প্লাস্টিক দূষণ রোধে আকাশের তেঁতুলিয়া-টেকনাফ পদযাত্রা

মো: আকাশ আলী প্লাস্টিক দূষণ কমানোর বার্তা ছড়িয়ে মাত্র ২৫ দিনে তেঁতুলিয়া থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ১,০০০ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে ‘ক্রস কান্ট্রি’ অভিযান সম্পন্ন করেছেন; যাত্রাপথে মানুষের আন্তরিকতা ও ব্যক্তিগত চ্যালেঞ্জ জয়ই ছিল তার বড় অনুপ্রেরণা।

আহমেদ ফয়সাল
আকাশের তেঁতুলিয়া-টেকনাফ পদযাত্রা
আকাশের তেঁতুলিয়া-টেকনাফ পদযাত্রা |নয়া দিগন্ত

চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গার রামদিয়া গ্রামের শিক্ষার্থী মো: আকাশ আলী প্লাস্টিক দূষণ রোধে সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত পায়ে হেঁটে ‘ক্রস কান্ট্রি’ অভিযান সম্পন্ন করেছেন। ৮ নভেম্বর তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট থেকে যাত্রা শুরু করে ৭ ডিসেম্বর পৌঁছান টেকনাফে। মাত্র ২৫ দিনে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত প্রায় ১,০০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করেন তিনি। মাঝে অবশ্য কয়েকদিন নিতে হয়েছে বিশ্রাম।

মো: আকাশ আলীর সাথে কথা বলেছেন নয়া দিগন্তের সহ-সম্পাদক আহমেদ ফয়সাল

প্রশ্ন ১ : এই অভিযানের মূল প্রেরণা কী ছিল?
তেঁতুলিয়া থেকে টেকনাফের এই যাত্রা প্রায় ১,০০০ কিলোমিটার। এটি একটি অ্যাডভেঞ্চার অভিযান, যা আমার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল। দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পায়ে হেঁটে যাওয়ার অভিজ্ঞতা ও গল্প সবাইকে শোনানোর জন্য এবং জীবনে স্মৃতিময় এক অধ্যায় যোগ করার উদ্দেশ্যেই এটি করেছি।

প্রশ্ন ২ : দীর্ঘ যাত্রা শুরু করার আগে আপনার মানসিক ও শারীরিক প্রস্তুতি কেমন ছিল?
শুরুতে আলহামদুলিল্লাহ ভালো ছিলাম। ফেসবুকে যাত্রার তারিখ ঘোষণা করার পর থেকেই উত্তেজনা অনুভব করছিলাম। তবে যাত্রার দু’দিন আগে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম, ঠান্ডা লেগেছিল। তবুও যাত্রা নির্ধারিত ছিল, তাই অসুস্থ শরীর নিয়েই বের হয়েছি।

প্রশ্ন ৩ : কেউ আপনাকে অনুপ্রাণিত করেছেন কি, নাকি এটি ছিল ব্যক্তিগত স্বপ্ন?
আমার অনুপ্রেরণা ছিল এভারেস্টজয়ী ডা: বাবর আলী ভাই। তার ৬৪ জেলা ভ্রমণের গল্প শুনে আমি প্রেরণা পেয়ে নিজেও ২০২৪ সালে ৯৫ দিনে পায়ে হেঁটে ৬৪ জেলা ঘুরেছি। এরপর ২০২৫ সালে ক্রস কান্ট্রি অভিযানটি সম্পন্ন করেছি।

প্রশ্ন ৪ : পুরো রুটে কোন অংশটি সবচেয়ে কঠিন মনে হয়েছিল?
সাধারণভাবে রুটটি সহজ মনে হয়েছিল। তবে সিরাজগঞ্জ থেকে টাঙ্গাইলের যমুনা সেতু পার হওয়া ছিল চ্যালেঞ্জিং, কারণ সেতু হেঁটে পার হওয়া সম্ভব নয় এবং সাঁতার দিয়ে পার হওয়া কঠিন ছিল।

