আজেবাজে কথা বলা শেখ হাসিনার স্বভাবে ছিল। প্রতিপক্ষকে সম্মান দিয়ে কথা বলতে তিনি জানতেনই না। এ জন্য জাতির উদ্দেশে হাসিনার ভাষণের আগে সামাজিক মাধ্যমে নেটিজেনরা বলতেন, ম্যানহোলের ঢাকনা খুলে যাবে; অর্থাৎ হাসিনার মুখের জবান মানেই দুর্গন্ধযুক্ত ময়লা-আবর্জনা। হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে যা বলতেন তা আরো জঘন্য। কটুকাটব্য খিস্তিখেউর করে বিষ উগরে দিতেন। বাংলাদেশের রাজনীতিকে তিনি প্রতিযোগিতার বদলে শত্রুতায় পরিণত করেন। শেষে এটি এমন পর্যায়ে যায় যে, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ মানেই হত্যাযোগ্য। তিনি তার বিরোধীদের কোনো অধিকার দিতেই রাজি ছিলেন না। গুম-খুনসহ বহুমাত্রিক পীড়নের শিকার হয়েছে বিরোধীরা। তৈরি করা হয়েছে আয়নাঘর নামের বহু সংখ্যক যমঘর।
রাজনীতি সভ্য ও অগ্রসর মানুষের প্রতিযোগিতার জায়গা। শুভবুদ্ধির মানুষ কল্যাণ ও সেবার পথ খোঁজে এর মাধ্যমে। হাসিনা একে বানিয়ে ফেলেন জঙ্গলের নীতি। যেখানে কেবল শক্তিমানরা বেঁচে থাকবে। মনুষ্য সমাজে এই নীতির প্রয়োগ বরাবরই ব্যর্থ হয়েছে। যারা এই নীতি অবলম্বন করতে গেছেন তারাই করুণ পরিণতির শিকার হয়েছেন। শক্তি আইন হয়ে গেলে যারা এর প্রচলনকারী তারা একসময় এর শিকার হন। হাসিনা প্রথমে জামায়াতকে শত্রু গণ্য করে উৎখাত করার প্রকল্প নেন। দলটির বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ, স্বাধীনতাবিরোধী ও সাম্প্রদায়িকতার অভিযোগ আনা হয়। এই নীতির সফলতা তাকে বেপরোয়া করে তোলে। তিনি বিএনপির বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ এনে তাদেরও কচুকাটা করেন। দলটির প্রতিষ্ঠাতা স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানকে বানিয়ে দেয়া হয় পাকিস্তানের দালাল, বিশ্বাসঘাতক। জঙ্গলের নীতি প্রয়োগে তিনি রাজনীতির মাঠের সব বিরোধীকে সমূলে উৎপাটন করতে সক্ষম হন।
এই নীতি সেই দানবের মতো কাজ করেছে। যাকে প্রতিদিন একটি করে অসাধ্য সাধনের আদেশ দিতে হতো। যে দিন তাকে আর কোনো দানবীয় কাজ করার আদেশ দেয়ার অপশন থাকত না, সে দিন এই দানব তার মালিককে ঘাড় মটকাত। প্রতিপক্ষকে হাসিনার সমূলে উৎপাটিত করার শক্তি প্রয়োগের জবরদস্তি নীতি একসময়ে হাসিনার ওপর পতিত হয়। এর যাত্রা শুরু হয় টেকনাফের যুবলীগ নেতা ইকরাম হত্যার মধ্য দিয়ে। প্রতিপক্ষ না থাকায় রাজনীতির মাঠে আওয়ামী লীগের মধ্যে ক্ষমতা প্রদর্শনের অভ্যন্তরীণ প্রতিযোগিতা শুরু হয়। এ যাত্রায় দলটি নিজেদের লোকদের নিজেরা শত্রু বানিয়ে হত্যা করেছে। ফলে আওয়ামী লীগের লোকেরা হাসিনার শত্রু হয়েছে। প্রতিপক্ষকে সহ্য করতে না পারায় এ করুণ পরিণতি শেষে তার ঘরে প্রবেশ করেছে। এখন হাসিনার পক্ষে কেউ নেই। সম্প্রতি আদালত তার মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করলে হরতাল, অবরোধ, লকডাউন- সব একসাথে ডাকা হয়। সারা দেশে হাসিনার পক্ষে একটি মিছিলও বের হয়নি। তার বিরুদ্ধে দণ্ড দেয়ার প্রতিবাদ করার জন্য দেশে একজন মানুষও পাওয়া যায়নি।
