বিশ্বের প্রায় ৯০ কোটি দরিদ্র মানুষ জলবায়ু বিপর্যয়ের ঝুঁকিতে : জাতিসঙ্ঘ

বিশ্বের ৮৮৭ মিলিয়ন মানুষ অর্থাৎ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর প্রায় ৭৯ শতাংশ সরাসরি জলবায়ু ঝুঁকির মুখোমুখি। এর মধ্যে ৬০৮ মিলিয়ন মানুষ তীব্র গরম, ৫৭৭ মিলিয়ন বায়ুদূষণ, ৪৬৫ মিলিয়ন বন্যায় আর ২০৭ মিলিয়ন খরায় ক্ষতিগ্রস্ত।

নয়া দিগন্ত অনলাইন
মেক্সিকোর হিডালগো রাজ্যের প্লাবিত একটি শহর
মেক্সিকোর হিডালগো রাজ্যের প্লাবিত একটি শহর |সংগৃহীত

বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে সৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিপর্যয়ের সরাসরি ঝুঁকিতে রয়েছে বিশ্বের প্রায় ৯০ কোটি দরিদ্র মানুষ। যা বিশ্বের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর প্রায় ৮০ শতাংশ। তাদের ওপর জলবায়ু বিপর্যয়ের ‘দ্বিগুণ ও গভীর বৈষম্যমূলক প্রভাব’ পড়ছে বলে শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে সতর্ক করছে জাতিসঙ্ঘ।

নিউইয়র্ক থেকে এএফপি জানিয়েছে, জাতিসঙ্ঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) ভারপ্রাপ্ত প্রশাসক হাওলিয়াং সু এক বিবৃতিতে বলেছেন, খরা, বন্যা, তাপপ্রবাহ বা বায়ুদূষণের মত জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান ও ক্ষতিকর প্রভাব থেকে কেউই পুরোপুরি রক্ষা পাচ্ছে না। কিন্তু সবচেয়ে ভয়াবহ আঘাত পড়ছে অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠীর ওপর।

তিনি বলেছেন, নভেম্বরে ব্রাজিলে আয়োজন করা হবে জাতিসঙ্ঘের জলবায়ু সম্মেলন ‘কপ-৩০’। সেখানে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবেলা ও দারিদ্র্য বিমোচনকে একসাথে সমাধানের বিষয়ে আলোচনা করার সুযোগ পাবেন বিশ্বনেতারা।

ইউএনডিপি ও অক্সফোর্ড পোভার্টি অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভের যৌথ বার্ষিক গবেষণা অনুযায়ী, ১০৯টি দেশের ৬.৩ বিলিয়ন মানুষের মধ্যে প্রায় ১.১ বিলিয়ন মানুষ (১৮ শতাংশ) ‘বহুমাত্রিক চরম দারিদ্র্যের’ মধ্যে বসবাস করছে।

শিশুমৃত্যু, বাসস্থান, স্যানিটেশন, বিদ্যুৎ ও শিক্ষার মত সূচকের ওপর ভিত্তি করে এই পরিসংখ্যান তৈরি করা হয়েছে। এই দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অর্ধেকই শিশু। দারিদ্র্য সবচেয়ে বেশি আফ্রিকার সাব-সাহারা অঞ্চল ও দক্ষিণ এশিয়ায়। আর সেখানকার মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকিতে আছে।

দারিদ্র্য ও পরিবেশগত ঝুঁকির চারটি দিকের সংযোগ তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে। সেগুলো হলো তীব্র তাপমাত্রা, খরা, বন্যা ও বায়ুদূষণ। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, দারিদ্র্যপীড়িত পরিবারগুলো জলবায়ু বিপর্যয়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কারণ তাদের জীবিকা প্রধানত কৃষি ও অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমের মতো ঝুঁকিপূর্ণ খাতের ওপর নির্ভরশীল। যখন একাধিক বিপর্যয় একসাথে বা বারবার আঘাত হানে, তখন তাদের দুর্ভোগ আরো বেড়ে যায়।

ফলে ৮৮৭ মিলিয়ন মানুষ অর্থাৎ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর প্রায় ৭৯ শতাংশ সরাসরি জলবায়ু ঝুঁকির মুখোমুখি। এর মধ্যে ৬০৮ মিলিয়ন মানুষ তীব্র গরম, ৫৭৭ মিলিয়ন বায়ুদূষণ, ৪৬৫ মিলিয়ন বন্যায় আর ২০৭ মিলিয়ন খরায় ক্ষতিগ্রস্ত।

প্রায় ৬৫১ মিলিয়ন মানুষ অন্তত দু’টি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। আর তিন বা চারটি বিপদের মুখোমুখি ৩০৯ মিলিয়ন মানুষ। আর এক কোটি ১০ লাখ দরিদ্র এক বছরের মধ্যেই সবগুলো বিপর্যয়ই মোকাবেলা করেছে।

দারিদ্র্য ও জলবায়ু ঝুঁকিকে সন্দেহাতীতভাবে বৈশ্বিক সমস্যা হিসেবে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এছাড়াও বৈরি আবহাওয়ার ক্রমবর্ধমান প্রবণতা বৈশ্বিক উন্নয়নকে ব্যাপকভাবে ব্যাহত করতে পারে বলেও সতর্ক করে দেয়া হয়।

দারিদ্র্যের হার কমানোয় দক্ষিণ এশিয়া অগ্রগতি অর্জন করেছে। কিন্তু এই অঞ্চলের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ৯৯.১ শতাংশ এখনো কমপক্ষে একটি জলবায়ু ঝুঁকির মুখে রয়েছে। দারিদ্র্য মোকাবেলা ও জলবায়ু অভিযোজন একসাথে এগিয়ে নিতে ওই অঞ্চলকে নতুন উদ্যোগ নিতে হবে বলেও প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে।

বিশ্বের তাপমাত্রা দ্রুত বাড়তে থাকায় পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হতে পারে বলেও সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, বর্তমানে বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোই উষ্ণায়নের সবচেয়ে ভয়াবহ প্রভাবের শিকার হবে।

সূত্র : বাসস