রাফায়েল গ্রোসির গল্প

শান্তির দূত, যিনি ছুটে চলেছেন বোমার ছায়ায়

পরমাণু পুলিশের কাঁধে পৃথিবীর ভার

ইরান, ইউক্রেন, আর পরমাণু শক্তির দ্বন্দ্বে জাতিসংঘের এই শীর্ষ কর্মকর্তা কেমন করে শান্তি রক্ষার ভার বহন করছেন তাই তুলে এনেছেন ফিনান্সিয়াল টাইসের সম্পাদকীয় পর্ষদের সদস্য এবং কলাম লেখক গিলিয়ান টেট।

সৈয়দ মূসা রেজা
রাফায়েল গ্রোসি
রাফায়েল গ্রোসি |সংগৃহীত

ভিয়েনার আভিজাত্যপূর্ণ রেস্তোরাঁ ‘রিস্তোরান্তে সোলে’ যেন কোনও পরমাণু বিপদের ভাবনাকেও মুছে ফেলতে চায়। রোদেলা রাস্তা। প্রাচীন ঘড়ির সুর। আর ঝকঝকে শহরজুড়ে এক মায়াবী প্রশান্তি। কিন্তু এই শান্ত সৌন্দর্যের মাঝেও রাফায়েল গ্রোসি যখন টেবিলের উপর ছুরি দিয়ে দুটো বিন্দু আঁকেন, তখন সেই কল্পনাতীত বিপদের আঁচ লাগে আমাদের চিন্তায়।

ইরান, ইউক্রেন, আর পরমাণু শক্তির দ্বন্দ্বে জাতিসংঘের এই শীর্ষ কর্মকর্তা কেমন করে শান্তি রক্ষার ভার বহন করছেন তাই তুলে এনেছেন ফিনান্সিয়াল টাইসের সম্পাদকীয় পর্ষদের সদস্য এবং কলাম লেখক গিলিয়ান টেট। টেটের সাথে আলাপচারিতার সময়, এটা মস্কো, বলেন তিনি। আর এই কিয়েভ। তারপর দুই বিন্দুর মাঝখানে ইঙ্গিত করেন এক তৃতীয় স্থান—জাপোরিঝিয়া। ইউক্রেনের এক বিশাল পারমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র। রুশ সেনারা এই কেন্দ্র দখল করে রেখেছে। একসময় দেশটির বিদ্যুতের এক-পঞ্চমাংশ এই কেন্দ্র থেকেই আসত। এখন এটি এক অনন্য নজির—যুদ্ধকালে আক্রমণের শিকার পৃথিবীর প্রথম বেসামরিক পারমাণবিক স্থাপনা।

টেটকে গ্রোসি বলেন, ওখানে বোমাবর্ষণ অনেক বেড়ে গেছে, রাশিয়ার চাপও প্রচণ্ড। ২০২২ সাল থেকে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা বা সংক্ষেপে আইএইএ-র একটি পর্যায়ক্রমিক দল এই প্ল্যান্টে নিয়মিত নজরদারি করছে। “খুব বিপজ্জনক। কিন্তু আইএইএ-র দলকে ওখানেই থাকতে হবে, বলেন তিনি। নিজেই পাঁচবার সেখানে গেছেন, গোলাগুলির মাঝে। মৃত্যুকে কাছ থেকে দেখেছেন।

গ্রোসি আজ ৬৪ বছর বয়সে পৌঁছে পরমাণু বিশ্বে জাতিসংঘের প্রধান নজরদার আইএইএ-র মহাপরিচালক হিসেবে কাজ করছেন।

