মনোমুগ্ধকর উপকূলরেখা, জঙ্গল এবং প্রাকৃতিক বিস্ময়ে সমৃদ্ধ দেশ মালয়েশিয়া। এখানে বহুসংস্কৃতির মানুষের বসবাস রয়েছে। সমুদ্র সৈকত, রেইনফরেস্ট, শিক্ষার সুযোগ এবং অতুলনীয় সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতা নেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। জঙ্গলের মধ্য দিয়ে ভ্রমণ করার এবং সেখানে বসবাসকারী বিস্ময়কর প্রাণীদের সাথে দেখা করার সুযোগও রয়েছে। পাশাপাশি এখানে আবিষ্কার করার মতো অনেক কিছু রয়েছে।
আকর্ষণীয় সমুদ্র সৈকত ও রেইনফরেস্ট
এর একপাশে বোর্নিও দ্বীপে সারাওয়াক এবং সাবাহ রাজ্য অবস্থিত। যেখানে রয়েছে উপকূলরেখা, মনোরম দ্বীপ, বিলাসবহুল রিসোর্ট। দূরে কোথাও ঘুরতে যাওয়া বা মধুচন্দ্রিমা কাটাতে আগ্রহী দম্পতিদের জন্য জায়গাটি বেশ উপযোগী।

সারাওয়াকের দামাই বিচের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য এবং নীল জলরাশি যারা উপভোগ করেছেন তারা এখানে এসে অনেক উপজাতি এবং সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারেন। তাদের বহুসংস্কৃতি এই অঞ্চলকে সমৃদ্ধ করেছে। পারিবার নিয়েও এখানে অনেকে ভ্রমণ করতে অসে।
সারাওয়াকের পামরেখাযুক্ত সেমাতান সৈকত এবং সাবাহের উপকূলে রোমান্টিক জলের উপর বাংলো সহ মাবুল এবং কাপালাই দ্বীপপুঞ্জ সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন।
সাবাহতে গায়া দ্বীপও আছে, যা মধুচন্দ্রিমার জন্য একটি প্রিয় স্থান।
ডুবুরি এবং স্নোরকেলারদের জন্য সাবাহে সুব্যবস্থা রয়েছে। এখানে রয়েছে সিপাদান দ্বীপ যেটি বিশ্বের শীর্ষ ডাইভিং গন্তব্যগুলোর মধ্যে স্থান পেয়েছে । কাছাকাছি মাবুল দ্বীপ জনপ্রিয় যেটি ডুবুরি এবং স্নোরকেলার উভয়েরই প্রিয়।
সারাওয়াকের ঠিক তীরে অবস্থিত তালাং তালাং দ্বীপপুঞ্জ। এখানে রয়েছে লুকানো রত্ন যা পর্যটনের জন্য নয়। কিন্তু যেখানে দর্শনার্থীরা কচ্ছপ সংরক্ষণের সবচেয়ে যুগান্তকারী কিছু পদক্ষেপ দেখতে পাবেন।
সারাওয়াকের সাতাং দ্বীপটিও নিয়ন্ত্রিত। যেখানে সাঁতার কাটা, সাদা বালির সৈকতে বিশ্রাম নেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। এখানে সংরক্ষণকারীদের তত্ত্বাবধানে সবুজ কচ্ছপদের বাসা বাঁধা পর্যবেক্ষণ করা হয়। এজন্য শুধু দিনের বেলা ভ্রমণের জন্য জায়গাটি উপযুক্ত।
যাদুকরী বন্যজীবন
সারাওয়াকের পশ্চিম প্রান্তে "বোর্নিওর স্বর্গ" জাতীয় উদ্যান রয়েছে। এখানে প্রকৃতিপ্রেমী ও দর্শনার্থীরা রেইনফরেস্টে হাঁটতে বা সৈকতে বিশ্রাম নিতে পারেন।

