ফ্যাসিবাদে শক্তি জোগানো মিডিয়ার জবাবদিহি কোথায়

সুস্থ ধারায় সংবাদমাধ্যম ফেরাতে হলে বড়দাগে যারা অপরাধ করেছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এখনো সরকার সেই ধরনের কোনো ব্যবস্থা গ্রহণে উদ্যোগী হয়নি। এটি হতাশাজনক।

নয়া দিগন্ত

প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম বলেছেন, গত ১৫ বছরে সাংবাদিকতা মানুষের অধিকার হরণ করেছে। ফ্যাসিবাদের দোসর সাংবাদিকদের ক্ষমা চাওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি। জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী গণমাধ্যমের হালচাল’ শীর্ষক এক আলোচনায় বিগত দিনের সাংবাদিকতা নিয়ে আত্মসমালোচনা করছিলেন তিনি। এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বেশ কিছু অভিযোগ সামনে আনেন যা হাসিনার সময়ে মিডিয়ার দায়িত্বহীনতা, সুবিধাবাদ এমনকি অপরাধের চিত্র স্পষ্ট করে তোলে। মূল ধারার সংবাদমাধ্যম তার বক্তব্য প্রকাশ করেনি। কিছু মিডিয়া কম গুরুত্ব দিয়ে খবরটি প্রকাশ করেছে, তাতে আত্মসমালোচনামূলক কথাগুলো বাদ দেয়া হয়েছে। জুলাই বিপ্লবোত্তর সরকার ব্যাপক সংস্কার উদ্যোগ নিয়েছে। একটি মিডিয়া কমিশন গঠন হয়েছে। তাতে মিডিয়া ও সাংবাদিকদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোকপাত হয়েছে। কিন্তু তাদের কৃত ত্রæটি বিচ্যুতি ও অপরাধ নিয়ে আলাপ নেই।

ফ্যাসিবাদী সরকারের সমর্থনে থেকে যারা অপরাধ করেছে তাদের বিচারের মুখোমুখি করা হচ্ছে। গুম খুনসহ মানবাধিকার লঙ্ঘন, ভোটাধিকার হরণ, লুটপাট ও মুদ্রা পাচারসহ সব ধরনের গুরুতর অপরাধের বিচার চলছে। এ জন্য জড়িত রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ী, পুলিশ র‌্যাব সামরিক বাহিনীর সদস্যরা কেউ রেহাই পাচ্ছে না। এই অপরাধ সংঘটনে মিডিয়া অর্থাৎ সাংবাদিক সমাজের ভূমিকা এদের কারো চেয়ে কম ছিল না। বড় বড় অপরাধ সহজে সরকার করতে পেরেছিল তাদের সমর্থনে মিডিয়ার লাঠিয়াল হওয়ার কারণে। সরকারের পক্ষে সম্মতি উৎপাদনের কাজটি নির্লজ্জভাবে তারা করেছিল। যেখানে সরকারের প্রতিটি কাজে তাদের প্রশ্ন করার কথা ছিল। তাদের পালন করার কথা ছিল ওয়াচডগের ভূমিকা। জনগণের সামনে উন্মোচনের বদলে তারা সরকারের অপরাধ ঢেকে রাখতে সহায়তা করেছে। সাড়ে ১৫ বছরে সংঘটিত বড় বড় অপরাধগুলোর দিকে তাকালে মিডিয়া তথা সাংবাদিকদের ভূমিকা আমরা অনুমান করতে পারব।

হাসিনার আমলে প্রথম ব্যাংক দুর্নীতি সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার, বেসিক ব্যাংকে। রাবিশ বোগাস খ্যাত আব্দুল মাল আব্দুল মুহিত বলেছিলেন, এটি বড় কোনো অর্থ লোপাটের ঘটনা নয়। এরপর রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, রূপালী ব্যাংক বড় বড় জালিয়াতির শিকার হয়। তারপর শুরু হয় সব বেসরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে লুটপাট। হাসিনার অলিগার্কদের মধ্যে থেকে কয়েক ডজন ব্যক্তি পাঁচ হাজার ১০ হাজার করে অর্থ লোপাট করে নিয়েছেন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে। হাসিনার ক্যাশিয়ার খ্যাত প্রধান অলিগার্ক এস আলম একাই কয়েকটি ব্যাংক থেকে সোয়া লাখ কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। ইতিহাসে তিনি সর্ববৃহৎ ব্যাংকখেকো। পরিস্থিতি এমন হয় যে, দেশের ব্যাংক ও আর্থিক খাত নিয়ন্ত্রণকারী কেন্দ্রীয় ব্যাংকও লুট হয়ে যায়। অন্তর্বর্তী সরকারের শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি হাসিনার শাসনকে তাই চোরতন্ত্র নাম দিয়েছে।