সাম্প্রতিক বেস্টসেলিং বই নিউক্লিয়ার ওয়ার-এ যেমন তুলে ধরা হয়েছে, পরমাণু বিপর্যয় আজ কেবল দূরবর্তী দুঃস্বপ্ন নয়; বরং হয়তো মানব সভ্যতাকেই ধ্বংস করতে পারে এমন বাস্তব আশঙ্কা। বইটি দেখিয়েছে, ২০২৪ সালের এক কাল্পনিক পরিস্থিতি থেকে—উত্তর কোরিয়া হঠাৎ করে হোয়াসং‑১৭ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়ে পেন্টাগনের দিকে। তারই জেরে ধারাবাহিক আক্রমণ সূচনা হয়। এই হামলা দ্রুত মহা-পরমাণু যুদ্ধের রূপ নেয়। মাত্র কয়েক মিনিট পেন্টাগন ধ্বংস, তারপর কালিফোর্নিয়ার পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে আঘাত, ওয়াশিংটনের উপরে রাশিয়ার ভুল বোঝাবুঝির কারণে ব্যাপক প্রতিহিংসা হিসেবে পরমাণু হামলা—সব মিলিয়ে ঘণ্টার মধ্যেই পৃথিবীর বড় অংশে চরম বিপর্যয় ঘটে।

রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণ এবং ভ্লাদিমির পুতিনের পরমাণু হুমকিগুলো এখন উপন্যাসের এমন শঙ্কাকে আরও বাস্তব করে তুলছে। আগে এসব বিষয় ছিল নিষিদ্ধ বা ট্যাবু। এখন ট্যাকটিকাল নিউক্লিয়ার অস্ত্র নিয়ে অনায়াসে আলোচনা চলছে, বলেন গ্রোসি। এ যেন নতুন এক স্বাভাবিকতা তৈরি করছে।

তবে ইউক্রেনের বাইরে গ্রোসির সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তা? ইরান। নতুন এক গোপন আইএইএ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ইরান বোমা-তৈরির উপযোগী প্রায় কাছাকাছি মাত্রায় ইউরেনিয়াম সংরক্ষণ করছে। এর পাশে যুক্ত হয়েছে ইসরাইলের স্পষ্ট হুমকি। পরিস্থিতি এমন যে বুলেটিন অব দ্য অ্যাটমিক সায়েন্টিটিসে-এর মতে, মহাপ্রলয় ঘড়ি বা ‘ডুমসডে ক্লক’ অনুযায়ী পৃথিবী ধ্বংসের মাত্র ৮৯ সেকেন্ড দূরে রয়েছে। গ্রোসি বা ফিনান্সিয়াল টাইসের সম্পাদকীয় পর্ষদের সদস্য এবং ঘাগু কলাম লেখক গিলিয়ান টেট কেউই ইহুদিবাদী ইসরাইয়েলের পরমাণু বোমার ভাণ্ডার নিয়ে মাথা ঘামাননি। কেনও? পশ্চিমী সংবাদ মাধ্যম এবং প্রশাসনের দ্বিচারী নীতিতে ভাসছে বলেই

সবচেয়ে বড় সাংঘর্ষিক ব্যাপার হলো—একদিকে যখন পরমাণু অস্ত্র নিয়ে আতঙ্ক বাড়ছে, অন্যদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবেলায় স্বচ্ছ, সবুজ শক্তি হিসেবে পরমাণু শক্তির প্রতি আকর্ষণও বাড়ছে। পারমাণবিক শক্তি একদিকে যেমন বিপদের সম্ভাবনা তৈরি করে, অন্যদিকে এই পৃথিবীর ভবিষ্যৎ রক্ষারও এক সম্ভাব্য হাতিয়ার হয়েছে, বলেন গ্রোসি। এই টানাপোড়েনের মধ্যে দাঁড়িয়ে, বিশ্ব নেতাদের কূটনৈতিক সংযম এবং সিদ্ধান্তই এখন নির্ধারণ করবে আমরা কোন পথে হাঁটব—ধ্বংস, না নির্মাণ?

