জুলাই সনদ, গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন

এ মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো, অভ্যন্তরীণ ঐকমত্য ও আঞ্চলিক আস্থা গঠন, যাতে গণভোট বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে এক অন্তর্ভুক্তিমূলক গণচুক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।

দেশের রাজনৈতিক দলগুলো জুলাই সনদের বাস্তবায়নের বিষয়ে মতৈক্যের কাছাকাছি চলে এসেছে। সব দলই একমত হয়েছে যে, গণভোটের মাধ্যমে জাতীয় সম্মতি নিয়ে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করা হবে। গণভোটের সময় নিয়ে মতের কিছুটা ব্যবধান থেকে গেছে। এই ব্যবধান নিরসনে কাল রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন আরেক দফা বসতে পারে। তাতে সবাই একমত না হলে কমিশন তাদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে সনদটি স্বাক্ষরের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে উপস্থাপন করবে। আশা করা যায় এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টিরও ফয়সালা হয়ে যাবে।

জুলাই সনদের বাস্তবায়ন এখন বাংলাদেশের জাতীয় পুনর্গঠন ও রাজনৈতিক সংস্কারের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু। সেজন্য আইনগত, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক দৃষ্টিকোণ থেকে এর বিশ্লেষণ গুরুত্বপূর্ণ।

গণভোটের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

২০২৫ সালের জুলাই জাতীয় সনদ মূলত ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লব ও তার পরের অন্তর্বর্তী সরকারের রাজনৈতিক দর্শন, সংস্কারমূলক দিকনির্দেশনা ও রাষ্ট্র পুনর্গঠনের রূপরেখা নির্ধারণ করেছে। প্রশ্ন হলো, এই সনদে বর্ণিত নতুন সংবিধান সংস্কার, প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ, বিচার ও অর্থনৈতিক সংস্কার কিভাবে জনগণের আনুষ্ঠানিক অনুমোদন পাবে? তার উত্তরই হলো মূলত গণভোট।

গণভোটের সময় নির্ধারণ তিনটি ধাপে নির্ভর করছে। প্রথম ধাপ হলো- রাজনৈতিক ঐকমত্য সম্পন্ন হওয়া। সব দলের সম্মতি অর্জিত হলেই গণভোটের তারিখ ঘোষণা করা সম্ভব হবে। এর সম্ভাব্য সময়সীমা হতে পারে ২০২৫ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বর, যাতে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের আগেই জনগণের মতামত জানা যায়।

দ্বিতীয় ধাপ হিসেবে রয়েছে- আইনগত প্রস্তুতি ও প্রশাসনিক কাঠামোর বিষয়টি। গণভোট পরিচালনার জন্য নির্বাচন কমিশন আইন ২০২২ অনুযায়ী একটি বিশেষ বিধি প্রণয়ন করতে হবে। প্রয়োজন হলে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আইন ২০২৫ করে সেটিকে গণভোটের আইনি ভিত্তি হিসেবে সংযোজন করা হতে পারে। এরপর তৃতীয় ধাপ হবে রাজনৈতিক অনুমোদন ও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা। ১৫ অক্টোবরের মধ্যে এটি সম্পন্ন হতে পারে। প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অন্তর্বর্তী মন্ত্রিসভা গণভোটের তারিখ ও প্রশ্ন অনুমোদন করবে। এরপর রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে গেজেট প্রজ্ঞাপন প্রকাশিত হবে।

গণভোটে একটি বা একাধিক প্রশ্ন থাকতে পারে। এর সম্ভাব্য রূপ হতে পারে-‘আপনি কি জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫-এ বর্ণিত রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক সংস্কারসমূহ সমর্থন করেন? হ্যাঁ অথবা না। যদি সংবিধান সংশোধন বা জাতীয় নীতিমালা হিসেবে সনদটির অনুমোদন চাওয়া হয়, তাহলে প্রশ্নটি হতে পারে আরো নির্দিষ্ট আকারে।