রাজনীতিবিদ, রাজনৈতিক দল ও জনগণের সম্মিলিত আচরণকে রাজনৈতিক সংস্কৃতি বলে। রাজনীতি একটি সমঝোতার নাম। একটি মূল্যবোধ দ্বারা এটি পরিচালিত হবে। সমতা, স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার গণতন্ত্র হবে তার ভিত্তি। রাজনীতিবিদরা বিভিন্ন মতাদর্শের হবেন তাতে সমস্যা নেই, তবে পক্ষগুলো পরস্পরের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবে। নিজেদের অধিকার চর্চার সাথে সাথে অপরের অধিকার নিয়েও যত্নবান থাকবে। রাজনীতির এমন চর্চাকে উন্নত রাজনৈতিক সংস্কৃতি বলা যায়। হাসিনা একে পচিয়ে জঙ্গলের সংস্কৃতিতে পর্যবসিত করেন। তার ফলও তিনি পাচ্ছেন।
৫ আগস্টের পর বাংলাদেশের সামনে এক অপার সম্মানের দুয়ার খুলে গেছে। শান্তি, সমৃদ্ধি ও উন্নতির হাতছানি দিয়ে এখন সুবাতাস বইছে এ দেশ ঘিরে। এটিকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য উন্নত রাজনৈতিক সংস্কৃতি চর্চা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। দুর্ভাগ্যবশত হাসিনার পালানোর সাথে সাথে তার ফেলে যাওয়া পচা দুর্গন্ধময় কর্মকাণ্ডের অনুসরণ করা হচ্ছে। তার বহুল চর্চিত দোষারোপ অভিযোগ আরোপের পশ্চাৎমুখী সঙ্কীর্ণ রাজনীতির আগমন ঘটেছে। অতীত নিয়ে কাদা ছোড়াছুড়ি আবার শুরু হয়েছে।
রাজনীতিকদের একটি অংশ হাসিনার চাঁদাবাজি-দখলবাজি, চুরি-ডাকাতির স্থানটি দখল করেছে। ৫ আগস্টের পরপরই টেম্পোস্ট্যান্ড, বাসস্ট্যান্ড, হাটবাজার, বন্দর দখল করা হয়েছে। অনিয়ম-দুর্নীতি, ঘুষ বাণিজ্যের স্পটগুলো আয়ত্তে নেয়া হয়েছে। ১৯ জুলাই বিবিসি বাস-রুটের চাঁদবাজি নিয়ে একটি প্রতিবেদন করেছে। যাত্রাবাড়ী-শরীয়তপুর রুটে পাঁচ কোটি টাকা চাঁদা দাবির একটি খবর ছাপে। শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস নামে পরিবহন কোম্পানির কাছে এই চাঁদা দাবি করা হয়। চাঁদাবাজরা ওই পরিবহনের কয়েকটি বাস ভাঙচুর করে। এ জন্য ওই সময় তিন দিন সার্ভিস বন্ধ ছিল। এই চাঁদবাজির অভিযোগ আসে যাত্রাবাড়ী থানা যুবদলের একজন নেতার বিরুদ্ধে। হাসিনা সারা দেশে একটি মাফিয়া চক্র গড়ে তোলেন। তারা সব সেক্টর থেকে বখরা নিত। হাসিনার সফলতা ছিল- তিনি এই অবৈধ কর্মকাণ্ডকে একটি শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে এসেছিলেন। তার লোকেরা এর মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা আদায় করে নিয়েছে। তাদের একটি বণ্টননীতি ছিল। হাসিনা চলে যাওয়ার পর এই শূন্যতা পূরণ করেছে বিএনপির নামে একটি গোষ্ঠী। তাদের নিজেদের বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যে দখল ও আধিপত্য প্রতিষ্ঠা নিয়ে রক্তারক্তি হয়েছে।