নিজের সম্পর্কে গ্রোসির কথা, আমি শান্ত মানুষ। আমি শুধু আমার কাজটা করি। ভিয়েনার এই ইতালিয়ান রেস্তোরাঁর সামনে অপেরা হাউস—গ্রোসির প্রিয় জায়গা। আর্জেন্টিনায় জন্ম হলেও তাঁর পারিবারিক শিকড় ইতালিতে। আর সেই রোমান ঐতিহ্য তাঁর পোশাক, ভাষা আর খাদ্যরুচিতে স্পষ্ট। মার্জিত স্যুট, কাতারে অনুষ্ঠিত ২০২২ ফুটবল বিশ্বকাপের স্মারক ব্রেসলেট, ছয়টি ভাষায় পারদর্শিতা—সব মিলিয়ে এক আধুনিক কূটনীতিকের প্রতিচ্ছবি। তিনি বলেন, আমি ফুটবল পাগল। কাতারে আর্জেন্টিনার জয় দেখে এই ব্রেসলেট খুলতে পারছি না, পরের বিশ্বকাপ পর্যন্ত থাকবেই!

আর্জেন্টিনা বনাম ইতালি হলে কাকে সমর্থন? আর্জেন্টিনা অবশ্যই। তবে বাকিটা সময় আমি ইতালিকে সমর্থন করি, হেসে বলেন তিনি।

নিউক্লিয়ার অস্ত্র আর কূটনীতির যুদ্ধক্ষেত্র খেলছেন গ্রোসি। গ্রোসি নিজেকে কোনো পক্ষের লোক হিসেবে দেখতে চান না। ডেমোক্র্যাট বা রিপাবলিকান—উভয়ের সঙ্গেই কাজ করেন।

২০১৯ সালে আইএইএ-র প্রধান হওয়ার আগে তিনি কাজ করেছেন আর্জেন্টিনার প্রতিনিধিত্ব করে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মিশনে, এমনকি রাসায়নিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ সংস্থাতেও। এখন তাঁর নজর জাতিসংঘ মহাসচিবের পদে। আমি প্রচার করব না। আমার কাজই আমার প্রচার, বলেন তিনি। দুই ফোন নিয়ে চলাফেরা করেন—একটা পাবলিক, একটা প্রাইভেট। কিন্তু রাজনীতিবিদরা সবসময় প্রাইভেট ফোনেই কল করতে চান। সিগন্যাল খুব জনপ্রিয়। তবে এখন তো ওখানেও গোপনীয়তা নেই, বলে হেসে ওঠেন তিনি যুদ্ধ, কূটনীতি আর ভাঙা জীবন কাটাচ্ছেন। জাপোরিঝিয়া বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে মস্কো ও কিয়েভে পালা করে কূটনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছেন গ্রোসি। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির ছয়টি টারবাইন এখন ঠান্ডা বা ‘কোল্ড’ অবস্থায় থাকায় চেরনোবিলের মতো ভয়াবহ বিপর্যয়ের সম্ভাবনা আপাতত নেই। তবে যুদ্ধের মধ্যে ওই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে পৌঁছানো কঠিন। একটা সেতু পার হতে হয়, তারপর হাঁটা, তারপর দড়ি বেয়ে নামা। আমি নিজের চোখে দেখেছি। এখন রাশিয়া বলছে, আপনি আসলে মেরে ফেলা হবে। কে গুলি করছে? গ্রোসি কূটনৈতিকভাবে বলেন, আমরা জানি না কারা গুলি করছে।

