ইরানের বার্তাসংস্থা আইএএনএ জানিয়েছে, দেশটির তেলবহির্ভূত বাণিজ্যের মোট মূল্য চলতি ফার্সি সালের প্রথম চার মাসে (২১ মার্চ থেকে ২২ জুলাই) ৩৪.১৭৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে। এ তথ্য দিয়েছে ইরানের কাস্টমস প্রশাসন বা আইরিকা।
বুধবার প্রকাশিত এক বিস্তারিত প্রতিবেদনে আইরিকা জানিয়েছে, এ সময়ের মধ্যে ইরান থেকে ৬১.২০ মিলিয়ন টন তেলবহির্ভূত পণ্য রফতানি হয়েছে। রফতানি পণ্যের মোট মূল্য ৩৪.১৭৫ বিলিয়ন ডলার। পণ্যের পরিমাণে গত বছরের তুলনায় ০.৪৮ শতাংশ বেশি হলেও, মূল্যে ১০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। এই হ্রাস পাওয়ার কারণ উল্লেখ করা হয়নি। এই সময়ে ইরানের তেলবহির্ভূত মোট বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৪৮.৮১১ মিলিয়ন টন। এর মধ্যে রফতানি হয়েছে ১৬.৫৪৯ বিলিয়ন ডলারের ৩৬.৬০২ মিলিয়ন টন পণ্য, আর আমদানি হয়েছে ১৭.৬২৭ বিলিয়ন ডলারের ১২.২০৯ মিলিয়ন টন পণ্য। তথ্য বলছে, রফতানির ক্ষেত্রে পণ্যের পরিমাণে ১.৪৬ শতাংশ বাড়লেও, মূল্যের বেলায় ৫.৫১ শতাংশ কমেছে। অন্যদিকে, আমদানির পরিমাণ ৩.২৩ শতাংশ ও মূল্য ১৪.২০ শতাংশ কমেছে।
একই সময়ে ইরান থেকে ১৭.৪০২ মিলিয়ন টন রাসায়নিক তেল বা পেট্রোকেমিক্যাল পণ্য রফতানি হয়েছে। এ খাতে রফতানি পণ্যের মোট মূল্য ৬.৮৯৪ বিলিয়ন ডলার। তবে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় পেট্রোকেমিক্যালস রফতানিতে পরিমাণে ৮.৩০ শতাংশ ও মূল্যে ১০.২২ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
এই চার মাসে ইরানের শীর্ষ পাঁচ রফতানি পণ্যের তালিকায় রয়েছে, প্রাকৃতিক গ্যাস, তরল প্রোপেন, মিথানল, তরল বিউটেন ও বিটুমেন বা তেল থেকে তৈরি পিচ। অপরদিকে, আমদানির প্রধান পণ্য হলো অপরিশোধিত সোনা, পশুখাদ্যের ভুট্টা, চাল, সূর্যমুখীর তেল ও সয়াবিন।
বাণিজ্যিক অংশীদারদের দিক থেকে দেখা যাচ্ছে, ইরানের প্রধান রফতানি বাজার হলো চীন, ইরাক, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), তুরস্ক, আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও ওমানে। অন্যদিকে, আমদানির ক্ষেত্রে ইরানের শীর্ষ অংশীদার হলো ইউএই, চীন, তুরস্ক, ভারত, জার্মানি, রাশিয়া ও নেদারল্যান্ডস।
এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে স্পষ্ট যে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা ও অর্থনৈতিক চাপের মাঝেও ইরান বৈচিত্র্যময় বাণিজ্যের মাধ্যমে বিশ্ববাজারে নিজের অবস্থান ধরে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যদিও রফতানি ও আমদানির অর্থমূল্যে কিছুটা পতন দেখা যাচ্ছে, তবে পণ্যের পরিমাণে স্থিতিশীলতা এবং কিছু ক্ষেত্রে বৃদ্ধি ইরানের উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থার ধারাবাহিকতারই ইঙ্গিত দিচ্ছে ।
এই পরিসংখ্যান যেন তেল নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসার ইরানের দীর্ঘমেয়াদি কৌশলের সেই পথচলার বাস্তব প্রমাণ।