বিশ্বাসঘাতকতার পরিণতি

প্রকৃতপক্ষে, ইস্কান্দার মির্জার নোংরা রাজনৈতিক চক্রান্তের শিকার হয়েছিলেন পূর্ববাংলার মানুষ। ইতিহাসের গতিপথ মূল্যায়ন সহজ নয়, কারণ এখনো বহু সত্য আড়ালে রয়ে গেছে। যদি আমরা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে ব্যর্থ হই, তাহলে অনেক বিষয় আমাদের অজানা থেকে যাবে, যা ভবিষ্যতের জন্য অনাকাঙ্ক্ষিত।

বাংলার প্রথম বিশ্বাসঘাতক মীরজাফর আলী খান সম্পর্কে সবার জানা। বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদদৌলার সেনাপ্রধান হিসেবে পলাশীর যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। যেখানে বিরোধী ইংরেজ বাহিনীর সেনাপতি লর্ড ক্লাইভের ছিল মাত্র দুই হাজার ৬০০ সৈন্য, যার মধ্যে মাত্র ৬০০ ইউরোপীয় আর বাকি এক হাজার ৯০০ জন ছিলেন বাংলা, মাদ্রাজ, বোম্বাইয়ের। নবাবের পক্ষের বিশাল বাহিনী ক্লাইভের সেনাদলকে হারিয়ে দিতে যথেষ্ট ছিল। দুঃখের বিষয় নবাবের সেনাপতি মীর জাফর ইংরেজদের সাথে ষড়যন্ত্র করে তার দলবলসহ রণাঙ্গনে ছবির মতো দাঁড়িয়ে নবাবের পরাজয় উপভোগ করছিলেন। তার এ চরম বিশ্বাসঘাতকতার ফলস্বরূপ সমগ্র জাতি শৃঙ্খলিত হয় প্রায় ২০০ বছরের পরাধীনতার ঔপনিবেশিক অক্টোপাসে।

একইভাবে, একই রকম ষড়যন্ত্র ভিন্ন মাধ্যমে করেছিলেন বাঙালি দ্বিতীয় মীরজাফর যিনি মীরজাফরের (সরাসরি সপ্তম বংশধর) এবং পাকিস্তানের প্রথম রাষ্ট্রপতি বাঙালি মেজর জেনারেল ইস্কান্দার মির্জা। পূর্বপাকিস্তান তথা বাঙালিদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতার কারণে বাংলাদেশীরা পাকিস্তানে তাদের প্রাপ্য রাজনৈতিক অংশ থেকে বঞ্চিত হয়। তার চূড়ান্ত পরিণতি ১৯৭১ সালের যুদ্ধ বিপুল রক্তপাত। তিনি কত বড় বিশ্বাসঘাতক ছিলেন আসুন তা জেনে নেয়া যাক।

সৃষ্টির এক বছরের মধ্যে ১৯৪৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ইন্তেকাল করেন। এরপর থেকে শুরু হয় পাকিস্তানে প্রাসাদ রাজনীতি। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার সময় ইস্কান্দার মির্জা ছিলেন অবিভক্ত ভারতীয় সেনাবাহিনীতে উচ্চপদে অধিষ্ঠিত গুটিকয়েক অফিসারের অন্যতম একজন। একে তো সম্ভ্রান্ত পরিবারের এবং প্রশাসনিক ক্ষেত্রেও অসাধারণ দক্ষতার দরুন সেই সময় লিয়াকত আলী খানের দৃষ্টি কাড়েন তিনি। আর তাই পাকিস্তান সৃষ্টির পরপর প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান ইস্কান্দার মির্জাকে প্রথম প্রতিরক্ষা সচিব হিসেবে নিয়োগ দেন। লিয়াকত আলী খানের বিশ্বস্ততার সুযোগ নিয়ে রাজনীতিতে পিছন থেকে ষড়যন্ত্রের কলকাঠি নেড়েছেন মির্জা। তিনি নিজে বাঙালি হয়েও সবসময় বাঙালিবিদ্বেষ পোষণ করতেন। যার প্রথম দৃষ্টান্ত হলো আইয়ুব খানের সিনিয়র বাঙালি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অসাধারণ দক্ষতা দেখানো মেজর জেনারেল ইসফাকুল মজিদের পরিবর্তে আইয়ুব খানকে সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ।

