ভাইরাল দুবাই চকোলেট মার্কিন স্টেট ফেয়ারেও জনপ্রিয়

এটি বেলজিয়ান চকোলেট সমৃদ্ধ খাবার। একটি কাপে চিজকেকের উপর পেস্তা বাদাম ছড়িয়ে লাসাগনার মতো করে এটি পরিবেশন করা হয়। এটা কর্ন ডগ ও কটন ক্যান্ডি থেকে একেবারেই ভিন্ন।

মুসলিমা খাতুন
দুবাই চকোলেট
দুবাই চকোলেট |সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ফেয়ারে প্রচলিত খাবারের পাশাপাশি এখন সবচেয়ে আলোচিত মিষ্টান্ন হলো দুবাই চকোলেট। মিনেসোটা থেকে টেক্সাস ও ক্যালিফোর্নিয়া পর্যন্ত মেলার দর্শকরা এই খাবারটি খুব পছন্দ করছে।

মার্কিন গণমাধ্যম এনবিসি নিউজের প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

টেক্সাস স্টেট ফেয়ারে, মিষ্টান্নকারক স্টিফেন এল গিদি তার নিজস্ব দুবাই চকোলেট-অনুপ্রাণিত মিষ্টান্ন পরিবেশন করেন। এটি বেলজিয়ান চকোলেট সমৃদ্ধ খাবার। একটি কাপে চিজকেকের উপর পেস্তা বাদাম ছড়িয়ে লাসাগনার মতো করে এটি পরিবেশন করা হয়। এটা কর্ন ডগ ও কটন ক্যান্ডি থেকে একেবারেই ভিন্ন।

পশ্চিম উপকূল থেকে মধ্য আমেরিকা পর্যন্ত বিভিন্ন স্টেট ফেয়ারে মিষ্টান্নকারকরা তাদের নিজস্ব দুবাই চকোলেট ভিত্তিক মিষ্টান্ন বিক্রি করছেন। এখানে মধ্যপ্রাচ্যের পেস্ট্রি রয়েছে- যা ক্রিমি পেস্তা বাদাম, তাহিনী ও ক্রিস্পি কাতাইফি দিয়ে ভরা একটি মিল্ক চকোলেট শেল।

এই খাবারগুলো দুবাই চকোলেট থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তৈরি করা হয়েছে। ২০২১ সালে অনলাইন ভিত্তিক মিষ্টান্নের দোকান ফিক্স ডেজার্ট চকোলেটিয়ারের প্রতিষ্ঠাতা সারাহ হামুদা এই চকোলেট তৈরি করেছিলেন।

ইনফ্লুয়েন্সারদের মাধ্যমে এই চকোলেট দ্রুত ভাইরাল হয়েছে। হামুদা জানান, তিনি প্রতি মিনিটে ১০০টি চকোলেট বার বিক্রি করছেন । এখন দুবাই চকোলেট-অনুপ্রাণিত মিষ্টান্ন জনসাধারণের কাছে পৌঁছেছে এবং এই বছর প্রথমবারের মতো কয়েকটি রাজ্য মেলায় দেখা যাচ্ছে।

মিনেসোটা স্টেট ফেয়ারে আগস্টের শেষের দিকে দুবাই চকলেট স্ট্রবেরি কাপ বিক্রি হবে। সম্প্রতি উইসকনসিনে দুবাই চকলেট বারের নিজস্ব সংস্করণটি প্রদর্শিত হয়েছে। গত মাসে দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়া অরেঞ্জ কাউন্টি ফেয়ারে দুবাই চকলেট ব্রাউনি চালু করেছে। এছাড়া গত মে মাসে এলএ কাউন্টি ফেয়ারে দুবাই চকলেট স্ট্রবেরি কাপও বিক্রি হয়েছে।

ড্রিজল চিজকেক ব্যবসায়ী এল গিদি এনবিসি নিউজকে জানান, এই বছর তিনি স্টেট ফেয়ারে ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার কাপ বিক্রি করার লক্ষ্য রাখছেন।

ট্রেডার জো'স, কস্টকো এবং এমনকি মল কিয়স্কের মতো দোকানগুলোতে তাদের নিজস্ব দুবাই চকলেট বার পাওয়া যাচ্ছে, যার দাম প্রায় চার ডলার। কিছু জায়গায় দুবাই চকোলেট পেস্তা বাদাম শেকও রয়েছে, যা কাতাইফি ও পেস্তা ফ্রোজেন কাস্টার্ড দিয়ে তৈরি করা হয়। এছাড়া ডার্ক চকোলেট শেল রয়েছে, যার দাম ১১ ডলার।

এখন দুবাইয়ের লোকেরা হামুদার অনলাইন দোকান থেকে বা ডেলিভারি সার্ভিসের মাধ্যমে চকোলেট বার অর্ডার করতে পারেন। প্রতি বারের দাম ১৮ ডলারের কিছু বেশি। এছাড়া চকোলেটপ্রেমীরা দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টার্মিনাল ৩ এর শুল্কমুক্ত দোকানে বারটি খুঁজে পেতে পারেন।

