অস্ট্রেলিয়ার অর্থনৈতিক সঙ্কটের শঙ্কা

চীন ও বাণিজ্যিক দাবাবোর্ড অস্ট্রেলিয়ার জন্য একটি কৌশলগত দুর্বলতা তৈরি করেছে। কয়েক বছর ধরে অস্ট্রেলিয়ার অর্থনীতি একক বাণিজ্য অংশীদার চীনের ওপর ব্যাপকভাবে ঝুঁকছে। লোহা বা কয়লা থেকে শুরু করে মদ, গরুর গোশত এবং শিক্ষা সবখানে চীন বৃহত্তম ক্রেতা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সব রফতানির প্রায় ৩০ শতাংশ চীনে যায়। কূটনৈতিক বিরোধ এবং সুরক্ষা উদ্বেগের কারণে চীনা বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার একটি তরঙ্গ শুরু হয়েছিল, যা মূল শিল্পগুলোর কোটি কোটি টাকার ক্ষতি করেছে। যদিও কিছু বিধিনিষেধ পরে শিথিল করা হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া ভারত, জাপান ও ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশগুলোর সাথে নতুন বাণিজ্য সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করেছে; কিন্তু এই সম্পর্কগুলো চীনের অর্থনৈতিক মধ্যাকর্ষণের সাথে মেলে না। এটি অস্ট্রেলিয়াকে অর্থনৈতিক নির্ভরতা এবং ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে আটকে ফেলেছে।

নয়া দিগন্ত গ্রাফিক্স

অস্ট্রেলিয়া একটি সম্পদশালী দেশ হিসেবে বিবেচিত। তবে দেশটি গভীর অর্থনৈতিক সঙ্কটের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে। দেশটিতে বেশ কিছু গুরুতর সমস্যা দানা বাঁধছে, যার লাগাম না টানলে কয়েক দশকের মধ্যে এটি সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক পতনের দিকে নিয়ে যাবে। এই সঙ্কট মূলত গড় অস্ট্রেলিয়ানদের উচ্চঋণ, স্থবির মজুরি, অনিয়ন্ত্রিত আবাসন ব্যয় এবং প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতার ফল।

বর্তমানে ৩০ লক্ষাধিক অস্ট্রেলিয়ান সময়মতো তাদের বিল পরিশোধ করতে হিমশিম খাচ্ছেন। ক্রেডিট কার্ডের ঋণ বেড়েছে এবং কর্মজীবী পরিবারগুলোর মধ্যেও ফুড ব্যাংকের চাহিদা রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে। তরুণ অস্ট্রেলিয়ানরা ডিগ্রি এবং ঋণের বোঝা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হচ্ছে। মধ্যম আয়ের উপার্জনকারীরা কেবল অর্থ বাঁচাতে ডাক্তার দেখানো এড়িয়ে যাচ্ছেন ও ছুটি বাতিল করছেন। অবসরপ্রাপ্তদের সঞ্চয় সঙ্কুচিত হচ্ছে; কারণ জীবনযাত্রার ব্যয় ক্রমাগত বাড়ছে। এসব লক্ষণ সিস্টেমের দুর্বলতা নির্দেশ করে, যা চাপের মধ্যে ক্রমেই ফাটল ধরতে শুরু করে।

প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা অস্ট্রেলিয়ার অর্থনীতির বড় দুর্বলতা। লোহা, আকরিক, কয়লা ও গ্যাসের মতো সম্পদ দশকের পর দশক ধরে প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেছে। জিডিপির প্রায় ১১ শতাংশ এবং রফতানি আয়ের ৭০ শতাংশের বেশি আসে খনি খাত থেকে। তবে বৈশ্বিক চাহিদার পরিবর্তন হচ্ছে, বিশেষ করে চীনের মতো বড় ক্রেতারা জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে সবুজ জ্বালানিতে বিনিয়োগ করছে। চীন এখন ব্রাজিল ও ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশের সাথে বাণিজ্য অংশীদারিত্ব গড়ে তুলছে, যারা কম দামে সম্পদ সরবরাহ করতে ইচ্ছুক। এটি অস্ট্রেলিয়ার জন্য সতর্কবার্তা, কারণ তার অর্থনীতি ঝুঁকিতে পড়ছে। যদি খাতটি দুর্বল হয়ে পড়ে, তবে কর্মসংস্থান, স্কুল, হাসপাতাল ও অবকাঠামোসহ সামগ্রিক অর্থনীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