এ ছাড়া বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প করে অর্থ ভাগজোখ করে নেয়া হয়েছে। পদ্মা সেতু নির্মাণে ৩০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। এ সেতু নির্মাণ করতে গিয়ে আরো কিছু ছোট ছোট প্রকল্প করা হয়েছে সেগুলোর বাজেট বরাদ্দ দেখে আমরা অনুমান করতে পারব কিভাবে হরিলুট করা হয়েছে। পদ্মা সেতু প্রকল্পে নদীশাসনে বালু ফেলার জন্য জমি ক্রয় করা হয়। এ জন্য যেসব জমিকে প্রকল্পের অধীনে কেনা হয়েছে বলে দেখানো হয়েছে সেগুলো পানিতে বিলীন হয়েছে। এগুলো কেনার কোনো প্রয়োজন ছিল না। এ খাতে ৯০০ কোটি টাকার ব্যয় দেখানো হয়েছে। এই টাকা পেয়েছে হাসিনার ফুফাতো ভাইয়ের ছেলে লিটন চৌধুরী।

সেতুর দুই প্রান্তে মুজিব ও হাসিনার ম্যুরাল ও কিছু স্থাপনা তৈরি করা হয়। মাত্র কয়েক কোটি টাকায় এ কাজটি করা যেত। সেখানে ব্যয় করা হয়েছে ১১৭ কোটি টাকা। এ কাজে কোনো দরপত্র ডাকা হয়নি। কাজটি করেছে আরেক শ্বেতহস্তী রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের বালিশকাণ্ডে বিতর্কিত মজিদ সন্স কনস্ট্রাকশন লিমিটেড। নদী শাসন ও ম্যুরাল নির্মাণে ১০০ কোটি টাকার কাজ তার দশগুণ বেশি বাজেট দেখিয়ে ভাগবাটোয়ারা করা হয়েছে। পুরো পদ্মা সেতু প্রকল্পটি এর এক-তৃতীয়াংশ অর্থ দিয়ে সম্পন্ন করা সম্ভব ছিল। হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরের শাসনে দেশ থেকে ২৮ লাখ কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে। প্রতি বছর এক লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা করে পাচার হওয়ার হিসাব দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত শ্বেতপত্র কমিটি। এই বিপুল অর্থ তারা পেয়েছে ব্যাংক ও বড় বড় প্রকল্পে লুটপাট থেকে।

দেশ দেউলিয়া করে দেয়া হলেও মূল ধারার মিডিয়ায় এ নিয়ে কোনো ধরনের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ছিল না। সাধারণ খবর প্রকাশের ক্ষেত্রেও তারা কৃপণতা দেখিয়েছে। ২০১৬ সালের কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে লুটে নেয়া হয় ৮১ মিলিয়ন ডলার। এ খবরটিও বাংলাদেশের কোনো সংবাদমাধ্যম প্রকাশ করতে পারেনি। অথচ এক মাস ধরে কানাঘুষা চলছিল। পরে ফিলিপাইনের সংবাদমাধ্যমে খবরটি প্রকাশ হলে সেই সূত্রে বাংলাদেশী মিডিয়ায় আসে। দেশের বাইরে খবরটি ফাঁস না হলে এটি হয়তো চিরদিনের জন্য অজানা থেকে যেত। একজন প্রশান্ত কুমার হালদার একাই ১১ হাজার কোটি টাকা লুটে নিয়েছেন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে। তার অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি ছিল অনেকটাই প্রকাশ্যে। একটানা ১০ বছর ধরে তিনি একটি চক্র তৈরি করে কাজটি করেছেন। বাংলাদেশের কোনো মিডিয়া তার অর্থ আত্মসাৎ নিয়ে সময়মতো কোনো খবর করেনি। তার বিরুদ্ধে আদালত দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করার মধ্যে তিনি নির্বিঘ্নে ভারতে পালিয়ে যান। তিনি নিরাপদে পালানোর পর বাংলাদেশের মিডিয়ায় খবর হয়েছে।

