গুপ্ত কিভাবে হলো; পিন্ডি কী জিনিস

শব্দটি হলো ‘পিন্ডি’। বাংলায় এ শব্দের অর্থ চক্রের কেন্দ্রস্থল। নাভী, দেহ, পীঠ- এসব প্রতিশব্দে এটি ব্যবহার হয়। ‘পিন্ডি চটকানো’ নামে বাংলায় একটি প্রবচনও আছে। অর্থ- অমঙ্গল কামনা বা মৃত্যু কামনা করা। কাউকে তীব্র ভাষায় গালাগাল করতে এবং অভিশাপ দিতে এটি ব্যবহৃত হয়। তবে এসব অর্থে শব্দটিকে হাসিনা-পরবর্তী সময়ে রাজনীতিতে টেনে আনা হয়নি। নেতারা বাংলা অভিধান দেখে শব্দটি রাজনীতিতে টেনে আনেননি। পাকিস্তানের একটি শহরের নাম রাওয়ালপিন্ডি। সেখান থেকে এর আগমন। তবে এর যে গূঢ় অর্থ ইঙ্গিত করে ব্যবহার করা হচ্ছে, সেটি বাংলাদেশের জন্য অপমানজনক অবমাননাকর

রাজনীতিতে পেশিশক্তির ব্যবহার, অস্ত্রের ঝনঝনানি, মিথ্যা কথন ও ভণ্ডামি আর পছন্দ করছেন না মানুষ। রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে মোটাদাগ পরিবর্তন হয়ে গেছে। পাশাপাশি আত্মপরিচয়ে ফেরার তাগিদও দেশের মানুষের মধ্যে বিপুল অনুভ‚ত হচ্ছে। এ দেশের মানুষ বাংলাদেশী মুসলমান পরিচয়ে বাঁচতে চায়। তরুণ প্রজন্ম এক ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানে হাসিনাকে তাড়ানোর পর এ পরিবর্তনের সূচনা হয়েছে। তবে মিডিয়ার বড় একটি অংশ একে দক্ষিণপন্থার দিকে ঝুঁকে যাওয়ার শঙ্কা হিসেবে চিত্রিত করতে চায়। এ পরিবর্তন নিয়ে তারা ভয় পাচ্ছে, কিছু রাজনৈতিক দলও উদ্বিগ্ন। বাস্তবে এ পরিবর্তন বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুরক্ষা, দীর্ঘমেয়াদে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বয়ে আনার ইঙ্গিত দিচ্ছে।

পরিবর্তনের প্রথম নমুনা পাওয়া গেল ছাত্র সংসদ নির্বাচনে। বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সন্ত্রাস ও পেশিশক্তি প্রদর্শনের কেন্দ্র। হল দখল, ক্যাম্পাস নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ে লাশ পড়েছে, আহত পঙ্গু হয়েছে বহু শিক্ষার্থী। সেই ক্যাম্পাসে এখন সম্পূর্ণ এক ভিন্ন চিত্র। চব্বিশ সালের জুলাইয়ে ছাত্রসমাজ এক হয়ে সন্ত্রাসী ছাত্রলীগকে তাড়িয়ে দেয়। বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি ছিল এক নজিরবিহীন ঘটনা। ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা ছিল সশস্ত্র এবং প্রশাসনের পূর্ণ সমর্থনে একটি পেটোয়া বাহিনী। অন্য দিকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছিলেন নিরস্ত্র, বিচ্ছিন্ন ও পুলিশ প্রশাসনের অস্ত্র, হামলা ও মামলার মুখে। তার পরও ক্ষুব্ধ-বঞ্চিত ছাত্রদের তোপের মুখে ছাত্রলীগ লেজ গুটিয়ে পালিয়ে যায়। ক্ষমতায় থাকাবস্থায় রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার মধ্যে থেকে কোনো ছাত্র সংগঠন এভাবে পালিয়ে গেছে- দেশে এর আগে দেখা যায়নি।