অস্ট্রেলিয়ার আরেকটি গুরুতর সমস্যা হলো ঋণ। অস্ট্রেলিয়ার পরিবারগুলোর আড়াই ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি ঋণ রয়েছে, যা দেশটির বার্ষিক অর্থনৈতিক উৎপাদনের চেয়েও বেশি। আয়ের তুলনায় পারিবারিক ঋণের ক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়া বিশ্বের সবচেয়ে ঋণগ্রস্ত দেশগুলোর অন্যতম। এক ডলার আয়ের বিপরীতে ঋণ আছে প্রায় দুই ডলার। এর কারণ হলো বাড়ির মালিক হওয়ার স্বপ্ন। সম্পত্তির দাম বাড়ার সাথে সাথে মানুষ আরো বেশি ঋণ নিয়েছে, যা তাদের আর্থিক সীমা ছাড়িয়ে গেছে। সুদহার বৃদ্ধির ফলে মাসিক ঋণ পরিশোধের বোঝা বেড়েছে। ক্রেডিট কার্ড, গাড়ির ঋণ ও ব্যক্তিগত ঋণে ক্রমবর্ধমান ব্যয় হলেও মজুরি স্থবির। অর্থনীতি যখন অতিরিক্ত ঋণনির্ভর হয়, তখন ছোটখাটো ধাক্কায়ও বড় ক্ষতি হতে পারে, যেমন হঠাৎ চাকরি হারানো বা মুদ্রাস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি। অনেক অস্ট্রেলিয়ান এখন ব্যয় কমাচ্ছেন, সঞ্চয়ে হাত দিচ্ছেন বা কেবল মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য ‘পরে অর্থ প্রদান’ স্কিম ব্যবহার করছেন, যা দীর্ঘমেয়াদে টেকসই নয়।

কাগজে-কলমে অস্ট্রেলিয়ার অর্থনীতি বড় হচ্ছে এবং জিডিপি ঊর্ধ্বমুখী দেখাচ্ছে; কিন্তু এই প্রবৃদ্ধি প্রকৃত উন্নয়ন নির্দেশ করে না। মজুরি এক দশকেরও বেশি সময় ধরে খুব কমই বেড়েছে এবং মুদ্রাস্ফীতির কারণে অনেক অস্ট্রেলিয়ান আসলে ১০ বছর আগের চেয়ে কম উপার্জন করছেন। জীবনযাত্রার ব্যয়, যেমন- মুদিখানা, বাড়িভাড়া, জ্বালানি ও চাইল্ড কেয়ারের খরচ বেড়েছে; কিন্তু বেশির ভাগ মানুষের আয় বাড়েনি। এর ফলে সাধারণ মানুষ অবস্থান ধরে রাখার জন্য কঠোর পরিশ্রম করছেন। অন্য দিকে করপোরেট মুনাফা রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে, যা ইঙ্গিত দেয়, বড় কোম্পানিগুলো খরচ কমিয়ে, চাকরি স্বয়ংক্রিয় করে মজুরি কমিয়ে লাভ করছে। প্রবৃদ্ধি যখন বোর্ডরুম এবং শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে কেন্দ্রীভূত হয়, তখন এটি বেশির ভাগ মানুষকে পিছিয়ে দেয়, যা অর্থনীতিকে ভঙ্গুর করে।