গণভোট আয়োজন করবে নির্বাচন কমিশন। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের তাতে আমন্ত্রণ জানানো যেতে পারে। এর মিডিয়া কভারেজ ও ফলাফল প্রকাশে স্বচ্ছতা ও অনলাইন ফলাফল ট্র্যাকিং ব্যবস্থা করতে হবে কমিশনকে। নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক সহায়তার জন্য সেনা, বিজিবি, পুলিশ যৌথভাবে মোতায়েন করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ইসির অধীনে কাজ করবে। বাংলাদেশের সংবিধানের ধারা ৫৯(২) এবং ৭(১) অনুযায়ী জনগণই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার উৎস। ফলে গণভোটে যদি সংখ্যাগরিষ্ঠ ‘হ্যাঁ’ ভোট পড়ে তাহলে জুলাই সনদ রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারণের আইনগত ও গণতান্ত্রিক ভিত্তি পাবে; পরবর্তী সংসদ ও সরকার সেই সনদ অনুসারে নীতিমালা ও আইন প্রণয়ন করতে বাধ্য থাকবে।

জনগণের প্রত্যক্ষ অনুমোদন পেলে সনদটি শুধু দলীয় নথি নয়, জাতীয় চুক্তিতে পরিণত হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের বৈধতা ও উত্তরাধিকার নির্ধারণে গণভোট একটি মাইলফলক হবে। ২০২৬ সালের নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজনের মাধ্যমে রাজনৈতিক মেরুকরণ হ্রাস করা যাবে।

গণভোটের সামনে কিছু চ্যালেঞ্জ এবং তা অতিক্রমের জন্য কিছু করণীয় রয়েছে। এর মধ্যে রাজনৈতিক বিভাজনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সব দলের অংশগ্রহণ ও প্রচারণার সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। আইনগত অস্পষ্টতা দূর করতে সংসদ বা অধ্যাদেশের মাধ্যমে আইনি কাঠামো প্রণয়ন এবং জনগণের আগ্রহ গণসচেতনতা তৈরির জন্য নাগরিক প্রচারণা জোরদার করতে হবে। ভুয়া তথ্য ও প্রভাব নিরসনে ডিজিটাল প্রচারণায় নীতিমালা প্রণয়ন ও ফ্যাক্ট-চেকিং ব্যবস্থা করতে হবে।

গণভোটের সফল আয়োজন কেবল একটি প্রশাসনিক প্রক্রিয়া নয়, বরং একটি নতুন জাতীয় চুক্তির সূচনা করবে। এটি ২০২৪ সালের বিপ্লবের ধারাকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেবে; রাজনৈতিক মেরুকরণ কমিয়ে ঐকমত্যের রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করবে; অন্তর্বর্তী সরকারের বৈধতা ও সংস্কারপ্রক্রিয়ায় জন-আস্থা বাড়াবে; আন্তর্জাতিক পরিসরেও বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরবে।

সতর্ক আওয়ামী লীগ, কৌশলগত নজরদারিতে ভারত

বাংলাদেশের রাজনৈতিক রূপান্তরের নতুন অধ্যায় হতে যাচ্ছে জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫-এর বাস্তবায়ন।

অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ইতোমধ্যে গণভোট আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

এই উদ্যোগ ঘিরে দুই দিক থেকে সূ² প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে- একদিকে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক পুনর্বাসন কৌশল, অন্যদিকে ভারতের ভূকৌশলগত সতর্কতা।

প্রশ্ন হতে পারে, এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের দৃষ্টিকোণ কী হতে পারে। আওয়ামী লীগ ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবের পর ক্ষমতাচ্যুত হলেও এখন তারা পুনর্গঠনের প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক পুনর্বাসনের সুযোগ খুঁজছে। ‘জুলাই সনদ’ তাদের কাছে দ্বিমুখী চিত্র হাজির করেছে। একদিকে এটি জনগণের দাবির প্রতিফলন, কিন্তু অন্যদিকে এটি তাদের অতীত ক্ষমতাচর্চার নৈতিক ব্যর্থতার রায়। ফলে গণভোট বিষয়ে আওয়ামী লীগের অবস্থান হতে পারে ‘শর্তযুক্ত অংশগ্রহণ’ অথবা ‘নিরপেক্ষ কিন্তু সতর্ক পর্যবেক্ষণ’। তারা চাইবে গণভোট যেন তাদের ‘বিরোধী শক্তি’ হিসেবে প্রান্তিক না করে; জুলাই সনদে যদি ‘দলীয় রাজনীতির সংস্কার’ বা ‘রাজনৈতিক দায়বদ্ধতার’ প্রসঙ্গ আসে, তা যেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যাখ্যা না হয়; আর যদি গণভোটে ব্যাপক জনসমর্থন দেখা দেয়, আওয়ামী লীগ নিজেকে পুনর্গঠিত দল হিসেবে সেই স্রোতে অন্তর্ভুক্ত করতে পারে।