প্রতিরক্ষা সচিব হিসেবে ইস্কান্দার মির্জার ক্রমাগত সুপারিশে লিয়াকত আলী খান আইয়ুব খানকে ১৯৫১ সালের ১৭ জানুয়ারি সেনাবাহিনীর প্রধান করেন। অথচ এ পদের জন্য সবচেয়ে যোগ্য মানুষটি ছিলেন জেনারেল ইসফাকুল মজিদ। শুধু বাঙালি হওয়ায় মির্জা তাকে অযোগ্য হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করেন। এর মাধ্যমে বাঙালিদের সাথে প্রথম বিশ্বাসঘাতকতা শুরু করেন তিনি। সেদিন যদি ইসফাকুল মজিদ সেনাপ্রধান হতেন তাহলে হয়তো পাকিস্তানের ইতিহাস অন্যরকম হতে পারতো।

এখানে শেষ নয়। তৎকালীন পাকিস্তান রাজনীতি তার হাতের ইশারায় ক্ষণে ক্ষণে বাঁক পরিবর্তন করেছে, তিনি বাঙালিদের সাথে কতটা নোংরা খেলা খেলেছেন তা বোঝা যায় পরবর্তী ইতিহাস পর্যালোচনায়। ১৯৫১ সালে প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী আততায়ীর গুলিতে মৃত্যুর পর (বাঙালি) গভর্নর জেনারেল খাজা নাজিমউদ্দীন প্রধানমন্ত্রী হন। নতুন গভর্নর জেনারেল হন মালিক গোলাম মোহাম্মদ (পাঞ্জাবি)। গভর্নর জেনারেল মালিক গোলাম মোহাম্মদ ক্ষমতাবলে মাত্র দুই বছরের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দীনকে অপসারণ করে তার স্থলাভিষিক্ত করেন বগুড়ার চৌধুরী মোহাম্মদ আলীকে। এর মধ্যে ইস্কান্দার মির্জা, মালিক গোলাম মোহাম্মদের প্রিয়পাত্র হয়ে ওঠেন। অবশেষে ষড়যন্ত্রের পথে হেঁটে ২২ মে, ১৯৫৪ পূর্বপাকিস্তানের নতুন গভর্নর হন মির্জা। পূর্বপাকিস্তানে পা দিয়ে তিনি দম্ভভরে ঘোষণা করেন পাকিস্তানবিরোধী যে কোনো কাজ কঠোর হাতে দমনে সময় নেবেন না। প্রদেশের শান্তি প্রতিষ্ঠায় যদি শক্তি প্রয়োগের দরকার হয়, তবে কোনো ধরনের দ্বিধা ছাড়া তা করবেন। এর পরের দিন তার নির্দেশে ৪০০ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়।

গভর্নর জেনারেল গোলাম মোহাম্মদের শারীরিক অবস্থার ক্রমাগত অবনতি হতে থাকে। ফলে মির্জাকে ভারপ্রাপ্ত গভর্নর জেনারেল পদে নিয়োগ করা হয়। গভর্নর জেনারেল পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার পরপর মির্জা আঞ্চলিক বৈষম্য নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাথে দ্ব›দ্ব শুরু করেন, যদিও উভয়ে বাঙালি। বগুড়ার চৌধুরী মোহাম্মদ আলীকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেন। বাঙালি জাতির সাথে আবার বিশ্বাসঘাতকতা করেন, যদিও মোহাম্মদ আলী প্রধানমন্ত্রী হিসাবে অত্যন্ত দক্ষ ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কের দুর্দান্ত উন্নতি করেছিলেন। ভারপ্রাপ্ত গভর্নর জেনারেল ইস্কান্দার মির্জা ১৯৫৫ সালের ৬ অক্টোবর তার নিয়োগকর্তা অসুস্থ গোলাম মোহাম্মদকে অপসারণ করে নিজে সেখানে গভর্নর জেনারেল হিসেবে স্থলাভিষিক্ত হন।

