হিমালয়ে অবস্থিত পৃথিবীর অষ্টম উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ ‘মানাসলু’ জয় করেছেন বাংলাদেশী পর্বতারোহী তৌফিক আহমেদ তমাল।
বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) নেপালের স্থানীয় সময় ভোর ৩টায় মানাসলুর শীর্ষে (৮১৬৩ মিটার) লাল-সবুজ পতাকা উত্তোলন করেন তিনি।
মানাসলু বিশ্বের প্রাণঘাতী পর্বতগুলোর একটি, এর উচ্চতা ৮ হাজার ১৬৩ মিটার।
এ অভিযানের পরিচালনা করছে সেভেন সামিট ট্রেকার্স। সংস্থাটির বেইজক্যাম্প ম্যানেজার দর্জি ভোট শেরপার বরাত দিয়ে অভিযানের বাংলাদেশ সমন্বয়ক মহিউদ্দিন আল মুহিত বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
মুহিত বলেন, তমালের পর্বতের যুদ্ধ কিন্তু এখানেই শেষ নয়। এখন সুস্থভাবে নিচে নেমে আসাটাই প্রধান লক্ষ্য। জানেনই তো, চূড়ায় উঠার চেয়ে নেমে আসাটা অধিক ঝুঁকিপূর্ণ।
তিনি বলেন, তমাল নেটওয়ার্ক বিছিন্ন হওয়ায় চূড়ার নিশ্চিত সামিট টাইম এবং ছবি-ভিডিও আপাতত দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তমাল নেটওয়ার্কে ফিরলেই বিস্তারিত সবকিছু জানানো হবে।
তিনি আরো বলেন, আপাতত তমালের নিরাপদ অবতরণের জন্য আমাদের দোয়া চলমান থাকুক। এরপর না হয় সবাই একসাথেই আনন্দ উল্লাস করলাম।
মানাসলু তার প্রথম ‘আট-হাজারী’ শৃঙ্গ, এই অভিযানে তিনি কোনো প্রাতিষ্ঠানিক বা করপোরেট অর্থায়ন নেননি। সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে এই কঠিন শৃঙ্গ জয় করে তিনি বাংলাদেশের পর্বতারোহণ ইতিহাসে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন।
রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এই অভিযানের আগে বাংলাদেশী প্রথম নারী এভারেস্ট বিজয়ী নিশাত মজুমদার তাকে জাতীয় পতাকা তুলে দেন।
মানাসলু পশ্চিম-মধ্য নেপালের মানসিরি হিমালে অবস্থিত। সংস্কৃত শব্দ ‘মনসা’ থেকে নামটির উৎপত্তি, যার অর্থ ‘বুদ্ধি’ বা ‘আত্মা’। তাই মানাসলু মানে দাঁড়ায় ‘আত্মার পর্বত’। ১৯৫৬ সালে জাপানি পর্বতারোহী তোশিও ইমানিশি এবং গ্যালজেন নরবু প্রথম এই পর্বতের চূড়ায় পৌঁছান। উচ্চতায় এটি অষ্টম হলেও, বিশ্বের সবচেয়ে প্রাণঘাতী পর্বতগুলোর মধ্যে চতুর্থ স্থানে রয়েছে।
তৌফিক আহমেদ তমাল ১৪ বছরের বেশি সময় ধরে দেশের পাহাড় ও হিমালয়ে নিয়মিত ট্রেকিং ও আরোহণ কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন। হিমালয়ে বছরের বেশিভাগ সময় অতি উচ্চতার ট্রেক আয়োজনের পাশাপাশি দেশে ক্লাইম্বিং ইন্সট্রাকটর হিসেবেও কাজ করেন।
তমাল ভারতের নেহেরু ইন্সটিটিউট অফ মাউন্টেইনিয়ারিং থেকে পর্বতারোহণের মৌলিক ও উচ্চতর প্রশিক্ষণ এবং রক ক্লাইম্বিংয়ের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন।
এর আগে, তিনি ৫,০০০ থেকে ৬,০০০ মিটারের সাতটি ও ৬,৫০০ মিটারের উপরে দু’টি শৃঙ্গ জয় করেছেন। প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে শীতকালীন থার্পু চুল্লি এবং পদ্মা নদীর উৎস পর্বত ভাগীরথী-২ (৬৫১২ মিটার) আরোহণ তার সাফল্যের মধ্যে অন্যতম। এছাড়া ২০২৪ সালে তিনি পৃথিবীর অন্যতম কঠিন শৃঙ্গ মাউন্ট আমা দাবলাম (৬৮১৪ মিটার) জয় করেন।
উল্লেখ্য, আরো দুই বাংলাদেশী তানভীর আহমেদ ও এভারেস্টজয়ী ডা: বাবর আলীও মানাসলু অভিযানের পথে রয়েছেন। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামীকাল শুক্রবার মানাসলুর শীর্ষে তারাও লাল-সবুজের পতাকা উত্তোলন করবেন।