ভারতে বাংলাভাষীদের ‘বাংলাদেশী’ বলে নিপীড়ন ও পুশইনের প্রতিবাদে পথে নামছেন মমতা

বুধবার (১৬ জুলাই) তিনি কলকাতায় মিছিলে যোগ দেবেন, সমাবেশে বক্তব্য রাখবেন। সমগ্র কলকাতায় তৃণমূল কংগ্রেসের নেতাকর্মীদের মিছিল সমাবেশের কর্মসূচি পালন করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

আবদুল কাদের তাপাদার, সিলেট ব্যুরো
তৃণমূলের প্রতিবাদ সভার পোস্টার
তৃণমূলের প্রতিবাদ সভার পোস্টার |আনন্দবাজার

ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বাংলাভাষীদের ‘বাংলাদেশী আখ্যায়িত করে অব্যাহত নির্যাতন-নিপীড়ন এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে পুশইনের প্রতিবাদ জানাতে আজ পথে নামছেন কলকাতার মুখ্যমন্ত্রী, তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

বুধবার (১৬ জুলাই) তিনি কলকাতায় মিছিলে যোগ দেবেন, সমাবেশে বক্তব্য রাখবেন। সমগ্র কলকাতায় তৃণমূল কংগ্রেসের নেতাকর্মীদের মিছিল সমাবেশের কর্মসূচি পালন করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। কলকাতা, গোয়াহাটি ও কাছাড় থেকে প্রকাশিত একাধিক বাংলা দৈনিক সংবাদপত্র এ খবর দিয়েছে।

কাছাড়ভিত্তিক একটি জনপ্রিয় বাংলা দৈনিকের সংবাদ থেকে জানা গেছে, ভারতের রাজস্থান, গুজরাট, মহারাষ্ট্র, উড়িষ্যা, আসাম, দিল্লির মতো বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলোয় বাংলাভাষী শ্রমিক দেখলেই হেনস্থা করা হচ্ছে। বাংলায় কথা বললেই ‘বাংলাদেশী’ সন্দেহে আটক করা হচ্ছে।

অনেকক্ষেত্রে বাংলাদেশে পুশইন করা হচ্ছে। এমনকী অবৈধ বাংলাদেশী বলে এনআরসি নোটিশ ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে। এহেন পরিস্থিতিতে জোরালো প্রতিবাদ জানাতে পথে নামছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

বুধবার (১৬ জুলাই) কলকাতার কলেজ স্কোয়ার থেকে ডোরিনা ক্রসিং পর্যন্ত মিছিলে হাঁটবেন মুখ্যমন্ত্রী। স্থানীয় সময় দুপুর ১টায় মিছিল শুরু হওয়ার কথা। শুধু শহরে নয়, মমতার নির্দেশ কলকাতাসহ রাজ্যের সবকটি জেলায় এই মিছিল করবেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। মিছিল শেষে বক্তব্য রাখবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

সোমবার (১৪ জুলাই) এই মর্মে নির্দেশিকা জারি করেছে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। যদিও ১৬ জুলাই দিনটি আগেই ঠিক করেছিলেন নেত্রী। তবে বঙ্গে নিম্নচাপের কারণে লাগাতার বৃষ্টির জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারছিল না শাসকদল। অবশেষে, বুধবার সর্বম্মতিভাবে ঠিক করা হয়েছে শাসকদলের পক্ষ থেকে।

আগামী ২১ জুলাই দলনেত্রীর নেতৃত্বে তৃণমূল ঘটা করে পালন করবে ‘শহীদ দিবস’। অনেকেই মনে করেছিলেন, শহীদ দিবসের মঞ্চ থেকেই ‘ভিনরাজ্যে বাঙালি নিধন’ প্রসঙ্গ তুলতে পারেন দলনেত্রী। কিন্তু তাতে নারাজ নেত্রী। তবে মমতার এই পৃথক কর্মসূচি নেয়াকে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ।

এই নিয়ে রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘ভিন রাজ্যে বাংলায় কথা বললেই হায়রানির শিকার হতে হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিদের। বাংলা ভাষা বললেই অপমান? ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠানোর হুমকি? এটা কি ভারত?’

