একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলেন আপনার গাড়ির তেলের দাম দ্বিগুন হয়ে গেছে। শেয়ার বাজারে ধস নেমেছে। আর বিশ্বের শক্তিশালী দেশগুলো যুদ্ধের দ্বার
প্রান্তে দাঁড়িয়ে। অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে? কিন্তু এটাই সত্যি হতে পারে যদি পৃথিবীর বুকে মাত্র ৩৩ কিলোমিটার চওড়া একটি জলপথ বন্ধ হয়ে যায়। বলছি হরমুজ প্রণালীর কথা। পারস্য উপসাগরের প্রবেশদ্বার যা বিশ্বের অর্থনীতির লাইফলাইন হিসেবে পরিচিত। সম্প্রতি ইরান-ইসরাইল উত্তেজনার পারদ এতটাই চড়েছে যে ইরান আবারও এই লাইফলাইন কেটে দেয়ার হুমকি দিয়েছে।
কিন্তু ইরান কি সত্যি পারবে এই প্রণালী বন্ধ করতে? তাদের হাতে কি এমন অস্ত্র আছে? আর যদি তারা এই দুঃসাহস দেখিয়ে ফেলে তাহলে এর পরিণতি কি হবে? আমেরিকা এবং তার মিত্ররাই বা কি করবে?
সহজ ভাষায় হরমুজ প্রণালী পারস্য উপসাগরকে ওমান সাগর এবং আরব সাগরের সাথে যুক্তকারী একমাত্র জলপথ। একদিকে ইরান আর অন্যদিকে ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। ভাবতে পারেন এটি যেন একটি বোতলের সরু মুখের মত।
পারস্য উপসাগরের ভেতরে থাকা দেশগুলো যেমন সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, কুয়েত, ইরাক এবং ইরান। তাদের তেল ও গ্যাস এই সরুপথ দিয়েই বিশ্বের বাজারে পাঠায়।
এখন প্রশ্ন হলো এটি কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?
উত্তর আছে। কিন্তু পরিসংখ্যান নেই।
আমেরিকার এনার্জি ইনফরমেশন এডমিনিস্ট্রেশনের মতে প্রতিদিন বিশ্বের মোট ব্যবহৃত তেলের প্রায় এক পঞ্চমাংশ অর্থাৎ ২০ শতাংশ এই প্রণালী দিয়ে পরিবহন করা হয়। এর পরিমাণ দিনে প্রায় দুই কোটি ব্যারেল। এছাড়া কাতার হচ্ছে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ এলএনজি রফতানিকারক দেশ। তাদের প্রায় সব গ্যাস এই পথেই যায়। তবে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ব্যাপার হলো এই প্রণালীর কার্যকর কোনো বিকল্প নেই। যদিও হরমুজ প্রণালীর বিকল্প হিসেবে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত কিছু তেল পরিবহনের জন্য পাইপলাইন তৈরি করেছে। কিন্তু তার ক্ষমতা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য। কুয়েত, কাতার বাহরাইনের মতো দেশগুলোর কাছে এই প্রণালী ছাড়া আর দ্বিতীয় কোনো পথ খোলা নেই।
সুতরাং বোঝা যাচ্ছে এই ধমনী যদি এক মুহূর্তের জন্য চেপে ধরা হয় তাহলে বিশ্ব অর্থনীতি সশ্রুদ্ধ হয়ে পড়বে। আর ইরান ঠিক এই দুর্বল জায়গাটিতেই আঘাত করার হুমকি দিচ্ছে।
ইরান যখন হুরমুজ প্রণালী বন্ধ করার হুমকি দেয় তখন সেটাকে ফাঁকা বুলি ভাবার কোনো কারণ নেই। বছরের পর বছর ধরে তারা এই নির্দিষ্ট লক্ষ্যের জন্য নিজেদের সামরিক সক্ষমতা বাড়িয়েছে।
এবার দেখে নেয়া যাক তাদের হাতে কি কি তাস রয়েছে।