৫ আগস্টের পর সারা দেশে বিপুল রাজনৈতিক সহিংসতা দেখা দেয়। প্রথম ১৩ মাসে এক হাজার ৪৭টি রাজনৈতিক সহিংসতা হয়েছে। এর মূলে ছিল বিভিন্ন স্থাপনা দখল ও আধিপত্য বিস্তার। এগুলোর সবই হয়েছে বিএনপির দল-উপদল, নিজেদের মধ্যে। দলটির নিজেদের মধ্যে অন্তর্দলীয় দ্বন্দ্বে এই সময় ৮৫ নেতাকর্মী নিহত ও পাঁচ হাজার ১৭ জন আহত হয়। দেড় দশকে ক্রমাগত আওয়ামী লীগ বিএনপির ওপর অত্যাচার-নিপীড়ন চালিয়েছে, হিসাব মতে, দলটির নিশানা আওয়ামী লীগ হওয়ার কথা। সেটি না হয়ে বিএনপি নিজেরা নিজেদের মারছে। এর কারণ হচ্ছে, বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা মনে করছে, ১৭ বছর ধরে তারা খেতে পারেনি। এ জন্য সরকার পতনের পরপরই রাষ্ট্রীয় সম্পদ, বিরোধীদের সম্পদ দখল করে নেয়ার জন্য দলীয় পরিচয় ব্যবহার করছে। প্রতিদিন বিএনপির বিরুদ্ধে লুটপাট-দখল, ডাকাতির অভিযোগ সারা দেশ থেকে আসছে। ফসলিজমি, দোকানপাট, ভিটেবাড়িও তারা দখল করছে। রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে এ ধরনের দখলবাজি ভয়াবহ পরিণতি বয়ে আনবে।
চাঁদাবাজির রাজনীতিতে বিএনপির একটি অংশ নতুন মাত্রা যোগ করেছে জুলাই আন্দোলনের সামনের সারির মুখ ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদকে আক্রমণ করে। তার ওপর হামলার ঘটনাটিও চাঁদাবাজি ঘিরে। বরিশালে একটি সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে গিয়ে চাঁদাবাজির প্রতিবাদ করায় তারা ফুয়াদকে হেনস্তা করে। বিএনপির নামে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে ভিন্ন কোনো দলের প্রতিরোধের মুখে পড়তে হয়নি। ফুয়াদ রাস্তায় দাঁড়িয়ে এর প্রতিবাদ করায় তারা ক্ষিপ্ত হয়।
যারা এসব করছে তারা ধারণাও করতে পারছে না, এসবের পরিণতি কতটা ভয়ানক হতে পারে। আওয়ামী লীগের নগদ পরিণতি দেখেও এদের কোনো হুঁশ নেই। বিবিসির ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে দখল চাঁদাবাজির অভিযোগে চার হাজারের বেশি বহিষ্কারাদেশ হয়েছে। চাঁদাবাজি, দখলবাজি বন্ধ করার জন্য এসব আদেশ কার্যকরী কিছু নয়। কারণ স্থানীয় নেতারা কেন্দ্রের নেতাদের যোগসাজশে এদের সন্ত্রাস-দখলবাজিতে নিযুক্ত রেখেছে। সময়মতো অনেকের বিরুদ্ধে বহিষ্কারাদেশ তুলে নেয়া হচ্ছে।
সদস্যপদ স্থগিত ও বহিষ্কারাদেশ দিয়ে বিএনপি নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করতে চাইলেও ইতোমধ্যে দলটি যে পরিমাণ দুর্নাম কামিয়েছে, তা থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন। এর মধ্যে দলটির শীর্ষপর্যায় থেকে যেভাবে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করা হচ্ছে, সেটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে। অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, রুমিন