কী বার্তা দিচ্ছে ডাকসুতে শিবিরের বিজয়

আজ শিবিরকে পরাস্ত করতে ছাত্রদল যদি বামদের সাথে মিশে যায়, তাতে নগদ কিছু লাভ হতে পারে। কিন্তু এর সুদূরপ্রসারী ক্ষতির মুখে একদিন তাদের পড়তে হবে। তার পরিণাম তারা ডাকসু নির্বাচনে হাতেনাতে পেয়েছে। ছাত্রদল বামের ফাঁদে পড়ায় নির্বাচনে সামান্য প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-ডাকসু নির্বাচনে ধরাশায়ী হয়েছে পুরনো বস্তাপচা বয়ান। মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তি, সাম্প্রদায়িকতা, রাজাকার, পাকিস্তানপন্থী- এসব তকমা শিক্ষার্থীরা প্রত্যাখ্যান করেছেন। এসব দিয়ে পুরনো ধোঁকাবাজির রাজনীতি আর চলবে না, ব্যালট-বিপ্লবের মাধ্যমে তা জানিয়ে দিয়েছেন ছাত্রছাত্রীরা। অন্যদের রাজনৈতিক অধিকার হরণ ও দোষারোপের রাজনীতিরও কবর রচনা করেছেন তারা।

ডাকসু নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্র্রচারের শুরুতে দেখা গেল, বাম ছাত্র সংগঠনগুলো আওয়ামী লীগের অস্ত্র দিয়ে ইসলামী ছাত্রশিবিরকে ঘায়েলের পুরনো সেই অপকৌশল নিয়েছে। দুঃখজনক হলেও জুলাই বিপ্লবের অংশীদার ছাত্র সংগঠনগুলো আওয়ামী লীগের মুখে তুলে দেয়া বামদের এ টোপ গিলেছে। শিক্ষার্থীরা ভোটের মাধ্যমে এর জবাব দিয়েছেন। শিবিরের ভিপি প্রার্থী সাদিক কায়েম ১৪ হাজার ৪২ ভোট পেয়ে তার প্রতিদ্ব›দ্বী ছাত্রদল প্রার্থীর চেয়ে তিন গুণের মতো ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। পরের চার প্রার্থীর সবার সম্মিলিত ভোট সাদিক কায়েমের একার চেয়ে কম। জিএস-এজিএস পদেও শিবিরপ্রার্থীরা বিশাল ব্যবধানে জিতেছেন। দু’জনে প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীর চেয়ে দ্বিগুণ ভোট পেয়েছেন।

জুলাই বিপ্লবের পর শিবির শিক্ষাঙ্গনে একগুচ্ছ কর্মসূচি নিয়ে আসে। ডাকসু জয় পেলে কী করবে- এরও একটি বিস্তারিত তালিকা শিক্ষার্থীদের সামনে উপস্থাপন করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিবির বিগত এক বছরে বেশ কিছু নজরকাড়া কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে ক্যাম্পাসে। এর মধ্যে ছিল- সায়েন্স ফেয়ার, হেলথ ক্যাম্পের মতো বড় প্রোগ্রাম। একটি ছাত্র সংগঠন হয়ে বড় ইভেন্ট ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা শিক্ষার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ছাত্রছাত্রীরা যখন চাচ্ছিলেন ছাত্র সংগঠনগুলো এ ধরনের গঠনমূলক কর্মকাণ্ড নিয়ে এগিয়ে আসুক, তার বদলে তারা শিবিরের বিরুদ্ধে উদ্ভট ভিত্তিহীন অভিযোগ এনেছে। প্রচারণার সময় ক্যাম্পাসে আগামী দিনে কর্মসূচি কী হবে তা বাদ দিয়ে দোষারোপের রাজনীতি বামেরা সামনে এনেছে। পদে পদে শিবিরকে বাধা দেয়ার বামদের অপকৌশল ছড়িয়ে দেয়ার ফল হয়েছে উল্টো। ভোটের বাক্সে এর স্পষ্ট প্রতিফলন ঘটেছে। ডাকসুর প্রায় সবগুলো পদ শিবির সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীরা জিতেছেন। অন্যরা প্রতিদ্ব›িদ্বতা গড়ে তুলতে পারেননি।

