অস্ট্রেলিয়ার পূর্বাঞ্চলে প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে দ্রুতগতির বন্যার পানি বুধবার ঘরবাড়ি প্লাবিত করে দিয়েছে। বহু বাসিন্দা রাতভর বাড়ির ছাদে আটকা পড়ে ছিলেন। আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, আগামী কয়েক দিন আরো বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, সিডনি থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত মটো নামের একটি গ্রামে একটি বন্যা-কবলিত বাড়ি থেকে ৬৩ বছর বয়সী এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় মাত্র দু’দিনেই মে মাসের গড় বৃষ্টিপাতের তুলনায় চারগুণ বেশি বৃষ্টি হয়েছে, ফলে কাদায় ছেয়ে গেছে ঘরবাড়ি, দোকানপাট ও সড়ক।
রাজ্যের জরুরি পরিস্থিতি-বিষয়ক মন্ত্রী জিহাদ ডিব জানান, ‘টানা ও ভারী বৃষ্টি হচ্ছে এবং তা কমছে না। মাটি ইতোমধ্যে জলসিক্ত হয়ে উঠেছে এবং নদীগুলো ফুলেফেঁপে উঠেছে।’
সিডনি থেকে প্রায় ৩০০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত টারি শহরকে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সোমবার থেকে টারিতে ৪১৫ মিলিমিটার (১৬.৩৪ ইঞ্চি) বৃষ্টি হয়েছে, যা মে মাসের গড় বৃষ্টিপাতের চারগুণেরও বেশি।
প্রশাসন জানায়, টারির একটি নদীর পানি বুধবার ১৯২৯ সালের রেকর্ড ছাড়িয়ে ৬.৩ মিটার (২০.৬ ফুট) পর্যন্ত পৌঁছেছে।
পানি এত দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে যে অনেক বাসিন্দা বাড়ির ছাদে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন, কিন্তু খারাপ আবহাওয়ার কারণে উদ্ধারকর্মীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারেননি।
টারির বাসিন্দা হোলি পিলোত্তো, যিনি বাড়ির ওপর তলার একটি কক্ষে আটকা পড়েছিলেন, অস্ট্রেলিয়ার চ্যানেল নাইনকে বলেন, ‘পাশের বারান্দায় আমাদের প্রতিবেশীরাও আটকা পড়ে আছেন। এটি খুব বিপজ্জনক একটি অবস্থা। আমরা সাহায্যের অপেক্ষায় আছি।’
মন্ত্রী জিহাদ ডিব জানান, ‘আমরা আমাদের সব রিসোর্স ব্যবহার করছি ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে পৌঁছতে।’
নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্য জরুরি সেবা বিভাগের প্রধান সুপারিনটেনডেন্ট ডালাস বায়ার্নস বলেন, পরিস্থিতি ‘অত্যন্ত দ্রুত পরিবর্তনশীল ও জটিল’। তিনি জানান, গতরাতে ১৫০টির বেশি উদ্ধার অভিযান চালানো হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা অনেককে ছাদ ও বাড়ির ওপরতলা থেকে উদ্ধার করছি। আবহাওয়া এতটাই প্রতিকূল যে হয়তো উদ্ধারকারী হেলিকপ্টারগুলো সারাদিনই উড়তে পারবে না।’
প্রায় ১৬ হাজার মানুষ বা ৭ হাজার ৪০০টি বাড়ি অন্তত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বাইরের জগত থেকে বিচ্ছিন্ন থাকবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।
আগামী ৪৮ ঘণ্টায় আরো ২০০ মিলিমিটার (৭.৮৭ ইঞ্চি) বৃষ্টিপাত হতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে। এরপর পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হতে পারে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তাপপ্রবাহসহ নানা ধরনের চরম আবহাওয়া পরিস্থিতি আরো ঘন ঘন ও ভয়াবহ হয়ে উঠছে বলে বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে আসছেন।
সূত্র : বাসস