ইউরোপের দক্ষিণে তাপপ্রবাহের ফলে সৃষ্ট দাবানলে মঙ্গলবার তিনজনের প্রাণহানি ঘটেছে। এতে কয়েক হাজার মানুষ তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র সরে যেতে বাধ্য হয়েছে।
মাদ্রিদ থেকে এএফপি জানিয়েছে, ইতালি, ফ্রান্স, স্পেন, পর্তুগাল ও বলকান অঞ্চলে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এ সময় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
অনেকে এখনো বিপদকে ঠিক বুঝে উঠতে পারছেন না উল্লেখ করে ব্রিটেনের রিডিং বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া বিভাগের গবেষণা বিজ্ঞানী অক্ষয় দেওরাস এএফপিকে বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য ধন্যবাদ, আমরা এখন একটি উল্লেখযোগ্যভাবে উষ্ণ বিশ্বে বাস করছি।’
এদিকে কর্মকর্তারা জানান, মাদ্রিদের উত্তরে অবস্থিত ট্রেস ক্যান্টোসে শহরতলির স্প্যানিশ অশ্বারোহী কেন্দ্রের একজন কর্মচারী আঘাত পেয়ে মারা গেছেন। জানা গেছে, তিনি তার ঘোড়াগুলো বাঁচানোর চেষ্টা করতে গিয়ে মারা যান। উত্তর-পশ্চিম স্পেনের ক্যাস্টিল ও লিওনের কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন, আগুন নেভানোর সময় আরো একজনের মৃত্যু হয়েছে।
বলকান দেশ মন্টিনিগ্রোতে রাজধানী পডগোরিকার উত্তরে পাহাড়ে দাবানল নিয়ন্ত্রণের সময় পানির ট্যাঙ্কার উল্টে গেলে একজন সৈন্য মারা যায় এবং আরো একজন গুরুতর আহত হন। অপরদিকে, গত সোমবার ইতালিতে হিটস্ট্রোকে এক শিশুর মৃত্যু হয়।
স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ এক্সে বলেন, উদ্ধারকারী সংস্থাগুলো ‘আগুন নেভানোর জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করছে’। তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘আমরা বনের আগুনের ভয়াবহ ঝুঁকিতে রয়েছি। দয়া করে খুব সতর্ক থাকুন।’
স্পেনের ক্যাস্টিল ও লিওনে কয়েক ডজন দাবানলের খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে একটি প্রাচীন রোমান সোনার খনির জন্য পরিচিত ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান লাস মেডুলাসকে হুমকির মুখে পড়েছে।
ক্যাস্টিল ও লিওনের আঞ্চলিক সরকারের প্রধান আলফোনসো ফার্নান্দেজ ম্যানুয়েকো আগুন নেভানোর পর ‘যত তাড়াতাড়ি সম্ভব স্থানটিকে তার পূর্ণ গৌরবে ফিরিয়ে আনার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার’ প্রতিশ্রুতি দেন।
প্রতিবেশী দেশ পর্তুগালে দমকলকর্মীরা তিনটি বড় দাবানলের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ দাবানলটি ছিল দেশের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত ট্রানকোসোর কাছে। সেখানে সাত শতাধিক দমকলকর্মী মোতায়েন করা হয়েছিল।
দক্ষিণ ফ্রান্সের চারটি আবহাওয়া কেন্দ্রে সোমবার তাপমাত্রার রেকর্ড ভেঙে গেছে এবং মঙ্গলবার দেশের তিন-চতুর্থাংশ অঞ্চলে তাপ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। রোন উপত্যকায় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে পৌঁছানোর পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে।
জাতীয় আবহাওয়া অফিস মেটিও-ফ্রান্সের মতে, শুক্রবার থেকে তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করেছে। মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ফ্রান্সে দ্বিতীয় এই তাপপ্রবাহ আগামী সপ্তাহ নাগাদ আরো বাড়তে পারে। এর ফলে এটি ১২ থেকে ১৪ দিনের জন্য তীব্র তাপপ্রবাহে পরিণত হবে।
গরমের কারণে মঙ্গলবার রোম, মিলান ও ফ্লোরেন্সসহ ইতালির ১১টি শহরে লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
আলবেনিয়াতেও শত শত সৈন্য ও দমকলকর্মী দাবানলের সাথে লড়াই করছে। অন্যদিকে গ্রিস তার ভূখণ্ডে তীব্র বাতাস এবং ও আবহাওয়ার কারণে শতাধিক দাবানল মোকাবেলায় ইইউর সহায়তা চেয়েছে।
সূত্র : বাসস