জাতীয় রাজনীতিতে ঘৃণা উৎপাদনকারী ফজলুর রহমান ও রুমিন ফারহানাদের মতো যারা উগ্র প্রতিক্রিয়াশীলতা দেখিয়েছেন তা-ও ভোটের বাক্সে প্রভাব ফেলেছে। জগন্নাথ হলের ফলের বিশ্লেষণে এর প্রমাণ মেলে। এ হলে শিবিরকে অনেকটা অবাঞ্ছিত করে রাখা হয়েছিল। শিবিরের জিএস প্রার্থী নির্বাচনী প্রচার চালাতে গেলে তাকে হেনস্তার চেষ্টা করা হয়। তার কাছে মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্ন করে তাৎক্ষণিকভাবে সমাধান চাওয়া হয়। ছাত্রদলের আবিদ এ হলে এক হাজার ২৭৬ ভোট পেয়েছেন। তিনি ফজলুর রহমান ও রুমিন ফারহানার সমালোচক নন। অন্য দিকে আবিদের জিএস সরাসরি ফজলুর রহমানের কার্যক্রমের বিরোধিতা করেন। তিনি এক টকশোতে ফজলুর রহমানের সমালোচনা করেন। পরিণতিতে জগন্নাথ হলে আবিদের চেয়ে তিন গুণ কম- মাত্র ৩৯৮ ভোট পেয়েছেন। অন্যান্য কেন্দ্রের ফলে দেখা যাচ্ছে, তিনি গড় প্রবণতার চেয়ে বেশি ভোট পেয়েছেন। অর্থাৎ ফজলুর রহমানের সমালোচনা করে তিনি সাধারণ ভোটারদের আস্থা কুড়িয়েছেন।

ভোটার উপস্থিতি প্রমাণ করেছে, হাসিনা বা আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের রাজনীতিতে অপ্রাসঙ্গিক হতে চলেছে। জাতীয় রজনীতিতে আওয়ামী লীগ ছাড়া নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে না- এমন কথা বলে মাঠ গরম করে তুলছেন তথাকথিত সুশীলরা। ডাকসুতে এবার ছাত্রলীগ ছাড়া ৭৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ ভোটের টার্নআউট হয়েছে। ভোটার উপস্থিতি যে আরো কিছুটা বাড়ত তা অন্যান্য হলের চিত্র থেকে পরিষ্কার। সূর্যসেন হলে ৮৬ দশমিক ৫৭, জহুরুল হক হলে ৮৪ দশমিক ৪৬ শতাংশ ভোট পড়েছে। টিএসসিতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হলে সবচেয়ে বেশি ভোটারের রোকেয়া হলের ছাত্রীদের উপস্থিতি কমে যায়। হলটিতে ভোট পড়েছে ৬৯ শতাংশ। এতে আওয়ামী লীগ ছাড়া নির্বাচনে ভোটারদের অনীহা হবে, এমনটি ভুল প্রমাণ হতে চলেছে।

বাংলাদেশের আগামীর রাজনীতির গতিপথ কোন দিকে- ডাকসু নির্বাচনের ফল তা স্পষ্ট করেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের জরিপের ফলে সাদিক-ফরহাদদের বিপুল বিজয়ের ইঙ্গিত দিচ্ছিল। কোনো ব্যতিক্রম ছাড়া সব জরিপে তারা ৭৫ থেকে ৯৫ শতাংশ সমর্থন পাচ্ছিলেন। এত পার্থক্য না থাকলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রবণতার সাথে ডাকসুর ফল অনেকটা সামঞ্জস্যপূর্ণ। জুলাই বিপ্লবের পর থেকে ইসলামী দলগুলোর প্রতি একইভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মানুষকে বিপুল সমর্থন জানাতে দেখা যাচ্ছে। মিডিয়ায় একে দেশে রাজনীতিতে ডানপন্থার উত্থান হিসেবে ফ্রেমিং করা হচ্ছে। বিএনপির শীর্ষ নেতারা মিডিয়ার সাথে সুর মিলিয়ে একে মৌলবাদের উত্থান হিসেবে মন্তব্য করছেন। এ ধরনের মনোভাব তাদের ক্ষতির কারণ হতে পারে- ডাকসুর ফল সেই বার্তা দিচ্ছে।

