আফগানিস্তানে ভয়াবহ ভূমিকম্প : আন্তর্জাতিক সহায়তার আহ্বান তালেবানের

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সহায়তার আহ্বান জানান কাবুলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শরাফাত জামান। তিনি বলেন, ‘ভূমিকম্পটি যে ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ ঘটিয়েছে, তা মোকাবেলায় বাইরের সহায়তা জরুরি।’

নয়া দিগন্ত অনলাইন

আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলে ৬ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা ৮১২ জনে দাঁড়িয়েছে। এতে আড়াই হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক মহলে সহায়তার আহ্বান জানিয়েছে তালেবান প্রশাসন।

ভূমিকম্পটি পাকিস্তানের সীমান্তঘেঁষা কয়েকটি প্রদেশে আঘাত হানে, এর মধ্যে দুর্গম কুনার প্রদেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভূমিকম্পের পাশাপাশি ভূমিধস ও বন্যার ঘটনাও ঘটেছে।

গতকাল সোমবার আফগানিস্তানের অন্তর্বর্তী প্রশাসনের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ জানান, কুনার প্রদেশ ও নানগারহার প্রদেশে ৮১২ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আড়াই হাজারের বেশি মানুষ। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার দূরত্ব ও সেখানে পৌঁছানোর অসুবিধার কারণে হতাহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে তালেবান সরকার।

যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএসের তথ্য অনুযায়ী, রোববার রাত ১১টা ৪৭ মিনিটে ওই ভূমিকম্প হয়। এর উৎপত্তিস্থল ছিল ভূপৃষ্ঠের ৮ কিলোমিটার গভীরে। এরপর থেকে অন্তত আরো তিনটি কম্পন অন‌ভূত হয়েছে। সেগুলোর মাত্রা ছিল ৪.৫ থেকে ৫.২-এর মধ্যে। ভূমিকম্পটি যেহেতু অগভীর ছিল, তাই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি হয়েছে বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

আফগানিস্তানের তথ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা আনাদোলু অ্যাজেন্সিকে জানান, কুনার প্রদেশের নুর গাল, সাওকি, ওয়াতপুর, মানোগি এবং চাপা দারা জেলায় হতাহতের খবর পাওয়া গেছে।

একের পর এক নিষেধাজ্ঞা, বিদেশী সহায়তা ফিরিয়ে নেয়া, প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে আফগানদের ফেরত পাঠানোসহ নানা সমস্যার ইতোমধ্যেই জর্জরিত ছিল তালেবান প্রশাসন। এরই মধ্যে এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেশটির প্রশাসনকে আরো চ্যালেঞ্জের মুখে ঠেলে দিয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সহায়তার আহ্বান জানান কাবুলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শরাফাত জামান। তিনি গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘ভূমিকম্পটি যে ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ ঘটিয়েছে, তা মোকাবেলায় বাইরের সহায়তা জরুরি। বহু মানুষ প্রাণ ও ঘরবাড়ি হারিয়েছেন। এ কারণে আমাদের আন্তর্জাতিক সহায়তা দরকার।’

জাতিসঙ্ঘের মানবিক সহায়তা সমন্বয় দফতরের (ইউএনওসিএইচএ) কর্মকর্তা কেট ক্যারি বলেন, ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় গত ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টায় ভারী বৃষ্টি হয়েছে। তাই ভূমি ও পাথরধসের ঝুঁকি বেড়েছে। এ কারণেই অনেক সড়ক অচল হয়ে গেছে।

উদ্ধারকারী দল যত দুর্গম এলাকায় পৌঁছাবে, হতাহতের সংখ্যা ততই বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে কর্তৃপক্ষ।

এদিকে সোমবার ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য জরুরি সহায়তা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাজ্য। তবে তালেবানের প্রশাসনের মাধ্যমে নয়, বরং বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে সহায়তা পৌঁছে দেয়া হবে জানায় ব্রিটিশ সরকার। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আফগানিস্তানের জনগণের পাশে রয়েছে যুক্তরাজ্য। এই জরুরি সহায়তা আমাদের অংশীদারদের মাধ্যমে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে জরুরি চিকিৎসা ও ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দিতে সহায়তা করবে।’

আফগানিস্তানের প্রয়োজন ও নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী দুর্যোগ মোকাবেলায় সহায়তা দিতে চীনও প্রস্তুত রয়েছে বলে জানান দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর জানান, কাবুলে ইতোমধ্যে এক হাজার পরিবারের জন্য তাঁবু সরবরাহ করা হয়েছে এবং কুনার প্রদেশে ১৫ টন খাদ্যসামগ্রী পাঠানো হচ্ছে। আজ মঙ্গলবার থেকে ভারত আরো ত্রাণ পাঠাবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক ব্যুরো সোমবার সামাজিক এক্সে ভূমিকম্পে প্রাণহানির ঘটনায় শোক প্রকাশ করে। তবে যুক্তরাষ্ট্র কোনো সহায়তা দেবে কি-না এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলেও তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য জানানো হয়নি।

সূত্র : ইউএনবি