দীর্ঘ কয়েক বছরের প্রচেষ্টায় ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের নতুন সংবিধান কার্যকর হয়। এর ক্ষমতাবলে গভর্নর জেনারেলের নাম রাখা হয় প্রেসিডেন্ট আর এভাবে পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মির্জা হন পাকিস্তানের প্রথম অনির্বাচিত বাঙালি প্রেসিডেন্ট। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, যখন পাকিস্তানের প্রথম সংবিধান তার কাছে স্বাক্ষরের জন্য উপস্থাপন করা হয় তখন মির্জা জোর দিয়েছিলেন, তিনি রাষ্ট্রের প্রধান না হলে এটি স্বাক্ষর করবেন না। তার ইচ্ছা পূরণ করা হয়েছিল।

১৯৫৬ সালে চৌধুরী মোহাম্মদ আলীর পদত্যাগের পর পঞ্চম প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন বাঙালি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। পাকিস্তানের ইতিহাসে এটি অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। কারণ একই সাথে রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর পদে দু’জন বাঙালি। সব বৈষম্য নিরসন করে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগঠনের সুবর্ণ সুযোগ আসে। কিন্তু এক বছর যেতে না যেতে ইস্কান্দার মির্জা পুনরায় নতুন ছক কষতে থাকেন, তুচ্ছ অজুহাতে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে পদত্যাগ করতে চাপ দেন প্রেসিডেন্ট ইস্কান্দার মির্জা। আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন সোহরাওয়ার্দী সরাসরি জবাব দেন তিনি পাকিস্তানের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী। তাকে সরানোর দরকার হলে পার্লামেন্টের সভা ডেকে অনাস্থা ভোটের ব্যবস্থা করতে হবে, সেখানে পরাজিত হলে তিনি পদত্যাগ করবেন। প্রতি-উত্তরে প্রেসিডেন্ট ইস্কান্দার মির্জা তার সর্বশেষ অস্ত্র প্রয়োগ করে বলেন, হয় স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করুন, না হলে আপনাকে বরখাস্ত করতে বাধ্য হবো, রাষ্ট্রপতি হিসেবে এ ক্ষমতা আমার আছে। এরপর সোহরাওয়ার্দীর আর কিছু করার ছিল না। ক্ষমতার কাছে হেরে তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। আর এভাবে একের পর এক ষড়যন্ত্র করে ইস্কান্দার মির্জা প্রত্যেককে নিজের প্রয়োজনে ইচ্ছামাফিক অপসারণ করতে থাকেন।

যেখানে টানা তিনবার বাঙালি প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতায় বসানো হয়, সেখানে যদি সেই সময়ে তাদের ক্ষমতায় রাখা হতো তাহলে পুরো ক্ষমতা বাঙালি সংখ্যাগরিষ্ঠ পাকিস্তানের হাতে থাকতে পারতো। কমপক্ষে পরবর্তী ১৫-২০ বছর ধরে তারা সুষ্ঠুভাবে দেশ পরিচালনা করতে পারতেন। অথচ নিজে একজন বাঙালি হয়েও চক্রান্তের মাধ্যমে তাদের (পাকিস্তানের দু’জন বাঙালি প্রধানমন্ত্রীকে) ক্ষমতাচ্যুত করেন ইস্কান্দার মির্জা। তিনি যদি চক্রান্ত না করতেন তাহলে সেনাপ্রধান মজিদ এবং বাঙালি প্রধানমন্ত্রীর সাথে মোটামুটি সবকিছু বাঙালিদের পক্ষে থাকত। পরবর্তী বৈষম্যের জন্ম হতো না। কিন্তু ইস্কান্দার মির্জা বাঙালি হয়েও আমাদের ঠকিয়েছেন, তার পূর্বপুরুষ মীরজাফরের মতো বাঙালির সাথে বেঈমানি করেছেন।

