আব্দুল বারী
স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে প্রথম এবং একমাত্র গণভোট অনুষ্ঠিত হয়, রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের প্রতি জনগণের সমর্থন যাচাইয়ের লক্ষ্যে। তারপর কেটে গেছে প্রায় পাঁচ দশক। এর মধ্যে আর কোনো জাতীয় ইস্যুতে জনগণের সরাসরি মতামত নেয়া হয়নি। অথচ গণতন্ত্রের মূল ভিত্তিই হলো জনগণের অংশগ্রহণ।
আজ আবার আমাদের সামনে এসেছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ এবং ভবিষ্যৎ নির্ধারক প্রশ্ন একজন ব্যক্তি কয়বার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন? রাষ্ট্রপতির নির্বাচন সরাসরি হবে, না কি ‘ইলেক্টোরাল কলেজ’-এর মাধ্যমে?
সংবিধান সংস্কার কমিশন প্রস্তাব করেছে, একজন ব্যক্তি যেন সর্বোচ্চ দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে না পারেন। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কিছুটা ছাড় দিয়ে তিনবারের কথা বললেও, সব রাজনৈতিক দল তাতে একমত নয়। রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়ে কিছুটা ঐকমত্য থাকলেও, নির্বাচনের পদ্ধতি নিয়েও মতানৈক্য প্রবল। এ অবস্থায় গোটা জাতি অনিশ্চয়তা আর রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে আটকে আছে।
আমাদের প্রশ্ন, এ দেশের প্রতিটি নাগরিক কি কেবল দর্শক হয়ে থাকবে? তাদের কোনো মতামত নেই? জনগণের কোনো অধিকার নেই এসব রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়ার? সংবিধানের ৭(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রজাতন্ত্রের সব ক্ষমতার মালিক জনগণ।’ কিন্তু জনগণের মতামত নেয়া না হলে সেই গণতন্ত্র কতটা কার্যকর?
একটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচন কিংবা প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ নির্ধারণের মত সিদ্ধান্ত কোনো দলীয় বোঝাপড়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকা উচিত নয়। এগুলো এমন সিদ্ধান্ত, যেগুলো প্রভাব ফেলবে কোটি কোটি নাগরিকের ভবিষ্যতের ওপর। তাই গণভোটই হতে পারে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ উপায়। গণভোট শুধু একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়া নয়, এটি হলো জনগণের অন্তরের কথা শোনা। এটি বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে নেয়া একটি সম্মিলিত সিদ্ধান্ত।
আমরা মনে করি, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ নির্ধারণ এবং রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পদ্ধতি পুনর্বিন্যাসের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে গণভোটের আয়োজন এখন সময়ের দাবি। রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের সরাসরি মতামতই হতে পারে জাতিকে সামনে এগিয়ে নেয়ার সত্যিকারের পথনির্দেশ।
প্রভাষক, কাশীনগর ডিগ্রি কলেজ, কুমিল্লা