হাসিনার শাসনের পাটাতন গড়ে উঠেছিল চরম দমননীতির ওপর। এটি সম্ভব হয়েছে মূল ধারার মিডিয়ায় হাসিনা সরকারকে সমর্থন ও ফ্যাসিবাদী কর্মকাণ্ডে শক্তি জোগানোর কারণে। হাসিনা যখন মেরে কেটে দেশের মানুষকে ঠাণ্ডা করেছে মিডিয়া এই নিষ্ঠুরতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন তুলেনি। অথচ চারদলীয় জোট সরকারের সময় ‘প্রধানমন্ত্রী ছাত্রদলকে থামান’। সম্পাদকদের এ ধরনের নসিহত নিয়ে মন্তব্য প্রতিবেদন কয়দিন পরপর মিডিয়ায় দেখা যেত। পণ্যমূল্য বৃদ্ধি, হাওয়া ভবনের দুর্নীতির খবর আর বিশ্লেষণে পত্রিকার পাতা ভরে যেত। মিডিয়ার এই অপপ্রচারকে বিএনপি নীরবে সহ্য করেছে। কোনো সাংবাদিক কিংবা সংবাদ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি। এই উদারতা দলটির জন্য কোনো বিশেষ ছাড় বা সুযোগ এনে দেয়নি। তাদের নীরবতাকে মিডিয়া অপরাধ কবুল করার কৌশল হিসেবে প্রয়োগ করেছে।

জামায়াত শিবিরের বিরুদ্ধে চালানো হতো সিন্ডিকেটেড প্রপাগান্ডা। রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীকে বানিয়ে দেয়া হয় যুদ্ধাপরাধী। পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর খুন হত্যার পুরো দায় চাপিয়ে দেয় দলটির শীর্ষ নেতৃত্বের ওপর। মূল যুদ্ধাপরাধীদের যে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে ছেড়ে দেয়া হয়েছে সে ব্যাপারে কোনো আলাপ নেই। রগ কাটার জন্য শিবিরকে স্থায়ী ট্যাগিং করে দেয়া হয়। মিডিয়ার এই প্রচারণা হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনের বৈধতা তৈরি করেছে। এর সাথে যুক্ত হয় আমেরিকার সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অনন্ত যুদ্ধ। তার সূত্র ধরে জঙ্গিবাদ ইস্যুকে চাঙ্গা করা হয়। মিডিয়া জঙ্গিবাদের বয়ান নির্মাণ করে দিয়েছে। এর ফলে বিশাল এক রাজনৈতিক গোষ্ঠীর গুম খুন নিধনের পাটাতন তৈরি হয়। এতে শুধু জামায়াত আক্রান্ত হয়নি, সব ইসলামী শক্তি কচুকাটা হয়েছে। বিএনপিও একই কারণে ধরাশায়ী হয়েছে। তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচিকেও নাশকতা বলে দমন করা হয়েছে। ঘরোয়া কর্মসূচিকে জঙ্গি কর্মকাণ্ড ট্যাগ দেয়া হয়েছে। মিডিয়ার তৈরি বয়ান হাসিনার চরম নিষ্ঠুরতা প্রয়োগ সহজ করেছে। মূলত হাসিনা ও মিডিয়া বাংলাদেশে হাত ধরাধরি করে চলেছে।

বিচারবহির্ভূত হত্যা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর রচিত গল্প আর জঙ্গি দমনে রচিত গল্প একই প্যাটার্নে হয়েছে। বিচারবহির্ভূত হত্যা নিয়ে মিডিয়া কখনো কখনো কিছু বলতে চেয়েছে নিজেদের প্রাণের শঙ্কা থেকে। কিন্তু জঙ্গি দমনের অভিযানে মিডিয়া অত্যন্ত উৎসাহের সাথে সমর্থন জুগিয়ে গেছে। ঘরে রাখা কাঁচি ছুরিকে মিডিয়া মারণাস্ত্র হিসেবে দেখিয়েছে। আর ইসলামী বইপত্রকে দেখিয়েছে জিহাদি সাহিত্য। বিগত সরকারের সময় জঙ্গি নাটকের চিত্রগুলো সব একইরকম ছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যে কাউকে জঙ্গি বলে ধরে নিয়ে আসত। এরপর করা হতো সংবাদ সম্মেলন। সেখনে গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত আসবাব এবং ইসলামী বইগুলোকে একটি টেবিলে সাজিয়ে রাখা হতো। তার সাথে কিছু আগ্নেয়াস্ত্রও রাখা হতো। যেগুলো হয়তো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিজেদের অস্ত্রাগার থেকে সরবরাহ করা হতো। জঙ্গিরা মারাত্মক সব অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়েছে মিডিয়া ছবি ও সংবাদ করে দিত। এসব অভিযান ভুয়া ও সাজানো বোঝা যেত। কিন্তু মিডিয়া কখনো এসব অভিযান নিয়ে প্রশ্ন তোলেনি। এমনকি তারা সাংবাদিকতার কোনো নিয়ম মানেনি। এসব সংবাদ করার ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীদের বক্তব্য নেয়া হতো না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বক্তব্য শতভাগ সত্য হিসেবে চালিয়ে দিত। এই সুযোগে হাসিনা পুরো দেশকে এক বধ্যভূমি বানায়।

যুদ্ধাপরাধের দায়ে বেসামরিক রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নজিরবিহীন হত্যার আয়োজন করেন হাসিনা। তাদের হত্যা করে ক্ষান্ত হননি, স্বাভাবিকভাবে তাদের লাশ দাফন করতে দেয়া হয়নি। লাশ কোথায় দাফন করবে তাও পরিবার সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। তাদের হত্যার পর তাদের পরিবার পরিজনের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেন হাসিনা। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সন্তান হুম্মাম কাদেরকে গুম করা হলো। এদিকে অধ্যাপক গোলাম আযমের ছেলে ব্রিগেডিয়ার আযমী, মীর কাসেম আলীর ছেলে ব্যারিস্টার আরমান গুম হন। এ নিয়ে মিডিয়ায় কোনো খবর পাওয়া গেল না। এসব নিয়ে অনুসন্ধান, বিশ্লেষণ ছিল কল্পনার অতীত। এভাবে কয়েক হাজার মানুষ গুম হয়ে যায়। ড. ইউনূস আয়নাঘর দর্শনে গিয়ে সারা দেশে সাত-আট শ’ আয়নাঘর থাকার তথ্য জানান। কাগজ-কলমে দেশে কয়েক হাজার মিডিয়া, এসব নিয়ে মিডিয়া কোনো খবর রচনা করেনি।

বাংলাদেশে মিডিয়াকে চেনা যাবে হাসিনা সরকারের শুরুতে যখন গুম খুন ও বিপুল মানবাধিকার লঙ্ঘন শুরু করেনি বিডিআর হত্যাকাণ্ড ও পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে। যেখানে সামরিক বাহিনীর ৫৭ জন অফিসারকে হত্যা করা হয়। শত্রুপক্ষের একজনও ব্যক্তিও আহত না হয়ে এতগুলো উচ্চ প্রশিক্ষিত কর্মকর্তার জীবনপাত পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি ঘটেনি। এই ঘটনায় আমাদের সামরিক সক্ষমতার মেরুদণ্ড গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। চৌকস সামরিক কর্মকর্তাদের যখন হত্যা করছিল, মিডিয়া তখন একে ‘বিডিআর বিদ্রোহ’ নামে ব্রেকিং দেয়। অকুস্থল থেকে নির্বাচিত কিছু সাংবাদিক প্রচার করতে থাকে- বিডিআরের ডালচাল নিয়ে অনিয়ম হয়েছে। বিডিআরের সিপাহিদের বঞ্চনা নিয়ে তারা ব্যথিত। এটিএন বাংলার মুন্নি সাহা সিপাহিদের সাক্ষাৎকার নেন। তার প্রচারিত খবর ভারতীয় মিডিয়ায় বাংলাদেশের বিডিআর বিদ্রোহ বলে প্রচার হয়। সেনাকর্মকর্তাদের উদ্ধারের বিষয়টি ভুলিয়ে দেয়া হয়। ঘটনার অভিমুখ পাল্টে দেয়া হয়। এই সুযোগে নির্বিঘ্নে সেনাকর্মকর্তাদের হত্যা চলে।

