বিয়ে ও তালাকের ডিজিটাল নিবন্ধন

এখনই সময় একটি কেন্দ্রীয় ডিজিটাল বিয়ে ও তালাক রেজিস্ট্রেশন ব্যবস্থা চালু করার- যা আমাদের পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে আরো সুসংগঠিত ও সুরক্ষিত করবে।

একটি রাষ্ট্রের সামাজিক কাঠামোর মৌলিক ভিত্তি হলো পরিবার, আর পরিবারের আইনি রূপ পায় বিয়ের মাধ্যমে। বিয়ে ও তালাক- দু’টি ঘটনাই নাগরিক জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। অথচ আমাদের দেশে এখনো এই নিবন্ধন প্রক্রিয়াটি প্রথাগত ও কাগজনির্ভর, যেখানে ভুল, জালিয়াতি ও হয়রানির সুযোগ প্রচুর। এ থেকে মুক্তি পেতে হলে আমাদের বিয়ে ও তালাক নিবন্ধন ব্যবস্থাকে সময়োপযোগী ও আধুনিক করে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে রূপান্তর করা জরুরি।

বর্তমানে বিয়ে রেজিস্ট্রার বা কাজীরা এখনো হাতে লেখা রেজিস্ট্রার বইয়ে তথ্য সংরক্ষণ করেন। এতে নামের বানান, বয়স, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, ঠিকানা প্রভৃতিতে অসংখ্য ভুল থেকে যায়। এসব ভুল তথ্য পরবর্তীতে নানা আইনি সমস্যার জন্ম দেয়। অনেক সময় দেখা যায়, কেউ বিদেশে যাওয়ার সময় বৈবাহিক অবস্থা গোপন করেছেন, অথচ তার বিয়ে রেজিস্ট্রার খাতায় থেকে গেছে- যা যাচাই করাও কঠিন হয়ে পড়ে।

বিচ্ছেদের ক্ষেত্রেও সমস্যা আরো গভীর। তালাকের জন্য আইনগত কিছু বাধ্যতামূলক ধাপ থাকলেও তা অনেক সময় অনুসরণ করা হয় না। কেউ কেউ একতরফাভাবে জাল তালাকনামা তৈরি করে দীর্ঘদিন পর তালাক কার্যকর দাবি করেন, কেউবা তালাক পাঠিয়ে দেন কিন্তু তা নারী পর্যন্ত পৌঁছায় না।

নারী তার অধিকার থেকে বঞ্চিত হন, অথচ প্রমাণ করার সুযোগ নেই। ডিজিটাল ব্যবস্থা চালু থাকলে তালাকের তারিখ, নোটিশ পাঠানো ও গ্রহণের তথ্য সবই একটি সিস্টেমে সংরক্ষিত থাকবে, যা উভয় পক্ষ ও আইনি ব্যবস্থার জন্য সহায়ক হবে।

আরেকটি বড় সমস্যা হলো- এক জায়গার বিয়ে বা তালাক রেজিস্ট্রেশন আরেক জায়গায় যাচাই করার কোনো উপায় নেই। ফলে কেউ একজন এক জেলায় বিয়ে করে, অন্য জেলায় নতুন বিয়ে করে বসেন।

কাগজপত্র আলাদা থাকায় আগের সম্পর্ক গোপন করা সম্ভব হয়। একটি কেন্দ্রীয় অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু হলে জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর দিয়েই কোনো নাগরিকের বৈবাহিক অবস্থা যাচাই করা যাবে। বর্তমানে দেশে অনেক বাল্যবিয়ে সম্পন্ন হচ্ছে, যা রেজিস্ট্রেশন করা হয় না। অনেক সময় অভিভাবক বা মসজিদের ইমাম সাহেব মৌখিকভাবে বিয়ে পড়িয়ে দেন, অথচ কাজীকে জানান না। এতে সেই বিয়ে আইনের চোখে অকার্যকর হয়ে যায়। ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশনের বাধ্যবাধকতা থাকলে এই অনিয়ম অনেকাংশে রোধ করা যাবে।

এই মুহূর্তে দেশে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন ডিজিটাল হয়েছে, ভূমি রেকর্ড ও নামজারি পর্যন্ত অনলাইন করা হয়েছে, তাহলে বিয়ে ও তালাকের মতো গুরুতর বিষয় কেন অনলাইন নয়? এখনই সময় একটি কেন্দ্রীয় ডিজিটাল বিয়ে ও তালাক রেজিস্ট্রেশন ব্যবস্থা চালু করার- যা আমাদের পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে আরো সুসংগঠিত ও সুরক্ষিত করবে।

আব্দুর রশিদ

জকিগঞ্জ, সিলেট

[email protected]