ভূমধ্যসাগরে মাল্টার উপকূলে অভিবাসীবাহী একটি নৌকা উল্টে একজন অভিবাসনপ্রত্যাশী মারা গেছেন। এছাড়া ৫৯ বাংলাদেশীসহ মোট ৬১ অভিবাসনপ্রত্যাশীকে উদ্ধার করে মাল্টায় আনা হয়েছে।
শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) সকালে অভিবাসীবাহী নৌকাটি উল্টে যাওয়ার পর অভিবাসনপ্রত্যাশীদের উদ্ধার করে আর্মড ফোর্স অব মাল্টা বা দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর একটি দল।
আর্মড ফোর্স অব মাল্টা জানিয়েছে, মোট ৬১ জন অভিবাসীকে উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৫৯ জন ছিলেন বাংলাদেশী এবং অপর দু’জন মিসরের নাগরিক।
মাল্টা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, উদ্ধারের সময় দু’জনের অবস্থা ছিল বেশ গুরুতর। হেলিকপ্টারের সাহায্যে তাদেরকে দ্রুত হাসপাতালে পাঠানো হয়। কিন্তু তাদের মধ্যে একজন মারা গেছেন।
অন্যদের একটি টহল নৌকায় করে মাল্টার উপকূলে নিয়ে আসা হয়। তাদের মধ্যে আরো ছয়জন হাইপোথারমিয়ায় ভুগছিলেন। তাদেরকেও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে তাদের কারো অবস্থা আশঙ্কাজনক নয় বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন।
উদ্ধারের পর অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নামানো হয়েছে মাল্টার সেইন্ট পল বে-এর বুজিবা ঘাটে। সেখানে একটি তাঁবুর নিচে অভিবাসীদের সাদা কম্বল জড়ানো অবস্থায় দেখা গেছে। তাদের প্রাথমিক সেবা দিচ্ছিলেন জরুরি সেবাকর্মীরা। ওই সময় সশস্ত্র বাহিনীর একটি নৌযান ঘটনাস্থলে থেকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছিল।
মাল্টার সশস্ত্র বাহিনীর একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, ‘সকাল ৮টা ৪৩ মিনিটে উদ্ধার সমন্বয় কেন্দ্র একটি বার্তা আসে। সেখানে বলা হয়েছে মাল্টার উপকূলের অভিবাসীবাহী একটি নৌকা বিপদে পড়েছে এবং কয়েকজন পানিতে পড়ে গেছেন।’
মুখপাত্র আরো বলেন, আকাশ ও সমুদ্র ইউনিটগুলোকে সাথে সাথে ‘তাদের উদ্ধারে পাঠানো হয়।’
তিনি বলেন, ‘সবাইকে উদ্ধার করা হয়েছে এবং তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। কারণ অনেকের শরীরে মারাত্মক হাইপোথারমিয়ার লক্ষণ ছিল। উদ্ধার শেষে তাদের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’
টাইমস অব মাল্টা এক সূত্রে জানিয়েছে, অভিবাসনপ্রত্যাশীরা লিবিয়ার উপকূল থেকে যাত্রা করেছিলেন। তারা ইতালি বা ইতালির দ্বীপ লাম্পেদুসায় পৌঁছানোর আশা করেছিলেন।
বাংলাদেশকে ‘নিরাপদ উৎস দেশ’ হিসেবে বিবেচনা করে মাল্টা। এ কারণে দেশটিতে বাংলাদেশীদের আশ্রয় আবেদন সুরক্ষার মানদণ্ড পূরণ করে না বলে ধরে নেয়া হয় এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়।
কমেছে অনিয়মিত অভিবসান
শুক্রবারের এই উদ্ধার অভিযান ছিল মাল্টায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অনিয়মিত অভিবাসী আগমনের প্রথম বড় ঘটনা। ২০২০ সালে দেশটিতে মোট দুই হাজার ২০০ জন অভিবাসী এসেছিলেন। কিন্তু নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থার কারণে অনিয়মিত অভিবাসীদের সংখ্যা কমাতে পেরেছে দেশটি। গত বছর মাল্টায় আসা আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা ছিল মাত্র ২৩৮ জন।
জাতিসঙ্ঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর-এর তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের গত সপ্তাহ পর্যন্ত মাল্টায় আসা অভিবাসনপ্রত্যাশীর সংখ্যা মাত্র ১৮৫। অথচ এই বছর ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে পৌঁছেছেন এক লাখ ৩৬ হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশী। তাদের মধ্যে ইটালিতে পৌঁছেছেন অন্তত ৬৪ হাজার এবং গ্রিসে পৌঁছেছেন ৪৪ হাজার।
কঠোর অবস্থানে মাল্টা
পাঁচ বছর আগে লিবিয়ার সাথে করা একটি গোপন অভিবাসন চুক্তির কারণেই মাল্টায় অভিবাসনপ্রত্যাশীদের আগমন কমেছে বলে মনে করেন অভিবাসন সংশ্লিষ্টরা। চলতি বছর প্রকাশিত এক তথ্যে দেখা গেছে, লিবিয়ার মিলিশিয়া বাহিনীর হাতে অভিবাসী আটকের ঘটনাও আগের তুলনায় ২৩০ ভাগ বেড়েছে।
তথ্য বলছে, গত বছর মল্টিজ উদ্ধার অঞ্চলে বিপদে পড়া একটি অভিবাসী নৌকাকে উদ্ধারের চেয়ে লিবিয়ার মিলিশিয়া বাহিনীর হাতে আটক হওয়ার শঙ্কা ছিল প্রায় ১০ গুণ বেশি।
মাল্টায় গত ২৯ নভেম্বর অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে সাইপ্রাস, গ্রিস, ইটালি, স্পেন ও মাল্টার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরা ঘোষণা করেন, অভিবাসীদের উৎস ও ট্রানজিট দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক জোরদার করাই অনিয়মিত অভিবাসন মোকাবিলার মূল চাবিকাঠি।
বৈঠকে মাল্টার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাইরন কামিলেরি বলেন, ‘আমাদের অবস্থান হলো মানুষকে বাঁচানো। যদি আপনি আশ্রয়ের যোগ্য হন, আপনি তা পাবেন। না হলে, আপনাকে ফেরত পাঠানো হবে।’
অভিবাসনপ্রত্যাশীদের যাত্রা ঠেকাতে লিবিয়ার সাথে কাজ করার পাশাপাশি তাদের কোস্টগার্ডকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে মাল্টা। বৈঠকে কামিলেরি আরো বলেন, সমুদ্রযাত্রায় আশ্রয়প্রার্থীদের মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে, তাই ‘লিবিয়ার সাথে সমন্বয় করে এবং যাত্রা ঠেকিয়ে আমরা তাদের জীবন বাঁচাচ্ছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘কে ইউরোপে আসবেন, তা ইউরোপকেই ঠিক করতে হবে।’
সূত্র : রয়টার্স ও টাইমস অফ মাল্টা