ইরান, পারমাণবিক ছায়ায় বিস্ফোরক উত্তেজনা রয়েছে বলে মনে করেন গ্রোসি। ওবামা আমলে ইরান পারমাণবিক কার্যক্রমে আইএইএ-কে প্রবেশাধিকার দিয়েছিল। কিন্তু ট্রাম্পের সময় সেই চুক্তি ভেঙে যায়। এক তরফা ভাবে ট্রাম্পই সে চুক্তি ভাঙ্গেন, সে কথা স্পষ্ট করে বলা হয় না। ভাসুরের নাম নিতে বারণ! এখন ইরান ৬০ শতাংশ বিশুদ্ধতায় ইউরেনিয়াম মজুত করছে। পরমাণু বোমার দিকেই এগোচ্ছে কি না, সে প্রশ্ন উঠছে। এদিকে ইরান এনপিটিতে সই করেছে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা পরমাণু বোমা তৈরি ও মজুদ করাকে হারাম ঘোষণা করে ফতোয়া দিয়েছেন। সে কথা আইএইএ বা পশ্চিমের পক্ষ থেকে উচ্চারিত হয় না। এ সব কথা বাদ দিয়ে তিনি ফিন্সানিসিয়াল টাইমসের সাথে আলাপচারিতা করেন।

ইরানের এখনো বোমা নেই, কিন্তু উপকরণ আছে। (পরমাণু বোমা বানাতে) মাত্র কয়েক ধাপের ব্যবধান, বলেন গ্রোসি।

অন্যদিকে ইসরাইল হুমকি দিচ্ছে সামরিক অভিযানের। এই ইস্যুটা একেবারেই বিস্ফোরণযোগ্য, বললেন গ্রোসি। “যদি আলোচনায় ব্যর্থতা আসে, তাহলে সামরিক পদক্ষেপের আশংকা অনেক বেশি।”

ইরানের ইউরেনিয়াম মজুদের কিছু অংশ আধা কিলোমিটার মাটির নিচে, যেখান পর্যন্ত পৌঁছাতে সর্পিল সুরঙ্গ পথ দিয়ে নামতে হয়। আমি বহুবার গিয়েছি, জানালেন গ্রোসি। ওগুলো একবারে ধ্বংস করা সহজ নয়।

ইসরাইল যখন আক্রমণের হুমকি দিচ্ছে, তখন আবার ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ শান্তি আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছেন। অনেকেই বলেন উইটকফের পরমাণু কূটনীতির যোগ্যতা নেই। কিন্তু গ্রোসি একমত নন। উইটকফ অত্যন্ত সিরিয়াস। এবং ট্রাম্প সেখানে আলোচনার সুযোগ তৈরি করেছেন—এটা প্রশংসনীয়, গ্রোসির কথা।

ব্যক্তিক একান্ত জীবন: বিচ্ছেদ, সন্তান, আর একাকী দায়িত্ব পালন করছেন গ্রোসি। পরমাণু পুলিশের এই বিপুল দায়িত্বের মূল্য তাঁকে ব্যক্তিগত জীবনে দিতে হয়েছে। আমি আমার জীবন দিয়ে এর দাম দিচ্ছি। একবার বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে। সাত কন্যা, এক পুত্র। তিনি মজা করে বলেন, (নিজের ঘরে) এত মেয়ে—এটাই তো কূটনীতির সবচেয়ে বড় স্কুল!

উত্তর কোরিয়া ছাড়া, প্রায় সব দেশই তাঁর সঙ্গে কথা বলে। কিম জং উনের দেশ তাঁকে বের করে দিয়েছে ২০০৯ সালে। দক্ষিণ কোরিয়া তাঁকে ‘হাঙর’ নামে ব্যঙ্গ করে, কারণ তিনি উত্তর কোরিয়ার পরমাণু বিষয় নিয়ে স্পষ্টভাবে কথা বলেন। চীনও বিরক্ত হয়েছিল যখন ২০২৩ সালে জাপান ফুকুশিমার প্রক্রিয়াজাত পানি সমুদ্রে ছাড়ে। কিন্তু গ্রোসি সেই বিতর্কও সামলেছেন চীনা পরিদর্শকদের ফুকুশিমায় নিয়ে গিয়ে।