মন্ত্রীর দাবি, ‘এ নিয়ে বারবার কেন্দ্র সরকার এবং সংশ্লিষ্ট রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের চিঠি দেওয়ার পরেও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বিজেপি। পরিবর্তে যারা এই অন্যায় করছে, তাদের মদদ দিয়ে আসছে বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলো। যে কারণে প্রতিবাদে নামতে বাধ্য হচ্ছি আমরা। বাংলা এবং বাঙালিকে অপমানের জবাব পথে নেমেই দেবে তৃণমূল।’

অপরদিকে, দিল্লির বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার ছয়জন ভারতীয়কে বাংলাদেশে পুশইন করা হয়েছে। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। ১৬ জুলাই কলকাতা হাইকোর্টে এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে।

মোট ছয়টি প্রশ্নের জবাব অমিত শাহের মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে চেয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। সেগুলো হল— দানিস ও তার স্ত্রী এবং সন্তানকে কেন আটক করা হয়েছিল? নাকি তারা নিখোঁজ; আটক করা হলে বলতে হবে, তা কোনো আদালতের নির্দেশে হয়েছে কি না?; যদি আটক করা হয়ে থাকে, তবে কেন করা হয়েছে?; আটক করার আগে কি দানিস বা তার স্ত্রীকে আটকের কারণ জানানো হয়েছিল?; দিল্লি পুলিশ বা অন্য কোনো তদন্তকারী সংস্থা কি তাদের বিরুদ্ধে কোনো তদন্ত করছে? সেই কারণে গ্রেপ্তার?; এ বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও দিল্লির প্রশাসনের মধ্যে কি কোনো কথাবার্তা হয়েছে?

উল্লেখ্য, গত ৯ জুলাই পশ্চিমবঙ্গের অভিবাসী শ্রমিক উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান ও রাজ্যসভার সংসদ সদস্য সামিরুল ইসলামের অভিযোগ ছিল, সম্প্রতি বীরভুম জেলার মুরারই ও পাইকর থেকে দুটি পরিবারকে বাংলাদেশ সীমান্তে পুশইন করা হয়েছে বলে তাদের কাছে পরিবারের তরফে অভিযোগ এসেছে। ওই দুই পরিবার হলো— পাইকর থানার অন্তর্গত সুইটি বিবি (৩৩), কুরবান শেখ (১৫), ইমাম শেখ (৫)। এবং মুরারই থানার ধীতোরা গ্রামের দানিস শেখ (২৯), সোনালী বিবি (২৬) ও সাবির শেখ (৫)। এই দুই পরিবার দিল্লিতে বহু বছর ধরে ইটভাঙার কাজে যুক্ত।

দুই পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গত মাসের ১৮ জুন দিল্লির কেএন কাটজু থানা এলাকায় ছয়জনকে আটক করা হয়। আটক হওয়ার পরই অভিযুক্তরা পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে। তারা জানায়, বাংলাদেশী সন্দেহে তাদের আটক করেছে দিল্লি পুলিশ। দ্রুতই পরিবারের সদস্যরা দিল্লিতে এসে যেন তাদের মুক্ত করায়।

একথা শোনামাত্রই পরিবারের সদস্যেরা দিল্লির উদ্দেশে রওনা দেন। তারা সেখানে পৌঁছালে থানা থেকে জানানো হয় যাদের বাংলাদেশী সন্দেহে আটক করা হয়েছিল, তাদের বিএসএফের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। তাদের বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে। তবে পশ্চিমবঙ্গের কোথা থেকে তাদের পুশইন করা হয়েছে, সে বিষয়ে কোনো তথ্য থানার তরফে জানানো হচ্ছে না বলেই অভিযোগ করেছেন পরিবারের সদস্যেরা। তারপরই পরিবারের তরফে পশ্চিমবঙ্গের শ্রম দফতরের সাথেও যোগাযোগ করা হয়।