনৈতিক এবং সামাজিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উত্তর ভারতের ব্রাহ্মণ্যবাদী আচার আচরণের প্রতি তামিলনাড়ু দ্রাবিড় সংস্কৃতির বিরোধিতা আর এই বিরোধিতা থেকেই জন্ম নিয়েছিল দ্রাবিড় আন্দোলন, যার মূলে ছিল একটি নন ব্রাহ্মণিক সমাজকাঠামোর স্বপ্ন, যাকে বলা হয় ডি ব্রাহ্মণাইজেশন। এই আন্দোলনের রাজনৈতিক উত্তরাধিকারী হলো বর্তমানের ক্ষমতাসীন দল ডিএমকে।
জনসংখ্যার ভিত্তিতে সংসদীয় আসন সংখ্যা নির্ধারণ নিয়েও মুখ্যমন্ত্রী স্টালিন প্রশ্ন তুলেছেন। জনসংখ্যার ভিত্তিতে নতুন করে সংসদীয় আসন সংখ্যা নির্ধারণ করতে চাইছে কেন্দ্র, আর এই পদ্ধতিকেই বলা হচ্ছে ডিলিমিটেশন পদ্ধতি। এখানেই তামিলনাড়ু আশঙ্কা করছে যে, ডিলিমিটেশন কমিশন গঠনের পর যখন বর্তমান জনসংখ্যা অনুযায়ী আসন বণ্টন করা হবে তখন উত্তর ভারতের জনবহুল রাজ্যগুলো যেমন- বিহার, উত্তরপ্রদেশ অনেক বেশি সংসদীয় আসন সংখ্যা পাবে অন্য দিকে দক্ষিণ ভারতের জনসংখ্যা কম হওয়ার জন্য তাদের সংসদীয় আসন সংখ্যা কমে যাবে- তামিলনাড়ুও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আগামী নির্বাচন স্টালিনের জন্য অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং হতে যাচ্ছে। তার প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হচ্ছে এআইএডিএমকে, যেটি একসময় জয়ললিতার নেতৃত্বে পরিচালিত হতো। এবার বিজেপি এবং এআইডিএমকে একসাথে বিধানসভা নির্বাচনে নামছে এবং অমিত শাহ ঘুঁটি চালছেন।
ফেডারালিজমে ভাঙন
ভারত একটি অখণ্ড এবং অবিভাজ্য রাষ্ট্র। এর অর্থ রাজ্যগুলো প্রশাসনিকভাবে আলাদা হলেও দেশের সার্বভৌমত্ব এবং সংহতিকে বিভক্ত না করা। ভারতের সংবিধান স্পষ্টভাবে বলে দেয়- কোনো রাজ্য কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনতা থেকে বিচ্ছিন্ন হতে পারে না। প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্রনীতি এবং জাতীয় যোগাযোগের মতো মৌলিক এবং কৌশলগত বিষয়গুলো একান্তভাবে কেন্দ্রীয় সরকারেরই অধীনে থাকবে। কিন্তু ভারতের কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক শুধু নিয়ন্ত্রণের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে নয়; বরং সহযোগিতার ভিত্তিতে পরিচালিত হয়, যাকে বলা হয় সহযোগী ফেডারালিজম। এই ধারায় রাজ্যগুলো নিজ নিজ রাজ্য তালিকাভুক্ত বিষয়, যেমন- স্বাস্থ্য-শিক্ষা-কৃষিতে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ পায়। রাজ্যের হাতে নীতিনির্ধারণের ক্ষমতা রয়েছে একই সাথে কেন্দ্রেরও উচিত রাজ্যতালিকায় অতিরিক্ত হস্তক্ষেপ না করা। রাজ্যগুলোকেও সংবিধানের সীমা অতিক্রম করে এমন কোনো পদক্ষেপ নেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে, কারণ দেশের ঐক্য অখণ্ডতা নিরাপত্তাকে নিয়ে তামিলনাড়ু সরকারের সাম্প্রতিক বক্তব্য এবং পদক্ষেপ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন ভারতের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব ও গ্রন্থকার