মানুষ মূলত হাসিনা সরকারের গুম-খুন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়ে এক নতুন বাস্তবতায় উপনীত হয়েছেন। দিল্লির আধিপত্যবাদের সাথে সরাসরি সংযোগ জনগণকে উদ্বিগ্ন করে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের জরিপের ফলে এর বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে। ডাকসু নির্বাচনে এটি পরিষ্কার বোঝা গেল, শাসনের পুরনো ঢাল-তলোয়ার মরিচা ধরে অকেজো হয়ে পড়েছে।

শিবিরের ওপর দায় চাপানো

দায় চাপিয়ে দেয়ার সস্তা রাজনীতি শিবিরের বিজয়ের ব্যবধান বাড়াতে সাহায্য করেছে। ৫ আগস্টের পর দেখা গেল, পুরনো রাজনীতির অপচেষ্টা। যা কিছু খারাপ তা-ই করেছে শিবির। কোনো ধরনের ‘যদি’ ‘কিন্তু’ না রেখে এ প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হচ্ছিল। প্রমাণের দরকার নেই, কোনো যুক্তিও লাগবে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরের সভাপতি এস এম ফরহাদ নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতা- বানোয়াট এ তথ্য চালিয়ে দেয়া হয়। ডাকসুতে জিএস পদে দাঁড়ানোর পর নতুন করে এ প্রচারণা তুঙ্গে ওঠে। ফরহাদ তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ শুরু থেকে মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে উড়িয়ে দেন। কে শোনে কার কথা, তাকে ছাত্রলীগের সাথে সম্পৃক্ত করতে উঠেপড়ে লাগে তার প্রতিপক্ষ। বাম, বাগছাস, ছাত্রদল- সবার এক কথা। ডাকসুর জিএস প্রার্থী হওয়ার পর তার বিরুদ্ধে এ অভিযোগে উচ্চ আদালতে রিট করে তার প্রার্থিতা চ্যালেঞ্জ করা হয়। ফরহাদ মামলাকারীকে স্বাগত জানান। উড়ো প্রচারণা না চালিয়ে তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে আদালতে আর্জি পেশকে তিনি ভালো উদ্যোগ বলে জানান।

আদালতে প্রদর্শিত তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাইয়ের দেখা গেল, এর কোনো ভিত্তি নেই। আসলে শিবিরকে প্রতিহত করতে আগের নোংরা প্রচেষ্টাগুলোর মতো এটি ছিল তার ধারাবাহিকতা। ফরহাদ নামের যে ছেলেটিকে শিবিরের ফরহাদ বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা হয়, সেই ছেলে আসলে ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ফার্সি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ছাত্র। তার বাড়ি সাতক্ষীরায়। শিবিরের ফরহাদ ২০১৭-১৮ সেশনের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ছাত্র। তার বাড়ি পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটিতে। উভয় ফরহাদ কবি জসীমউদ্দীন হলের আবাসিক ছাত্র। ফার্সি বিভাগের ফরহাদ এক ভিডিও বার্তায় স্বীকার করেন, তিনি ছাত্রলীগ করেছেন। তবে ৫ আগস্টের আগে ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করেন। বার্তায় তিনি জানান, নামের মিল থাকলেও শিবিরের ফরহাদ ভিন্ন। ফার্সি বিভাগের ফরহাদ বিবেকের তাড়নায় ভিডিও বার্তায় এ অপবাদের জবাব দেন। তারপরও বামদের প্রোপাগান্ডা মেশিন থামেনি। এগুলো শিবির প্যানলের ভোট বাড়িয়েছে।

