রাশিয়ার ভয়াবহ আক্রমণ থেকে নিজেদের আত্মরক্ষার ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য একটি বড় চুক্তির আওতায় ফ্রান্সের তৈরি ১০০টি রাফাল এফ-৪ যুদ্ধবিমান ও উন্নত আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা পাচ্ছে ইউক্রেন।
প্যারিসের কাছে একটি বিমান ঘাঁটিতে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সাথে একটি সম্মতিপত্রে স্বাক্ষর করার পর এই পদক্ষেপকে ‘ঐতিহাসিক’ বলে স্বাগত জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
২০৩৫ সালের মধ্যে রাফাল এফ-৪ বিমানগুলো সরবরাহের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পরিকল্পনা করা হয়েছে এবং চলতি বছরেই শুরু হচ্ছে ইন্টারসেপ্টর ড্রোনের যৌথ উৎপাদন।
যদিও আর্থিক বিষয়গুলো এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের মাধ্যমে অর্থায়নের চেষ্টা করবে ফ্রান্স। এছাড়া জব্দ করা রাশিয়ান সম্পদও ব্যবহারের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এটি এমন একটি বিতর্কিত পদক্ষেপ যা ২৭ সদস্যের ব্লককে বিভক্ত করছে।
সোমবার ম্যাক্রোঁর সাথে এক যৌথ ব্রিফিংয়ে জেলেনস্কি বলেন, ‘এটি একটি কৌশলগত চুক্তি যা আগামী বছর থেকে শুরু করে ১০ বছর ধরে চলবে। ইউক্রেন খুব শক্তিশালী ফরাসি রাডার, আটটি বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং অন্যান্য উন্নত অস্ত্র পাবে।’
জেলেনস্কি জোর দিয়ে বলেন, এই ধরনের উন্নত ব্যবস্থা ব্যবহার করার অর্থ কারো জীবন রক্ষা করা। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ’।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বাড়িয়েছে রাশিয়া। যার অধিকাংশই জ্বালানি ও রেল অবকাঠামো লক্ষ্য করে এবং এটি দেশজুড়ে ব্যাপক ব্ল্যাকআউটের সৃষ্টি করেছে।
কিয়েভ ও তার পশ্চিমা মিত্ররা এই হামলাগুলোকে যুদ্ধাপরাধ বলে বর্ণনা করেছে এবং এসব ঘটনায় কয়েক ডজন বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন।
স্থানীয় কর্মকর্তারা জানান, রাশিয়ার সর্বশেষ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় উত্তর-পূর্ব ইউক্রেনের বালাক্লিয়া শহরে তিনজন নিহত এবং ১৫ জন আহত হয়েছেন।
জেলেনস্কির সাথে কথা বলতে গিয়ে ম্যাক্রোঁ বলেন, ‘আমরা ১০০টি রাফালের পরিকল্পনা করছি। এটা বিশাল ব্যাপার। ইউক্রেনীয় সামরিক বাহিনীর পুনর্জন্মের জন্য এটাই প্রয়োজন।’
রাফাল যুদ্ধবিমানগুলোকে ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ দেশটি তার সীমান্তবর্তী ছোটো-বড় শহরগুলোয় দূরপাল্লার বিমান হামলা মোকাবেলায় প্রায় অক্ষম।
কিয়েভ ও প্যারিসের মধ্যে এই ঘোষণাটি বিশাল হলেও, রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউট, আরইউএসআই-এর জাস্টিন ব্রঙ্ক উল্লেখ করেন, ‘তারা যে পার্থক্য তৈরি করবে সেটি নির্ভর করবে সময়সীমা ও তাদের সাথে আসা ক্ষেপণাস্ত্রের ওপর।’
তিনি বলেন, বিস্তারিত ক্রয় আদেশের বিপরীতে এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী রাজনৈতিক চুক্তি। তাই খুব কম লোকই আশা করছেন যে এই ঘোষণা রাশিয়ার তীব্র আক্রমণের গতিশীলতায় নাটকীয় কোনো পরিবর্তন আনবে।
ফ্রান্সের পর জেলেনস্কি ইউক্রেনের জন্য আরো সামরিক ও অন্যান্য সহায়তা চাইতে স্পেন ভ্রমণ করবেন। এই সপ্তাহের শেষে, তিনি গ্রিসের সাথে একটি গ্যাস চুক্তি সম্পন্ন করেছেন। মার্কিন তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহ এখন এই শীতে বলকান অঞ্চলজুড়ে একটি পাইপলাইনের মাধ্যমে ইউক্রেনে প্রবাহিত হতে শুরু করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সূত্র : বিবিসি