কোম্পানির এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মে মাসে দুবাই ডিউটি ফ্রি-এর মিষ্টান্ন বিভাগের পণ্য বিক্রি ২০ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা ৮১% বৃদ্ধি পেয়েছে। দুবাই চকোলেটের জনপ্রিয়তার কারণে জন্য এটি সম্ভব হয়েছে।

দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার সান গ্যাব্রিয়েল ভ্যালির খাদ্য সাংবাদিক ক্রিস্টি হ্যাং বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দুবাইয়ের লোকেরা যে সংস্করণগুলো কিনছেন তা আসল চকোলেটের প্রতিরূপ।

মুদি দোকানে এই পণ্যগুলো সাশ্রয়ী দামে প্রায় ১৫ ডলারে বিক্রি করা হয়। এগুলো মিল্ক চকোলেট, স্ট্রবেরি ও বাদামের মাখন দিয়ে তৈরি করা হয়।

ক্রিস্টি হ্যাং বলেন, ‘সত্যিকারের দুবাই চকোলেট হলো কারিগরদের দ্বারা ছোট ছোট ব্যাচে তৈরি করা মিষ্টান্ন। এটি তুরস্কের পেস্তা বাদাম ও ভোজ্য স্বর্ণ দিয়ে তৈরি বিশেষ চকোলেট।’

হ্যাং আরো বলেন, আসল দুবাই চকোলেটে থাকে আভিজাত্য ও কারিগরির স্পর্শ। দুবাই চকোলেটে ঢাকা স্ট্রবেরি মিষ্টান্ন তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়- নিখুঁত আকৃতির স্ট্রবেরি,যা উচ্চমানের বেলজিয়ান বা ডার্ক চকোলেটে ডুবানো থাকবে। এরসাথে কাতাইফি বিট ও মিহি করে গুঁড়ো করা পেস্তার ক্রিম থাকবে।

হ্যাং বলেন, ‘এটি আভিজাত্যপূর্ণ পণ্য হিসেবে তৈরি করা হয়েছিল। এখন এটি একটি সাধারণ পণ্য হিসেবে বাজারজাত করা হচ্ছে, যা যে কেউ সহজে পেতে পারে।’

টেক্সাস ভিত্তিক ফুড রিভিউয়ার জেইন মোহাম্মদ জানান, তিনি দুবাই চকোলেট ট্রেন্ডের ভক্ত নন। তিনি মনে করেন যে মিষ্টান্নের প্রচারের কারণে সংস্কৃতি ও পরিবারে খাবারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা কমে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘দুবাইতে দুবাই চকোলেট ছাড়াও আরো অনেক কিছু আছে। আমি সৌদি আরবে বড় হয়েছি, আরব সংস্কৃতি খুবই পরিবারকেন্দ্রিক এবং আরব আতিথেয়তা অতুলনীয়।’

তিনি আরো জানান, তিনি চিন্তিত কারণ অনেকেই ট্রেন্ডের সাথে লিপ্ত হয়ে সেটিকে নিজের হিসেবে প্রচার করছে। এই ট্রেন্ড থেকে অনেকে উপকৃত হচ্ছে কিন্তু সংস্কৃতিকে সম্মান করছে না।

বিয়াঙ্কা তামন্ডং নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমি আগেও অনেক ধরনের দুবাই চকলেট মিষ্টান্ন খেয়েছি যেমন- আসল চকলেট বার, আইসক্রিম ভেরিয়েশন ও ডুবাই চকলেট-ঢাকা স্ট্রবেরি। দশ ডলার সত্যিই খুব সাশ্রয়ী মনে হলো, কারণ অনেক দুবাই চকোলেট মিষ্টান্ন ১৫ ডলারের বেশি দামে বিক্রি হয়।’

ওসি মেলায় মিষ্টান্ন বিশেষজ্ঞ ডমিনিক পালমিয়েরি জানান, পর্যাপ্ত পরিমাণ পিস্তাচিও ক্রিম সংগ্রহ করতে তার তিন মাসের বেশি সময় লেগেছে। তিনি এই বছর প্রায় দুই হাজার গ্যালন পিস্তাচিও ক্রিম ও ১০ হাজার পাউন্ডের বেশি কাঁচা চকোলেট সংগ্রহের পরিকল্পনা করছেন।

এছাড়া তিনি বলেন, ‘২০২৪ সালে দুবাই চকোলেট পাওয়া খুবই বিরল ছিল। এটি বিশেষ চকোলেট শপ ও মিষ্টান্নের দোকানগুলোতে গিয়ে খুঁজে বের করতে হতো। এখন এটি সর্বত্রই পাওয়া যায়।’