প্রার্থিতা চ্যালেঞ্জের আদেশে হাইকার্টের একটি বেঞ্চ ডাকসু নির্বাচন স্থগিত করেন। চেম্বার জজ ওই রায় স্থগিত করে জন-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটান। পরে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে ওই রিট এক পূর্ণ আদালতে শুনানি হয়। সেখানে ছাত্রলীগের ফরহাদ ভিন্ন ব্যক্তি বলে উল্লেখ করে তার প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই বলে রায় দেন। ফার্সির ফরহাদকে যারা সমাজকল্যাণের ফরহাদ বানিয়েছেন; তারা একটি সঙ্ঘবদ্ধ চক্র, তাদের হাত যে অনেক লম্বা তা-ও দৃশ্যমান হয়। কথাগুলো বিস্তারিত বলার কারণ- শিবিরের বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে বানোয়াট ও ভুল তথ্য ছড়িয়ে দেয়াকে একধরনের সংস্কৃতি বানিয়ে ফেলা হয়েছে। ফরহাদের বিরুদ্ধে রিটটি করেছেন বি এম ফাহমিদা। তিনি বাম ছাত্র সংগঠনের নেত্রী। ডাকসুতে ‘অপরাজেয়-৭১ ও অদম্য-২৪’ প্যানেলের প্রার্থী। জুলাইয়ে শিক্ষার্থীরা যখন রাস্তায় প্রাণ দিচ্ছিলেন ফাহমিদা তখন হাসিনার পক্ষে দাঁড়ান। ভাঙচুর-নাশকতা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পোস্ট দেন। সারা দেশের মানুষ যখন ফেসবুক প্রোফাইল লাল করছিলেন, তখন তার প্রোফাইল শোকের রঙ কালো। তিনি পোস্ট দিয়েছেন ভাঙা কাচের ছবি। এ দিকে হাসিনা পালানোর পর থেকে তার কোনো পোস্ট নেই। আপাদমস্তক আওয়ামী অনুসারী হয়ে জুলাই বিপ্লবের সৈনিক ফরহাদের বিরুদ্ধে মামলা করার পরও তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আনা হচ্ছে না কোনো কর্নার থেকে।

এই ফাহমিদাকে এক ছাত্র গণধর্ষণের হুমকি দেয়। এখানেও দেখা গেল, তথ্য-সন্ত্রাসের আগের অপকৌশল। হুমকিদাতা ছাত্রের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের চেয়ে এর দায় শিবিরের ঘারে চাপিয়ে দিতে সঙ্ঘবদ্ধ চক্র তৎপর হয়। আলি হুসেন ছাত্রশিবির নেতা, এই প্রচারণায় একাট্টা হয় শিবিরবিরোধীরা। শিবির আলি হুসেনের তীব্র সমালোচনা করলেও সে দিকে কারো ভ্রুক্ষেপ নেই। শিবির প্রথম আলি হুসেনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানায়। শেষ পর্যন্ত তারা কর্তৃপক্ষের কাছে আলি হুসেনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আনুষ্ঠানিক আবেদন জানায়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তদন্ত করে দেখতে পায়, আলি হুসেনের সাথে শিবিরের কোনো সম্পর্ক নেই। কর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত আলি হুসেনের ছয় মাসের জন্য ছাত্রত্ব বাতিল করে। এর চেয়ে বেশি শাস্তি দেয়ার ক্ষমতা কর্তৃপক্ষের নেই। আলি হুসেন নিজেও নোংরা আক্রমণের জন্য ক্ষমা চায়। এক ভিডিও বার্তায় সে জানায়, তার সাথে শিবিরের কোনো সম্পর্ক নেই। অথচ বামেরা কোনো কিছু আমলে না নিয়ে আলি হুসেনকে অব্যাহতভাবে শিবির নেতা বলে প্রোপাগান্ডা চালায়। জোশে পড়ে ছাত্রদল সারা দেশে প্রতিবাদ করে।