বাংলাদেশের ইতিহাসে বিডিআরে সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের হত্যা একটি বড় ঘটনা। এ ঘটনা নিয়ে মিডিয়ার কোনো অনুসন্ধানী প্রতিবেদন হয়নি। বাংলাদেশের মিডিয়ায় বেদনাবিধুর দিন হিসেবে ২৫ ফেব্রুয়ারির কোনো শোকগাথা দেখা যাবে না। মিডিয়া বহু দিবস অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে কাভার করে। কিছু ক্ষেত্রে আমাদের দেশের মিডিয়া মাসব্যাপী প্রচারণা চালায়। দেখবেন বিডিআরে সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের হৃদয়বিদারক হত্যা নিয়ে তাদের কোনো উৎসাহ নেই। এদিকে এই ঘটনাকে ব্যবহার করে বিডিআরে নাম পরিবর্তন করে দেয়া হয়। পুরো বাহিনীকে যতভাবে পারা যায় দুর্বল করে দেয়া হয়। এমনকি এই হত্যাকাণ্ডকে ব্যবহার করা হয় বিডিআরে নিরীহ সদস্যদের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে চলে মামলা-বাণিজ্য। বহু সিপাহিকে সর্বস্বান্ত করে দেয়া হয়। জেলে পুরে অনেকের জীবনের পুরো সম্ভাবনাকে শেষ করে দেয়া হয়। হাসিনার শাসনের পুরো সময়ে এই অবিচার চলতে থাকে। অথচ মিডিয়ায় এ নিয়ে খবর পাবেন না। জুলাই বিপ্লবের পরও মিডিয়ায় এ নিয়ে অবহেলা দেখবেন। তাদের দাবি দাওয়া গুরুত্ব দেয়া হয়নি। তাদের বিরুদ্ধে অবিচারের প্রতিকার করার কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এ জন্য তারা রাস্তায় নামে। এসব খবরও মিডিয়ায় পাওয়া যাবে না।

প্রেসসচিব আরো বলেছেন, সাংবাদিকরা হাসিনার শাসনের বৈধতা দিয়েছেন। আপনি শুধু গত ৫ আগস্টের একদিনের মিডিয়া দেখলে শফিকুলের কথার প্রমাণ পাবেন। প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া হাসিনার তাঁবেদারি করেছে সেদিন পর্যন্ত। এ কাজ করতে গিয়ে অনেক সাংবাদিক ও মিডিয়া হাউজ জনগণের বিরুদ্ধে নানা মাত্রায় অপরাধ করেছে। ইতোমধ্যে কয়েকডজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সংবাদমাধ্যম জগৎ জাতির বিরুদ্ধে যে মাত্রায় অপরাধ করেছে সেই তুলনায় তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নেয়া হয়নি। এখনো সাংবাদিকরা জনগণের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছেন। মূল ধারার সংবাদমাধ্যমকে মানুষ বিশ্বাস করে না। যে কারণে সামাজিক মাধ্যমের রমরমা। অনেক ক্ষেত্রে সামাজিকমাধ্যম বিশ্বস্ততায় মূল ধারার চেয়ে এগিয়ে গেছে। জনগণের সাথে সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যমের বিপুল ব্যবধান তৈরি হয়েছে, এটি পূরণ করা না গেলে এদেশে গণতন্ত্র সংহত হবে না। সুস্থ ধারায় সংবাদমাধ্যম ফেরাতে হলে বড়দাগে যারা অপরাধ করেছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এখনো সরকার সেই ধরনের কোনো ব্যবস্থা গ্রহণে উদ্যোগী হয়নি। এটি হতাশাজনক।