প্রশ্ন ৫ : যাত্রাপথে স্থানীয় মানুষের আচরণ ও সহযোগিতা কেমন ছিল?
স্থানীয় মানুষের আন্তরিকতা সত্যিই মুগ্ধ করার মতো। তারা খাবার খাওয়ায় সাহায্য করেছেন এবং পথপ্রদর্শন করেছেন। তাদের আন্তরিকতা আমাকে আনন্দিত করেছে।

প্রশ্ন ৬ : নিরাপত্তা-সংক্রান্ত কোনো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন কি?
কক্সবাজার থেকে টেকনাফের রাস্তাটি কিছু অংশে ভয়ঙ্কর শোনা গিয়েছিল, তবে সব জায়গায় না। এসব শুনে বের হলাম ২৩তম দিনে কক্সবাজার শহরে থেকে শামলাপুরের উদ্দেশে। পরবর্তীতে শামলাপুর যেতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। ওখানে গিয়ে হোটেল পাচ্ছিলাম না। পরে শামলাপুরে মসজিদে ইমাম সাহেবের কাছে রাত যাপন করেছি।

প্রশ্ন ৭ : প্রতিদিন গড়ে কত কিলোমিটার হেঁটেছেন এবং রুট প্ল্যান কেমন ছিল?
দৈনিক হাঁটা ছিল ৩০-৬০ কিলোমিটার। আমি আগেই রুট ও রাত যাপনের জায়গা নির্ধারণ করেছিলাম।

প্রশ্ন ৮ : যাত্রার সবচেয়ে আনন্দের বা আবেগঘন মুহূর্ত কী ছিল?
মানুষের সাথে দেখা ও সময় কাটানো সবসময় আনন্দ দিয়েছে। কিছু মানুষ রাস্তার পাশের ডাস্টবিন থেকে খাবার খেতে দেখলে দুঃখ লাগত।

প্রশ্ন ৯ : এত দীর্ঘ হাঁটার ফলে কোনো স্বাস্থ্যঝুঁকি হয়েছিল কি?
উত্তর: প্রথম ২-৩ দিনে পা ব্যথা ও ঠান্ডা লেগেছিল, পরে আলহামদুলিল্লাহ কোনো সমস্যা হয়নি।

প্রশ্ন ১০ : পরিবার ও বন্ধুদের সমর্থন কেমন ছিল?
আমার পরিবার সবসময়ই না করে ঘুরাঘুরির বিষয়ে। কারণ আমরা মধ্যবিত্ত, তবুও ব্যবস্থা করার চেষ্টা করি। এবার পরিবার সমর্থন দিয়েছে। বন্ধুরা ভালো সহায়তা করেছে।

প্রশ্ন ১২ : স্পন্সর বা সহযোগিতা না থাকলে কি যাত্রা চালানো কঠিন হতো?
আমি স্পন্সর আমি পাইনি। এর আগে ৬৪ জেলা ঘুরেছি, প্রতিটি জেলায় পরিচিত কম-বেশি পরিচিত মানুষ ছিল। তারা আমাকে সহায়তা করেছেন।

প্রশ্ন ১১ : এই যাত্রার মাধ্যমে আপনি কি সামাজিক বার্তা দিতে চেয়েছেন?
দূষণমুক্ত দেশ তৈরির বার্তা প্রচার করতে চেয়েছি। সিঙ্গেল-ইউজ প্লাস্টিকের দূষণ কমানোর জন্য সচেতনতা তৈরি করতে চেয়েছে।

প্রশ্ন ১২ : তরুণরা যদি ক্রস কান্ট্রি যাত্রায় আগ্রহী হয়, তাদের কিভাবে প্রস্তুতি নেয়া উচিত?
যাত্রা শুরু ৫-১০ দিন আগে হালকা হাঁটা-হাঁটি করলে ভালো হয়। এ যাত্রা আপনার পা ঠিক, তো সব ঠিক। তবে আগেই রুট প্ল্যান করা প্রয়োজন।

প্রশ্ন ১৩: আবার এমন দীর্ঘ পথ হাঁটার পরিকল্পনা আছে কি?
আছে, বাইরের দেশে ভ্রমণ বা হজের পরিকল্পনা আছে। নিজেকে প্রস্তুত করে এগিয়ে যাব, ইনশাআল্লাহ।