স্পেনে আগস্টের তাপপ্রবাহ ইতিহাসে সর্বোচ্চ তীব্রতার রেকর্ড ভেঙেছে

সাম্প্রতিক তাপপ্রবাহ জলবায়ু সংকটের কারণে উষ্ণতা গ্রীষ্মের ক্রমবর্ধমান ধরণটির অংশ। যার ফলে তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১০৯ ফারেনহাইট) পৌঁছেছে।

ফারিয়া জাহান জিনিয়া

স্পেনের উত্তর ও পশ্চিমে দাবানল চলাকালে দেশটি চলতি আগস্ট মাসে ইতিহাসের সবচেয়ে তীব্র তাপপ্রবাহের মুখোমুখি হয়েছে।

স্পেনের রাষ্ট্রীয় আবহাওয়া সংস্থা (AEMET) গতকাল রোববার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, আগস্টের ৩ তারিখ থেকে শুরু হয়ে ১৮ তারিখ পর্যন্ত তথ্য বিশ্লেষণে তাপপ্রবাহের গড় তাপমাত্রা প্রত্যাশিত সীমার চেয়ে ৪.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস (৪০.২ ফারেনহাইট) বেশি দেখিয়েছে। যা পূর্বের জুলাই ২০২২ সালের রেকর্ডকে ভেঙে দিয়েছে।

AEMET উল্লেখ করেছে যে, সাম্প্রতিক তাপপ্রবাহ জলবায়ু সংকটের কারণে উষ্ণতা গ্রীষ্মের ক্রমবর্ধমান ধরণটির অংশ। যার ফলে তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১০৯ ফারেনহাইট) পৌঁছেছে।

২০১৯ সাল থেকে পাঁচটি তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যে চারটি যে ঘটেছে তা কোনও কাকতালীয় ঘটনা নয়। এটি ভুল ধারণা যে, প্রতিটি গ্রীষ্ম আগের বছরের তুলনায় বেশি উষ্ণ হবে। তবে সামগ্রিকভাবে গ্রীষ্মের চরম তাপমাত্রার দিকে ধাবিত হওয়ার প্রবণতাটা স্পষ্ট।

AEMET স্পেনে ১৯৭৫ সাল থেকে ৭৭টি তাপপ্রবাহ রেকর্ড করেছে, যার মধ্যে ছয়টি তাপমাত্রা গড়ের চেয়ে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস (৩৯.২ ডিগ্রি ফারেনহাইট) বা তার বেশি বৃদ্ধি পেয়েছিল।

কার্লোস স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের মঙ্গলবার প্রকাশিত এক হিসাব অনুসারে, স্পেনে ১,১০০ জনেরও বেশি মৃত্যুর ঘটনা এই বছরের আগস্টের তাপপ্রবাহের সাথে সম্পর্কিত। এই তাপপ্রবাহ স্পেনের পরিস্থিতি আরও খারাপ করেছে, যা দেশের বিভিন্ন অংশে দাবানলের আগুনকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

গত সপ্তাহে অগ্নিনির্বাপকদের সহায়তার জন্য স্পেনীয় সেনাবাহিনী ৩ হাজার ৪০০ সৈন্য ও ৫০টি বিমান মোতায়েন করে। পাশাপাশি চেক প্রজাতন্ত্র, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস ও স্লোভাকিয়া থেকেও শত শত অগ্নিনির্বাপক কর্মী, যানবাহন ও বিমান পাঠানো হয়।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের ইউরোপীয় বন অগ্নি তথ্য ব্যবস্থা অনুসারে, দাবানলে ৩ লাখ ৮২ হাজার হেক্টরেরও বেশি (৯ লাখ ৪৪ হাজার একর) বা প্রায় ৩ হাজার ৮২০ বর্গ কিলোমিটার (১ হাজার ৪৭৫ বর্গ মাইল) বেশি এলাকা দাবানলে পুড়েছে। দক্ষিণ ইউরোপের বেশিরভাগ অঞ্চল দুই দশকের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ দাবানলের মৌসুমের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের কপারনিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিসের তথ্যমতে, ১৯৮০-এর দশক থেকে ইউরোপের উষ্ণায়ন বৈশ্বিক গড়ের তুলনায় দ্বিগুণ দ্রুত গতিতে বাড়ছে। বিজ্ঞানীরা জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাপপ্রবাহ ও শুষ্ক আবহাওয়ার ঘটনা বিশ্বজুড়েই আরও ঘন ঘন ঘটছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সতর্ক করে বলেছে, “জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও শুষ্ক আবহাওয়ার পাশাপাশি গ্রামীণ এলাকায় দ্রুত নগরায়ণের ফলে অগ্নিকাণ্ডের মৌসুম এখন আগের চেয়ে আগে শুরু হচ্ছে এবং দেরিতে শেষ হচ্ছে যার ফলে স্থায়িত্বকাল এবং তীব্রতার বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা পরিবহন, যোগাযোগ, পানি সরবরাহ, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সেবায় ব্যাহত করতে পারে।”

আলজাজিরার প্রতিবেদন।