ফারহানাদের তির্যক বক্তব্য প্রতিপক্ষ গায়ে মাখেনি। এরা বিএনপির ইনার সার্কেলের কেউ নয় বলে গুরুতর বিবেচনা করা হয়নি। ফজলুর রহমানকে সংসদ সদস্য মনোনয়ন দেয়ার পর বিএনপির অবস্থান অনেকটাই বোঝা গেছে। মুক্তিযুদ্ধ, ইসলামপন্থা ও হাসিনার বিচার নিয়ে রহমান সাহেব যা বলছেন, এর সাথে বিএনপির রাজনীতির কখনো কোনো সম্পর্ক দেখা যায়নি। তার কাছে শেখ মুজিব দেবতুল্য, তাকে সম্মান না করলে অপরাধ হবে। মুক্তিযুদ্ধের ভুলভাল ইতিহাস নিয়ে প্রশ্ন তুললে পাপ হবে। আর মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষক ও আলেম-ওলামাদের নিয়ে চরম অসম্মানজনক অশ্রাব্য কথা তিনি বলে যাচ্ছেন। সদস্যপদ স্থগিত করে তার বিরুদ্ধে লঘু একটা ব্যবস্থা নেয়া হয়। তিনি উৎসাহী হয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত হাসিনার যে দণ্ড দিয়েছেন তা মানেন না বলে ঘোষণা দেন। সরকার বদল হলে আদালতের রায় অকার্যকর হয়ে যাবে- এমন ঔদ্ধত্যপূর্ণ মন্তব্যও করেন। তার এমন বেপরোয়া আচরণের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেই। বিএনপির ভেতরে একটি শ্রেণী রয়েছে, যারা জামায়াতকে আক্রমণ করছে হাসিনার পুরনো যুক্তি দিয়ে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে বিএনপির শুভাকাক্সক্ষী হিসেবে পুরনো আওয়ামী লীগ বুদ্ধিজীবী ও সাংবাদিকরা। এদের প্রতি দলীয় হাইকমান্ড আনুক‚ল্য প্রদর্শন করছে।
সর্বশেষ একই লাইনে এসে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নিজেই মন্তব্য করে বসেছেন। মিডিয়া খুব আগ্রহ নিয়ে তার বক্তব্য প্রচার করেছে। তিক্ততা বাড়ানোর পুরনো কৌশল মিডিয়া এতে প্রয়োগ করেছে। তারেক রহমান সরাসরি জামায়াতের নাম না নিলেও প্রথম আলো প্রথম পাতাতে সরাসরি জামায়াতের বিরুদ্ধে তারেক এ কথা বলেছেন, শিরোনাম করেছে। বাংলাদেশ প্রতিদিন ‘৭১-এ তারা লাখ লাখ মানুষ হত্যা ও মা-বোনের ইজ্জত লুটেছিল’ প্রধান শিরোনাম করেছে। এসব পত্রিকা তারেকের বিরুদ্ধে হাসিনার আমলে সীমাহীন কুৎসা রটিয়েছে। যেসব অপরাধ তিনি করেননি, এমনকি তার ধারেকাছেও যাননি, সেগুলোও তার ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছে। হাওয়া ভবনের দুর্নীতির যে প্রচারণা, এতে লিড দিয়েছে প্রথম আলো। হাসিনার পুরো মেয়াদ একটি দুর্নীতির প্রমাণও তারেকের বিরুদ্ধে করা যায়নি। কিন্তু বিশ্বাসযোগ্য তথ্য-উপাত্ত ছাড়াই প্রথম আলো এসব অবমাননাকর রিপোর্ট করেছে।