এক্ষেত্রে নীতিগত আপত্তির মধ্যে থাকতে পারে- জুলাই সনদের আদর্শ বনাম মুক্তিযুদ্ধের বর্ণনা। আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ধরে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’র একচ্ছত্র ব্যাখ্যাকারী দল। জুলাই সনদের ‘নাগরিক সার্বভৌমত্ব’ ও ‘অদলীয় রাষ্ট্রকাঠামো’ ধারণা তাদের আদর্শিক একচেটিয়া অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। অন্তর্বর্তী সরকারের বৈধতা ইস্যু তাদের সামনে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হতে পারে। তারা গণভোটকে ‘ইউনূস সরকারের বৈধতা প্রতিষ্ঠার কৌশল’ হিসেবে চিত্রিত করতে পারে। ‘জুলাই সনদ’ তাদের কাছে একদিকে জনগণের দাবির প্রতিফলন, অন্যদিকে অতীতের দলীয় কর্তৃত্ববাদ ও জবাবদিহিশূন্য রাজনীতির প্রতীকী বিচার।

ফলে গণভোট নিয়ে দলের ভেতরে দ্বিধা রয়েছে- এক অংশ মনে করে, গণভোটে সরাসরি বিরোধিতা করলে দলটি জনবিচ্ছিন্ন বলে গণ্য হবে; আর অন্য অংশ বলছে, এটি ‘ইউনূস সরকারের বৈধতা প্রতিষ্ঠার কৌশল’, যা রাজনৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। যদি রাজনৈতিক সংস্কার, দায়বদ্ধতা ও দলীয় জবাবদিহির প্রশ্ন জোরালোভাবে আসে, আওয়ামী লীগ তা সমর্থন করবে না; তবে জনগণের রায় পুরোপুরি অস্বীকারও করবে না। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের ইউটিউবাররা এ নিয়ে প্রচার প্রচারণা শুরু করেছে।

ভারতের দৃষ্টিকোণ : ভূকৌশল ও নীতিগত বাস্তবতা বাংলাদেশের রাজনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হয়। ভারতের প্রধান উদ্বেগ আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও সীমান্ত নিরাপত্তা নিয়ে। দিল্লির দৃষ্টিতে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা সরাসরি ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় নিরাপত্তা ও নদী-পানিনীতি, বাণিজ্য করিডোর ও সংযোগ কৌশল-এর সাথে যুক্ত। তাই জুলাই সনদ বা গণভোট প্রসঙ্গে ভারত প্রকাশ্যে নিরপেক্ষ থাকলেও অন্তরালে কৌশলগত নজরদারি বজায় রাখবে।

তাদের মূল প্রশ্ন হবে, গণভোটের পর সরকার পরিবর্তন বা নীতির ধারাবাহিকতা কী হবে? চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব কোন দিকে ভারসাম্য পাবে? আঞ্চলিক সংযোগ তাতে প্রভাবিত হবে কি না? সম্ভাব্য কূটনৈতিক অবস্থানের ক্ষেত্রে ভারত বলতে পারে, ‘গণভোট বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়, তবে এটি যেন শান্তিপূর্ণ ও স্বচ্ছভাবে হয়, সেই প্রত্যাশা রাখি। কূটনৈতিক পর্যায়ে দিল্লি চায় না, গণভোটের মাধ্যমে এমন কোনো সাংবিধানিক পরিবর্তন হোক যাতে ভারতের কৌশলগত অংশীদারত্ব ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

তারা চাইবে অন্তর্বর্তী সরকারের সাথে নিরবচ্ছিন্ন কূটনৈতিক যোগাযোগ এবং গণভোট-পরবর্তী পরিস্থিতিতে নতুন রাজনৈতিক ভারসাম্য দ্রুত স্থিতিশীল হোক।