অস্ট্রেলিয়ার আবাসন বাজার অর্থনৈতিক টাইমবোমা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ায় প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে, একটি বাড়ির মালিকানা সুরক্ষা এবং সাফল্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হলেও, আজ সেই স্বপ্ন অনেকের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। গত দুই দশকে সিডনি ও মেলবোর্নের মতো শহরে বাড়ির দাম আকাশ ছুঁয়েছে। অস্ট্রেলিয়ানরা বিশাল বন্ধকী গ্রহণ করেছে, যা তাদের আর্থিক সীমা পর্যন্ত প্রসারিত হয়েছে। অনেক পরিবার এখন শুধু ঘর টিকিয়ে রাখার জন্য প্রতি মাসে হাজার হাজার ডলার বাড়তি খরচের মুখে পড়ছে। খেলাপি ঋণ নীরবে বাড়ছে এবং অনেকেই এখন নেতিবাচক ইক্যুইটিতে রয়েছেন, অর্থাৎ তাদের বাড়ির মূল্যের চেয়ে দেনা বেশি। আবাসন বাজার ধীর হয়ে গেলে নির্মাণ, খুচরা ব্যয় এবং স্থানীয় সরকারের রাজস্বও হ্রাস পায়। এই বাজার এখন আর প্রকৃত চাহিদা দিয়ে চালিত হচ্ছে না; বরং ফটকাবাজি, সহজ ঋণ ও বিনিয়োগকারীদের চাপে স্ফীত হচ্ছে।

তরুণ প্রজন্মের মধ্যে একটি নীরব সঙ্কট উন্মোচিত হচ্ছে। তাদের বলা হয়েছিল কঠোর পরিশ্রম করে ডিগ্রি অর্জন করলে ভালো জীবন গড়া যাবে; কিন্তু আজ সেই প্রতিশ্রুতি একটি মিথের মতো মনে হয়। ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী প্রতি চারজনের মধ্যে একজন বেকার অথবা স্বল্প বেকার। এমনকি ডিগ্রিধারীরাও প্রায়ই নৈমিত্তিক, স্বল্প বেতনের চাকরিতে আটকে থাকেন, যেখানে ক্যারিয়ারের কোনো সুস্পষ্ট পথ নেই। শিক্ষার ব্যয় অনেক তরুণকে ঋণে চাপাপড়া অবস্থায় জীবন শুরু করতে বাধ্য করছে। তারা বাড়ি কেনার জন্য সঞ্চয় করার পরিবর্তে মা-বাবার কাছে ফিরে যাচ্ছে এবং সম্পদ গড়ার পরিবর্তে কেবল বেঁচে থাকার জন্য স্বল্পমেয়াদি চুক্তি বা অনিশ্চিত কাজের ওপর নির্ভর করছে। এটি কেবল সামাজিক সমস্যা নয়, অর্থনৈতিক ইস্যু। তরুণরা উদ্ভাবন, ভোক্তা ব্যয় এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধির ইঞ্জিন। কিন্তু যখন একটি পুরো প্রজন্ম টিকে থাকার মোডে আটকে যায়, তখন তাদের সাথে অর্থনীতিও ধীর হয়ে যায়।

ক্ষুদ্র ব্যবসায় খাতও প্রচণ্ড চাপে রয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার সব ব্যবসায়ের ৯৭ শতাংশের বেশি এবং প্রায় অর্ধেক বেসরকারি কর্মী নিয়োগ করে থাকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের উদ্যোগ- এসএমইএস। মুদ্রাস্ফীতির কারণে বাড়ি ভাড়া, বিদ্যুৎ সরবরাহ ও বীমার দাম বেড়েছে, অন্য দিকে গ্রাহকরা কম ব্যয় করছেন। এই পরিস্থিতিতে হাজার হাজার ছোট ব্যবসায় কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েছে। অনেকে কর্মীদের বেতন বা মৌলিক বিল পরিশোধ করতে সঞ্চয়ে হাত দিচ্ছেন, কেউ বা ব্যবসা পুরোপুরি বন্ধ করে দিচ্ছেন। কারণ তারা বড় চেইন এবং অনলাইন খুচরা বিক্রেতাদের সাথে প্রতিযোগিতা করতে পারছেন না। প্রতিটি ছোট ব্যবসায় বন্ধ হওয়ার অর্থ চাকরি হারানো, খালি দোকান এবং দুর্বল স্থানীয় অর্থনীতি। আঞ্চলিক শহরগুলোতে, এর অর্থ গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবা এবং কমিউনিটি হাবগুলোর ক্ষতি। মহামারীর সময় যে সরকারি সহায়তা ছিল তা এখন কমে গেছে এবং ত্রাণ প্যাকেজগুলো প্রায়ই জটিল বা সঠিক মানুষের কাছে পৌঁছায় না। যদি এই প্রবণতা অব্যাহত থাকে, তবে কেবল ব্যবসাই হারাবে না, বৈচিত্র্য, উদ্ভাবন ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাও হারিয়ে যাবে।