প্রথমত হলো জলমাইন। জলমাইন হলো সাগরের গভীরে পেতে রাখা শক্তিশালী বোমা যা কোনো জাহাজ স্পর্শ করলে বা কাছাকাছি এলেই বিস্ফরিত হয়। ইরান ইরাক যুদ্ধের সময় যা ট্যাংকার যুদ্ধ নামে পরিচিত তখন ইরান এই মাইনের ব্যবহার করেছিল। হরমুজের মত একটি সংকীর্ণ এবং ব্যস্ত চ্যানেলে কয়েকশ’ মাইন ছড়িয়ে দিতে পারলেই জাহাজ চলাচল প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে। কারণ কোনো শিপিং কোম্পানি কোটি কোটি ডলারের জাহাজ এবং মূল্যবান কার্গো নিয়ে এই ঝুঁকি নিতে চাইবে না। আর এই মাইন খুঁজে বের করে নিষ্ক্রিয় করা অত্যন্ত সময় সাপেক্ষ এবং বিপদজনক একটি কাজ।
ইরানের আইআরজিসিএ নৌবাহিনীর মূল শক্তি হলো হাজার হাজার ছোট কিন্তু অত্যন্ত দ্রুতগতির স্পিডবোট। এই বোটগুলো আকারে ছোট হওয়ায় রাডারে সহজে ধরা পড়ে না। এদের কৌশল হলো সোয়ার্ম ট্যাকটিক্স বা ঝাঁক বেঁধে আক্রমণ করা।
ভাবুন একটা বড় তেলবাহী ট্যাংকার বা যুদ্ধজাহাজকে শত শত ছোট স্পিডবোট মৌমাছির ঝাঁকের মত চারদিক থেকে ঘিরে ধরে রকেট, মেশিনগান এবং টরপেডো দিয়ে আক্রমণ করছে। এই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী নৌবাহিনীরও প্রতিরোধ করা কঠিন হয়ে পড়বে। এই বোটগুলো প্রণালীর বিভিন্ন গোপন ঘাটি থেকে বেরিয়ে এসে অতর্কিতে হামলা চালাতে সক্ষম।
এদিকে হরমুজ প্রণালীর পুরোটাই ইরানের উপকূল বরাবর অবস্থিত। ইরান তার উপকূল বরাবর শত শত এন্টিশিপ মিসাইল ব্যাটারি মোতায়ন করে রেখেছে। এই মিসাইলগুলো ভূমি থেকে উৎক্ষেপণ করে কয়েক কিলোমিটার দূরে থাকা জাহাজে নিখুতভাবে আঘাত আনতে পারে। প্রণালীর সংকীর্ণ পথে ধীরগতিতে চলতে থাকা তেলবাহী ট্যাংকারগুলো এই মিসাইলের জন্য একেবারে সহজ টার্গেট। কয়েকটি ট্যাংকারে আগুন লাগিয়ে দিতে পারলেই পুরো জলপথ আতঙ্ক এবং ধ্বংসস্তূপের কারণে বন্ধ হয়ে যাবে।
আধুনিক যুদ্ধ শুধু বোমার গুলির নয় প্রযুক্তিরও। ইরানি ড্রোন প্রযুক্তি বিশেষ করে সাহেদ সিরিজের ড্রোনগুলো এখন বিশ্বজুড়ে পরিচিত। এই ড্রোনগুলো দিয়ে তারা প্রণালীতে নজরদারি চালাতে পারে এবং বিস্ফোরক বোঝাই করে আত্মঘাতী হামলাও চালাতে পারে। এর চেয়েও সূক্ষ কিন্তু কার্যকর অস্ত্র হলো ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার। সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী ইরান প্রায়ই হরমুজ প্রণালীতে জাহাজগুলোর নেভিগেশন সিস্টেমে হস্তক্ষেপ করছে। তারা জিপিএস সিগনাল জ্যাম করে দেয় অথবা অটোমেটিক আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেমে ভুল তথ্য পাঠায়। এর ফলে জাহাজগুলো তাদের সঠিক অবস্থান নির্ণয় করতে পারে না। যা সংঘর্ষের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। একটি দুটি জাহাজ দুর্ঘটনায় পড়লেই পুরো চ্যানেলে ভয়াবহ জট তৈরি হয়ে যাবে।
সুতরাং সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে ইরানের হাতে হরমুজ প্রণালীকে অচল করে দেয়ার মত যথেষ্ট সরঞ্জাম রয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো তারা কি সত্যি সেটা করবে?