তার পর অন্য কোনো ছাত্র সংগঠন ক্যাম্পাস দখলের পুরনো সংস্কৃতি চালুর সাহস করেনি। সাধারণ ছাত্ররা অত্যন্ত সচেতনতার পরিচয় দিচ্ছে। দেশের সেরা চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে এর প্রভাব স্পষ্ট। পেশিশক্তি ও অস্ত্রের প্রভাব শূন্যে নেমে এসেছে এসব ক্যাম্পাসে। এমনকি কেউ কাউকে কটু কথা বলার সাহস দেখায়নি। ডাকসুতে যারা অন্যায়ভাবে প্রতিপক্ষকে ঘায়েলের অপচেষ্টা করেছিল, তারাও ছাত্রদের সমর্থন হারিয়েছে। আওয়ামী কায়দায় ইসলামী ছাত্রশিবিরকে ঠেকানোর চেষ্টা ছাত্র সংগঠনটির জন্য আশীর্বাদ হয়েছে। তাদের জনপ্রিয়তা বাড়িয়েছে। তারা প্রায় সব পদে জয় পেয়েছে, ভোটের ব্যবধান হয়েছে দ্বিগুণ, কিছু ক্ষেত্রে তিনগুণ। ডাকসু নির্বাচন পুরো জাতির জন্য একটি ইশারা। জাকসু, রাকসু ও চাকসুতেও এর প্রতিফলন ঘটেছে। এসব শিক্ষাঙ্গনের ছাত্র সংসদ নির্বাচনেও কোনো ধরনের জোর খাটানোর চেষ্টা করেনি কেউ।

ছাত্র সংসদ নির্বাচনে শিবিরের বিপুল বিজয়ের পেছনে পুরনো রাজনৈতিক সংস্কৃতি প্রধান ভ‚মিকা রেখেছে। জনগণের ওপর অপমান, লাঞ্ছনা, নির্যাতন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের যে জগদ্দল পাথর চাপানো হয়েছিল, তাতে প্রথম শিকার হয় শিবির। হাসিনা সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যে সীমাহীন নির্যাতন-নিপীড়ন চালিয়েছে; তার প্রধান ভুক্তভোগী ছিলেন এই ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মী। ছাত্র সংগঠটিকে পদ্ধতিগত নিধনের শিকার বানানো হয়। ক্যাম্পাস থেকে নাম-নিশানা মুছে ফেলতে একটি কেন্দ্রীয় পরিকল্পনার আওতায় তা করা হয়। মাঠে এর বাস্তবায়ন করেছে ছাত্রলীগ। সাথে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও তার অধীনে থাকা প্রশাসন এবং পুলিশ ও গোয়ন্দা নেটওয়ার্ক- মোটকথা পুরো রাষ্ট্রযন্ত্র একযোগে কাজ করেছে। শিক্ষাঙ্গন থেকে শিবিরকে সমূলে উচ্ছেদের উত্তম নমুনা বুয়েট। সেখানে ‘আড়িপাতা’ নামে একটি সামাজিক গ্রুপ সহযোগী হয়ে কাজ করছিল। ছাত্রলীগ ও বামরা মিলে এ কাজ আঞ্জাম দিত। হাসিনার শাসনামলে বুয়েট হয়ে উঠেছিল শিবিরের জন্য প্রথম মৃত্যুপুরী। আবরার হত্যার আগেও শিবির সেখানে হত্যাযোগ্য ছিল। শিবিরের বুয়েট শাখার সভাপতি সিরাজুল ইসলামকে আবরার ফাহাদের কায়দায় ২০১৭ সালে নির্যাতন করা হয়। গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে দীর্ঘদিন চিকিৎসা নিতে হয় তাকে। এরপর প্রতিষ্ঠানটিতে তিনি আর ফিরতে পারেননি। তাকে উচ্চশিক্ষা সম্পূর্ণ করতে হয়েছে অন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তিনি পরে শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি হয়েছিলেন। শিবির করার অপরাধে বহু ছাত্রকে এভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছেড়ে যেতে হয়েছে।