আপনি যদি বন্যপ্রাণী প্রেমী হন তাহলে প্রাকৃতিক আবাসস্থলে বোর্নিয়ান ওরাংওটাং না দেখে বোর্নিও ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করবে না। ওরাংওটাং অত্যন্ত বুদ্ধিমান প্রাণী। এটি বোর্নিও এবং সুমাত্রার স্থানীয়। এর তিনটি প্রজাতি রয়েছে - বোর্নিয়ান, সুমাত্রান এবং তাপানুলি।
সাবাহে একটি পুনর্বাসন কেন্দ্র রয়েছে যেখানে আপনি ওরাংওটাংকে খাওয়ানো এবং নার্সারিতে পর্যবেক্ষণ করতে পারেন।
পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী রেইনফরেস্ট হিসাবে পরিচিত ডানুম ভ্যালি এবং কিনাবাতাঙ্গান নদী ক্রুজগুলোও তাদের প্রাকৃতিক আবাসস্থলে তাদের দেখার সুযোগ দেয়। সারাওয়াক সেমেঙ্গোহ বন্যপ্রাণী কেন্দ্রের আধাবন্য পরিবেশে বা বাতাং আই জাতীয় উদ্যানে এবং বন্য পরিবেশে এই প্রাণীগুলিকে দেখার সুযোগ করে দেয়।
মালয়েশিয়া সংস্কৃতির এক মিশেল, যেখানে মালয়, চীনা, ভারতীয় এবং অন্যান্য আদিবাসী উপজাতিরা তিনটি প্রধান গোষ্ঠী নিয়ে গঠিত। তাছাড়াও ওরাং আসলি, ওরাং উলু এবং আনাক নেগেরি উপজাতির বসবাস রয়েছে। এর মানে হলো যে আপনি যেখানেই যান না কেন, আপনি একটি ভিন্ন সংস্কৃতির দেখা পাবেন। ভিন্ন খাবার এবং ভিন্ন ধরণের স্বাগত অনুভব করবেন।
সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতা
পর্যটকদের জন্য মালয়েশিয়ায় রয়েছে অসংখ্য থিম পার্ক। রাজ্য জুড়ে কমপক্ষে ১৫টি পার্ক রয়েছে। পশ্চিম মালয়েশিয়ায় সকল বয়সের জন্য জলপথে ভ্রমণ, সাংস্কৃতিক প্রদর্শনী এবং রোমাঞ্চকর পরিবেশ রয়েছে।
সানওয়ে লেগুন একটি পুরষ্কারপ্রাপ্ত মাল্টি-পার্ক কমপ্লেক্স যেখানে রয়েছে ৯০টিরও বেশি আকর্ষণ। তাছাড়া সাতটি স্বতন্ত্র অ্যাডভেঞ্চার জোন রয়েছে।

ওয়েট ওয়ার্ল্ড ওয়াটার পার্ক, দ্য কার্নিভাল এবং আ'ফামোসা ওয়াটার থিম পার্কের মতো অনেক ওয়াটার থিম পার্ক আছে যেগুলো সব বয়সের মানুষকে জন্য প্রচুর বিনোদন দিতে পারে। যদি আপনি ভিজতে আগ্রহী না হন, তাহলে অন্যান্য থিম পার্ক রয়েছে। যা আপনার পছন্দের হতে পারে, যেমন আই-সিটি থিম পার্ক, বেরজায়া টাইমস স্কয়ার থিম পার্ক এবং জেন্টিং স্কাইওয়ার্ল্ডস এগুলো সিনেমা-থিমযুক্ত রাইডের জন্য বিখ্যাত।
মালয়েশিয়া ভ্রমণ এবং সেখানে পড়াশোনার মিলনস্থল হল মালয়েশিয়ার নিজস্ব এডুট্যুরিজম প্রোগ্রাম। এই প্রোগ্রামটি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের তাদের পছন্দের বিষয়গুলির সাথে মেলে সাজানো হয়। কৃষি ও পশুচিকিৎসা অধ্যয়ন , বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং শিল্প ও সামাজিক বিজ্ঞান সব বিষয় রয়েছে।
শিক্ষাভ্রমণ
এই প্রোগ্রামটি ১৫টিরও বেশি শীর্ষ মালয়েশিয়ান অংশীদার বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে হয়ে থাকে। এটি বেসরকারি-সরকারি উভয় ধরণের হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে ইউনিভার্সিটি মালায়া (UM), ইউনিভার্সিটি কেবাংসান মালয়েশিয়া (UKM) এবং ইউনিভার্সিটি পুত্র মালয়েশিয়া (UPM) এর মতো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, যার মধ্যে অনেকগুলো মালয়েশিয়ার সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র, টেকসই কৃষি এবং সংরক্ষণ বিজ্ঞান সম্পর্কিত গবেষণার উপর মনোনিবেশ করে।

মালয়েশিয়ায় এক লাখেরও বেশি বিদেশী শিক্ষার্থী রয়েছে। দেশটি এই সংখ্যা দেড় লাখে উন্নীত করার টার্গেট নিয়েছে। প্রায় ৬০ শতাংশ বিদেশী শিক্ষার্থী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে এবং বাকিরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়াশোনা করছে।
মালয়েশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান হলেও, শিক্ষার্থীরা মালয়েশিয়ায় বসবাসের প্রকৃত বহুসংস্কৃতির প্রতিও আকৃষ্ট হয়। যেখানে প্রগতিশীল পড়াশোনা সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সাথে সহাবস্থান করে। সরকার ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করার জন্য কর্মসূচি গ্রহণ করায় শিক্ষার্থীরা মালয়েশিয়ায় যাওয়ার প্রক্রিয়াটিকে আরও সহজ মনে করে।