বেইজিংয়ে কিমের মেয়ের উপস্থিতি কী বার্তা দিচ্ছে?

গত কয়েক বছর ধরেই উত্তর কোরিয়ার বিভিন্ন সামরিক অনুষ্ঠানে কিমের সাথে দেখা গেছে তার মেয়ে কিম জু আয়েকে। তবে নিজ দেশের বাইরে এটিই ছিল জুয়ের প্রথম সফর।

নয়া দিগন্ত অনলাইন
ধারণা করা হচ্ছে কিম জং উনের পেছনে দাড়িয়ে থাকা মেয়েটি কিম জু আয়ে
ধারণা করা হচ্ছে কিম জং উনের পেছনে দাড়িয়ে থাকা মেয়েটি কিম জু আয়ে |সংগৃহীত

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তির ৮০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত সামরিক কুচকাওয়াজে যোগ দিতে ছয় বছর পর প্রথমবারের মতো চীন সফরে গেছেন উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উন।

স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) যখন বেইজিংয়ে পৌঁছে নিজের সবুজ ট্রেন থেকে নামেন কিম, তখন তার পেছনে দেখা যায় হাস্যেজ্জ্বল একটি মেয়েকে। তাকে কিমের মেয়ে কিম জু আয়ে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

গত কয়েক বছর ধরেই উত্তর কোরিয়ার বিভিন্ন সামরিক অনুষ্ঠানে কিমের সাথে দেখা গেছে তাকে। তবে নিজ দেশের বাইরে এটিই ছিল জুয়ের প্রথম সফর। তার বেইজিং সফর নিয়ে নানা আলোচনা শুরু হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি হলো, তাহলে জু-ই কি কিমের উত্তরসূরি হতে চলেছেন?

সিএনএন বলছে, উত্তর কোরিয়ার বাইরে তার এই প্রথম প্রকাশ্য সফর নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ। এই আয়োজনে তার বাবা কিম বিশ্বের অপর দুই ক্ষমতাধর নেতা চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে একই মঞ্চে দাঁড়াবেন। ভবিষ্যতে এ ধরনের সম্পর্ক তাকেও সামলাতে হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তবে বুধবার কুচকাওয়াজে যখন লাল গালিচায় হাঁটছিলেন কিম, তখন জু-কে তার সাথে দেখা যায়নি।

কিমের মেয়ে সম্পর্কে যা জানা যায়

কিমের মেয়ে সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানা যায় না। তার অস্তিত্বের কথা প্রথম প্রকাশ্যে আসে ২০১৩ সালে। সে সময় মার্কিন বাস্কেটবল তারকা ডেনিস রডম্যান বলেছিলেন, জু আয়ে নামের কিমের একটি সন্তান রয়েছে। পরে তিনি দ্য গার্ডিয়ানকে বলেছিলেন, আমি জু আয়েকে কোলে নিয়েছিলাম এবং কিমের স্ত্রীর সাথেও কথা বলেছিলাম।

তার সঠিক বয়স ও জন্মসাল নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন প্রতিবেদন রয়েছে। তবে জু কিশোরী বা টিনএজে রয়েছে বলে ধারণা করা হয়।

নানা জল্পনা-কল্পনার পর ২০২২ সালে জুকে ‘কিমের স্টাইলে’ প্রকাশ্যে আনেন তার বাবা। সে সময় একটি আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) উৎক্ষেপণে বাবার সাথে দেখা যায় তাকে। এরপর আরো অনেক সামরিক আয়োজনে কিমের সাথে দেখা গেছে জুকে।

সে সময় অনেক বিশ্লেষক ধারণা করেছিলেন, এসব সামরিক অনুষ্ঠানে জুয়ের উপস্থিতি এই বার্তা দেয় যে পিয়ংইয়ং তার অস্ত্রভাণ্ডার বিশেষত পারমাণবিক কর্মসূচি ধরে রাখবে এবং দেশের সামরিক শক্তির কেন্দ্রে কিম পরিবারই থাকবে।

২০২৩ সালের কুচকাওয়াজ শেষে সিউলের ইহাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লেইফ-এরিক ইজলি বলেছিলেন, স্ত্রী ও মেয়েকে প্রকাশ্যে আনার মাধ্যমে কিম দেশ-বিদেশে তার পরিবারতন্ত্র ও উত্তর কোরিয়ার সামরিক বাহিনী যে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িয়ে আছে, তা দেখানোর চেষ্টা করছেন।

১৯৪৮ সালে ক্ষমতায় এসেছিলেন কিম ইল সুং। এরপর থেকেই উত্তর কোরিয়ায় বংশানুক্রমিক একনায়কের শাসন চলছে। ১৯৯৪ সালে তার মৃত্যুর পর ক্ষমতা নেন তার ছেলে কিম জং ইল। ইলের মৃত্যুর পর ক্ষমতায় আসেন তার ছেলে কিম জং উন।

জুয়ের উপস্থিতি কী বার্তা দিচ্ছে

কিমের সাথে তার মেয়ের উপস্থিতি আসলে কী বার্তা দিচ্ছে, সেটি নিয়ে বিশ্লেষকদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। কেউ কেউ মনে করছেন, উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম যেভাবে তাকে ‘প্রিয়’ ও ‘সম্মানিত’ বলে সম্বোধন করে, তাতে তার বিশেষ মর্যাদা রয়েছে।

আবার শৈশব থেকেই সামরিক আয়োজনে তাকে হাজির করা ১৩ লাখ সেনাসদস্যের নেতৃত্ব দেয়ার জন্য প্রস্তুত করার অংশও হতে পারে মনে করেন অনেকে। তাছাড়া সেনাদের আস্থা ও শ্রদ্ধা অর্জনের কৌশল হিসেবেও তাকে প্রকাশ্যে আনা হতে পারে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকদের অনেকে।

স্টিমসন সেন্টারের সিনিয়র ফেলো ও কেন্দ্রটির কোরিয়া প্রোগ্রামের পরিচালক জেনি টাউন বলেন, কিমের উত্তরসূরি হিসেবে তার অন্য দুই সন্তানকেও মনোনীত করা হতে পারে। জুয়ের প্রকাশ্য উপস্থিতি আসলে জনসংযোগ কৌশলের অংশও হতে পারে। আবার কিমকে ‘পরিবারবান্ধব’ বা ‘পিতৃতুল্য’ নেতা হিসেবে উপস্থাপন করার জন্য এটি করা হতে পারে।

তিনি আরো বলেন, কিম তার কন্যাকে আরেকটি কারণে প্রকাশ্যে আনতে পারেন। সেটি হলো- রডম্যানের মাধ্যামে জুয়ের অস্বিত্ব আগেই জেনে গিয়েছিল বিশ্ববাসী। এখনো তার অন্য দুই সন্তানের বিষয়ে তেমন কিছু জানা যায় না। ফলে তাদের আলোচনার বাইরে থেকে বেড়ে ওঠার সুযোগ রয়েছে।

একটি উদাহরণ দিয়ে জেনি টাউন বলেন, ১৯৯০-এর দশকে সুইজারল্যান্ডে পড়াশোনা করেছিলেন কিম। তবে জু কিন্তু তা পারবে না, কারণ তাকে সবাই এখন চেনে।

সূত্র : ইউএনবি