অভিবাসন দীর্ঘ দিন ধরে অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক শক্তি হলেও এখন সমস্যায় পড়তে যাচ্ছে। গত পাঁচ বছরের (২০২০-২৪) অভিবাসন-সংক্রান্ত তথ্যে দেখা যায়, এই সময়কালে অস্ট্রেলিয়ায় অভিবাসীদের জন্য শীর্ষ ১০টি দেশ হলো : ইংল্যান্ড, ভারত, চীন, ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম, ইতালি, নিউজিল্যান্ড, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও শ্রীলঙ্কা। এই র‌্যাংকিং জন্মের দেশ অনুসারে আনুমানিক আবাসিক জনসংখ্যার ওপর ভিত্তি করে করা হয়েছে, এটি সর্বশেষ আপডেট। নীতি পরিবর্তন, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং বৈশ্বিক ইভেন্টগুলোর মতো কারণে পরিসংখ্যান বছরের পর বছর কিছুটা পরিবর্তিত হয়। পরিসংখ্যানগুলো অস্ট্রেলিয়ান পরিসংখ্যান ব্যুরোর (এবিএস)। এখানে ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রবণতা থেকে প্রাপ্ত প্রতিটি দেশের জন্য আনুমানিক গড় বার্ষিক অভিবাসী পরিসংখ্যান রয়েছে। গত পাঁচ বছরে উল্লিখিত দেশ থেকে যে পরিমাণ অভিবাসী গিয়েছে তা হলো- ইংল্যান্ড ১০ হাজার, ভারত ৪০ হাজার, চীন ১০ হাজার, ফিলিপাইন ১৭ হাজার, ভিয়েতনাম ১২ হাজার, ইতালি পাঁচ হাজার, নিউজিল্যান্ড ১০ হাজার, মালয়েশিয়া ১০ হাজার, দক্ষিণ আফ্রিকা ছয় হাজার, শ্রীলঙ্কা ছয় হাজার মাত্র।

অভিবাসন বিষয়ে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই ব্যবস্থাটি লাল ফিতার ফাঁস, বিলম্ব ও অনিশ্চয়তায় জড়িয়ে পড়েছে, যা অর্থনৈতিক গতিকে দম বন্ধ করে দিচ্ছে। মহামারীর সময় অস্ট্রেলিয়া প্রায় দুই বছরের জন্য সীমান্ত বন্ধ করে রেখেছিল, যার ফলে দক্ষ কর্মী, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী এবং অস্থায়ী ভিসাধারীরা অদৃশ্য হয়ে যায়। স্বাস্থ্যসেবা, নির্মাণ, আতিথেয়তা ও কৃষির মতো শিল্পগুলো শ্রমিকের ঘাটতির সাথে তাৎক্ষণিকভাবে প্রভাব অনুভব করেছিল। যখন সীমান্ত পুনরায় খোলা হয়েছিল, তখন ভিসা-প্রক্রিয়াকরণে বিলম্ব, নীতি উল্টাপাল্টা এবং ক্রমবর্ধমান জীবনযাত্রার ব্যয় অস্ট্রেলিয়াকে নতুনদের কাছে কম আকর্ষণীয় করে তুলেছে। ফলে প্রত্যাশিত অভিবাসনের সংখ্যা কম, শ্রমশূন্যতা পূরণ হয়নি এবং কর্মীর অভাবে ব্যবসায় স্কেল করতে বা খোলা রাখতে সক্ষম হয়নি। এটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকেও আঘাত করছে, কারণ তারা গবেষণার তহবিলের জন্য আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। অভিবাসনকে ঘিরে রাজনৈতিক বিতর্ক আরো মেরুকৃত হয়ে উঠেছে, ফলে স্থিতিশীল, দূরদর্শী নীতি তৈরি করা কঠিন করে তুলেছে।