জীবনের এই টানাপোড়েনের মধ্যেও রাফায়েল গ্রোসি শান্ত। ওলিভ অয়েলে ভেজানো সল্ট-বেকড ফিশ খেতে খেতে টেটকে তিনি বলেন, আমি সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলি। আমার ক্ষমতা হলো নিরপেক্ষ থাকা। আমার প্রতিবেদনই সত্যের মাপকাঠি। এই জগতে যেখানে সত্য প্রায়ই কুয়াশায় ঢাকা পড়ে যায়, সেখানে গ্রোসির কণ্ঠ যেন এক পরমাণু দূত—ঝড়ের মধ্যেও শান্ত, আগ্নেয়গিরির কিনারায় দাঁড়িয়ে আলো হাতে মানুষকে পথ দেখানো একজন নীরব রক্ষক।

এ সাথে বিশ্ব পরমাণু পুলিশ এবং পরমাণু সংস্থা নিয়ে সকল কথা ফুরাল। বা নটে গাছটি মুড়াল মনে করার কারণ নেই। ফিন্সসিয়াল টাইমসের নিবন্ধ পড়ার পর প্রশ্ন জাগবে, গ্রোসিকে অনেকে বলেন 'পরমাণু পুলিশ'—তবে এই তকমার মধ্যেই লুকিয়ে আছে এক অস্বস্তিকর প্রশ্ন। 'পুলিশ' শব্দটি অনেক দেশেই আজ আর আস্থা বা নিরপেক্ষতার প্রতীক নয়। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, এমনকি তৃতীয় বিশ্বের অনেক দেশেই পুলিশের বিরুদ্ধে পক্ষপাত, নির্যাতন বা গোপন কেলেঙ্কারির অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের বেনজীরের মতো না হলেও তার কাছাকাছি পুলিশে নজির মিলবে ভুরি ভুরি। তাই যখন রাফায়েল গ্রোসির মতো কেউ জাতিসংঘের পক্ষ থেকে ‘বিশ্ব পুলিশ’ হিসেবে কাজ করেন, বেনজিরদের মতো পুলিশদের ভূমিকা থেকে তখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে—কার পক্ষে দাঁড়ান তিনি?

এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়ে ওঠে যখন মনে পড়ে ১৯৮৬ সালের সেই বিস্ময়কর ঘটনা। ইসরাইলি পরমাণু টেকনিশিয়ান মোর্ডেখাই ভানুনু ব্রিটিশ সংবাদপত্র দ্য সানডে টাইমস-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ফাঁস করে দেন ইসরাইলের গোপন পারমাণবিক কর্মসূচির অন্তর্নিহিত সত্য। তিনি দেখান, ইসরাইল তাদের ডাইমোনা স্থাপনায় গোপনে পারমাণবিক বোমা বানাচ্ছে। ভানুনুর সেই সাক্ষাৎকারে ছিল গোপন ছবি, নথি আর অভ্যন্তরীণ তথ্য, যা পৃথিবীর পরমাণু রাজনীতিতে এক প্রবল আলোড়ন তোলে। এরপরও ইসরাইলি গোয়েন্দারা ভানুনুকে অপহরণ করে এনে কারাগারে পুরে দেন। আজও তিনি নিঃসঙ্গ, নাগরিক স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত।

তেলআবিবের হাতে ৮০ থেকে ৯০টি তাজা পরমাণু বোমা রয়েছে। সবাই জানেন। তারপরও গ্রোসি কিংবা আইএইএ কখনোই এই পরমাণু বোমার মালিকানাকে প্রকাশ্যে প্রশ্ন তোলে না। ভানুনুর মতো মানুষরা তখন পরিণত হন অপরাধীতে, অথচ ইসরায়েলের পরমাণু অস্ত্রভাণ্ডার থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকে তথাকথিত ‘নিরপেক্ষ’ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো। ফলে প্রশ্ন থেকেই যায়—এই পরমাণু পুলিশের কাঁধে সত্যিই কি আছে গোটা পৃথিবীর ভার, নাকি কেবলমাত্র কিছু শক্তিধর রাষ্ট্রের স্বার্থরক্ষার দায়?