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার দায় চাপিয়ে দিয়েছে তারেক ও বিএনপির ওপর। প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান টিভি টকশোতে এসে তারেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন। ২১ আগস্ট নিয়ে ভারত ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কেন আঙুল তোলা হলো, সে জন্য মতিউর রহমান ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। পরে এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে দেখা গেল, প্রথম আলো ২১ আগস্ট হামলার মোটিভ ঘুরিয়ে দিতে নিজেরাই বড় ধরনের মিশনে নেমেছিল। তারেক রহমান ও খালেদা জিয়াকে নিয়ে বিকৃত কার্টুন একে মানুষের কাছে ঘৃণিত করে তোলার কোনো প্রচেষ্টা বাকি রাখেনি, যা পত্রিকাটি করেনি। অন্য দিকে বাংলাদেশ প্রতিদিন হাসিনার সময়ে তারেক রহমান, খালেদা জিয়া ও বিএনপিকে নিয়ে প্রোপাগান্ডায় নেমেছিল। লন্ডন তারেকের আয়ের উৎস কী, তা নিয়ে অশোভন প্রশ্ন তুলেছিল। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যখনই তারেক হাসিনার লাইনে গিয়ে কথা বলেছেন, অন্যান্য পত্রিকার সাথে তারাও বাড়তি কাভারেজ দিচ্ছে। জামায়াত মুক্তিযুদ্ধের সময় মানুষ হত্যা করেছে- এমন কোনো রেকর্ড পাওয়া যায়নি। দলটির দীর্ঘ ইতিহাসে এর কোনো নেতার বিরুদ্ধে নারীঘটিত কেলেঙ্কারি দেখা যায় না। নিজ দেশের নারীদের ধর্ষণ করবে এবং লাখ লাখ নারীর ধর্ষণে সহযোগী হবে- এটি সম্পূর্ণ অবান্তর। এর সমর্থনে যেমন কোনো তথ্য-উপাত্ত নেই, এটি তেমনি কেউ বিশ্বাসও করে না। কিন্তু রাজনীতির মাঠে এটি ছিল হাসিনার সবচেয়ে ধারাল অস্ত্র। তারেক জিয়াকে পছন্দ করতে না পারা মিডিয়া এই এক বক্তব্য দেয়ার পর কেন তারা ফলাও করে কাভারেজ দিচ্ছে, সেটি পানির মতো পরিষ্কার। তারা চায় না দেশে উন্নত রাজনৈতিক সংস্কৃতির চর্চা হোক।
মানুষ আওয়ামী লীগের বস্তাপচা অসৎ রাজনীতি মোটেও পছন্দ করে না। ডাকসু নির্বাচন ছিল এর টেস্ট কেস। জামায়াতের রাজনীতিকে সুস্থ ধারায় মোকাবেলা না করে হাসিনা তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনে নির্মূল করেছে। দেশবাসীর কাছে এখন বিষয়টি দিবালোকের মতো পরিষ্কার। এ অবস্থায় ডাকসুতে ছাত্রদল শিবিরের বিরুদ্ধে হাসিনার সেই অভিযোগ খাড়া করাতে চেয়েছে। নিজেরা সৃজনশীল রাজনীতি না করে অপরকে অভিযুক্ত করার ফল ছাত্রদল হাতে হাতে পেয়েছে। তারা বড় ধরনের পরাজয়ের শিকার হয়েছে। ছাত্র সংগঠনটির ভিপি প্রার্থী জয়ী সাদিক কায়েমের তিন ভাগের এক ভাগ ভোট পেয়েছে। দলটি ডাকসুতে একটি পদেও জিততে পারেনি। তার পরও হুঁশ ফেরেনি তাদের। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনেও একই কৌশল প্রয়োগ করে নিজেদের পরাজয়ের ব্যবধান আরো বাড়িয়েছে। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দখলবাণিজ্য নিয়ে বিএনপির বিরুদ্ধে দেশব্যাপী অভিযোগের মধ্যে দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব হাসিনার অভিযোগের রাজনীতির অনুসরণ করছে। এটি দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে বিদ্বেষ বাড়াবে নিঃসন্দেহে।
লেখক : সহকারী সম্পাদক, দৈনিক নয়া দিগন্ত
[email protected]