মিডিয়াও বামদের সাথে সুর মিলিয়ে মাঠে নামে। ‘নারী নেত্রীকে গণধর্ষণের হুমকি শিবির নেতার’- এই শিরোনামে ফটোকার্ড বানিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়। আলি হুসেন শিবির নেতা নয়- প্রমাণিত হওয়ার পরও তাদের শিরোনাম পরিবর্তন করেনি। এমনকি ছাপা পত্রিকাও সরাসরি এ ধরনের শিরোনাম করেছে। বাংলাদেশ প্রতিদিন ৩ সেপ্টেম্বর প্রথম পাতায় লাল কালিতে শিরোনাম করেছে- ‘গণধর্ষণের হুমকি শিবির নেতার’। পত্রিকাটি ও এর মালিক হাসিনার ফ্যাসিবাদী শক্তির সহযোগী। মালিকদের একজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ করে এক তরুণীকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। এই গ্রুপের মিডিয়া বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে ভয়াবহ প্রোপাগান্ডা চালিয়েছে হাসিনার আমলে। বাম ও মিডিয়া দুষ্টচক্র মিলে শিবিরের বিরুদ্ধে ভুয়া ও বানোয়াট খবর প্রথম সুযোগে উৎকটভাবে প্রচারণা চালায়। সেই ঘটনার সত্যটি যখন বেরিয়ে আসে, সেটি আর প্রকাশ করেনি। এই তথ্যসন্ত্রাস বাংলাদেশে বাম নিয়ন্ত্রিত মিডিয়াচক্র অব্যাহত করে গেলেও, এই মনোপলি এখন ভেঙে গেছে সামাজিক মাধ্যমের কারণে। সে কারণে তথ্যসন্ত্রাস চালিয়ে আগের মতো শিবিরকে ধরাশায়ী করা যাচ্ছে না। বরং বুমেরাং হয়ে শিবিরের গ্রহণযোগ্যতা আরো বাড়াচ্ছে। ডাকসুর ভোটের বাক্সে তার প্রমাণ মিলল।

ছাত্রদল বামদের ফাঁদে পা দিয়ে নিজেদের বিপর্যয় টেনে এনেছে। ছাত্র সংসদ নির্বাচনে সব ক’টি উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দায় চাপিয়ে দেয়ার কৌশল নিয়েছে ছাত্রদল। ফাহমিদাকে গণধর্ষণ ও ফরহাদকে ছাত্রলীগ বানানোর প্রকল্পে তারা ঘনিষ্ঠভাবে বামদের সাথে মিলে অব্যাহতভাবে বানোয়াট তথ্য দিয়েছে। চোখ বন্ধ করে শিবিরকে ধর্ষক, নারী নিপীড়নকারী হিসেবে বদনাম দিয়েছে। শিবির যত নিজেকে নির্দোষ দাবি করছিল, তারা ততবেশি চড়াও হচ্ছিল। বিশেষ করে মিডিয়ায় টকশো ও ডাকসুর প্রচারণায় ছাত্রদল নগ্নভাবে এসব নিয়ে শিবিরকে দোষারোপ করেছে। শেষ পর্যন্ত শিবিরও ছাত্রদলকে নারী নির্যাতনকারী ধর্ষক হিসেবে প্রচার চালায়। তারা সামাজিক মাধ্যমে শত শত স্ক্রিন শর্ট নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে হাজির হয়। পরিসংখ্যান তুলে ধরে শুধু ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর কতটি ধর্ষণ ছাত্রদল করেছে। এতে কাজ হয়েছে, ছাত্রদল শিবিরের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ দেয়া বন্ধ করে। বামেরা দেশের ইসলামী শক্তিকে যুদ্ধাপরাধী, সাম্প্রদায়িক, নারী নিপীড়নকারী হিসেবে ফ্রেমিং করে। এতে প্রাথমিকভাবে ইসলামী দলগুলো মোটাদাগে ক্ষতির শিকার হয়েছে। ভারতীয় আধিপত্যবাদকে সুযোগ করে দিতে তারা মধ্যপন্থী বিএনপিকেও তখন একই অভিযোগ দিয়ে ঘায়েল করেছে। যার ফসল হাসিনা ও ভারত বিগত সময়ে গোলায় তুলেছে। আজ শিবিরকে পরাস্ত করতে ছাত্রদল যদি বামদের সাথে মিশে যায়, তাতে নগদ কিছু লাভ হতে পারে। কিন্তু এর সুদূরপ্রসারী ক্ষতির মুখে একদিন তাদের পড়তে হবে। তার পরিণাম তারা ডাকসু নির্বাচনে হাতেনাতে পেয়েছে। ছাত্রদল বামের ফাঁদে পড়ায় নির্বাচনে সামান্য প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি।