হাসিনাকে ফেরাতে যা করা যায়

যদি নাগরিক সমাজ-চওখ দাখিল করে, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে যুক্ত করে, প্রবাসী নেটওয়ার্ক সক্রিয় করে- তাহলে ভারতের ওপর দুর্নিবার চাপ তৈরি হবে। কারণ-শতাধিক শিশু ও প্রায় ১৫ শ’ মানুষের রক্তের বিচার থেমে থাকতে পারে না।

মহিউদ্দিন আহমেদ

বাংলাদেশের আদালত শেখ হাসিনাকে মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিত করেছেন। জুলাই বিপ্লবে প্রায় ১৫ শ’ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, যাদের মধ্যে শতাধিক শিশুও ছিল। রাষ্ট্রীয় গুলি, নির্যাতন, টার্গেটেড হামলা, নিখোঁজ- সব মিলিয়ে এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের ভয়াবহতম হত্যাযজ্ঞগুলোর একটি। কিন্তু দণ্ডপ্রাপ্ত শেখ হাসিনা এখনো ভারতে নিরাপদে অবস্থান করছেন। তাহলে প্রশ্ন জাগে, একজন দণ্ডিত অপরাধী যদি পলাতক থেকেই যায়, তবে আদালতের রায় কি সত্যিই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে পারে? শহীদ পরিবার, আহত তরুণ, নিখোঁজদের স্বজনসহ অগণিত মানুষ আজো ন্যায়বিচারের অপেক্ষায়। তাদের কাছে রায় হওয়া যথেষ্ট নয়। তারা চান শাস্তি বাস্তবে কার্যকর হোক। কিন্তু সরকার এখনো ভারতে দৃশ্যমান কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টি করতে পারেনি। এই অপারগতার মাঝেই ন্যায়বিচারের বোঝা জনগণের কাঁধে এসে পড়েছে। সরকার ব্যর্থ হলে জনগণের করণীয় কী?

প্রত্যর্পণ (extradition) অবশ্যই সরকার-টু-সরকার প্রক্রিয়া। ব্যক্তি বা সংগঠন সরাসরি ভারতীয় আদালতে গিয়ে বলতে পারে না ‘শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠান’। কিন্তু এখানেই জনগণের ভূমিকা শেষ নয়। কারণ জনগণের হাতে রয়েছে একটি শক্তিশালী আইনি পথ, ভারতের আদালতে Public Interest Litigation (PIL) বা জনস্বার্থে মামলা করা যায়। ভারতের হাইকোর্ট বা সুপ্রিম কোর্টে এই মামলা দায়ের করা যেতে পারে। এটি করতে পারে মানবাধিকার সংগঠন, নাগরিক সমাজ, প্রবাসী বাংলাদেশী গোষ্ঠী। একটি চওখ সরাসরি প্রত্যর্পণ নির্দেশ না দিলেও ভারত সরকারের ওপর আইনি, নৈতিক ও রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করবে।

চওখ এ প্রশ্ন তোলা যেতে পারে,

কেন মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিত একজন ব্যক্তিকে ভারত নিরাপদ আশ্রয় দিচ্ছে?

তার আইনি স্ট্যাটাস কী?

ভারত কি প্রত্যর্পণ চুক্তি সম্মান করছে?

ন্যায়বিচারের পথে বাধা কেন তৈরি হচ্ছে?

এসব প্রশ্নের উত্তর ভারতীয় সরকার সহজে এড়াতে পারবে না।

ভারতের বড় অজুহাত : ‘রাজনৈতিক অভিযোগ’। ভারত-বাংলাদেশ প্রত্যর্পণ চুক্তিতে বলা আছে, যদি অভিযোগ ‘রাজনৈতিক’ মনে হয়, ভারত প্রত্যর্পণ নাও করতে পারে। শেখ হাসিনার আইনজীবীরা অবশ্যই এই ধারা ব্যবহার করতে চাইবে। কিন্তু বাংলাদেশের সবচেয়ে শক্ত যুক্তি হলো, মানবতাবিরোধী অপরাধ কখনোই ‘রাজনৈতিক’ নয়। শিশু হত্যা, গণহত্যা, নির্যাতন এসব কোনোভাবেই রাজনৈতিক অপরাধ হিসেবে গণ্য হয় না।

এটাই চওখকে শক্ত অবস্থানে দাঁড় করায়।

মৃত্যুদণ্ড কোনো বাধা নয়

ভারত নিজেও মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছে। তাই এই অজুহাতে ভারত বাংলাদেশে অনুরোধ নাকচ করতে পারবে না। এখন মূল লড়াই রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে। জনগণই এখন ন্যায়বিচারের শেষ ভরসা। জনগণের পক্ষ থেকেই পদক্ষেপ নিতে হবে, যখন সরকার দৃশ্যমান কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টি করতে ব্যর্থ, ভারতের নীরবতা দীর্ঘায়িত ও আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশের কণ্ঠ দুর্বল।

যদি নাগরিক সমাজ-চওখ দাখিল করে, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে যুক্ত করে, প্রবাসী নেটওয়ার্ক সক্রিয় করে- তাহলে ভারতের ওপর দুর্নিবার চাপ তৈরি হবে। কারণ-শতাধিক শিশু ও প্রায় ১৫ শ’ মানুষের রক্তের বিচার থেমে থাকতে পারে না।

লেখক : কানাডাভিত্তিক মানবাধিকার কর্মী