এখানে শেষ নয়, যেখানে পাকিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাসে আইয়ুব খান কিংবা জুলফিকার আলী ভুট্টোর আসার কোনো কথা ছিল না সেখানে এ দু’জনকেও রাজনীতিতে যুক্ত করে পাকিস্তানের পরবর্তী ইতিহাসের পটপরিবর্তন করেন ইস্কান্দার মির্জা।

সেনাপ্রধান হিসেবে ছয় বছরের চাকরির পর, ১৯৫৭ সালে আইয়ুব খানের অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ইস্কান্দার মির্জার ইচ্ছাতে আইয়ুবের সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগকাল ফের বাড়ানো হয়। অন্যদিকে জুলফিকার আলী ভুট্টো ছিলেন মির্জার ঘনিষ্ঠ বন্ধু শাহনেওয়াজ ভুট্টোর ছেলে। মির্জা মাঝে মধ্যে পাখি শিকারে শাহনেওয়াজ ভুট্টোর লারকানার বাসভবনে বেড়াতে যেতেন। ভুট্টোর চালচলন ও বুদ্ধিমত্তা দেখে মির্জা মুগ্ধ হয়ে ১৯৫৭ সালে পাকিস্তান সরকারের মহাসচিব চৌধুরী মোহাম্মদ আলীর আপত্তি উপেক্ষা করে একটি প্রতিনিধিদলের সভাপতি করে ৩০ বছর বয়সী ভুট্টোকে ১৯৫৮ সালের গোড়ার দিকে (ইউএনসিএলওএস-আনক্লজ) সমুদ্র আইন সম্পর্কিত সম্মেলনে জেনেভাতে পাঠান। ভুট্টো জেনেভা থেকে প্রেরিত এক পত্রে ইসকান্দার মির্জাকে বলেন, ‘যখন পাকিস্তানের ইতিহাস লেখা হবে তখন ইস্কান্দার মির্জার নাম জাতির পিতা জিন্নাহরও আগে থাকবে।’ এই আলোচিত চিঠিতে ভুট্টো তোষামোদি প্রতিভার ভালো পরিচয় তুলে ধরেছেন । ইস্কান্দার মির্জা এবং জুলফিকার আলী ভুট্টো দু’জনের স্ত্রী ইরানি বংশোদ্ভূত হওয়ায় তাদের ঘনিষ্ঠতার একটি কারণ হতে পারে। তাদের ইরানি সংযোগ হয়তো কিছুটা প্রভাব ফেলেছিল, তবে ইস্কান্দার মির্জার ভুট্টোর প্রতি আনুকূল্যের মূল কারণ ছিল রাজনৈতিক। মির্জা ভুট্টোকে একজন উচ্চাকাক্সক্ষী এবং দক্ষ রাজনীতিবিদ হিসেবে দেখেছিলেন, যিনি তার স্বার্থ রক্ষা করতে পারেন। মির্জা ১৯৫৮ সালে ভুট্টোকে বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন, যা তার রাজনৈতিক উত্থানে সহায়ক হয়েছিল। তবে, যখন আইয়ুব খান মির্জাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেন, তখন ভুট্টো আইয়ুবের প্রতি অনুগত হন, কিন্তু পরে তার বিরুদ্ধেও অবস্থান নেন।