তবে প্রতিবেশী দেশটির গোপন কৌশলগত স্বার্থ থাকতে পারে। ভারতের গোয়েন্দা ও কূটনৈতিক মহলে এখন মূল প্রশ্ন হলো, জুলাই সনদের ‘নতুন আঞ্চলিক অর্থনীতি’র ধারণা কি চীন ও বিমসটেকভিত্তিক অর্থনৈতিক বলয়কে শক্তিশালী করছে? যদি এর জবাব হ্যাঁ হয় তবে ভারত কৌশলগতভাবে সতর্ক থাকবে এবং গণভোট-পরবর্তী নীতিপ্রবাহে ‘প্রভাব রক্ষার কূটনীতি’ প্রয়োগ করবে। এর মধ্যে প্রতিবেশী দেশটি ২৪ এর জুলাই বিপ্লবের পর তাদের হারানো গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক পুনর্গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে। বেসামরিক নিরাপত্তা প্রশাসন সুশীল সমাজ-সব পরিসরে। এক্ষেত্রে পুরনো রাজনৈতিক মিত্র শক্তি কোণঠাসা থাকার কারণে বিকল্প রাজনৈতিক শক্তির ওপর ভর করে এই নেটওয়ার্ক নির্মাণের কাজ চলছে। ফলে এই শক্তিটিকে ক্ষমতায় নিয়ে যাওয়ার একটি প্রচেষ্টা তাদের বিকল্পের মধ্যে রয়েছে।

সার্বিক বিবেচনায়-ভারত গণভোটের মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণের ইচ্ছার প্রতি প্রকাশ্যে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করবে, তবে তারা চাইবে- নতুন সরকার ভারতের সাথে নিরাপত্তা, বাণিজ্য ও সংযোগ নীতিতে ধারাবাহিকতা বজায় রাখুক এবং ‘বাংলাদেশ-ভারত পারস্পরিক আস্থার ফ্রেমওয়ার্ক’ যেন নতুন কোনো আদর্শিক কাঠামোয় ক্ষুণ্ণ না হয়।

দিল্লির এক সাবেক কূটনীতিকের ভাষ্য অনুসারে- ‘ভারত গণভোটের মাধ্যমে জনগণের ইচ্ছাকে সম্মান করবে, তবে নতুন সাংবিধানিক কাঠামো যেন আঞ্চলিক নীতির ধারাবাহিকতা ব্যাহত না করে।’ তার মতে, ভারতের প্রধান তিনটি উদ্বেগ- প্রথমত, অন্তর্বর্তী সরকারের পরবর্তী ধারাবাহিকতা ও নীতির স্থিতিশীলতা; দ্বিতীয়ত, চীন ও পশ্চিমা প্রভাবের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান; তৃতীয়ত, আঞ্চলিক সংযোগ প্রকল্পগুলোর ধারাবাহিকতা।

আওয়ামী লীগ ভারত দুই প্রান্তের পার্থক্য : একপক্ষে পুনর্গঠন, অন্যপক্ষে প্রভাবরক্ষা

গণভোট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের ইতিহাসে এক ঐতিহাসিক সুযোগ তৈরি করছে।

তবে এর সাফল্য নির্ভর করবে-রাজনৈতিক দলগুলোর পারস্পরিক আস্থার ওপর, প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা ও গণমাধ্যমের স্বচ্ছতার ওপর এবং কিছুটা প্রতিবেশী ভারতের আঞ্চলিক আস্থা সৃষ্টির ওপর।

যদি আওয়ামী লীগ গণভোটকে ‘জনমতের সুযোগ’ হিসেবে গ্রহণ করে, আর ভারত এটিকে বাংলাদেশের জনগণের আত্মনির্ধারণের প্রক্রিয়া হিসেবে সম্মান করে, তাহলে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের গণভোট শুধু একটি রাজনৈতিক অনুমোদন নয়- বরং হতে পারে দক্ষিণ এশিয়ার গণতন্ত্রের নতুন মডেল।

গণভোটের পথে বাংলাদেশ এখন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে; একদিকে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পুনর্গঠন, অন্যদিকে আঞ্চলিক কূটনৈতিক ভারসাম্য। এই দুইয়ের মধ্যে সূ² সমন্বয়ই নির্ধারণ করবে জুলাই সনদ কেবল একটি রাজনৈতিক ঘোষণা থাকবে, নাকি হয়ে উঠবে জনগণের নতুন জাতীয় চুক্তি।

এ মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো, অভ্যন্তরীণ ঐকমত্য ও আঞ্চলিক আস্থা গঠন, যাতে গণভোট বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে এক অন্তর্ভুক্তিমূলক গণচুক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।

লেখক : নির্বাহী সম্পাদক, দৈনিক নয়া দিগন্ত