কল্পনা করুন এক দাবারছক। একদিকে ইরান তার সমস্ত শক্তি নিয়ে প্রস্তুত। কিন্তু অন্যদিকে বসে আছে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী খেলোয়াড়রা। ইরানের একটি ভুলচাল পুরো খেলা তার বিরুদ্ধে নিয়ে যেতে পারে।
এবার দেখি কোন কোন ফ্যাক্টর ইরানকে চরম পদক্ষেপ নিতে বাধা দিতে পারে।
প্রথম কারণ আমেরিকার সামরিক উপস্থিতি। হরমুজ প্রণালীর খুব কাছে বাহরাইনে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পঞ্চম নৌবহরের সদর দপ্তর। এটি শুধু একটি ঘাঁটি নয়। এটি পারস্য উপসাগরে আমেরিকার শক্তির প্রতীক।
এই নৌবহরে রয়েছে বিমানবাহী রণতরী, ডেস্ট্রয়ার, ক্রুজার এবং পারমাণবিক সাবমেরিন।
ইরান যদি প্রণালী বন্ধ করার চেষ্টা করে তবে আমেরিকা হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা যেমন যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স সম্মিলিতভাবে ইরানের মাইন পরিষ্কার করতে, তাদের স্পিডবোট ধ্বংস করতে এবং মিসাইল ব্যাটারি গুড়িয়ে দিতে সর্বশক্তি নিয়ে ঝাপিয়ে পড়বে।
সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী ইরান ইসরাইল উত্তেজনার পর আমেরিকা এই অঞ্চলে তার সামরিক উপস্থিতি আরো বাড়িয়েছে। এই যুদ্ধ ইরানের জন্য ভয়াবহ এক অভিজ্ঞতা হবে। শুনতে অদ্ভুত লাগলেও সত্যি যে হরমুজ প্রণালী ইরানের জন্য ঠিক ততটাই গুরুত্বপূর্ণ যতটা অন্যদের জন্য। ইরানের ভঙ্গুর অর্থনীতি টিকে আছে মূলত তেল রফতানির উপর। আর সেই তেলের প্রায় পুরোটাই রফতানি হয় এই হরমুজ প্রণালী দিয়ে। যদি ইরান জলপথ বন্ধ করে দেয় তাহলে তাদের নিজেদের তেল রফতানিও বন্ধ হয়ে যাবে। এটি হবে নিজের পায়ে কুড়াল মারার শামিল। একদিকে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা অন্যদিকে তেলের আয় বন্ধ। এই দুইয়ের চাপে ইরানের অর্থনীতি মুহূর্তের মধ্যে ধসে পড়বে। দেশটির ভেতরে অস্থিরতা এবং গণঅসন্তোষ দেখা দিতে পারে যা শাসন ব্যবস্থার জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।
চীন বর্তমানে ইরানের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার এবং অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক সমর্থক। ইরানের বেশিরভাগ তেল চীনই কেনে। ইরান যদি হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেয় তাহলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে একটি হবে চীন। চীনের শিল্প এবং অর্থনীতি সচল রাখার জন্য তেলের নীরবচ্ছিন্ন সরবরাহ অত্যন্ত জরুরি।
গবেষণা সংস্থা ট্রান্সভার্সাল কনসাল্টিং এর প্রেসিডেন্ট এলেন ওয়ার্ল্ড বলেছেন, চীন কোনোভাবেই চায় না পারস্য উপসাগর থেকে তেলের প্রবাহ কম হোক বা তেলের দাম বাড়ুক। সুতরাং ইরান এই পদক্ষেপ নিলে চীন তার সমস্ত অর্থনৈতিক এবং কূটনৈতিক শক্তিতে ইরানকে চাপ দেবে। বেইজিং এমন একটি পদক্ষেপকে সমর্থন করবে না যাদের নিজেদের অর্থনীতিকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে। বন্ধুর কাছ থেকে এ ধরনের চাপ ইরানের জন্য অগ্রাহ্য করা প্রায় অসম্ভব।
ইতিহাস আমাদের বলে হরমুজ প্রণালী সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করা প্রায় অসম্ভব। ১৯৮০ সাল থেকে ১৯৮৮ সালের ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় উভয়পক্ষ একে অপরের তেল ট্যাঙ্কারে হামলা চালিয়েছিল। ইতিহাসে এটি ট্যাঙ্কার যুদ্ধ নামে পরিচিত। সেই আট বছরে প্রায় ৪৫০টি জাহাজে হামলা হয়েছিল। শত শত নাবিক প্রাণ হারিয়েছিলেন। কিন্তু এত কিছুর পরেও প্রণালী দিয়ে তেল সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ করা যায়নি। এর থেকে বোঝা যায় সাময়িকভাবে জাহাজ চলাচল ব্যহত করা সম্ভব। কিন্তু একটি দীর্ঘমেয়াদী এবং সম্পূর্ণ অবরোধ প্রতিষ্ঠা করা অত্যন্ত কঠিন। বিশেষ করে যখন প্রতিপক্ষ হিসেবে আমেরিকা এবং তার মিত্ররা রয়েছে। যদিও এর সম্ভাবনা কম।
একবার কল্পনা করে দেখি ইরান সমস্ত বাধা উপেক্ষা করে প্রণালী বন্ধ করে দিল। তাহলে কি ঘটবে?