হাসিনা সরকারের শুরু থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিবিরকে অত্যাচার-নিপীড়ন ও তাড়িয়ে দেয়া সংস্কৃতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। যারা এটি করত তাদের জন্য পুরস্কার মিলত। তাই ছাত্রলীগের পদ-পদবি পেতে কিংবা শীর্ষ নেতাদের নজর কাড়তে তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলত কে কত বেশি শিবিরের নেতাকর্মীকে নির্যাতন করতে পারে। একই সংস্কৃতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যেও বিস্তার লাভ করে। হাসিনার প্রশাসনে তারাই তরতর করে উপরে উঠতেন যারা শিবির নেতাকর্মীকে হত্যা গুম ও নির্যাতন করতে পারতেন। প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরাও এ নিষ্ঠুর চক্রের সাথী হয়েছিলেন। তারা সাধারণত ছাত্রলীগের সহযোগী হয়ে মামলা দিয়ে তাদের পুলিশের কাছে তুলে দিতেন। অপরাধের সাথে জড়িত কি না তা বিবেচনায় নিতে রাজি ছিলেন না শিক্ষকরাও। এরপর ভুক্তভোগীর সংশ্লিষ্ট ক্যাম্পাসে ফেরা অসম্ভব হয়ে পড়ত। সাথে যুক্ত হতো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার স্থায়ী নিষ্পেষণ। তারা এই ছাত্র ও তার পরিবারের কাছে থেকে চাঁদা আদায় করত। না দিলে ভুয়া মামলায় আবারো ফাঁসানো হতো। এভাবে শিবির সংশ্লিষ্টতায় হাজারো পরিবার দেশে নিঃস্ব হয়েছেন। নির্যাতনের এ চক্রের মধ্যে পরবর্তীতে জামায়াত ও বিএনপিও পড়েছিল। সারা দেশে লাখ লাখ পরিবার পুলিশ প্রশাসন ও আওয়ামী চক্রের শোষণের এক হাতিয়ারে পরিণত হয়েছিল।

ভয় দেখিয়ে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার একটি টুল হিসেবে শিবিরকে ‘উন’ মানুষে পরিণত করা হয়েছিল। পুরান ঢাকার গরিব দর্জি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিশ্বজিৎ দাসকে প্রকাশ্যে রাজপথে পিটিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে এ সংস্কৃতি চালু করেছিল সন্ত্রাসী বাহিনী ছাত্রলীগ। শিবির হত্যা করা যে বৈধ এবং কৃতিত্ব নেয়ার মতো কাজ, ২০১২ সালে বিশ্বজিৎকে হত্যা করে তারা বুঝিয়ে দিয়েছিল। ছাত্রলীগের সাথে এ কাজে সহযোগী ছিল পুলিশ লীগ। বিশ্বজিৎকে বাঁচানোর বদলে ছাত্রলীগকে সে দিন তারা কাছে থেকে পাহারা দিয়েছে। হিন্দু বলে চিৎকার করে তার পরিচয় প্রকাশ করেও সে রেহাই পায়নি।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর প্রথমে সব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিবিরকে উচ্ছেদ করা হয়। বয়ান প্রতিষ্ঠিত করা হয় তারা হত্যাযোগ্য। শুধু ক্যাম্পাস নয়, জনপরিসরেও তাদের বিদায় করে দেয়া হয়েছিল। বিশ্বজিৎ ও আবরার হত্যার পর কিভাবে সম্ভব ছিল শিবির তার পরিচয় প্রকাশ করবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিবিরের পরিচয় প্রকাশের অর্থ ছিল নিজের মৃত্যু নিশ্চিত করা। না হয় শিক্ষাজীবনের করুণ পরিসমাপ্তি। হাসিনার দেড় যুগে হত্যা, গুম, শিক্ষাজীবন বিনষ্ট, হামলা-মামলার মাধ্যমে নরকের শাস্তি নেমে এসেছিল শিবিরের হাজারো নেতাকর্মীর ওপর। এ জন্য বাধ্য হয়ে শিবির পরিচয় প্রকাশ থেকে বিরত থাকে। নিজের জীবন রক্ষা ও শিক্ষাগ্রহণের জন্য তাদের এটা করতে হয়েছে। এই গোপনীয়তা অবলম্বনে মন্দ কোনো অভিপ্রায় ছিল না। পরিচয় লুকিয়ে তারা কোনো অবৈধ কাজ করেছেন এর কোনো প্রমাণ নেই। শুধু জীবন বাঁচিয়েছেন। অথচ এ অবস্থাকে এখন গুপ্ত বলে নির্দয়ভাবে উপহাস করা হচ্ছে। বামরাই নতুন এই ট্যাগ লাগিয়েছে। যারা আগে শিবিরকে ‘রগকাটা’র ট্যাগ দিয়েছিল। তারা চায় সবসময় শিবিরকে হত্যাযোগ্য করে রাখতে। বামদের এই অশুভ রাজনীতি সবার জানা। কিন্তু বামদের মুখের ট্যাগটি যখন ফ্যাসিবাদের শিকার দলগুলো মুখে তুলে নেয় সেটা দুঃখজনক। কারণ এরাই আওয়ামীদের দোসর হয়ে ফ্যাসিবাদ কায়েমে সহযোগী ছিল।

