যুদ্ধ অবসানে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় শিল্প এলাকা দনবাস ছেড়ে দেয়াসহ কমপক্ষে তিনটি শর্ত জুড়ে দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। অন্য শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে ইউক্রেনের পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোতে যোগ দেয়ার আকাঙ্ক্ষা ছেড়ে দেয়া এবং ইউক্রেনে পশ্চিমা সেনা মোতায়েন না করা। বিষয়টির সাথে সংশ্লিষ্ট তিনটি সূত্র রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছে।
গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কায় দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে প্রায় তিন ঘণ্টা বৈঠক করেন পুতিন। পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে সূত্রগুলো জানিয়েছে, রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে সমঝোতা কেমন হতে পারে, তা নিয়েই বৈঠক করেছিলেন দুই নেতা। বৈঠক শেষে পুতিন বলেছিলেন, ট্রাম্পের সাথে তার ওই বৈঠক ইউক্রেনে শান্তি ফেরানোর পথ খুলে দেবে বলে আশা করছেন তিনি। তবে তাদের মধ্যে কী আলোচনা হয়েছিল, সে বিষয়ে কেউই সুস্পষ্টভাবে কিছু জানাননি।
বৈঠকে পুতিনের দেয়া প্রস্তাব সম্পর্কে রুশ সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, ২০২৪ সালের জুনে ইউক্রেনের ভূখণ্ড নিয়ে পুতিন যে দাবি করেছিলেন, তাতে কিছুটা ছাড় দিয়েছেন। সে সময় রুশ প্রেসিডেন্ট ইউক্রেনের চার প্রদেশের পুরোটাই রাশিয়ার হাতে তুলে দেয়ার দাবি জানিয়েছিলেন। এর মধ্যে পূর্ব ইউক্রেনের দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক প্রদেশ ছিল। এই দুই প্রদেশই নিয়ে দনবাস গঠিত। বাকি দুটি প্রদেশ হলো দক্ষিণ ইউক্রেনের খেরসন ও জাপোরিঝঝিয়া। সে সময় পুতিনের এ দাবি প্রত্যাখ্যান করেছিল কিয়েভ।
তবে নতুন প্রস্তাবে পুতিন শান্তিচুক্তির অংশ হিসেবে দনবাসে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকাগুলো রাশিয়ার হাতে তুলে দিতে হবে বলে জানান। এর বিনিময়ে খেরসন ও জাপোরিঝঝিয়ায় সম্মুখসারি বরাবর যুদ্ধ বন্ধ করবে রুশ বাহিনী। যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দনবাসের ৮৮ শতাংশ এলাকা এবং জাপোরিঝঝিয়া ও খেরসনের ৭৩ শতাংশ এলাকা রাশিয়ার দখলে রয়েছে। এছাড়াও ইউক্রেনের খারকিভ, সুমি ও নিপ্রোপেত্রোভস্ক অঞ্চলে নিজেদের দখলে থাকা ছোট ছোট এলাকাগুলো ছেড়ে দেবে রাশিয়া।
সূত্রগুলো জানিয়েছে, পুতিন তার পূর্ববর্তী দাবিতে অটল আছেন যে ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যোগ দেয়ার আশা ত্যাগ করতে হবে এবং প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ন্যাটো যেন পূর্বদিকে আর সম্প্রসারণ না করে। রুশ প্রেসিডেন্ট আরো চান, ইউক্রেন বাহিনীর ওপর যেন সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয় এবং যুদ্ধ শেষে দেশটিতে শান্তিরক্ষী বাহিনীর অংশ হিসেবে যেন কোনো পশ্চিমা সেনা মোতায়েন না করা হয়।
তবে ইউক্রেন বরাবরই চুক্তির অংশ হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ভূখণ্ড ছেড়ে দেয়ার বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, দনবাস ইউক্রেনের ‘প্রতিরক্ষা দুর্গ’ এবং এখান থেকে সরে আসা মানে দেশের অস্তিত্ব ঝুঁকির মুখে ফেলা। ন্যাটোতে যোগদানের লক্ষ্যও ইউক্রেনের সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত।
ক্রেমলিনের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো মনে করছে, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধ শুরুর পর আলাস্কা বৈঠকের মধ্য দিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার সবচেয়ে বড় সুযোগ এসেছে। কারণ, পুতিন শান্তির জন্য প্রস্তুত আছেন। ছাড় দেয়ার বিষয়টি ইতিবাচক। তবে কিয়েভ শেষ পর্যন্ত দনবাস অঞ্চল ছেড়ে দেবে কি-না, সে বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা নেই মস্কোর। আর কিয়েভ এই ছাড় না দিলে রাশিয়া যুদ্ধ চালিয়ে যাবে। এদিকে ইউক্রেনে রাশিয়ার দখল করা অঞ্চলগুলোর স্বীকৃতি যুক্তরাষ্ট্র দেবে কি-না, সে বিষয়টিও এখনো পরিষ্কার নয়।
সূত্র : রয়টার্স