তাহলে এটি হবে একটি গ্লোবাল থ্রিলার মুভির মত। প্রথম প্রভাব হবে আকাশ ছোঁয়া তেলের দাম এবং অর্থনৈতিক সুনামি। প্রথম কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ব্রেন ক্রুড অয়েল বা অপরিশোধিত তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যাবে। অনেক বিশ্লেষকের মতে তা ১৫০ এমনকি ২০০ ডলারেও পৌঁছাতে পারে। আর এর প্রভাব হবে সুদুরপ্রসারী।
বিশ্বজুড়ে জাহাজ, বিমান এবং ট্রাকের জ্বালানি খরচ বেড়ে যাবে। যার ফলে নিত্য প্রয়োজনীয় সবকিছুর দাম বাড়বে। খাদ্য পোশাক থেকে শুরু করে ফ্যাক্টরির উৎপাদন খরচ সবকিছুই চলে যাবে নাগালের বাইরে। বিশ্ব এক ভয়াবহ মুদ্রাস্ফীতির কবলে পড়বে। শেয়ার বাজারগুলোতে নামবে ধস। বড় বড় কোম্পানিগুলো লোকসানির মুখে পড়বে। কর্মী ছাটাই শুরু হবে। বিশ্ব অর্থনীতি এক গভীর ভয়াবহ মন্দার দিকে এগিয়ে যাবে।
দ্বিতীয় প্রভাব হবে একটি সর্বাত্মক যুদ্ধ। আমেরিকা এবং তার মিত্র দেশগুলো এটিকে সরাসরি তাদের জাতীয় নিরাপত্তার উপর আঘাত হিসেবে দেখবে। তারা বসে থাকবে না। কয়েকদিনের মধ্যেই পারস্য উপসাগর এক বিশাল রণক্ষেত্রে পরিণত হবে। মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট ইরানের নৌঘাটি, মিসাইল সাইট, রাডার স্টেশন এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় বিমান হামলা চালাবে। তাদের লক্ষ্য থাকবে যত দ্রুত সম্ভব প্রণালীকে জাহাজ চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা। আর এই যুদ্ধ শুধু ইরান এবং আমেরিকার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। এতে ইসরাইল, সৌদি আরব এবং অন্যান্য উপসাগরীয় দেশগুলো জড়িয়ে পড়তে পারে।
সুতরাং পুরো মধ্যপ্রাচ্যে আগুন জ্বলে উঠবে। এরপর দেখা দেবে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক সংকট। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে জরুরি বৈঠক ডাকা হবে। পশ্চিমা বিশ্ব ইরানকে কঠোর ভাষায় নিন্দা জানাবে এবং সামরিক পদক্ষেপের সমর্থন দেবে। অন্যদিকে রাশিয়া ও চীন পড়বে উভয় সংকটে। তারা একদিকে তাদের মিত্র ইরানকে হারাতে চাইবে না। আবার অন্যদিকে বিশ্ব অর্থনীতির এই বিপর্যয়ও মেনে নিতে পারবে না। তারা হয়তো যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাবে। কিন্তু তাদের অবস্থান হবে অত্যন্ত জটিল।
এক কথায় হরমুজ প্রণালী বন্ধ হওয়া মানে শুধু তেলের সংকট নয়। এটি একটি সম্ভাব্য তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের অনুঘটক হয়ে উঠতে পারে।
তাহলে এবার মূল প্রশ্নে ফিরে আসি। ইরান কি হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দিতে পারবে? উত্তরটি হল হ্যাঁ অথবা না।
ইরানের কাছে সাময়িকভাবে প্রণালীকে অচল করে দেয়ার মত সামরিক শক্তি রয়েছে। তারা মাইন, মিসাইল আর ড্রোন দিয়ে আতঙ্ক তৈরি করতে পারে। জাহাজ চলাচল ব্যহত করতে পারে। কিন্তু তারা দীর্ঘ সময়ের জন্য এই প্রণালী বন্ধ রাখতে পারবে না। কারণ এর বিরুদ্ধে যে সামরিক, অর্থনৈতিক এবং কুচনৈতিক প্রতিরোধ গড়ে উঠবে তা সামাল দেয়ার ক্ষমতা ইরানের নেই। এটি হবে ইরানের জন্য একটি আত্মঘাতী পদক্ষেপ।
আসলে হরমুজ প্রণালী বন্ধ করার হুমকি ইরানের জন্য একটি দর কষাকষির হাতিয়ার। এটি তাদের বিগ কার্ড। যা তারা সবচেয়ে কঠিন সময়ে খেলে প্রতিপক্ষকে চাপে
ফেলার চেষ্টা করে। এটি একটি মনস্তাত্বিক যুদ্ধ যেখানে হুমকির আওয়াজটাই আসল অস্ত্রের চেয়ে বেশি কার্যকর।
হরমুজ প্রণালী শুধু একটি জলপথ নয়। এটি একটি ব্যারোমিটার যা বিশ্ব রাজনীতির উত্তাপ পরিমাপ করে। যখন এই অঞ্চলে উত্তেজনা বাড়ে এই প্রণালীর নাম খবরের শিরোনামে চলে আসে। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে আমাদের বিশ্ব অর্থনীতি এবং শান্তি কতটা ভঙ্গুর এবং কিভাবে দূরদেশের একটি সংকীর্ণ জলপথ আপনার আমার দৈনন্দিন জীবনকে প্রভাবিত করতে পারে।