পরবর্তীতে ১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর ইস্কান্দার মির্জা শাসনতন্ত্র বাতিল করে জেনারেল আইয়ুব খানকে প্রধান সামরিক শাসক করে প্রথম সামরিক শাসন জারি করেন। সামরিক শাসক আইয়ুব খানকে প্রধানমন্ত্রী করে নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করেন। ওই মন্ত্রিসভায় ভুট্টোকে সামরিক দায়িত্বও দেন। আর এভাবে আইয়ুব এবং ভুট্টোকে তিনি পাকিস্তানের রাজনীতিতে যুক্ত করেন। আইয়ুব বুঝতে পারেন যে ক্ষমতা এখন তার হাতের নাগালে। এক বনে দুই বাঘ থাকতে পারে না। তাই আইয়ুব এবার তার স্বরূপে ফিরে আসেন। বাঙালিদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে যে আইয়ুবের পরামর্শে ক্ষমতা দখলে মনোনিবেশ করে পাকিস্তানের প্রথম সাংবিধানিক রাষ্ট্রপতি হিসেবে ৭ অক্টোবর ১৯৫৮ সালে সামরিক শাসন জারি করলেন এবং ক্ষমতা দখল করলেন। যে আইয়ুব উঠতে বসতে ইস্কান্দার মির্জাকে তোয়াজ করে চলতেন ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস! ইতিহাস বিশ্বাসঘাতকদের ক্ষমা করে না। ঠিক একইভাবে শুধু ২০ দিনের ব্যবধানে তাকেও ক্ষমতাচ্যুত করে ক্ষমতা দখল করলেন আইয়ুব খান। শুধু তাই নয়, তাকে এক কাপড়ে নিজ মাতৃভূমি থেকে লন্ডনে নির্বাসিত করেন। জীবনের শেষ সময় কাটল করুণভাবে। আর্থিকভাবে অসচ্ছল মির্জা লন্ডনে চিকিৎসা খরচ চালাতে না পেরে তার দ্বিতীয় স্ত্রীকে বলেছিলেন, ‘নাহিদ, আমার চিকিৎসা খরচ বহন করতে পারব না, সে সামর্থ্য আমার নেই। আমাকে মরতে দাও!’ এমনকি তার মৃত্যুর পর লাশটিও দেশে আসার অনুমতি দেননি তৎকালীন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান।

অথচ মির্জার হাতে সুযোগ ছিল, যে বাংলাকে তার পূর্বপুরুষ মীরজাফর ব্রিটিশের হাতে সোপর্দ করে বিশ্বাসঘাতকের তকমা পেয়েছিলেন, সেই বাংলাকে নতুনভাবে গড়ার। কিন্তু তিনি তা করেননি; বরং তিনি নিজে বাঙালি হয়েও পুনরায় মীরজাফরের মতো জঘন্য কাজ করেছেন। যে আইয়ুবের অধ্যায় পাকিস্তানের ইতিহাসে আসার কথা ছিল না, সেখানে একে একে দুইবার চাকরির মেয়াদ বাড়িয়ে সেনাপ্রধান করে গণতন্ত্র হত্যা করে সামরিক শাসন জারির মাধ্যমে পুরো ইতিহাস বদলে দিলেন। ভুট্টোকে মির্জাই সামনে আনেন।

প্রকৃতপক্ষে, ইস্কান্দার মির্জার নোংরা রাজনৈতিক চক্রান্তের শিকার হয়েছিলেন পূর্ববাংলার মানুষ। ইতিহাসের গতিপথ মূল্যায়ন সহজ নয়, কারণ এখনো বহু সত্য আড়ালে রয়ে গেছে। যদি আমরা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে ব্যর্থ হই, তাহলে অনেক বিষয় আমাদের অজানা থেকে যাবে, যা ভবিষ্যতের জন্য অনাকাঙ্ক্ষিত।

লেখক : সাবেক সহকারী নৌবাহিনী প্রধান ও উপ-উপাচার্য বিইউপি