অস্ট্রেলিয়ায় বার্ধক্যজনিত অর্থনীতির সমস্যাও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার প্রতি ছয়জনের মধ্যে একজনের বয়স ৬৫ বছরের বেশি এবং আগামী দশকে এই সংখ্যা দ্রুত বাড়বে। একটি বয়স্ক জনসংখ্যার অর্থ হলো কর্মশক্তি ছেড়ে যাওয়া লোকের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং কর্মশক্তিতে প্রবেশ করা লোকের সংখ্যা হ্রাস। এই পরিবর্তনটি দেশের করের ভিত্তি, পেনশন, বয়স্ক যত্ন এবং স্বাস্থ্যসেবা তহবিলের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। যত বেশি অস্ট্রেলিয়ান অবসর নেবেন, তারা তাদের অবদান রাখার পরিবর্তে সরকারি সহায়তা ব্যবস্থা থেকে কিছু পেতে শুরু করবেন। অবসরপ্রাপ্তদের অনেকেই আর্থিকভাবে সচ্ছল নন এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি ও আয়ু বৃদ্ধির অর্থ হলো ক্রমবর্ধমানসংখ্যক বয়স্ক অস্ট্রেলিয়ান সরকারি সহায়তার ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভর করছে। এটি ইতোমধ্যে চাপের মধ্যে থাকা পরিষেবাগুলোর ওপর চাপ যুক্ত করেছে, বিশেষত স্বাস্থ্যসেবায়। একই সময়ে তরুণ প্রজন্ম যারা এই বোঝা কাঁধে নেবে বলে আশা করা হচ্ছে তারা আবাসন চাপ, মজুরি স্থবিরতা ও চাকরির নিরাপত্তাহীনতার সাথে লড়াই করছে। যদি প্রবীণ ও কর্মক্ষম বয়সের জনসংখ্যা উভয়কেই কিভাবে সমর্থন করা যায় তা পুনর্বিবেচনা করা না হয়, তবে অস্ট্রেলিয়া এমন একটি সিস্টেমের দিকে ধাবিত হবে যা জনগণ সমর্থন করবে না।

সর্বশেষে, চীন ও বাণিজ্যিক দাবাবোর্ড অস্ট্রেলিয়ার জন্য একটি কৌশলগত দুর্বলতা তৈরি করেছে। কয়েক বছর ধরে অস্ট্রেলিয়ার অর্থনীতি একক বাণিজ্য অংশীদার চীনের ওপর ব্যাপকভাবে ঝুঁকছে। লোহা বা কয়লা থেকে শুরু করে মদ, গরুর গোশত এবং শিক্ষা সবখানে চীন বৃহত্তম ক্রেতা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সব রফতানির প্রায় ৩০ শতাংশ চীনে যায়। কূটনৈতিক বিরোধ এবং সুরক্ষা উদ্বেগের কারণে চীনা বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার একটি তরঙ্গ শুরু হয়েছিল, যা মূল শিল্পগুলোর কোটি কোটি টাকার ক্ষতি করেছে। যদিও কিছু বিধিনিষেধ পরে শিথিল করা হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া ভারত, জাপান ও ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশগুলোর সাথে নতুন বাণিজ্য সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করেছে; কিন্তু এই সম্পর্কগুলো চীনের অর্থনৈতিক মধ্যাকর্ষণের সাথে মেলে না। এটি অস্ট্রেলিয়াকে অর্থনৈতিক নির্ভরতা এবং ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে আটকে ফেলেছে।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব ও গ্রন্থকার
[email protected]