ফরাসি ফার্স্ট লেডির অনলাইন হয়রানির ঘটনায় ১০ জনের বিচার শুরু

ফ্রান্সের ফার্স্ট লেডি ব্রিজিত ম্যাক্রোঁকে লক্ষ্য করে অনলাইনে লিঙ্গভিত্তিক হয়রানির অভিযোগে সোমবার প্যারিসে ১০ জনের বিচার শুরু হচ্ছে।

নয়া দিগন্ত অনলাইন
ফ্রান্সের ফার্স্ট লেডি ব্রিজিত ম্যাক্রোঁ
ফ্রান্সের ফার্স্ট লেডি ব্রিজিত ম্যাক্রোঁ |বাসস

ফ্রান্সের ফার্স্ট লেডি ব্রিজিত ম্যাক্রোঁকে লক্ষ্য করে অনলাইনে লিঙ্গভিত্তিক হয়রানির অভিযোগে সোমবার প্যারিসে ১০ জনের বিচার শুরু হচ্ছে।

কোনো বৈজ্ঞানিক বা প্রমাণ-ভিত্তিক তথ্য ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরেই ফ্রান্স ও এর বাইরের কয়েকটি দেশে তার বিরুদ্ধে লিঙ্গবিষয়ক প্রশ্ন তোলা হচ্ছে।

এই বিচার প্রক্রিয়া শুরু হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্রিজিত ম্যাক্রোঁ ও প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর মানহানি মামলা দায়েরের পরে। সেই মামলাটিও এই গুজবের কারণেই করা হয়েছিল।

জানা যায়, অনলাইনে বারবার প্রচার করা হয়েছে যে ব্রিজিত ম্যাক্রোঁ জন্মের সময় পুরুষ ছিলেন। বহু বছর ধরে প্রেসিডেন্ট দম্পতিকে লক্ষ্য করে এমন ভিত্তিহীন তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। পাশাপাশি তাদের বয়সে ২৪ বছরের ফারাক নিয়েও ব্যাপক সমালোচনা চলছে।

প্যারিসের একটি ফৌজদারি আদালতে মামলার ১০ আসামি বিচারপ্রক্রিয়ায় অংশ নিচ্ছেন। এই আসামিদের মধ্যে আটজন পুরুষ ও দু’জন নারী। এদের বয়স ৪১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে। দোষী সাব্যস্ত হলে, তাদের দুই বছরের জেল হতে পারে।

প্রসিকিউটরের মতে, অভিযুক্তরা ব্রিজিতের লিঙ্গ ও যৌনতার বিষয়ে নানা কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। এমনকি তার স্বামীর সাথে বয়সের পার্থক্যকেও ‘পেডোফিলিয়া’ ব ‘শিশুপ্রেমী আচরণ’ বলেও ব্যঙ্গ করেছেন।

২০২৪ সালে আগস্টে ফরাসি ফার্স্ট লেডি এই অভিযোগটি করেন। সাইবার হয়রানি তদন্তের পর ২০২৪ সালের ডিসেম্বর ও ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি প্রক্রিয়া শুরু হয়। ব্রিজিত ম্যাক্রোঁর আইনজীবী এএফপি’র সাথে এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজী হননি। ব্রিজিট শুনানিতে উপস্থিত থাকবেন কি-না, তাও জানা যায়নি।

আসামিদের মধ্যে ৪১ বছর বয়সী অরেলিয়েন পোরসন-অ্যাটলান সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘জো সাগান’ নামে পরিচিত এবং প্রায়ই তিনি বিতর্কিত ইস্যুগুলোতে জড়িত থাকেন।

যুক্তরাষ্ট্রের মামলা

আসামিদের মধ্যে এক নারী ২০২২ সালে ব্রিজিত ম্যাক্রোঁর করা মানহানির মামলায় অভিযুক্ত ছিলেন।

৫১ বছর বয়সী ডেলফিন জে ‘আম্যান্ডিন রয়’ ছদ্মনামে পরিচিত। তিনি নিজেকে আত্মিক মাধ্যম বা স্পিরিচুয়াল মিডিয়াম হিসেবে পরিচয় দেন।

২০২১ সালে তিনি তার ইউটিউব চ্যানেলে স্ব-ঘোষিত সাংবাদিক নাটাশা রে-এর সাথে চার ঘণ্টার সাক্ষাৎকার পোস্ট করেন।

সাক্ষাৎকারে তিনি অভিযোগ করেন যে ব্রিজিত ম্যাক্রোঁর পৈতৃক নাম ট্রোগনো। তিনি এক সময় একজন পুরুষ ছিলেন এবং জাঁ-মিশেল ট্রোগনো নামে পরিচিত ছিলেন। যদিও এটি তার ভাইয়ের নাম।

এই দুই নারীকে ২০২৪ সালে ব্রিজিত ও তার ভাইকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার আদেশ দেন আদালত। যদিও পরে আপিলে সেই রায় বাতিল করা হয়। ফার্স্ট লেডি এরপর মামলাটি সে দেশের সর্বোচ্চ আপিল আদালতে নিয়ে যান।

২০১৭ সালে ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর নির্বাচনের পর থেকে এই অভিযোগগুলো আরো বেশি পরিমাণে চাউর হতে শুরু করে। ফ্রান্সের কট্টর ডানপন্থী গোষ্ঠীগুলো এসব প্রচার করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এমনকি ট্রান্সজেন্ডার অধিকার নিয়ে রাজনীতির কেন্দ্রে থাকা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও এ গুজব ছড়ানো হয়েছে।

গত জুলাইয়ে ম্যাক্রোঁ দম্পতি যুক্তরাষ্ট্রে সংরক্ষণশীল পডকাস্টার ক্যান্ডেস ওয়েন্সের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেন।

ক্যান্ডেস ওয়েন্স ‘বিকমিং ব্রিজিট’ শিরোনামের একটি সিরিজ তৈরি করেছিলেন। যেখানে দাবি করা হয়, ফার্স্ট লেডি একজন পুরুষ হিসেবে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

মার্কিন আইনজীবীর ভাষ্য অনুযায়ী, ম্যাক্রোঁ দম্পতি ‘বৈজ্ঞানিক’ প্রমাণ ও ছবি দিয়ে দেখাতে চান যে ফার্স্ট লেডি ট্রান্সজেন্ডার নন। প্যারিসে মামলার কয়েকজন আসামি ওই ইনফ্লুয়েন্সারের পোস্টগুলো শেয়ার করেছে।

এক পোস্টে এক আসামি দাবি করেন, ‘২ হাজার মানুষ প্রস্তুত আছেন আমিয়েন্সের (প্রেসিডেন্ট ম্যাখোঁ দম্পতির জন্মস্থান) ঘরে ঘরে গিয়ে ব্রিজিট ম্যাক্রোনের ঘটনাটির সত্যতা বের করার জন্য।’

বিশ্বের শীর্ষ রাজনীতিবিদ অনেক নারী লিঙ্গ বা যৌনতাসংক্রান্ত মিথ্যা তথ্যের শিকার হয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক মার্কিন ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা, সাবেক মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কামালা হ্যারিস ও নিউজিল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী জ্যাসিন্ডা আরডার্ন।

সূত্র : এএফপি/বাসস