আমাদের রাজনীতির আঙ্গিনায় হাসিনা-পরবর্তী আরেকটি শব্দের অনুপ্রবেশ ঘটেছে। শব্দটি আসলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতাদের বুদ্ধির দীনতা উৎকটভাবে প্রকাশ করে দিয়েছে। ফ্যাসিবাদমুক্ত দেশে তাদের রাজনীতির পরিভাষা কী হবে, সেটি তারা ঠাওর করতে ব্যর্থ হয়েছেন। শব্দটি হলো ‘পিন্ডি’। বাংলায় এ শব্দের অর্থ চক্রের কেন্দ্রস্থল। নাভী, দেহ, পীঠ- এসব প্রতিশব্দে এটি ব্যবহার হয়। ‘পিন্ডি চটকানো’ নামে বাংলায় একটি প্রবচনও আছে। অর্থ- অমঙ্গল কামনা বা মৃত্যু কামনা করা। কাউকে তীব্র ভাষায় গালাগাল করতে এবং অভিশাপ দিতে এটি ব্যবহৃত হয়। তবে এসব অর্থে শব্দটিকে হাসিনা-পরবর্তী সময়ে রাজনীতিতে টেনে আনা হয়নি। নেতারা বাংলা অভিধান দেখে শব্দটি রাজনীতিতে টেনে আনেননি। পাকিস্তানের একটি শহরের নাম রাওয়ালপিন্ডি। সেখান থেকে এর আগমন। তবে এর যে গূঢ় অর্থ ইঙ্গিত করে ব্যবহার করা হচ্ছে, সেটি বাংলাদেশের জন্য অপমানজনক অবমাননাকর। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদর দফতর রাওয়ালপিন্ডিতে। পরমাণু শক্তিধর পাকিস্তানের যৌথবাহিনীর কেন্দ্র এখানে। দেশ বিভাগের আগে থেকে রাওয়ালপিন্ডি গ্যারিসন সিটি। তাই এটি বহু আগে থেকে আলোচনায় আছে।

পাকিস্তানের রাজনীতিতে সামরিক বাহিনীর প্রভাব ব্যাপক। নির্বাচিত সরকারের চেয়ে ক্ষেত্র বিশেষে সে দেশের সামরিক বাহিনী বেশি প্রভাবশালী। জনগণ ভোট দিয়ে যাকে নির্বাচিত করুন না কেন, পিন্ডির সিদ্ধান্ত অনেক সময় তার ওপরে স্থান পায়। দেশটির সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা তেহরিক-ই-ইনসাফ পার্টির প্রধান ইমরান খান এ কারণে বছরের পর বছর ধরে বন্দী আছেন। বাংলাদেশে শব্দটি আনা হয়েছে দিল্লির সমার্থক হিসেবে। এর ব্যবহার হচ্ছে এভাবে- দিল্লি নয়; পিন্ডি নয়’। দিল্লি বাংলাদেশে আধিপত্যবাদের প্রতীক। তারা বাংলাদেশের ওপর ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে চাপিয়ে দিয়েছিল। স্বাধীনতা-পরবর্তী ইতিহাসে এ দেশের কষ্ট-দুঃখের বড় কারণ দিল্লি। শব্দটি ঘৃণা, রাগ ও রোষের জন্ম দেয় বাংলাদেশের মানুষের মনে। বর্তমানে দিল্লি যে অর্থে আমাদের অপছন্দের, সেই অর্থে একটি কাজও পিন্ডি করেছে তেমন নেই। স্বাধীনতা-পরবর্তী পাকিস্তান সেনাবাহিনী বাংলাদেশের কোনো বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেনি; করার তাদের সুযোগ সামর্থ্য কোনোটি ছিল না। এর একটি উদাহরণও কি খুঁজে পাওয়া যাবে?

৫৪টি অভিন্ন নদীর পানির একটিতেও দিল্লি ন্যায্য হিস্যা দেয় না। উজানে শুষ্ক মৌসুমে পানি আটকে দেয়। বর্ষায় বাঁধ ছেড়ে দিয়ে বন্যায় ভাসিয়ে দেয়। একই নদীতে ক্ষতিকর রাসায়নিক ছেড়ে দিয়ে পরিবেশ দূষিত করে। সীমান্তে মাদকের কারখানা গড়ে তুলেছে। একসাথে দুই উদ্দেশ্য হাসিল করে ভারত। ব্যবসায়ও করছে, অন্য দিকে বাংলাদেশী তরুণদের ধ্বংসও করছে। সীমান্তজুড়ে কাঁটাতারের বেড়া তৈরি করেছে দিল্লি। সুযোগ পেলে বাংলাদেশের ভ‚মি দখল করে। সীমান্তে পাখির মতো গুলি করে বাংলাদেশীদের হত্যা, অত্যাচার-নির্যাতন ও ভীতি প্রদর্শন জারি রেখেছে ভারত। এর কোনটি পিন্ডি আমাদের করতে পারে? এমন ক্ষতি করার কোনো সুযোগ কি পাকিস্তানের আছে?

রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিজেদের চর অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে আমাদের সবচেয়ে বড় ক্ষতিটি করে দিল্লি। বাংলাদেশের রাজনীতিতে দূষণের অন্যতম প্রধান করাণ এই অনুপ্রবেশ। স্বাধীনতার ৫৪ বছর ধরে তাদের অনুচরদের দিয়ে দেশবিরোধী অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে। জাতীয় পার্টি ভারতের পুতুল হিসেবে ইতোমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে। পিন্ডি বাংলাদেশের রাজনীতিতে দিল্লির কাউন্টার করতে পারলে এমনটি সম্ভব হতো না। দেড় দশক চেপে বসতে পারত না হাসিনার নির্দয় শাসন। সবচেয়ে অপমানকর হচ্ছে- দিল্লির রাজনৈতিক নেতাদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য। প্রতিনিয়ত তারা বাংলাদেশের মানুষকে পোকামাকড়ের সাথে তুলনা করে, অনুপ্রবেশকারী বলে অভিযুক্ত করেন। বাংলাদেশ থেকে যাওয়া পর্যটক, রোগী ও ছাত্রদের হেনস্তা করে, পিটিয়ে হত্যাও করা হয়েছে। পিন্ডি এমন আচরণ করে না, তারা বাংলাদেশীদের ভাই হিসেবে আপ্যায়ন করে। সে দেশে থাকা বাংলাদেশীরা কখনো অপমান বা হেনস্তার শিকার হন না। অবৈধ বাংলাদেশীদেরও তাড়ানোর কোনো উদ্যোগ নেয়নি পিন্ডি।

সত্যিকার অর্থে পিন্ডির কোনো প্রভাব যদি আমাদের ওপর থাকত, এখন সবচেয়ে লাভবান হওয়ার সুযোগ থাকত। বাংলাদেশ সীমান্তে নতুন ঘাঁটি নির্মাণ করছে দিল্লি। সামরিক স্থাপনা তৈরি করে তারা আমাদের ঘিরে ফেলছে । আমরা ছোট রাষ্ট্র, তিন দিকে ভারত- আশপাশে কোনো বন্ধু নেই। তার ওপর আমাদের নিরাপত্তা কাঠামো হাসিনা পঙ্গু করে দিয়েছে। ভারতের রয়েছে পরমাণুু শক্তি। এ দিকে হাসিনার দেড় দশকে আমাদের সব গোয়েন্দা তথ্য দিল্লি হাতিয়ে নিয়েছে। একই সময় আমাদের সামরিক বাহিনীর সক্ষমতা বাড়ায়নি হাসিনা দিল্লির প্রেসক্রিপশনে। উদ্বেগ বাড়ছে, বাংলাদেশের ভ‚মি দখল করে নিতে পারে ভারত। পিন্ডির প্রভাব এ অবস্থায় আশীর্বাদ আমাদের। তাহলে কেন দিল্লির সাথে সমার্থক করে পিন্ডির নাম নেয়া হচ্ছে?

দিল্লির শত্রুতা প্রকাশ্য ও প্রমাণিত। বাংলাদেশের নিরাপত্তা নাজুকতার একমাত্র কারণ ভারত। আমাদের নিজেদের নিরাপত্তায় উপযুক্ত মিত্র দরকার। এ অঞ্চলে আমাদের সেই মিত্র কি মিয়ানমার? যারা রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দিয়েছে। এ ছাড়া আর কোন দেশ আছে দিল্লির জানি দুশমন, যে আমাদের সত্যিকার মিত্র হতে পারে। চীন কি আমাদের সেই ধরনের মিত্র হতে পারবে? ভ‚রাজনৈতিক বাস্তবতা এবং ধর্র্মীয় ও সাংস্কৃতিক কারণে বন্ধুর তালিকায় সম্ভবত পাকিস্তান এক নম্বরে রয়েছে। এ অবস্থায় পিন্ডিকে দিল্লির কাতারে শত্রুর তালিকায় রাখা শুধু রাজনৈতিক সুবিধাবাদিতা নয়, চরম বোকামিও বটে।

লেখক : সহকারী সম্পাদক, দৈনিক নয়া দিগন্ত
[email protected]